ত্র্যম্বকেশ্বর মন্দির, পোনাবালিয়া

Barisalpedia থেকে

বর্তমানের ঝালকাঠির পোনাবালিয়াতে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিখ্যাত তীর্থস্থান ত্র্যন্বকেশ্বরের অবস্থান। পোনাবালিয়ার শিবলিঙ্গ ত্র্যন্বকেশ্বর শিব নামে খ্যাত। প্রাচীনকালে এই তীর্থকেন্দ্র সুগন্ধা নদীর তীরে অবস্থিত ছিলো এবং অপর পাড়ে অধিষ্ঠিত ছিলো উগ্রতারা মন্দির। এই অঞ্চলে ত্র্যন্বকেশ্বর শিবলিঙ্গ সম্পর্কিত একটি কিংবদন্তি প্রচলিত। বলা হয়ে থাকে যে, অতীতকালের কোনো এক সময়ে পোনাবালিয়া অঞ্চল নিবিড় জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিলো। এই জঙ্গলের নিকটবর্তী এলাকায় সামান্য কিছু নীচু জাতির বসবাস ছিলো। জঙ্গল সংলগ্ন এলাকা ঐ সকল লোকেদের গবাদি পশুর চারণ ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহৃত হতো। একদিন গবাদি পশুগুলির মালিকেরা লক্ষ্য করে যে তাদের গাভীগুলি এ চারণভুমি থেকে ফিরে দুধ দিচ্ছে না। তারপর এক সময়ে গভীর অবলোকনের পর রাখাল বালকেরা দেখতে পায়, তাদের গাভীগুলি জঙ্গলের নির্দিষ্ট একটি এলাকায় উপস্থিত হয়ে একটি উঁই ঢিবির উপর দাঁড়াতেই তাদের বাঁট থেকে এমনিতেই অঝোরে দুধ নিঃসৃত হচ্ছে। কৌতুহলী রাখাল বালকেরা তখন ঐ উঁই ঢিবির চতুর্পার্শ্বে আগুন জ্বেলে দিলে সেই অগ্নিশিখার ভেতর থেকে ক্ষুদ্র আকৃতির কালো বর্ণের এক সুন্দরী মহিলা হঠাৎ করে বের হয়ে দ্রুতবেগে ঢিবি সংলগ্ন পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ভীত রাখালবৃন্দ পালিয়ে গিয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ্যদর এই ঘটনা জানায়। পরবর্তীতে এই দেবীর মূর্তি সুগন্ধা নদী থেকে উত্তোলন করে শিকারপুরে প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেই রাতে স্থানীয় ভু-স্বামী রাম রায় স্বপ্নে জনৈক মহাপুরুষের সাক্ষাৎ লাভ করেন। ত্রিশূলধারী সৌম্যকান্তি সেই পুরুষ রাম রায়কে জানায় যে শ্যামরাইলের গভীর জঙ্গলে উঁইঢিবির মধ্যে তার অবস্থান, কিন্ত রাখাল ছেলেদের অগ্নি সংযোগের কারণে তার শরীর ক্ষত-বিক্ষত। ভূ-স্বামী যেন তাকে উদ্ধার করে। পরদিন খুব ভোরে বহু লোকসহ রাম রায় স্বপ্নে অবগত হওয়া স্থানে উপস্থিত হয়ে উঁইঢিবি খনন করার পর দেবাদিদেবের লিঙ্গমূর্তি পরিদৃষ্ট হয়। অন্যস্থানে স্থাপন করার জন্য সকলের মিলিত চেষ্টাতেও মাটিতে প্রোথিত সেই লিঙ্গমূর্তি সামান্যতম স্থানচ্যুত করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তী সময়ে স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে রাম রায় ত্র্যন্বকেশ্বর শিব নামের সেই শিব লিঙ্গের উপর একটি ছাদবিহীন দেবালয় স্থাপন করেন। রাম রায়ের কন্যা চাঁদমণি দেবী পরবর্তীতে সেখানে দেবতার উদ্দেশ্যে একটি মন্দির নির্মাণ করেন। পোনাবালিয়া জমিদারদের ভূ-সম্পত্তি তাদের হাতছাড়া হওয়ার পর ঢাকার নওয়াব পরিবার সেই সম্পত্তি ক্রয় করেন এবং মন্দিরের ভূমি খাস না করে পুরাতন ভগ্ন মন্দিরের স্থলে আর একটি নতুন মন্দির তৈরি করেন। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নিকট পোনাবালিয়া ত্র্যন্বকেশ্বর মন্দির বিশেষ তীর্থক্ষেত্র হিসেবে বিখ্যাত ।


তথ্যসূত্র: সাইফুল আহসান বুলবুল। বৃহত্তর বরিশালের ঐতিহাসিক নিদর্শন। গতিধারা, ঢাকা। ২০১২।