দুর্গাসাগর

Barisalpedia থেকে

দুর্গাসাগর বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলাধীন মাধবপাশা গ্রামে অবস্থিত এক বিখ্যাত দীঘি ও পর্যটন স্থান। ১৭৮০ খৃস্টাব্দে রানী দুর্গাবতী এটি খনন করেন।


দীঘি খনন

রানী দুর্গাবতী ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে বাংলা ১১৮৭ সনে রাজধানী শ্রীনগর বা মাধবপাশায় এই দীঘি খনন করেন। কথিত আছে যে, পরিকল্পনা ছিল রানী একবারে যতদূর হেঁটে যেতে পারবেন দীঘি তত বড় হবে। রানী হেঁটে ১৩ দ্রোণ বা ৬১ কানি ভূমি অতিক্রম করেন। দীঘির পশ্চিমে শ্রীপুর, পূর্বে কলাডেমা, উত্তরে পাংশা এবং দক্ষিণে শোলনা ও ফুলতলা গ্রাম অবস্থিত। চার গ্রামের মধ্যস্থানে এক শুভদিনে হাজার হাজার লোক দীঘি খনন শুরু করে। চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের বিভিন্ন গ্রাম হতে প্রজারা দীঘি খননে অংশ নেয়। দীঘি খনন কাজ শেষ করতে ৬ মাস সময় লাগে। শ্রমিকরা সারাদিন কাজ করে পশ্চিম পাশে একটি দীঘিতে কোদাল ধৌত করত। এ দীঘির নাম কোদাল ধোয়া দীঘি। মাধবপাশা ও উজিরপুরের কর্মকাররা দীঘি খননের কোদাল তৈরি করেছিল। শ্রমিকদের মজুরি কড়ি দিয়ে পরিশোধ করা হতো। দীঘি খনন ও অর্চনার জন্য রানী রাজকোষ হতে ৩ লাখ টাকা ব্যয় করেন। চার পাড়ে ৫০ ফুট বিস্তৃত চারটি পাকা ঘাট নির্মাণ করেন।


দীঘির উদ্বোধন ও অর্চনা অনুষ্ঠান

উৎসর্গ উপলক্ষে রাজধানী শ্রীপুরে হাজার হাজার পণ্ডিত, ব্রাহ্মণকুলীন উপস্থিত। এমন সময় রাজপরিবারের এক বৃদ্ধার মৃত্যু ঘটে। এ ঘটনায় শিশু রাজা জয়নারায়ণের এক মাস অশৌচ পালন করতে হয়। বাধ্য হয়ে অতিথিদের এক মাস ধরে অথ্যর্থনা করতে হয়। অবশেষে নতুন পুণ্যাহ তিথিতে দীঘির উৎসর্গকাজ সমাপ্ত করা হয়।


দীঘির সংস্কার

প্রায় ১০০ বছর পূর্বে দীঘিটি জঙ্গলে আবৃত হয়ে যায়। জেলা বোর্ড ১২০০ টাকা ব্যয় করে দীঘিটি পরিষ্কার করে। তার পর দীর্ঘিদিন দুর্গাসাগরের কোন সংস্কার করা হয়নি। চারদিকে জনবসতি গড়ে ওঠে। ১৯৭৫ খৃৃস্টাব্দে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত দীঘি পুনসংস্কারের উদ্যোগ নেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রয়োজনীয় অর্থ ও গম বরাদ্দ করেন। জেলা প্রশাসক নূরুল আহাদ ও ঠিকাদার বশরাতুল্লাহ চৌধুরী খনন কাজ দ্রুত সম্পন্ন করান। দীঘির নিচের অংশের দৈর্ঘ্য ১৯৫০ ফুট ও প্রস্থ ১৭৫০ ফুট। ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে রানী দুর্গাবতী নিজ নামে যে দীঘি খনন করিয়াছিলেন তা পুনরায় জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান প্রায় দু’শ বছর পরে পুনর্খনন করিয়ে বাকেরগঞ্জের আপামর জনসাধারণকে কৃতজ্ঞতার আবদ্ধ রেখেছেন।



তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খণ্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০।