দুর্গাবতী, রানী

Barisalpedia থেকে
Spadmin (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৯:২৩, ৮ জুন ২০১৮ পর্যন্ত সংস্করণে ("রানী দুর্গাবতী ছিলেন চন্দ্রদ্বীপ বংশীয় পঞ্চদশ রাজা শিব..." দিয়ে পাতা তৈরি)

রানী দুর্গাবতী ছিলেন চন্দ্রদ্বীপ বংশীয় পঞ্চদশ রাজা শিবনারায়ণের স্ত্রী এবং বিখ্যাত দুর্গাসাগর দীঘির খননকারিনী। তাঁর পিতা ছিলেন নলছিটি থানার নথুল্লাবাদের মিরবহর পরিবারের সুযোগ্য জমিদার রামপ্রসাদ। দুর্গাবতীর তিন ভাইয়ের মধ্যে জ্যেষ্ঠ গোবিন্দ প্রসাদের কারণে রানী দুর্গাবতীর আমলে চন্দ্রদ্বীপ রাজত্বের পতন ঘটে।


জমিদারি পরিচালনা

দুর্গাবতীর স্বামী রাজা শিব নারায়ণ মদ্যপ ও উন্মাদ হয়ে যাওয়ায় দুর্গাবতী তাঁর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা গোবিন্দ প্রসাদকে চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের দেওয়ান নিয়োগ করেছিলেন। তার মাসিক বেতন ছিল এক হাজার টাকা। তিনি রাজ্যে প্রভাবশালী ছিলেন। তাই অনেকে তাকে রাজা বলে জানত এবং নথুল্লাবাদের মিরবহর বাড়িকে রাজবাড়ী বলত।

রানী দুর্গাবতী অনেক চেষ্টা করেও মদ্যপ ও কামুক স্বামীকে ঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হন। দুর্গাবতীকে কালা রানী বলা হতো। প্রজারা তাকে রাণীমাতা বলত। রাজার এই অবস্থায় দুষ্ট কর্মচারীরা রাজ্যের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করত এবং প্রজাদের উৎপীড়ন করে অর্থ আদায় করত। রানী বাধ্য হয়ে রাজ্যা শাসনের ভার নিজ হাতে গ্রহণ করেন। তিনি অনেক পুুরনো কর্মচারী বাদ দিয়ে নিজ আত্মীয়-স্বজনদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসান। তিনি তার ভ্রাতা গোবিন্দ প্রসাদকে রাজ্যের দেওয়ান নিযুক্ত করেন, আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। এসময় ঢাকা জেলার উলাইনে জমিদারী নিয়ে মামলা করতে হয়। রাজবল্লভের পুত্র গঙ্গাদাস দু’দলের মধ্যস্থতাকারী নির্বাচিত হন। এ মামলায় কালেক্টর এন গ্লোভার ও হরিরাম মল্লিক জজ ছিলেন। ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দের ২ ডিসেম্বর ফার্সী ও বাংলা ভাষায় মামলার রায় বের হয়। রায়ে শিবনারায়ণ তথা পরোক্ষে রানী জমিদারি লাভ করেন। লব্ধ জমিদারীর সনদে দিল্লীর স¤্রাট শাহ আলম বাদশাহ ও ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সিলমোহর ছিল।

রানীর রাজত্বকালে ১৭৭০ খৃৃস্টাব্দে মন্বন্তর দেখা দেয়। হেষ্টিংসের পাঁচসালা বন্দোবস্তের সময় চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যে দুর্যোগ দেখা দেয়। রাজ পরিবারের সাথে চাখারের মজুমদার ও মীরদের বিবাদ শুরু হয়। একবার শিব মেলায় মজুমদার ও রাজকর্মচারীদের মধ্যে ঝগড়া বাধে। মজুমদার ও মীররা মাধবপাশা আক্রমণ করে এবং রাজা শিবনারায়ণকে বন্দী করে নিয়ে যায়। এক রাতে প্রাচীর নির্মাণ করে রাজাকে বন্দী করে রাখা হয়। রাজাকে চাখারে যে বাড়িতে রাখা হয়েছিল, সে বাড়িকে রাজার হাউলী বলা হয়।

রাজা শিবনারায়ণ দীর্ঘদিন অসুস্থতার পর ১৭৭৭ খ্রিস্টব্দে দেহত্যাগ করলে রাজ্য সম্পূর্ণতই রানীর তত্ত্বাবধানে চলে আসে। তখন চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের ৭ লক্ষ টাকা রাজস্ব বাকি ছিল। রাজার দেওয়ান রামজীবন চক্রবর্তী সনদের নবায়নের জন্য ঢাকা ও কলিকাতায় গমন করেন। তিনি ১৭৭৮ খৃৃস্টাব্দে রাজস্ব পরিশোধ করেন এবং রাজার কোন পুত্রসন্তান না থাকায় দুর্গাক্রোড় নারায়ণ নামে সনদ প্রদান করে, কারণ রানী দুর্গাবতী সন্তানসম্ভবা ছিলেন। সেই জন্য রাজা জয়নারায়ণের আর এক নাম দুর্গাক্রোড় নারায়ণ।

রামজীবন ক্ষয়রোগে কিছুদিনের মধ্যে প্রাণ ত্যাগ করেন। রানী রামজীবনের পুত্র চন্দ্রশেখরের নামে কয়েকটি তালুক প্রদান করেন। রামজীবনের মৃত্যুর পর রানী নলচিড়ার শিবশংকর বকশীকে দেওয়ান নিযুক্ত করেন। শিবশংকর উদয়নারায়ণের সময় ভা-ার রক্ষক ও শিবনারায়ণের সময় বকশী ছিলেন। ৭ বছর পর্যন্ত তিনি দেওয়ান পদে নিযুক্ত ছিলেন। শিবনারায়ণের মৃত্যুর কয়েক মাস পরে জয়নারায়ণের জন্ম হয়। জয়নারাযণ শিশু থাকায় রানী দুর্গাবতী জমিদারী পরিচালনা করতেন। এ সুযোগে দেওয়ান শিবশংকর অনেক অর্থ ও ভূসম্পত্তি দখল করে নেয়। শিবশংকর রাজ্যের মধ্যে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে এবং রানী তাকে দমন করতে ব্যর্থ হন। রানী কোম্পানির দেওয়ান গঙ্গাগোবিন্দের সাহায্য কামনা করেন এবং ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দের ২৪ নভেম্বর সনদপ্রাপ্ত হন। এ সনদে ঢাকার প্রাদেশিক কাউন্সিলের সিলমহর ও ঢাকার প্রধান হল্যান্ডের সই আছে।


রানীর কৃতিত্ব

রানী দুর্গাবতী একজন বুদ্ধিমতী ও প্রজাবৎসল মহিলা ছিলেন। ১৮ শতকের শেষভাগে নাটোরের রানী ভবানী ও চন্দ্রদ্বীপের রানী দুর্গাবতী জমিদারী পরিচালনা করে বাংলার ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন। তিনি প্রজাদের মঙ্গলের জন্য অনেক পুকুর ও দীঘি খনন করান। রানী দুর্গাবতী ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে বাংলা ১১৮৭ সনে রাজধানী শ্রীনগর বা মাধবপাশায় দীঘি খনন করান। তিনি কর্মচারীদের সাথে পরামর্শ করে রাজবাড়ীর পূর্বপাশে এক বিরাট দীঘি খননের পরিকল্পনা করেন। কথিত আছে রানী একবারে যতদূর হেঁটে যেতে পারবেন দীঘি তত বড় হবে। রানী ১৩ দ্রোণ বা ৬১ কানি ভূমি অতিক্রম করেন। দীঘির পশ্চিমে শ্রীপুর, পূর্বে কলাডেমা, উত্তরে পাংশা এবং দক্ষিণে শোলনা ও ফুলতলা গ্রাম। চার গ্রামের মধ্যস্থানে এক শুভদিনে হাজার হাজার লোক দীঘি খনন শুরু করে। চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের বিভিন্ন গ্রাম হতে প্রজারা দীঘি খননে অংম নেয়। দীঘি খনন কাজ শেষ করতে ৬ মাস সময় লাগে। শ্রমিকদের মজুরি কড়ি দিয়ে পরিশোধ করা হতো। দীঘি খনন ও অর্চনার জন্য রানী রাজকোষ হতে ৩ লাখ টাকা ব্যয় করেন। চার পাড়ে ৫০ ফুট বিস্তৃত চারটি পাকা ঘাট নির্মাণ করেন। উৎসর্গ উপলক্ষে রাজধানী শ্রীপুরে হাজার হাজার প-িত, ব্রাহ্মণকুলীন উপস্থিত। এমন সময় রাজপরিবারের এক বৃদ্ধার মৃত্যু ঘটে। এ ঘটনায় শিশু জয়নারায়ণের এক মাস অশৌচ পালন করতে হয়। বাধ্য হয়ে অতিখিদের এক মাস ধরে অথ্যর্থনা করতে হয়। অবশেষে নতুন পুণ্যাহ তিথিতে দীঘির উৎসর্গকাজ সমাপ্ত করেন।


জমিদারি পরিচালনায় দুর্যোগ

ইংরেজ সরকার রানীর রাজ্য পরিচালনায় অহেতুক হস্তক্ষেপ করত। বরিশালের ফৌজদার বকশ আলী চন্দ্রদ্বীপ পরগণার শাসন কার্যে বাধা সৃষ্টি করেন। তাই রাজা ১৭৭৯ খ্রিস্টাব্দের ১০ সেপ্টেম্বর বকশ আলীর বিরুদ্ধে কোম্পানির নিকট অভিযোগ করেন। ১৭৮৭ খৃৃস্টাব্দে ঢাকার কালেক্টর মি. ডে চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের ভূমি রাজস্ব নির্ধারণ করেন এবং দুর্ভিক্ষ সত্ত্বেও ডে ১৭৮৮ খৃৃস্টাব্দে ১৫ হাজার টাকা রাজস্ব বৃদ্ধি করেন এবং ৭৩টি তালুকের পৃথক রাজস্ব নির্ধারণ করেন। ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দের ৬ এপ্রিল ঢাকার কালেক্টর মিঃ ডগলাস চন্দ্রদ্বীপের দশসালা বন্দোবস্ত সম্পর্কে কলিকাতা বোর্ড অব রেভিনিউর নিকট যে প্রতিবেদন প্রেরণ করেছিলেন তাতে তিনি লিখেছিলেন:

“এ পরগণার (চন্দ্রদ্বীপ) মালিক ১৭ বছরের এক যুবক। তার লেখাপড়ার প্রতি কোন দৃষ্টি দেয়া হয়নি। তিনি মফস্বলের রাজস্ব আদায় সম্পর্কে কিছুই জানেন না। নারী উপভোগে তার সম্পূর্ণ সময় ব্যয় হয়। জমিদারী পরিচালনার ক্ষমতা নিজ হাতে রাখার জন্য তার মা তার লালসা নিবৃত্ত করার সব কিছু সরবরাহ করে থাকেন। মা জমিদারী পরিচালনার ক্ষমতা তার ভ্রাতার ওপর অর্পণ করেছেন। অথচ তার ভ্রাতা এ পদের জন্য সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত।”

রানী দুর্গাবতী ও রাজা জয়নারায়ণ সম্পর্কে অসৌজন্যমূলক মন্তব্য করে ডগলাস সাবেক কালেক্টর ডে নির্ধারিত রাজস্ব দশসালা বন্দোবস্তের সুপারিশ করেন। রানী ও তার পুত্র জয়নারায়ণের যে সমালোচনা ডগলাস করেছেন তা সত্য নয়। ১৭৯০ খৃৃস্টাব্দে জয়নারায়ণের বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর। মা তার নিজপুত্রকে নষ্ট করার জন্য ডগলাস বর্ণিত কাজ করতে পারেন না। ১৭৮৭ খৃৃস্টাব্দে চন্দ্রদ্বীপের ভূমি রাজস্ব ছিল ৮৫,৭২৫ টাকা। ডে তার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রস্তাবে হিস্যাজাত ভূমির জন্য ১৫০০০ টাকা বৃদ্ধির সুপারিশ করেন এবং বোর্ড এ প্রস্তাব অনুমোদন করে। ডগলাস ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দের ৪ অক্টোাবর চন্দ্রদ্বীপের জমিদার জয়নারায়ণকে ডে’র প্রস্তাব মতে বন্দোবস্ত করার জন্য আহ্বান জানান। চন্দ্রদ্বীপ হতে ৭৩টি তালুক পৃথক করা হয়। তাই রানী ইংরেজ সরকারের অবস্থায়ী বন্দোবস্ত গ্রহণ করতে অস্বীকার করলেন। এদিকে চন্দ্রদ্বীপের রাজস্ব আদায়ের অবস্থান খারাপ হয়ে পড়ে। ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দের ১১ নভেম্বর ঢাকার কালেক্টর মিঃ মেসি এক পত্রে জানান যে, চন্দ্রদ্বীপ পরগণা নিলামে বিক্রি করা হয়েছে এবং তখনও ৩৫০০০ টাকা রাজস্ব বাকি ছিল। এজন্য মেসি রাজা জয়নারায়ণকে ঢাকায় সিভিল জেলে আটক করার জন্য রাজস্ব বোর্ডের অনুমোদন চেয়েছেন। মেসি লিখেছেন ‘তিনি তার অবাধ্যতার জন্য খ্যাতি অর্জন করেছেন এবং আমার বিশ্বাস তাকে দিয়ে উদাহরণ সৃষ্টি করলে এ জেলায় ভাল ফল হবে। মিঃ মেসি রাজা জয়নারায়ণকে গ্রেফতারের জন্য সমনসহ একজন পেয়াদা পাঠিয়ে দেন। ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে রানী দুর্গাবতী গ্রেফতারের প্রতিবাদ করে এক পত্র দেন।

পত্রে রানী লিখেন: ‘রাজা যে কত অসুস্থ তা আমি কি করে বর্ণনা দেব। সমস্ত জমিদারী বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। রাজা অসুস্থ। আমি সীমাহীন দুঃখে পতিত হয়েছি। আপনি দেশের প্রভু। আমার বিশ্বাস একজন গরীব বিধবার উপর দয়াপরবশ হয়ে আপনি জরিমানা মাফ করে দিবেন। যে প্রকারে হোক আমি দেয় টাকা পরিশোধ করবো।’ মিঃ মেসি রাজাকে গ্রেফতার করেননি। তবে তার কঠোর ব্যবস্থার জন্য চন্দ্রদ্বীপ রাজ্য ধ্বংস হয়ে যায়। ১৭৯৯ খৃৃস্টাব্দে খাজনার দায়ে চন্দ্রদ্বীপ পরগণা নিলামে বিক্রি হলে চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের শেষ চিহ্ন মুছে যায়। ইতোপূর্বে ১৭৯৩ খৃৃস্টাব্দে পরগণার ১৭।// ক্রান্তি ঢাকা কালেক্টরিতে বিক্রি হয় এবং বর্মণদের পূর্বপুরুষ দালসিং তা ক্রয় করেন। ১৭৯৫ খৃৃস্টাব্দে সাড়ে বারো গ-া নিলামে বিক্রি হলে ঢাকার জন পেনেটি তা ক্রয় করেন। ১৭৯৭ খৃৃস্টাব্দে সাড়ে সতেরো গ-া বিক্রি হয় এবং তা-ও পেনেটি ক্রয় করে। রানী দুর্গাবতী সরকারের দেয় রাজস্ব পরিশোধ করার জন্য তার ভাই ও অন্যান্য অসৎ কর্মচারীর নিকট যে টাকা দিতেন তা তারা কালেক্টরেটে জমা না দিয়ে আত্মসাত করে। এভাবে বাকি রাজস্বের দায়ে ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে, বঙ্গাব্দ ১২০৬ সনে অবশিষ্ট ১২ জমিদারী ঢাকা কালেক্টরিতে নিলামে বিক্রি হয়। নি¤œলিখিত ব্যক্তিগণ চন্দ্রদ্বীপের জমিদারী নিলামে ক্রয় করেন। রাম মানিক মুদি ১২ গ-া, জন পেনেটি ১০ গ-া এবং দল সিংহ ১৭ গন্ডা।

কথিত আছে রাণী দুর্গাবতী রাজকোষের অর্থ দিয়ে মানিক মুদিকে বেনামে নিলাম ক্রয় করার নির্দেশ দেন। কিন্তু মানিক মুুদি জমিদারী ক্রয় করে রাজা জয়নারায়ণকে ফেরত দিতে অস্বীকার করেন। মানিক মুদি মাধবপাশা বাজারের একজন ব্যবসায়ী। তারা পক্ষে এত টাকা সংগ্রহ করে জমিদারী ক্রয় করা সম্ভব ছিল না। হয়ত এমন হতে পারে যে, রানী তাকে সব টাকা দিতে পারেননি এবং বাকি টাকা মানিক মুদি দিয়েছিলেন। এ কথা সত্যি মানিক মুদি সরল লোক ছিলেন না। প্রবাদ আছে যে, রাজবাড়িতে যে মালপত্র বিক্রি হতো তাতে তিনি সব সময় বেশি হিসেব দেখিয়ে অনেক টাকা আদায় করতেন। অনেক সময় টাকার পরিবর্তে রাজা তাকে তালুক দিয়ে দিত। মিঃ পেনেটি রাজস্ব বোর্ডের নিকট এক অভিযোগে বলেছিলেন যে, মানিক মুদি রাজার পক্ষে চন্দ্রদ্বীপ পরগণা ক্রয় করেছেন। স্থানীয় বিশ্বাস মানিক মুদি রাজার পক্ষে জমিদারী ক্রয় করেন। মানিক মুদি ঢাকা থেকে ফিরে এসে এক আনা রেখে বাকি জমিদারী রাজাকে ফেরত দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রাজার পারিষদ রানী দুর্গাবতী ও জয়নারায়ণকে বুঝালেন যে, মুদির সাথে জমিদারী করা যায় না। তাই রানী জমিদারী উদ্ধারের জন্য দেওয়ানী মামলা শুরু করেন। সুপ্রীমকোর্টে রানী হেরে যান এবং বিলেতে প্রিভিকাউন্সিলে আপীল করেন। সম্ভবত সুপ্রীমকোর্টের রায়ের পর রানী দুর্গাবতী মৃত্যুবরণ করেন। রানীর মৃত্যু ১৮১৩ খৃৃস্টাব্দের পূর্বের কোনো সময়ে।


উপসংহার

রানী দুর্গাবতী এক সংগ্রামী মহিলা ছিলেন। স্বামী উম্মাদ, পুত্র অকর্মণ্য-এ পরিস্থিতিতে রানীকে জমিদারী পরিচালনার দায়িত্ব স্বহস্তে গ্রহণ করতে হয়। তিনি ক্ষমতার লোভে রাজ্য শাসন করেননি। তিনি জমিদারী পরিচালনা না করলে চন্দ্রদ্বীপ হেষ্টিংসের পাঁচসালা ও একসালা বন্দোবস্তের সময় ধ্বংস হয়ে যেত। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে বাংলার প্রায় সকল বড় জমিদারী সূর্যাস্ত আইনে নিলামে বিক্রি হয়ে যায়। সুতরাং চন্দ্রদ্বীপ রাজ্য পতনের জন্য রানী দুর্গাবতীকে আমরা দায়ী করতে পারি না। তবে এ কথা ঠিক যে, তার ভ্রাতা গোবিন্দ প্রসাদ জমিদারীর পতন ত্বরান্বিত করেছেন।


তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০।