নীহার সরকার

Barisalpedia থেকে

প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ, সমাজবিজ্ঞানী, বিশিষ্ট গবেষক ও স্বাধীনতা সংগ্রামী অধ্যাপক নীহার সরকারের (১২.১২.১৯১৫ - ২৪.১.১৯৯৬) মূল বাড়ি বরিশাল। তাঁর পিতার নাম ইন্দুনাথ সরকার।

নীহার ছাত্রাবস্থাতেই রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন এবং কয়েকবার কারাবরণ করেন। অন্তরীন অবস্থায় এম.এ. পরীক্ষা দিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিষয়ে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। পরে লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিক্স থেকে পিএইচ.ডি ডিগ্রি লাভ করেন। অধ্যাপনার শুরু শ্রীরামপুর কলেজে। পরে আগ্রা কলেজে যোগ দেন। আগ্রায় তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত হন। তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ রিপোর্ট থাকার ফলে আইরিশ অধ্যক্ষ তাঁকে কলেজ ছাড়তে বাধ্য করলেও তিনিই ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে বাঁকুড়া ক্রিশ্চিয়ান কলেজে তাঁর অধ্যাপক পদের জন্য সুপারিশ করে দেন। এখানে থাকতেই তিনি অত্যন্ত সহজ বাংলায় সর্বসাধারণের বোধগম্যভাবে মার্কসবাদী অর্থনীতি ও রাজনীতির উপর দুখানি বই লেখেন। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে ‘ছোটদের অর্থনীতি’ ও ‘ছোটদের রাজনীতি’ নামে বই দুখানি প্রকাশিত হয়। সেই সময় তিনি স্কটিশ চার্চ কলেজের অধ্যাপক ছিলেন। বই দুখানির অনুবাদও হয়েছে। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে মন্বন্তরের সময় ইংরেজ সরকারের মজুত খাদ্যভান্ডার থেকে বুভুক্ষু মানুষের খাদ্যবিলির আন্দোলনের তিনি পুরোভাগে ছিলেন। স্কটিশ চার্চ কলেজ হোস্টেলের সুপারিনটেন্ডেন্ট থাকাকালে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে দাঙ্গার সময় তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়েও বহু নর-নারীকে উপদ্রুত এলাকা থেকে উদ্ধার করে হোস্টেলের নিরাপদ আশ্রয়ে রেখেছিলেন। এই কলেজে তাঁর সংগঠিত মার্কসবাদী পাঠচক্রের অনেক সদস্যই জীবনের নানাক্ষেত্রে খ্যাতিমান। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি শ্রীলঙ্কা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে যোগ দেন। ওই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রকাশিত তাঁর কয়েকটি গবেষণা নিবন্ধ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে। নির্জোট আন্দোলনের পূর্বসুরি বান্দুং সম্মেলনকে (১৯৫৫) কেন্দ্র করে আফ্রো-এশিয়ার বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিবিদদের যে বৈঠক হয় তিনি ছিলেন তার অন্যতম সদস্য। রাষ্ট্রসংঘের আমন্ত্রণে ওই সংস্থার জনসংখ্যা সংক্রান্ত গবেষণা বিভাগে ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে যোগ দিয়ে প্রায় দুই দশক তার সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। সংখ্যাতত্ত্ব, জনসংখ্যা সমস্যা ও প্রাচ্যদেশের অর্থনীতি সংক্রান্ত তাঁর কয়েকটি গবেষণা নিবন্ধ রাষ্ট্রসংঘ কর্তৃক প্রকাশিত হয়। ব্যাংককে অবস্থিত ‘ইকনমিক কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড ফার ইস্ট (ইকাফে)’ সংস্থার গবেষণা বিভাগের প্রধান হিসেবে কর্মরত থাকাকালে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ব্যাংককের ভারতীয়দের উদ্বুদ্ধ করে লক্ষাধিক টাকার বস্ত্র, কম্বল ইত্যাদি এবং ৫০ হাজার টাকা সংগ্রহ করে ব্যাংককে তৎকালীন ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের সহায়তায় ঢাকায় উপস্থিত হন এবং জাতীয় মহিলা ফেডারেশনের মাধ্যমে তার বিলিবন্টনের ব্যবস্থা করেন। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ‘ইকাফে’ থেকে অবসর নিয়ে তিনি ন্যাশনাল লেবার ইনস্টিটিউটের প্রধান পরামর্শদাতা ছিলেন। যোশী-অধিকারী ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি হিসেবে ওই সংস্থার সঙ্গেও তাঁর বিশেষ যোগ ছিল। তাঁর রচিত গ্রন্থ: ‘ভারতের অর্থনীতি’, ‘দি ডিসইনটিগ্রেটিং ভিলেজ’ (সিংহল বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত), ‘ভারতের সমাজ কাঠামো ও উন্নয়ন পন্থা’, ‘ডেমোগ্রাফি অফ সিলোন’, ‘সোশ্যাল স্ট্রাকচার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্ট্র্যাটেজি ইন এশিয়া’ প্রভৃতি।


তথ্যসূত্র: সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান।