দেবেন্দ্রনাথ ঘোষ

Barisalpedia থেকে

সশস্ত্র বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা। জন্ম: ২২ এপ্রিল ১৮৯০ সাল। মৃত্যু : ১১ জানুয়ারী ১৯৯৯। পিতা: নিবারণ চন্দ্র ঘোষ। জন্মস্থান: কাউনিয়া, বরিশাল।

শিক্ষাজীবন

দেবেন্দ্রনাথ ঘোষ নবম শ্রেণীতে অধ্যয়নকালীন করারুদ্ধ হন, পরবর্তীতে বৃটিশ সরকার তাঁর পড়াশুনার উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করেন।

বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে যোগদান

১৯০২ সালে অনুশীলন সমিতি নামে বৃটিশ বিরোধী একটি সশস্ত্র বাহিনী গঠিত হয়। পুলিন বিহারী দাশ এই সংগঠনের পূর্ব বাংলার পরিচালক ছিলেন। স্কুল বালক দেবেন্দ্রনাথ ঘোষ এই সমিতির সদস্য ছিলেন। ১৯০৮ সালে খরাজনিত দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে তিনি অন্যান্য যুবক নিয়ে ত্রাণকার্যে অংশ গ্রহণ করেন। ৮ম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালীন মহাত্মা অশ্বিনীকুমার দত্তের প্রযোজনায় লিটল ব্রাদার্স অব দি পুয়োর নামে একটি ছাত্র সংগঠন গঠিত হলে তিনি এ সংগঠনে বরিশালের স্কুল ও কলেজ শাখার দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়া তখন রামকৃষ্ণ মিশনের দায়িত্বও তাঁর উপরে ছিল। অনুশীলন সমিতি কিছুকাল পরে বৃটিশ সরকার বন্ধ করে দিলে আন্ডারগ্রাউন্ড সংগঠন হিসাবে এর কার্যক্রম চলতে শুরু করে। এই সমিতিতে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেবেন্দ্রনাথ ঘোষ দুই হাতে দুই পিস্তল সমান ভাবে চালাতে পারতেন। ১৯১৩ সালে রমেশ চন্দ্র আচার্য্য, যতীন্দ্রনাথ রায়, গোপাল মুখার্জি, চন্ডিকর, চন্ডি বসু, নিবারন কর, নলিনী দাস সহ তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তখন তিনি নবম শ্রেণীর ছাত্র। ১৯১৬ সালে মুক্তি দিলেও কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়ন অথবা কোন চাকরীসহ যে কোন সরকারী সুযোগ সুবিধা থেকে তাকে বঞ্চিত করে রাখা হয়।

রাজনৈতিক কর্মকান্ড

কথিত আছে একদা জেলে থাকা অবস্থায় বাবু দেবেন্দ্র নাথ গভীর প্রার্থনায় রত হলেন। প্রার্থনার নিমগ্নতায় চৈতন্যহীন হয়ে আছেন এমন অবস্থায় হঠাৎ তিনি দেখতে পেলেন এক ঝলমলে আলোক রশ্মি, এই আলোক রশ্মির পিছনেই যেন রয়েছে তার আজীবন সাধনার বস্তু। কিন্তু হঠাৎ হারিয়ে গেলে তিনি ধপাস করে পরে গেলেন। সাধনার সেই বস্তু আর তাঁর পাওয়া হলো না। ১৯২০ সালে মোহনদাস করমচাদ গান্ধীর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে তিনি তার যুব বিপ্লবী দল নিয়ে এই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৩০ সালে আইন অমান্য আন্দোলনে তিনি পুনরায় গ্রেফতার হন এবং ১৯৩৮ সালে ছাড়া পান। ১৯৪০ সালে অনুশীলন পার্টিকে রিভোলুশনারি সোসালিষ্ট পার্টি নাম দেয়া হয় এবং ঐ সালেই দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শুরু হয়। পরে কংগ্রেস পার্টিতে যোগ দেন এবং আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯৪৬ সালে পুনরায় নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর সাথে গ্রেফতার হন। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পরে অল ইন্ডিয়া সোশালিস্ট পার্টিতে যোগ দেন।

দেশ বিভাগোত্তর জীবন

১৯৫০ সালের সাম্প্রদায়িক দাংগায় তিনি গ্রেফতার হন। ১৯৫৩ সালে ছাড়া পেয়ে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। তার প্রতিদন্দ্বী কংগ্রেস মনোনীত প্রার্থী অবনী নাথ ঘোষের সাথে তিনি বিপুল ভোটে জয় লাভ করেন। ১৯৫৮ সালের অক্টোবর মাসে সামরিক শাসন জারী করে সমস্ত পার্টি বন্ধ করে দেয়া হয়। ১৯৫৬ সালের যুদ্ধের সময় তিনি পুনরায় গ্রেফতার হন। ১৯৬৭ সালের শেষের দিকে মুক্তি পান। ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে তিনি ভারতে অবস্থান নেন এবং ১৯৭২ সালের শেষের দিকে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের সাথে কাজ করেন। বাকশাল গঠন হলে তিনি বাকশালে যোগ দেন। ১৯৭৫ সালে মুজিব হত্যার পরে ১৯৭৬ সালে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং ৬ মাস পরে মুক্তি দেয়া হয়।


মৃত্যু

তিনি বাকশাল বরিশাল জেলা শাখার সভাপতির দায়িত্ব ছাড়াও অধিকাংশ ধর্মীয় সামাজিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। ১১ জানুয়ারী ১৯৯৯ সালে এই চিরকুমার বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের কর্মী পরপারে পাড়ি জমান।



তথ্যসূত্র: রুসেলি রহমান চৌধুরী। বরিশালের প্রয়াত গুণীজন। ইউনিভার্সিটি বুক পাবলিশার্স, ঢাকা। ২০০৬।