নলছিটি দরগাবাড়ির যুদ্ধ, ১৯৭১

Barisalpedia থেকে

দরগাবাড়ির যুদ্ধ দক্ষিণ বাংলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এ যুদ্ধের নায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ মাহমুদ। আলতাফ মাহমুদের জন্ম নলছিটি থানার কুশঙ্গল গ্রামে। তিনি ঝালকাঠি কলেজের বিএ’র ছাত্র এবং ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। ১৯৭১ সালের জুন মাসে তিনি ও তার বড় ভাই মুজিবুর রহমান মুক্তিবাহিনী গড়ে তোলের। নলছিটি থানা কমান্ডার ছিলেন বিরঙ্গল গ্রামের ইপিআর সুবেদার সেকান্দার আলী। সিভিল চীফ ছিলেন ছাত্রনেতা আলতাফ মাহমুদ। তাঁরা পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে কয়েকটি সফল অভিযান চালান। ৯ আগস্ট সিকান্দার, আলতাফ, রব, চুন্নু, ফারুক প্রমুখ কাঠালিয়া থানা আক্রমণ করে পুলিশের সকল অস্ত্র নিয়ে আসেন। ১৩ নভেম্বর সেকান্দার-আলতাফ বাহিনী নলছিটি থানায় পাকবাহিনীর ঘাঁটি আক্রমণ করে। সিকান্দার, রব, চুন্নু, আলতাফ, মাসুদ, খালেক, বিন্দু ঘোষ, ওয়াহেদ, হাবিবসহ ৪৫ জনের দল নলছিটি থানা অপারেশনে অংশ নেয়। যুদ্ধে বিজয় যখন আসন্ন তখন মালেক ও বরিশাল গোরস্তান রোডের মমতাজ উদ্দিনের পুত্র ফজলুল করিম থানার ভেতরে প্রবেশ করার সময় শত্রুর গুলিতে শহীদ হন। মুক্তিযোদ্ধারা শহীদদ্বয়ের লাশ বাহাদুরপুর ক্যাম্পে নিয়ে আসেন। নলছিটি থানা আক্রমণের সংবাদ পেয়ে ঝালকাঠি থেকে পাকবাহিনী এসে নলছিটির দেওপাশা ও পরমপাশা গ্রাম জ্বালিয়ে দেয় এবং নির্যাতন শুরু করে। এ সময় দুর্বৃত্তদের প্রতিহত করার জন্য সেকান্দার ও আলতাফের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী পাকবাহিনীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। মুক্তিবাহিনী পরমপাশা স্কুল, তালতলা ও বাস-া এলাকায় অবস্থান নিয়ে যুদ্ধ শুরু করে। বিকেল ৩টিা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। আলতাফ মাহমুদ ও কবির হোসেন শীতলপাড়া পুলের নিচে অবস্থান নিয়ে যুদ্ধ করতে থাকে। তাদের একটি মাত্র এলএমজি ছিল। হঠাৎ পাকসেনাদের গুলিতে আলতাফ ও কবীর নিহত হন। মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে টিকতে না পেরে অস্ত্র রেখে পাকবাহিনী পালিয়ে যায়। কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয়। আলতাফ মাহমুদকে তার গ্রামের বাড়ি কুশাঙ্গলে এবং কবির হোসেনকে রাজাপুরে তার গ্রামের বাড়িতে কবর দেয়া হয়।


তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (দ্বিতীয় খণ্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১৫।