দাল সিংহ

Barisalpedia থেকে

দাল সিংহের পূর্ণ নাম দাল সিংহ বর্মণ। বরিশালের অত্যন্ত জনপ্রিয় আসমান সিং-এর পালা নামের লোকনাট্য এই পরিবারকে কেন্দ্র করে রচিত। তিনি চাকরি উপলক্ষে পাঞ্জাব প্রদেশ হতে ঢাকায় আসেন। তিনি লগ্নি ও জহরতের ব্যবসা করতেন। তাঁর জমিদারি ছিল চন্দ্রদ্বীপ পরগণায়।

পরিচয়

অনেকে বলেন দাল সিংহ বর্মণ চন্দ্রদ্বীপ রাজার চাকরি করতেন এবং রাজবাড়ির চিলছত্রের দক্ষিণে এক ক্ষুদ্র ভূখন্ডকে দালসিংহ বর্মণের হাবেলি বলা হতো। ঢাকার ওয়ারীতে তার হাবেলি ছিল। তিনি ১৭৯৩ ও ১৭৯৯ খৃৃস্টাব্দে চন্দ্রদ্বীপ পরগণার /১৭।/ অংশ নিলামে ক্রয় করেন। দালসিংহ বর্মণ বরিশালের পুরনো বাজারে বসতি স্থাপন করেন। বাজারে বর্মণদের কাছারি বাড়ি ছিল। নিরঞ্জন কৃষ্ণ বর্মণের কোন পুত্রসন্তান না থাকায় রঞ্জন প্রসাদ বর্মণকে জমিদারী উইল করে দেন। এ বংশের বরুণ বর্মণ বরিশালের একজন বিশিষ্ট গায়ক। জমিদারী হারিয়ে বর্মণ পরিবারের অনেকে কলকাতায় বাস করছেন। দাল সিংহের স্ত্রী গোলাপ দেবীর নামানুসারে বাকেরগঞ্জের চরাদিগ্রামে রানীর হাট আছে। রানীরহাটে বর্মণদের কাছারি ছিল।

বংশ তালিকা

দলবল সিংহ বর্মণ ও স্ত্রী রানী গোলাপ দেবীর কন্যা কন্যা মঙ্গলাদেবী। মঙ্গলাদেবীর স্বামী বিশ্বেশ্বর বর্মণ। তাদের পুত্র রাজকৃষ্ণ বর্মণ (দত্তক)। রাজকৃষ্ণ বর্মণের স্ত্রী গঙ্গাদেবী। তাদের দত্তক পুত্র নিরঞ্জন কৃষ্ণ বর্মণ। তার স্ত্রী রাণী শিবদেহী। তাদের দত্তক পুত্র রঞ্জন প্রমাদ বর্মণ।


আসমান সিং-এর পালা ও এই পরিবার

বরিশালের অত্যন্ত জনপ্রিয় আসমান সিং-এর পালা নামের লোকনাট্য এই পরিবারকে কেন্দ্র করে রচিত। বরিশালের জিলা ম্যাজিষ্ট্রেট এবং বরিশালের ইতিহাস রচয়িতা এইচ. বেভারেজের রচনাতেও সেই প্রকার ধারনাকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে। এই অঞ্চলে প্রচলিত করুণ রসসিক্ত এই লোকগীতিতে আসমান সিং, তার স্ত্রী দূর্গা এবং খোদা নেওয়াজ খানের প্রেমকাহিনী বর্ণিত হয়েছে। একসময়ে এই পরিবারের প্রবল প্রতাপ থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে দাল সিং-এর পরিবার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত রানীর হাট নামের একটি হাট, ধ্বংসপ্রাপ্ত বসতবাড়ি এবং একটি দীঘি ব্যাতিরেকে কিছুই পরিলক্ষিত হয় না। তারপরেও বৃহত্তর বরিশালের লোককাহিনীসমূহের অন্যতম আসমান সিং-এর পালা দাল সিং পরিবারকে অমর করে রেখেছে।


তথ্যসূত্র: ১. সাইফুল আহসান বুলবুল। বৃহত্তর বরিশালের ঐতিহাসিক নিদর্শন। গতিধারা, ঢাকা। ২০১২। ২. সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০।