পটুয়াখালী সরকারি কলেজ
পটুয়খালী জেলার সর্বাধিক ঐতিহ্যবাহী কলেজের নাম পটুয়াখালী সরকারি কলেজ। কলেজটি ১৯৫৭ সালের ৫ জুন তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নির্দেশনায় প্রতিষ্ঠিত হয়।
পরিচ্ছেদসমূহ
প্রতিষ্ঠার ইতিহাস
শেরে বাংলা একে ফজলুল হক ১৯৩৭ সালে পটুয়াখালী হতে বঙ্গীয় আইন পরিষদে মুসলিম লীগ নেতা ও পটুয়াখালীর জমিদার খাজা নাজিমউদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়লাভ করেন। কথিত আছে যে, নির্বাচনকালে তিনি পটুয়াখালীবাসীকে অঙ্গীকার করেছিলেন যে, তিনি পটুয়াখালী শহরে কলেজ প্রতিষ্ঠা করবেন। কিন্তু চাখারবাসীর চাপে তিনি অঙ্গীকার রাখতে পারেননি। তিনি ১৯৪০ সালে চাখার কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে পটুয়াখালী থেকে নির্বাচিত হলেন কেএসপি নেতা বিডি হাবিবুল্লাহ, বাউফল থেকে এমদাদ আলী, গলাচিপা থেকে এমএ করিম, বরগুনা থেকে আবদুল কাদের মিয়া, আমতলী থেকে মহম্মদ ইসমাইল তালূকদার। নির্বাচিত এমএলএগণ ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ পটুয়াখালী শহরে কলেজ প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসেন। ১৯৫৬ সালে ভোলায় একটি ও পিরোজপুরে দুটি আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরায়ার্দী বরিশাল, পিরোজপুর ও ভোলায় জনসভা করেন। স্থানীয় এমএলএ ও নেতৃবৃন্দের দাবির প্রেক্ষিতে তিনি পিরোজপুর, পটুয়াখালী ও ভোলায় একটি করে কলে এবং বরিশালে একটি মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেন। এই অঙ্গীকার পূরণের প্রয়াসে ১৯৫৬ সালে পটুয়াখালী মহকুমা প্রশাসককে আহ্বায়ক করে পটুয়াখালী কলেজের সাংগঠনিক কমিটি গঠন করা হয়। এমএলএ ও স্থানীয় বিদ্যেৎসাহী ব্যক্তিগণ কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৫৭ সালের ৫ জুন পটুয়াখালী কলেজের যাত্রা শুরু হয়। সৈয়দ আহমেদ আলীকে পটুয়াখালী কলেজে প্রথম অধ্যক্ষ নিয়োগ করা হয়। পটুয়াখালী কলেজের প্রথম কার্যক্রম শুরু হয় শহরের বর্তমান পটুয়াখালী সরকারি মহিলা কলেজের জায়গায়। তখন মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ১৯৬৬ সালে মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। কলেজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অনেকে অর্থ দান করেন।
প্রতিষ্ঠাকালে দাতাদের অর্থের পরিমাণ
১. নিবারণ চন্দ্র কবিরাজ, লক্ষীপুর, দশমিনা - ৬ হাজার টাকা; ২. ফরমান আলী মল্লিক, টেপুরা, গলাচিপা - ৫ হাজার টাকা; ৩. মোঃ হাশেম আলী, টেপুরা, গলাচিপা - ২ হাজার টাকা; ৪. নুরুল হক রাজমিয়া, পটুয়াখালী - ২ হাজার টাকা; ৫. মোতাহার হোসেন সিকদার, আমতলী - ১ হাজার টাকা; ৬. আবুল হোসেন তালুকদার - ১ হাজার টাকা।
বেসরকারি আমলে কলেজের অধ্যক্ষবৃন্দ
১. সৈয়দ আহমেদ আলী, প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ (০৫.০৬.১৯৫৭ হতে ২৫.০৬.১৯৬০); ২. মিয়া মহম্মদ কায়মুদ্দিন (২৬.০৬.১৯৬০ হতে ০৪.১১.১৯৬০); ৩. আবু মাহম্মদ (০৫.১১.১৯৬০ হতে ৩১.০৩.১৯৬১); ৪. মিয়া মহম্মদ কায়মুদ্দিন (১৫.১১.১৯৬১ হতে ৩১.০৫.১৯৬৩); ৫. অহিদ উদ্দিন আহমদ (০৯.০৮.১৯৬৩ হতে ৩১.০৮.১৯৬৯); ৬. মমিদ উদ্দিন খান (ভারপ্রাপ্ত) (০১.০৯.১৯৬৯ হতে ১১.০৮.১৯৭০); ৭. ড. মোহাম্মদ নইমুদ্দিন (১২.০৮.১৯৭০ হতে ০৯.১০.১৯৭২); ৮. মোসলেম মিয়া (১০.১০.১৯৭০ হতে ৩০.০৪.১৯৭৩);
অবকাঠামো
কলেজের মোট জমি ২৪.৬০ শতাংশ। ৪টি ভবন। ১৬টি বিষয় সম্মান, ১৪টি বিষয় স্নাতকোত্তর পড়ান হয়। ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা ১২ হাজার। বর্তমান স্থানে ভবন নির্মিত হলে পটুয়াখালী কলেজ মহিলা কলেজ হতে স্থানান্তর করা হয়। ১৯৭০ সালের ১ মে পটুয়াখালী কলেজ সরকারি করা হয়।
তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (দ্বিতীয় খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১৫