ডা. যামিনী সেন

Barisalpedia থেকে

যামিনী সেন ‘ফেলো অফ দি রয়াল ফ্যাকাল্টি অফ সার্জনস অ্যান্ড ফিজিশিয়ানশ’ উপাধিতে ভূষিত পৃথিবীর প্রথম মহিলা ডাক্তার। জন্ম: জুন ১৮৭১। মৃত্যু: ১৯৩৩। গ্রাম: বাসণ্ডা ঝালকাঠি। ব্রাহ্মধর্মাবলম্বী সাহিত্যিক সাব-জজ চণ্ডীচরণ সেনের কন্যা।

যামিনী সেন.jpg

ডাক্তারি সেবা ও উচ্চশিক্ষা

১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে যামিনী সেন এল.এম.এফ পাশ করেন। তিনি ছিলেন এই কলেজের চতুর্থ বাঙালি মহিলা ডাক্তার। প্রথমে কিছুদিন প্রাইভেটে প্র্যাকটিস করেন কিন্তু পসার হয় না। পরে অপর এক বরিশালের কন্যা ডাক্তার কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের সহায়তায় রাজমহিষীর চিকিৎসার জন্য চাকরি নিয়ে নেপাল যান। একটানা দশ বছর তিনি সেখানে শুধু রাজপরিবার নয়, কাঠমু-ুর জেনানা হাসপাতালের ভারও নিয়েছিলেন। মহারানী ও তাঁর নিজ অনুজের মৃত্যুও পর ১৯০৯খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতায় ফিরে আসেন। ডাফরিন ফান্ড থেকে বৃত্তি নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি মার্চ ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে বিলেতে যাত্রা করেন। ডাবলিনের রোটান্ডা হাসপাতালে যোগ দিয়ে সেখান থেকে এল. এম ডিগ্রি এবং গ্লাসগো বিদ্যালয়ে পড়ে ও পরীক্ষা দিয়ে তিনি ‘ফেলো অফ দি রয়াল ফ্যাকাল্টি অফ সার্জনস অ্যান্ড ফিজিশিয়ানশ’ উপাধি লাভ করেন। ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে প্রাপ্ত এই সম্মানে ভূষিত তিনিই বিশ্বের প্রথম মহিলা। তাঁর আগে ভারতীয় বা বিলেতের কোনো মহিলাই এ সম্মান পাননি।


উচ্চশিক্ষা শেষে কর্মজীবন

এরপর তিনি বার্লিনে যান সেখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে পরিচিত হতে। সাফল্যের সাথে তিনি সেখানে কাজ শিখেছিলেন। কিন্তু পালিত কন্যার মৃত্যুসংবাদ পেয়ে তিনি দেশে ফিরে আসেন। কর্মজীবনে তিনি সুখী ছিলেন না। ভারতীয় মহিলা বলে ইংরেজ কর্তৃপক্ষের কাছে যথেষ্ট অবিচার তিনি পেয়েছেন। তাঁর অপ্রকাশিত দিনলিপিতে তিনি তদানীন্তন মহিলা ডাক্তারদের অসুবিধার কথা, দেশীয়দের উপর ইংরেজ কর্তৃপক্ষের অবিচারের কথা অনেকখানি লিখেছিলেন। সরকারি চাকরি ছাড়ার কথা বহুবার ভেবেছেন। শেষ পর্যন্ত ‘উইমেন্স মেডিক্যাল সার্ভিস’-এর নিন্দার প্রতিবাদে তিনি চাকরি ছাড়েন। ১৯২১ খৃস্টাব্দে. তিনি আর একবার বিলেত যান। এবার তিনি লন্ডন স্কুল অফ ট্রপিকাল মেডিসিন থেকে সার্টিফিকেট এবং কেম্ব্রিজ থেকে জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত ডিপ্লে¬ামা নিয়ে ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে ফেরেন। দেশে ফিরে কলকাতায় তিনি বলদেওদাস মেটারনিটি হোমের পরিচালনার ভার পান। স্বাধীনভাবে কাজ করতে পেরে তিনি এই দাতব্য প্রতিষ্ঠানটির প্রভূত উন্নতি সাধন করেন। চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে ধাত্রী প্রশিক্ষণও তাঁর অন্যতম কাজ ছিল। ১৯২৯ খ্রি. বিশ্রাম নিতে পুরী গিয়েও সেখানের তদানীন্তন ম্যাজিস্ট্রেট এবং কয়েকজন ব্রাহ্ম সজ্জনের অনুরোধে তাঁকে পুরী হাসপাতালের দায়িত্বভার নিতে হয়। তাঁর আমলে হাসপাতালটির সুনাম হয়েছিল।

গ্রন্থ

তাঁর রচিত গ্রন্থ: ‘প্রসূতি তত্ত্ব’ (১৯৩২) তৎকালে বিখ্যাত গ্রন্থ।

মৃত্যু

কবি কামিনী রায়ের সহোদরা ছোট বোন যামিনী সেন মাত্র বাষট্টি বছর বয়সে ১৯৩৩ সালে পরলোক গমন করেন।


তথ্যসূত্র: বাঙালি চরিতাভিধান (প্রথম খন্ড)। কোলকাতা: সাহিত্য সংসদ। ২০১৩।