"তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া"-এর বিভিন্ন সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

Barisalpedia থেকে
("জন্ম ১৯১১। মৃত্যু ৩১ মে ১৯৬৯। জন্মস্থান ভা-ারিয়া, পিরোজপ..." দিয়ে পাতা তৈরি)
 
 
(একই ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত ২টি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না)
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
জন্ম ১৯১১। মৃত্যু ৩১ মে ১৯৬৯। জন্মস্থান ভা-ারিয়া, পিরোজপুর, বরিশাল। আদি নিবাস ফরিদপুর। পিতা মোসলেউদ্দিন মিয়া। পিরোজপুর সরকারি হাইস্কুল থেকে মেট্রিক। বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ থেকে ডিস্টিংশন-সহ বি.এ. পাশ করেন। পিরোজপুর আদালতে কেরানির চাকরি লাভ। শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সহায়তায় তৎকালীন সরকারের বরিশাল জেলা শাখার জনসংযোগ অফিসার পদে নিয়োগ লাভ। কিছুকাল পরে  শহীদ সোহরাওয়ার্দীর পরামর্শেই চাকুরি ত্যাগ। সোহরাওয়ার্দী কর্তৃক প্রাদেশিক মুসলিম লিগের অফিস-সেক্রেটারি পদে নিয়োগ। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা হবার পর কলকাতা থেকে মুসলিম অফিস ঢাকায় স্থানান্তরিত হয়। তিনি তখন মুসলিম লীগ পরিত্যাগ করে দৈনিক ‘ইত্তেহাদ’ পত্রিকার পরিচালনা বিভাগে যোগদান করেন (১৯৪৬)। ১৯৪৮ এ পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে গেলে তিনি কোলকাতা ছেড়ে ঢাকায় আসেন। পরে ১৯৫১খ্রি. পূর্ব-পাকিস্তান আওয়ামি মুসলিম লিগের মুখপত্র সাপ্তাহিক ‘ইত্তেফাক’-এর সম্পাদনার ভার গ্রহণ করেন এবং ‘মুসাফির’ ছদ্মনামে ‘রাজনৈতিক ধোঁয়াশা’ শিরোনামায় নিবন্ধ রচনা শুরু করেন। পরবর্তী পর্যায়ে ২৪ ডিসেম্বর ১৯৫৩খ্রি. ‘ইত্তেফাক’ দৈনিক পত্রিকারূপে আত্মপ্রকাশ করে এবং তিনি তার সম্পাদক হন। ১৯৫২খ্রি. তিনি এশিয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় শান্তি সম্মেলনে যোগদানের জন্য চীন সফর করেন। ১৯৫৭-৫৮খ্রি. দু-বছরের জন্য পি.আই.এ.-ও ডিরেক্টর মনোনীত হন। ১৯৫৮খ্রি. দেশে সামরিক শাসন জারি হলে তিনি ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৫৯খ্রি. গ্রেপ্তার হন কিন্তু সামরিক আদালতের বিচারে মুক্তিলাভ করেন। ১৯৬১খ্রি. পাকিস্তানের আই.পি.আই-ও চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৬২ খ্রি. তিনি দ্বিতীয়বার জননিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার হন এবং ওই বছরের ১৪ আগস্ট মুক্তি পান। ১৯৬৪ খ্রি. দাঙ্গাবিরোধ কমিটির প্রথম সভার তিনি সভাপতিত্ব করেন। ১৬ জুন ১৯৬৬ খ্রি. তিনি আবার গ্রেপ্তার হন। গণ আন্দোলনের চাপে ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ ইত্তেফাকের ওপর থেকে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার এবং ১৯৬৭ খ্রি. ২৯ মার্চ মুক্তি পান। ১৯৬৯ এর ২৬ মে রাওয়ালপিন্ডি গমন এবং ৩১ মে হঠাৎ হৃদরোগ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু। নির্ভীক সাংবাদিক এবং মানিক মিয়া নামে পরিচিতি ও মুসাফির নামে বিখ্যাত ছিলেন।
+
প্রখ্যাত সাংবাদিক তফাজ্জল হোসেন (মানিক মিয়া) বিখ্যাত দৈনিক ‘ইত্তেফাক’ এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সমধিক পরিচতি।তাঁর জন্ম ১৯১১। মৃত্যু ৩১ মে ১৯৬৯। জন্মস্থান ভাণ্ডারিয়া, পিরোজপুর, বরিশাল। আদি নিবাস ফরিদপুর। পিতা মোসলেউদ্দিন মিয়া।
 +
 
 +
[[চিত্র:তফাজ্জল_হোসেন_মানিক_মিয়া.jpg ‎]]
 +
 
 +
 
 +
== শিক্ষাজীবন ==
 +
 
 +
তিনি পিরোজপুর সরকারি হাইস্কুল থেকে মেট্রিক পাশ করেন। এরপর বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ থেকে ডিস্টিংশন-সহ বি.এ. পাশ করেন। এভাবে শিক্ষাজীবন শেষ করে তিনি পিরোজপুর আদালতে কেরানির চাকরি লাভ করেন।
 +
 
 +
 
 +
== কর্মজীবন ==
 +
 
 +
কোর্টের জনৈক মুন্সেফের অন্যায় আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে সত্যনিষ্ঠ ও সৎ সাহসী তফাজ্জল হোসেন চাকুরী পরিত্যাগ করেন। কিন্তু তার পিতৃব্য জনাব আফতাব আহমদের পরামর্শে তিনি পুনরায় কাজে ফিরে আসেন। এ সময়ে তিনি তদানিন্তন ছাত্রনেতা আবদুর রহমান চৌধুরীর মাধ্যমে শহীদ সোহরাওয়ার্দ্দীর সান্নিধ্যে আসেন এবং তারই উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় সিভিল কোর্টের চাকরী ইস্তফা দিয়ে তদানীন্তন সরকারের জেলা জনসংযোগ অফিসারের পদে যোগদান করেন। জনাব সোহরাওয়ার্দ্দী তাঁর কর্মদক্ষতা, বলিষ্ঠতায় তদানিন্তন প্রাদেশিক মুসলিম লীগের অফিস সেক্রেটারী নিযুক্ত করেন। ওয়েলেসলি লেনের এই বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগ অফিসই তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞার সুতিকাগার। এখানেই সকল নেতার আদর্শ ও কর্মপ্রচেষ্টার সম্যক পরিচিতি লাভ করে তিনি তার রাজনৈতিক মতবাদ বিশেষরূপে প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৬ সালে নির্বাচনে শহীদ সোহরাওয়ার্দ্দী নাজিম উদ্দিনের নিকট পরাজিত হলে বঙ্গীয় মুসলিম লীগ অফিস ঢাকায় স্থানান্তরিত হয়। তফাজ্জল হোসেন তখন মুসলিম লীগ অফিস পরিত্যাগ করেন এবং আবুল মনসুর আহমদের সম্পাদনায় দৈনিক ইত্তেহাদ পত্রিকার পরিচালনা বিভাগে যোগদান করেন। ১৯৪৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সমর্থনে ঢাকায় সাপ্তাহিক ইত্তেহাদ পত্রিকা প্রকাশিত হয়।
 +
 
 +
পরে ১৯৫১খ্রি. পূর্ব-পাকিস্তান আওয়ামি মুসলিম লিগের মুখপত্র সাপ্তাহিক ‘ইত্তেফাক’-এর সম্পাদনার ভার গ্রহণ করেন এবং ‘মুসাফির’ ছদ্মনামে ‘রাজনৈতিক ধোঁয়াশা’ শিরোনামায় নিবন্ধ রচনা শুরু করেন। পরবর্তী পর্যায়ে ২৪ ডিসেম্বর ১৯৫৩খ্রি. ‘ইত্তেফাক’ দৈনিক পত্রিকারূপে আত্মপ্রকাশ করে এবং তিনি তার সম্পাদক হন। ১৯৫২খ্রি. তিনি এশিয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় শান্তি সম্মেলনে যোগদানের জন্য চীন সফর করেন। ১৯৫৭-৫৮খ্রি. দু-বছরের জন্য পি.আই.এ.-ও ডিরেক্টর মনোনীত হন। ১৯৫৮খ্রি. দেশে সামরিক শাসন জারি হলে তিনি ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৫৯খ্রি. গ্রেপ্তার হন কিন্তু সামরিক আদালতের বিচারে মুক্তিলাভ করেন। ১৯৬১খ্রি. পাকিস্তানের আই.পি.আই-ও চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৬২ খ্রি. তিনি দ্বিতীয়বার জননিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার হন এবং ওই বছরের ১৪ আগস্ট মুক্তি পান। ১৯৬৪ খ্রি. দাঙ্গাবিরোধ কমিটির প্রথম সভার তিনি সভাপতিত্ব করেন। ১৬ জুন ১৯৬৬ খ্রি. তিনি আবার গ্রেপ্তার হন। গণ আন্দোলনের চাপে ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ ইত্তেফাকের ওপর থেকে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার এবং ১৯৬৭ খ্রি. ২৯ মার্চ মুক্তি পান। ১৯৬৯ এর ২৬ মে রাওয়ালপিন্ডি গমন এবং ৩১ মে হঠাৎ হৃদরোগ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু। নির্ভীক সাংবাদিক এবং মানিক মিয়া নামে পরিচিতি ও মুসাফির নামে বিখ্যাত ছিলেন।
  
 
----
 
----
 
তথ্যসূত্র: সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান ও বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান।
 
তথ্যসূত্র: সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান ও বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান।

০৭:৩০, ৭ জুন ২০১৬ তারিখে সম্পাদিত বর্তমান সংস্করণ

প্রখ্যাত সাংবাদিক তফাজ্জল হোসেন (মানিক মিয়া) বিখ্যাত দৈনিক ‘ইত্তেফাক’ এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সমধিক পরিচতি।তাঁর জন্ম ১৯১১। মৃত্যু ৩১ মে ১৯৬৯। জন্মস্থান ভাণ্ডারিয়া, পিরোজপুর, বরিশাল। আদি নিবাস ফরিদপুর। পিতা মোসলেউদ্দিন মিয়া।

তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া.jpg


শিক্ষাজীবন

তিনি পিরোজপুর সরকারি হাইস্কুল থেকে মেট্রিক পাশ করেন। এরপর বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ থেকে ডিস্টিংশন-সহ বি.এ. পাশ করেন। এভাবে শিক্ষাজীবন শেষ করে তিনি পিরোজপুর আদালতে কেরানির চাকরি লাভ করেন।


কর্মজীবন

কোর্টের জনৈক মুন্সেফের অন্যায় আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে সত্যনিষ্ঠ ও সৎ সাহসী তফাজ্জল হোসেন চাকুরী পরিত্যাগ করেন। কিন্তু তার পিতৃব্য জনাব আফতাব আহমদের পরামর্শে তিনি পুনরায় কাজে ফিরে আসেন। এ সময়ে তিনি তদানিন্তন ছাত্রনেতা আবদুর রহমান চৌধুরীর মাধ্যমে শহীদ সোহরাওয়ার্দ্দীর সান্নিধ্যে আসেন এবং তারই উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় সিভিল কোর্টের চাকরী ইস্তফা দিয়ে তদানীন্তন সরকারের জেলা জনসংযোগ অফিসারের পদে যোগদান করেন। জনাব সোহরাওয়ার্দ্দী তাঁর কর্মদক্ষতা, বলিষ্ঠতায় তদানিন্তন প্রাদেশিক মুসলিম লীগের অফিস সেক্রেটারী নিযুক্ত করেন। ওয়েলেসলি লেনের এই বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগ অফিসই তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞার সুতিকাগার। এখানেই সকল নেতার আদর্শ ও কর্মপ্রচেষ্টার সম্যক পরিচিতি লাভ করে তিনি তার রাজনৈতিক মতবাদ বিশেষরূপে প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৬ সালে নির্বাচনে শহীদ সোহরাওয়ার্দ্দী নাজিম উদ্দিনের নিকট পরাজিত হলে বঙ্গীয় মুসলিম লীগ অফিস ঢাকায় স্থানান্তরিত হয়। তফাজ্জল হোসেন তখন মুসলিম লীগ অফিস পরিত্যাগ করেন এবং আবুল মনসুর আহমদের সম্পাদনায় দৈনিক ইত্তেহাদ পত্রিকার পরিচালনা বিভাগে যোগদান করেন। ১৯৪৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সমর্থনে ঢাকায় সাপ্তাহিক ইত্তেহাদ পত্রিকা প্রকাশিত হয়।

পরে ১৯৫১খ্রি. পূর্ব-পাকিস্তান আওয়ামি মুসলিম লিগের মুখপত্র সাপ্তাহিক ‘ইত্তেফাক’-এর সম্পাদনার ভার গ্রহণ করেন এবং ‘মুসাফির’ ছদ্মনামে ‘রাজনৈতিক ধোঁয়াশা’ শিরোনামায় নিবন্ধ রচনা শুরু করেন। পরবর্তী পর্যায়ে ২৪ ডিসেম্বর ১৯৫৩খ্রি. ‘ইত্তেফাক’ দৈনিক পত্রিকারূপে আত্মপ্রকাশ করে এবং তিনি তার সম্পাদক হন। ১৯৫২খ্রি. তিনি এশিয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় শান্তি সম্মেলনে যোগদানের জন্য চীন সফর করেন। ১৯৫৭-৫৮খ্রি. দু-বছরের জন্য পি.আই.এ.-ও ডিরেক্টর মনোনীত হন। ১৯৫৮খ্রি. দেশে সামরিক শাসন জারি হলে তিনি ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৫৯খ্রি. গ্রেপ্তার হন কিন্তু সামরিক আদালতের বিচারে মুক্তিলাভ করেন। ১৯৬১খ্রি. পাকিস্তানের আই.পি.আই-ও চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৬২ খ্রি. তিনি দ্বিতীয়বার জননিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার হন এবং ওই বছরের ১৪ আগস্ট মুক্তি পান। ১৯৬৪ খ্রি. দাঙ্গাবিরোধ কমিটির প্রথম সভার তিনি সভাপতিত্ব করেন। ১৬ জুন ১৯৬৬ খ্রি. তিনি আবার গ্রেপ্তার হন। গণ আন্দোলনের চাপে ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ ইত্তেফাকের ওপর থেকে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার এবং ১৯৬৭ খ্রি. ২৯ মার্চ মুক্তি পান। ১৯৬৯ এর ২৬ মে রাওয়ালপিন্ডি গমন এবং ৩১ মে হঠাৎ হৃদরোগ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু। নির্ভীক সাংবাদিক এবং মানিক মিয়া নামে পরিচিতি ও মুসাফির নামে বিখ্যাত ছিলেন।


তথ্যসূত্র: সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান ও বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান।