"পরিমল বাহিনী"-এর বিভিন্ন সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

Barisalpedia থেকে
("পরিমল বাহিনী বরিশালের প্রথম মুদ্রিত পত্রিকা। এটির প্রকা..." দিয়ে পাতা তৈরি)
 
(প্রকাশকাল নিয়ে বিভেদ)
 
১০ নং লাইন: ১০ নং লাইন:
 
== প্রকাশকাল নিয়ে বিভেদ ==
 
== প্রকাশকাল নিয়ে বিভেদ ==
 
‘ঢাকা প্রকাশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত সমালোচনার সূত্র ধরেই সম্ভবত ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ‘পরিমল বাহিনী’র প্রকাশকাল জুলাই ১৮৭২ (শ্রাবণ ২য় পক্ষ, ১২৭৯ বাংলা) বলে উল্লেখ করেছেন এবং মুনতাসীর মামুনও এর প্রকাশকাল ১৮৭২ সাল লিখেছেন। কিন্তু পত্রিকাখানা অনেক বছর আগেই প্রকাশিত হয়েছিল বলে প্রাপ্ত তথ্যাদি বিশ্লেষণে মনে হয়। ‘অশি^নীকুমার’ জীবনীগ্রন্থের রচয়িতা সুরেশচন্দ্র গুপ্ত ১২৭০ সনের পর (অর্থাৎ ১৮৬৩ সাল) প্রেস এবং পত্রিকাটি চালু হয় বলে মনে করেন। অন্যদিকে ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে বরিশাল’ (১ম খন্ড) গ্রন্থের লেখক হীরালাল দাশগুপ্ত প্রেস এবং পত্রিকাটির প্রকাশকাল ১৮৬২ সাল বলে মনে করেন।  
 
‘ঢাকা প্রকাশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত সমালোচনার সূত্র ধরেই সম্ভবত ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ‘পরিমল বাহিনী’র প্রকাশকাল জুলাই ১৮৭২ (শ্রাবণ ২য় পক্ষ, ১২৭৯ বাংলা) বলে উল্লেখ করেছেন এবং মুনতাসীর মামুনও এর প্রকাশকাল ১৮৭২ সাল লিখেছেন। কিন্তু পত্রিকাখানা অনেক বছর আগেই প্রকাশিত হয়েছিল বলে প্রাপ্ত তথ্যাদি বিশ্লেষণে মনে হয়। ‘অশি^নীকুমার’ জীবনীগ্রন্থের রচয়িতা সুরেশচন্দ্র গুপ্ত ১২৭০ সনের পর (অর্থাৎ ১৮৬৩ সাল) প্রেস এবং পত্রিকাটি চালু হয় বলে মনে করেন। অন্যদিকে ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে বরিশাল’ (১ম খন্ড) গ্রন্থের লেখক হীরালাল দাশগুপ্ত প্রেস এবং পত্রিকাটির প্রকাশকাল ১৮৬২ সাল বলে মনে করেন।  
অন্যদিকে তাঁর লেখা থেকেও এটা মনে হয় যে পত্রিকাটি ‘ঢাকা প্রকাশ’ বর্ণিত তারিখের অনেক আগেই প্রকাশিত হয়েছিল। ‘বাকলা’ গ্রন্থের লেখক রোহিনীকুমার সেন এ সম্পর্কে লিখেছেন- ‘১৮৭০ খ্রীঃ অব্দে মুদ্রাযন্ত্র প্রথমতঃ বরিশাল নগরীতে বাসন্ডা নিবাসী সূর্যচন্দ্র গুপ্ত স্বনামে স্থাপিত করেন। ‘পরিমল বাহিনী’ নামক একখানি পাক্ষিক সংবাদপত্র সেই মুদ্রাযন্ত্রে ছাপা হইত। কয়েক বৎসর পরে উভয়েরই অস্তিত্ত¡ বিলোপ হইয়া যায়।’ দুটি বিষয়ে খোসালচন্দ্র রায়, রোহীনীকুমার সেন, সুরেশচন্দ্র গুপ্ত ও শরৎকমার রায় একমত যে, ‘পরিমল বাহিনী’ ই বরিশালের প্রথম পত্রিকা এবং এর প্রকাশকাল ১৮৭২ সালের আগে। এ প্রসঙ্গে আরও বলা যায় যে, ‘মহাত্মা অশি^নীকুমার’ গ্রন্থের লেখক, শান্তিনিকেতন ব্র² বিদ্যালয়ের এককালীন শিক্ষক শরৎকুমার রায় ১৮৭৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি যে পত্রিকাটি দেখেন নি, তাঁর পিতার মুখে শুনেছেন সে পত্রিকাটি অবশ্যই একটু বেশী আগের না হলে ঐ পত্রিকার কোনো না কোনো সংখ্যা তার চোখে পড়তো। তাছাড়া  ১৮৭০ থেকে ৭৫ সাল পর্যন্ত কার্যত বরিশালের তৎকালীন জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট ও বাখেরগঞ্জের ইতিহাস নামক ইংরেজী গ্রন্থের প্রণেতা মিঃ  এইচ. বেভরিজও পরিমল বাহিনী সম্পর্কে কোন তথ্য দিতে পারেননি। এ থেকে মনে হয়, বেভারিজ বরিশালে আসার পূর্বেই পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়েছিল। বাখরগঞ্জের ইতিহাস গন্থের রচয়িতা খোসালচন্দ্র রায় ১৮৯৫ সালে প্রকাশিত ঐ গন্থে লিখেছেন-  ‘সর্বপ্রথমে বাসন্ডার  বাবু পূর্ণচন্দ্রসেন, পূর্ণচন্দ্রোদয় নামক একটি যন্ত্র স্থাপন করেন। পরিমল বাহিনী  পত্রিকা তথায় মুদ্রিত হইত। উক্ত যন্ত্র কয়েক বৎসর পর উঠিয়া গিয়াছে। বাঙ্গালা ১২৮০ সনে বাবু প্রতাপ চন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের কাশিপুর যন্ত্র, ১২৯৪ সনে বাবু রাজমোহন চট্টোপাধ্যায়ের হিতৈষী যন্ত্র ও ১৩০২ সনে বাবু অক্ষয় কুমার চট্টোপাধ্যায়ের আদর্শ যন্ত্রালয় স্থাপিত হওয়ায়, অধিবাসীগনের বিশেষ সুবিধা হইয়াছে।’
+
অন্যদিকে তাঁর লেখা থেকেও এটা মনে হয় যে পত্রিকাটি ‘ঢাকা প্রকাশ’ বর্ণিত তারিখের অনেক আগেই প্রকাশিত হয়েছিল। ‘বাকলা’ গ্রন্থের লেখক রোহিনীকুমার সেন এ সম্পর্কে লিখেছেন- ‘১৮৭০ খ্রীঃ অব্দে মুদ্রাযন্ত্র প্রথমতঃ বরিশাল নগরীতে বাসন্ডা নিবাসী সূর্যচন্দ্র গুপ্ত স্বনামে স্থাপিত করেন। ‘পরিমল বাহিনী’ নামক একখানি পাক্ষিক সংবাদপত্র সেই মুদ্রাযন্ত্রে ছাপা হইত। কয়েক বৎসর পরে উভয়েরই অস্তিত্ত¡ বিলোপ হইয়া যায়।’ দুটি বিষয়ে খোসালচন্দ্র রায়, রোহীনীকুমার সেন, সুরেশচন্দ্র গুপ্ত ও শরৎকমার রায় একমত যে, ‘পরিমল বাহিনী’ ই বরিশালের প্রথম পত্রিকা এবং এর প্রকাশকাল ১৮৭২ সালের আগে। এ প্রসঙ্গে আরও বলা যায় যে, ‘মহাত্মা অশি^নীকুমার’ গ্রন্থের লেখক, শান্তিনিকেতন ব্রহ্ম বিদ্যালয়ের এককালীন শিক্ষক শরৎকুমার রায় ১৮৭৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি যে পত্রিকাটি দেখেন নি, তাঁর পিতার মুখে শুনেছেন সে পত্রিকাটি অবশ্যই একটু বেশী আগের না হলে ঐ পত্রিকার কোনো না কোনো সংখ্যা তার চোখে পড়তো। তাছাড়া  ১৮৭০ থেকে ৭৫ সাল পর্যন্ত কার্যত বরিশালের তৎকালীন জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট ও বাখেরগঞ্জের ইতিহাস নামক ইংরেজী গ্রন্থের প্রণেতা মিঃ  এইচ. বেভরিজও পরিমল বাহিনী সম্পর্কে কোন তথ্য দিতে পারেননি। এ থেকে মনে হয়, বেভারিজ বরিশালে আসার পূর্বেই পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়েছিল। বাখরগঞ্জের ইতিহাস গন্থের রচয়িতা খোসালচন্দ্র রায় ১৮৯৫ সালে প্রকাশিত ঐ গন্থে লিখেছেন-  ‘সর্বপ্রথমে বাসন্ডার  বাবু পূর্ণচন্দ্রসেন, পূর্ণচন্দ্রোদয় নামক একটি যন্ত্র স্থাপন করেন। পরিমল বাহিনী  পত্রিকা তথায় মুদ্রিত হইত। উক্ত যন্ত্র কয়েক বৎসর পর উঠিয়া গিয়াছে। বাঙ্গালা ১২৮০ সনে বাবু প্রতাপ চন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের কাশিপুর যন্ত্র, ১২৯৪ সনে বাবু রাজমোহন চট্টোপাধ্যায়ের হিতৈষী যন্ত্র ও ১৩০২ সনে বাবু অক্ষয় কুমার চট্টোপাধ্যায়ের আদর্শ যন্ত্রালয় স্থাপিত হওয়ায়, অধিবাসীগনের বিশেষ সুবিধা হইয়াছে।’
খোসাল চন্দ্র রায় এর লেখার সূত্র ধরে আলোচনা করলে দেখা যায়, ১২৮০ সন অর্থাৎ ইংরেজি ১৮৭৩ সালের বেশ কয়েক বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়, ‘পূর্ণচন্দ্রোদয়’ নামক যন্ত্র এবং সেখান থেকে ‘পরিমল বাহিনী’ ১৮৭২ সালের অনেক আগেই প্রকাশিত হয়েছে। বিলুপ্ত অথবা দুষ্প্রাপ্য পত্রপত্রিকার সঠিক কাল নির্ণয় অত্যন্ত দুরূহ একটি বিষয়। প্রচলিত ধারণা যে, গেজেটীয়ার সাধারণত নির্ভুল হয়। কিন্তু বাখরগঞ্জ জেলা গেজেটিয়ার (ইংরেজি এবং বাংলা উভয়ই) এ ধারণাকে সর্বাংশে ভুল প্রমাণিত করেছে। যেমন গেজেটিয়ার এ ‘পরিমল বাহিনী’ কে প্রথম ছাপাখানা থেকে প্রকাশিত প্রথম পত্রিকা বলা হলেও এর প্রকাশ কাল লেখা হয়েছে ১৮৯৫ সাল। আমাদের ধারনা মুদ্রন প্রমাদ জনিত কারণে এ রকম হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে এর প্রকাশ হবে  ১৮৫৯ সাল ।  
+
খোসাল চন্দ্র রায় এর লেখার সূত্র ধরে আলোচনা করলে দেখা যায়, ১২৮০ সন অর্থাৎ ইংরেজি ১৮৭৩ সালের বেশ কয়েক বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়, ‘পূর্ণচন্দ্রোদয়’ নামক যন্ত্র এবং সেখান থেকে ‘পরিমল বাহিনী’ ১৮৭২ সালের অনেক আগেই প্রকাশিত হয়েছে। বিলুপ্ত অথবা দুষ্প্রাপ্য পত্রপত্রিকার সঠিক কাল নির্ণয় অত্যন্ত দুরূহ একটি বিষয়। প্রচলিত ধারণা যে, গেজেটীয়ার সাধারণত নির্ভুল হয়। কিন্তু বাখরগঞ্জ জেলা গেজেটিয়ার (ইংরেজি এবং বাংলা উভয়ই) এ ধারণাকে সর্বাংশে ভুল প্রমাণিত করেছে। যেমন গেজেটিয়ার এ ‘পরিমল বাহিনী’ কে প্রথম ছাপাখানা থেকে প্রকাশিত প্রথম পত্রিকা বলা হলেও এর প্রকাশ কাল লেখা হয়েছে ১৮৯৫ সাল। আমাদের ধারনা মুদ্রন প্রমাদ জনিত কারণে এ রকম হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে এর প্রকাশ হবে  ১৮৫৯ সাল ।
 
+
  
 
== নাম বিভ্রাট ==
 
== নাম বিভ্রাট ==

১১:০৬, ৫ অক্টোবর ২০২০ তারিখে সম্পাদিত বর্তমান সংস্করণ

পরিমল বাহিনী বরিশালের প্রথম মুদ্রিত পত্রিকা। এটির প্রকাশকাল ১৮৫৯। এটি একটি পাক্ষিক পত্রিকা ছিল।


সূচনা

১৮৫৯ সালে বরিশালে প্রথম বাংলা মুদ্রণযন্ত্র স্থাপিত হয়। এর নাম ছিল ‘পূর্ণ চন্দ্রোদয়’। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ঝালকাঠী থানাধীন (বর্তমানে জেলা) বাসন্ডা গ্রাম নিবাসী শ্রী পূর্ণচন্দ্র সেন এবং এর অব্যবহতি পরপরই ১৮৫৯ সালে ঐ মুদ্রণযন্ত্র থেকে তারপাশা গ্রাম নিবাসি হরকুমার রায়-এর সম্পাদনায় বরিশালের প্রথম পাক্ষিক পত্রিকা ‘পরিমল বাহিনী’ আত্মপ্রকাশ করে। পত্রিকাটিতে বিজ্ঞাপন বা নিলামী ইস্তেহার ছাপা হতো না। সংবাদ, নীতিমূলক প্রবন্ধ, কবিতা দিয়েই তা পূর্ণ থাকতো। এই পত্রিকাটি প্রকাশের সাথে সাথেই স্থানীয় সুধীসমাজে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। বেশ কিছুদিন চলার পর পত্রিকাটি অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ১৮৭২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর সংখ্যার ‘‘ঢাকা প্রকাশ’’ পত্রিকাটি এ পত্রিকা সম্পর্কে মন্তব্য করেছে:

‘এখানি পাক্ষিক পত্রিকা। বরিশালের কতিপয় যুবক ইহার প্রচারারম্ভ করিয়াছেন। অপরিণত বুদ্ধি আধুনিক যুবকদিগের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পদ্যপুস্তক ও সাময়িক পত্রিকা লেখার যে একটি অপ্রতিকার্য রোগ জন্মিয়াছে এখানি তাহার অন্যতম নিদর্শন স্বরূপ।’


প্রকাশকাল নিয়ে বিভেদ

‘ঢাকা প্রকাশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত সমালোচনার সূত্র ধরেই সম্ভবত ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ‘পরিমল বাহিনী’র প্রকাশকাল জুলাই ১৮৭২ (শ্রাবণ ২য় পক্ষ, ১২৭৯ বাংলা) বলে উল্লেখ করেছেন এবং মুনতাসীর মামুনও এর প্রকাশকাল ১৮৭২ সাল লিখেছেন। কিন্তু পত্রিকাখানা অনেক বছর আগেই প্রকাশিত হয়েছিল বলে প্রাপ্ত তথ্যাদি বিশ্লেষণে মনে হয়। ‘অশি^নীকুমার’ জীবনীগ্রন্থের রচয়িতা সুরেশচন্দ্র গুপ্ত ১২৭০ সনের পর (অর্থাৎ ১৮৬৩ সাল) প্রেস এবং পত্রিকাটি চালু হয় বলে মনে করেন। অন্যদিকে ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে বরিশাল’ (১ম খন্ড) গ্রন্থের লেখক হীরালাল দাশগুপ্ত প্রেস এবং পত্রিকাটির প্রকাশকাল ১৮৬২ সাল বলে মনে করেন। অন্যদিকে তাঁর লেখা থেকেও এটা মনে হয় যে পত্রিকাটি ‘ঢাকা প্রকাশ’ বর্ণিত তারিখের অনেক আগেই প্রকাশিত হয়েছিল। ‘বাকলা’ গ্রন্থের লেখক রোহিনীকুমার সেন এ সম্পর্কে লিখেছেন- ‘১৮৭০ খ্রীঃ অব্দে মুদ্রাযন্ত্র প্রথমতঃ বরিশাল নগরীতে বাসন্ডা নিবাসী সূর্যচন্দ্র গুপ্ত স্বনামে স্থাপিত করেন। ‘পরিমল বাহিনী’ নামক একখানি পাক্ষিক সংবাদপত্র সেই মুদ্রাযন্ত্রে ছাপা হইত। কয়েক বৎসর পরে উভয়েরই অস্তিত্ত¡ বিলোপ হইয়া যায়।’ দুটি বিষয়ে খোসালচন্দ্র রায়, রোহীনীকুমার সেন, সুরেশচন্দ্র গুপ্ত ও শরৎকমার রায় একমত যে, ‘পরিমল বাহিনী’ ই বরিশালের প্রথম পত্রিকা এবং এর প্রকাশকাল ১৮৭২ সালের আগে। এ প্রসঙ্গে আরও বলা যায় যে, ‘মহাত্মা অশি^নীকুমার’ গ্রন্থের লেখক, শান্তিনিকেতন ব্রহ্ম বিদ্যালয়ের এককালীন শিক্ষক শরৎকুমার রায় ১৮৭৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি যে পত্রিকাটি দেখেন নি, তাঁর পিতার মুখে শুনেছেন সে পত্রিকাটি অবশ্যই একটু বেশী আগের না হলে ঐ পত্রিকার কোনো না কোনো সংখ্যা তার চোখে পড়তো। তাছাড়া ১৮৭০ থেকে ৭৫ সাল পর্যন্ত কার্যত বরিশালের তৎকালীন জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট ও বাখেরগঞ্জের ইতিহাস নামক ইংরেজী গ্রন্থের প্রণেতা মিঃ এইচ. বেভরিজও পরিমল বাহিনী সম্পর্কে কোন তথ্য দিতে পারেননি। এ থেকে মনে হয়, বেভারিজ বরিশালে আসার পূর্বেই পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়েছিল। বাখরগঞ্জের ইতিহাস গন্থের রচয়িতা খোসালচন্দ্র রায় ১৮৯৫ সালে প্রকাশিত ঐ গন্থে লিখেছেন- ‘সর্বপ্রথমে বাসন্ডার বাবু পূর্ণচন্দ্রসেন, পূর্ণচন্দ্রোদয় নামক একটি যন্ত্র স্থাপন করেন। পরিমল বাহিনী পত্রিকা তথায় মুদ্রিত হইত। উক্ত যন্ত্র কয়েক বৎসর পর উঠিয়া গিয়াছে। বাঙ্গালা ১২৮০ সনে বাবু প্রতাপ চন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের কাশিপুর যন্ত্র, ১২৯৪ সনে বাবু রাজমোহন চট্টোপাধ্যায়ের হিতৈষী যন্ত্র ও ১৩০২ সনে বাবু অক্ষয় কুমার চট্টোপাধ্যায়ের আদর্শ যন্ত্রালয় স্থাপিত হওয়ায়, অধিবাসীগনের বিশেষ সুবিধা হইয়াছে।’ খোসাল চন্দ্র রায় এর লেখার সূত্র ধরে আলোচনা করলে দেখা যায়, ১২৮০ সন অর্থাৎ ইংরেজি ১৮৭৩ সালের বেশ কয়েক বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়, ‘পূর্ণচন্দ্রোদয়’ নামক যন্ত্র এবং সেখান থেকে ‘পরিমল বাহিনী’ ১৮৭২ সালের অনেক আগেই প্রকাশিত হয়েছে। বিলুপ্ত অথবা দুষ্প্রাপ্য পত্রপত্রিকার সঠিক কাল নির্ণয় অত্যন্ত দুরূহ একটি বিষয়। প্রচলিত ধারণা যে, গেজেটীয়ার সাধারণত নির্ভুল হয়। কিন্তু বাখরগঞ্জ জেলা গেজেটিয়ার (ইংরেজি এবং বাংলা উভয়ই) এ ধারণাকে সর্বাংশে ভুল প্রমাণিত করেছে। যেমন গেজেটিয়ার এ ‘পরিমল বাহিনী’ কে প্রথম ছাপাখানা থেকে প্রকাশিত প্রথম পত্রিকা বলা হলেও এর প্রকাশ কাল লেখা হয়েছে ১৮৯৫ সাল। আমাদের ধারনা মুদ্রন প্রমাদ জনিত কারণে এ রকম হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে এর প্রকাশ হবে ১৮৫৯ সাল ।

নাম বিভ্রাট

পত্রিকাটির নাম নিয়েও কিঞ্চিৎ বিভ্রাট রয়েছে। ‘মহাত্মা অশি^নীকুমার’ জীবনী গ্রন্থের রচয়িতা শরৎকুমার রায় এ প্রসঙ্গে লিখেছেন- ‘প্রায় ষাট বৎসর পূর্বে বরিশাল জিলায় সর্বপ্রথমে এই গ্রন্থাকারের জনক পরলোকগত পন্ডিত হরকুমার রায় মহাশয় ‘পরিমল কাহিনী’ নামক একখানি সাপ্তাহিক সংবাদপত্র প্রকাশ করিয়াছিলেন। সেই কিঞ্চিদধিক অর্ধ-শতাব্দী পূর্বে গ্রামে বাস করিয়াও লোকশিক্ষার জন্য সংবাদপত্রের প্রয়োজনীয়তার কথা তাহার মনে জাগিয়া উঠিয়াছিল। বাসন্ডা গ্রামের ‘পূর্ণচন্দ্রোদয়’ নামক এক প্রেসে সেই সংবাদপত্রখানি মুদ্রিত হইত। সেই পত্রিকায় বিজ্ঞাপন বা নিলামী ইস্তাহার ছাপা হইত না। সংবাদ ও নীতিমূলক প্রবন্ধ দ্বারাই পত্রিকা পূর্ণ থাকিত। পিতৃদেবের মুখে শুনিয়াছি, এই পত্রিকা প্রচার করিয়া তিনি ঋণজালে জড়িত হইয়াছিলেন এবং অর্থাভাবে এই পত্রিকার আয়ু দীর্ঘকাল রক্ষা করিতে পারেন নাই।’ শরৎকুমার রায় পত্রিকাটির নাম লিখেছেন ‘পরিমল কাহিনী’ এবং এটিকে সাপ্তাহিক পত্রিকা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। প্রথম মুদ্রণযন্ত্রের কাল- বাকেরগঞ্জের প্রথম মুদ্রণযন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতার নাম নিয়েও ইতিহাসকারদের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা যায়। প্রায় সব ইতিহাসকার যেখানে পূর্ণচন্দ্র সেন- কে প্রথম মুদ্রণযন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নিঃসংশয় স্বীকার করে নিয়েছেন সেখানে রোহিনীকুমার সেন তার বাকলা গ্রন্থে প্রথম মুদ্রন যন্ত্রে প্রতিষ্ঠাতার নাম লিখেছেন সুর্য চন্দ্রগুপ্ত। মনে হয় এখানেও মুদ্রণ-প্রমাদ কাজ করেছে। হয়তো বা লেখকের অনবধানতাও। কেননা, ‘পূর্ণচন্দ্র’ মুদ্রণ প্রমাদজনিত কারনে ‘সূর্যচন্দ্র’ হতে পারে। আবার সেনগুপ্ত পদবির ‘সেন’টুকু বাদ দিয়ে সংক্ষেপে ‘গুপ্ত’ লেখাটাও বিচিত্র নয়। সে যাই হোক, সকল ইতিহাসকার ও গ্রন্থ রচয়িতাগণই স্বীকার করেছেন যে, প্রথম মুদ্রণযন্ত্র প্রতিষ্ঠাতা ‘বাসন্ডা’ গ্রাম নিবাসী।


উপসংহার

তথ্যাদি বিশ্লেষণে একথা বলা যায় যে, ‘পরিমল বাহিনী’ বরিশালের সর্বপ্রথম এবং সারা দেশের প্রাচীন পত্রিকার একটি। এটি ১৮৫৯ সালে প্রকাশিত হয়েছিল।


তথ্যসূত্র: তপংকর চক্রবর্তী। বরিশালের সংবাদ ও সাময়িকপত্র। বাংলা একাডেমি। ২০০১।