তরুণ

Barisalpedia থেকে

বরিশালের যুব আন্দোলনের মুখপত্র স্বরূপ ‘তরুণ সংঘ’-এর উদ্যোগে বাংলা ১৩৩০ সনের (১৯২৩) বৈশাখ মাসে মাসিক ‘তরুণ’ পত্রিকাটি আত্মপ্রকাশ করে এবং যতদূর জানা যায়, প্রায় দু’বছর নিয়মিত চলার পর পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়। পূর্ব বাংলার সমকালীন যে কোন সাহিত্য পত্রিকা অপেক্ষা নিঃসন্দেহে মাসিক ‘তরুণ’ স্বাতন্ত্র্যের অধিকারী ছিল। পত্রিকাটিতে প্রকাশিত লেখাসমূহের মধ্য দিয়ে তৎকালীন সময়ের বরিশালের তথা উভয় বাংলার সাহিত্যচর্চার একটি দিক যেমন উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে, তেমনি আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও তৎকালীন সময়ের কিছু চিত্র খুঁজে পাওয়া যায়। এই মাসিক পত্রিকাটির কার্যাধ্যক্ষ ছিলেন প্রথমে সরল কুমার দত্ত ও অমিয় কুমার রায় চৌধুরী। স¤পাদক ছিলেন সুকুমার দত্ত ও মাহিলাড়ার হীরালাল দাশগুপ্ত। পত্রিকাটি বরিশালের কালীবাড়ী রোডস্থ অভ্যুদয় প্রেস থেকে শ্রীবিজয়ভ‚ষণ দাশগুপ্ত কর্তৃক মুদ্রিত ও প্রকাশিত হতো। পত্রিকাটির পৃষ্ঠা নম্বর ছিল ধারাবাহিক। ছাপা সুন্দর। সাড়ে ১০ পয়েন্ট টাইপে লেখা ছাপা হতো। লেখার হেডিং ছাপা হতো ১৮ পয়েন্ট টাইপ-এ। গথিক ও এন্টিক টাইপের ব্যবহার করা হতো। লেখার শেষে নিচের দিকে লেখকের নাম ছাপা হতো। সুরেশচন্দ্র গুপ্ত ও হীরালাল দাশগুপ্ত দু’জনেই পত্রিকাটি এক বছর চলার পর বন্ধ হয়ে যায় বলে মন্তব্য করেছেন। এই পত্রিকাটি স¤পর্কে ‘তরুণসংঘ’-এর একজন সক্রিয় সদস্য সুশীল মুখাপোধ্যায় লিখেছেন: ‘উপরাক্তে পরিবেশের মধ্যে বরিশাল জিলায় বহু কৃতি শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী এবং যুবক-যুবতী জাতীয় কংগ্রেসের পতাকাতলে সম্মিলিত হইল এবং তাহারা ১৯২৩ সালের মধ্যভাগে একখানা মাসিকপত্র প্রকাশিত করিলেন যাহার নাম রাখা হইয়াছিল ‘তরুণ’। ইহার প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন স্বর্গীয় অধ্যাপক ডাঃ সুধীর কুমার দাশগুপ্ত এবং প্রথম স¤পাদক ছিলেন স্বর্গীয় ডাঃ সুকুমারচন্দ্র দত্ত’।

‘তরুণসংঘ’-এর আর একজন সক্রিয় সদস্য অধীর বন্দ্যোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে লিখেছেন : ‘তরুণ সংঘ’ প্রতিষ্ঠিত হইবার বেশ কিছুদিন পরে, যতদূর মনে হয় ১৯২৩ সালের মধ্যভাগে, ডাঃ সুকুমার দত্ত এবং হীরালাল দাশগুপ্ত মহাশয় দ্বয়ের যুগ্ম-স¤পাদনায় ‘তরুণ’ নামে একখানা মাসিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। পত্রিকাখানির পরিচালনার সমস্ত দায়িত্ব অর্পিত হয় বিজয়ভ‚ষণ দাশগুপ্ত মহাশয়ের উপর। এই পত্রিকায় পরিবেশিত বিবিধ প্রবন্ধাদি পাঠ করিয়া বরিশালের যুবক স¤প্রদায় বিশেষ ভাবে অনুপ্রাণিত হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, পত্রিকাখানার কয়েকটি সংখ্যা প্রকাশিত হইবার পর আপনা হইতেই উহা বন্ধ হইয়া যায়।

এ পত্রিকার লেখক তালিকায় রয়েছেন বিশিষ্ট সাহিত্যিকবর্গ যেমন: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, চারণকবি মুকুন্দ দাস, কাজী নজরুল ইসলাম, বুদ্ধদেব বসু, বারীন্দ্রকুমার ঘোষ, বিপিনচন্দ্র পাল, সুনির্মল বসু, কামিনী রায়, প্রিয়ম্বদা দেবী, গুণদাচরণ সেন, হেমচন্দ্র মুখোপাধ্যায় কবিরতœ, দেশ বন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, অশ্বিনীকুমার দত্ত, অনাথবন্ধু সেন, নলিনীকান্ত ভট্টশালী, মোঃ মনসুরউদ্দীন, পরিমল কুমার ঘোষ, শচীন্দ্রনাথ কর, হিমাংশু কুমার রায়চৌধুরী, দুর্গামোহন সেন, হীরালাল দাশগুপ্ত, নিবারণ চন্দ্র দাশগুপ্ত, সুকুমার দত্ত, নরেন্দ্র নাথ দাশগুপ্ত, লোকেন্দ্রনাথ গুহ, নগেন্দ্রনাথ সেন, ধীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, সরলকুমার দত্ত, সুরেশ গুপ্ত, সত্যেন্দ্র প্রসাদ বসু, বিজয়ভ‚ষণ দাশগুপ্ত, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আনন্দচন্দ্র শীল, সতীন্দ্র মোহন চট্টোপাধ্যায়, সুধীররঞ্জন রায়চৌধুরী, বীরেন্দ্র কিশোর তরফদার, অনাথবন্ধু দত্ত, নিশিকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়, দেবকুমার রায়চৌধুরী, সুরেন্দ্র মোহন ভট্টাচার্য্য, প্রমথ নাথ রায় চৌধুরী ও মিসেস এস. এন. হোসেন (সুফিয়া কামাল)।


তথ্যসূত্র: তপংকর চক্রবর্তী। বরিশালের সংবাদ ও সাময়িকপত্র। বাংলা একাডেমি, ২০০১।