পটুয়াখালীর সত্যাগ্রহ আন্দোলন

Barisalpedia থেকে
Spadmin (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১২:৩০, ১৮ জুলাই ২০২০ পর্যন্ত সংস্করণে ("পটুয়াখালীর সত্যাগ্রহ আন্দোলন বরিশালের ইতিহাসের স্মরণ..." দিয়ে পাতা তৈরি)

(পরিবর্তন) ←পুর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ→ (পরিবর্তন)

পটুয়াখালীর সত্যাগ্রহ আন্দোলন বরিশালের ইতিহাসের স্মরণীয় ঘটনা। সত্যাগ্রহ হলো হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ধর্ম পালনের অধিকার আদায়ের আন্দোলন। মূলত এ আন্দোলন ছিল মসজিদের সামনে দিয়ে বাদ্য-বাজনা বাজিয়ে ধর্মীয় শোভাযাত্রা সহ যাওয়ার অধিকার কায়েমের আন্দোলন।

১৯২৪ হতে ১৯২৮ খৃৃস্টাব্দে পর্যন্ত পটুয়াখালী সত্যাগ্রহ আন্দোলন চলে। সত্যাগ্রহ আন্দোলনের নেতা ছিলেন সতীন্দ্রনাথ সেন। ১৯২৩ খৃৃস্টাব্দে পটুয়াখালীর লতিফ সেমিনারী উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয়ের পূজার একটি ঘটনা নিয়ে হিন্দু-মুসলমান সম্পর্কের অবনতি ঘটে। স্কুলের কালী পূজা নিয়ে বিবাদের সূত্রপাত হয়। মুসলমান ছাত্ররা স্কুলে কোরবানী দিতে পারতো না। তাই তারা বিদ্যালয়ে পূজার বিরোধিতা করে। হিন্দু ছাত্ররা যথারীতি পূজা দেয়। কিন্তু রাতের অন্ধকারে একদল দুষ্ট লোক দেবীর সামনে গরুর মাথা রেখে আসে। প্রতিমা বিসর্জন বন্ধ হয়ে যায়। কয়েকদিন পরে গৃহটি পুড়িয়ে ফেলা হয়।

এঘটনায় উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে দারুণ উত্তেজনা সৃষ্টি হয। হিন্দুরা পূজার সময় পটুয়াখালীর সদরঘাটের মসজিদের সম্মুখ হয়ে বাজনা বাজিয়ে প্রতিমা বিসর্জন দিতে চায়। মুসলমানরা দাবি জানায় যে, কোন অবস্থায় মসজিদের সম্মুখ দিয়ে প্রতিমা নেয়া চলবে না। হিন্দুরা মুসলমানদের প্রস্তাবে রাজি হতে পারেনি। সত্যাগ্রহ আন্দোলনে সতীন সেনের সাথে যারা নেতৃত্ব দেন তারা হলেন হীরালাল দাশগুপ্ত, দেবেন্দ্রনাথ দত্ত, আশু মুখার্জী, কৃষ্ণ চ্যাটার্জী, ফণী চ্যাটার্জী, রবি রায়, বিনোদ কান্তিলাল, দীনেশ সেন, সুরেন গাঙ্গুলী, রেবতী গাঙ্গুলী প্রমুখ। সত্যাগ্রহ আন্দোলনের বিরুদ্ধে মুসলমানদের মধ্যে যারা নেতৃত্ব দেন তারা ছিলেন খান বাহাদুর মুহাম্মদ আকরম, খান সাহেব এমদাদ, আফাজ উদ্দিন তালুকদার, মুনসুর আলী মোক্তার, বেলায়েত আলী খান, মীর মোশারেফ হোসেন, ডা. মুজিবর রহমান, আবদুল মালেক আনসারী, বিডি হাবিবুল্লাহ, নুরুল হুদা খলিলুল্লাহ, শহীদ আলতাফ মিয়া , ওবায়েদুল হক প্রমুখ।

প্রায় পাচঁ হাজার মুসলমান লাঠিয়াল পটুয়াখালীতে একত্রিত হলো। তাদের নেতা ছিলেন ওমর আলী খান, দলিল উদ্দিন সর্দার, আজিম উদ্দিন পাটওয়ারী মিয়াজান ও তাজদ্দিন। বিডি হাবিবুল্লাহ, ওবায়েদুল হক, ডা. মুজিবর রহমান, আলতাফ মিয়া প্রমুখের চেষ্টায় পটুয়াখালীতে মোহামেডান ইয়ংম্যান এ্যাসোসিয়েশন গঠন করা হয়। ওবায়েদুল হক ও ডাক্তার আবুল হাসেমের পরিচালনায় ব্যায়ামাগার, পাঠাগার প্রভৃতি চালু করা হয়। মুসলমানরা হিন্দু ডাক্তারের নিকট যেত না বলে আরশেদ ফার্মেসী নামে একটি প্রতিষ্ঠান খোলা হয় যার চিকিৎসক ছিলেন ডাক্তার গাজী মমতাজ উদ্দিন আহমেদ।

সত্যাগ্রহ আন্দোলনের সময় পটুয়াখালীতে প্রায়দিন হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে সংঘর্ষ হতো এবং তাতে অনেকে আহত হতো। শান্তি রক্ষা করতে এসে এসডিও জিএন তালুকদার ও ম্যাজিষ্ট্রেট আবদুল হালিম আহত হন। বাংলার বিভিন্ন জেলা ও ভারতের অনেক স্থান হতে কংগ্রেস ও হিন্দু মহাসভার কর্মীরা দলে দলে পটুয়াখালীর সত্যাগ্রহ আন্দোলনে অংশ নেয়। সারা ভারতে সত্যাগ্রহ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে এবং হিন্দু মুসলমান সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে। পটুয়াখালীর হিন্দুদের ওপর শাস্তিমূলক পুলিশ কর বসানো হয়। তবু প্রত্যহ হরতাল পালিত হতো। সদর রোডে হিন্দু মেয়েরা শুয়ে থেকে সরকারী কর্মচারীর হাত দিয়ে সরিয়ে দেবার চেষ্টা করলে আন্দোলন আরও তীব্র হয়। মোহিত লাল চক্রবর্তী, কালু বকশী, কালাচাঁদ, এসডিও জিএন তালুকদারকে আহত করে। সরকার আন্দোলন বন্ধ করার জন্য হীরালাল দাশগুপ্ত, রবি রায়, দেবেন দত্ত প্রমুখ সত্যাগ্রহ কর্মীদের ১১০১ ধারায় বন্দী করে। কুলকাঠির ঘটনার পর ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ মার্চ সতীন সেনকে বন্দী করা হয়। তবু আন্দোলন চলল। অবশেষে ব্লান্ডির পর মিঃ ডনোভন জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট নিযুক্ত হন। ডনোভন সত্যাগ্রহ আন্দোলন বন্ধ করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। দীর্ঘ দু’বছর পর ১৯২৮ খৃৃস্টাব্দে সত্যাগ্রহ আন্দোলন স্তিমিত হয়ে যায়।



তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০।