জুনাহারের যুদ্ধ

Barisalpedia থেকে


জুনাহার যুদ্ধ: ২৪ এপ্রিল ফরিদপুর পতনের সংবাদ বরিশাল পৌঁছে। যে কোন মুহূর্তে পাকবাহিনী বরিশাল আক্রমণ করতে পারে মর্মে বরিশালের মুক্তিযোদ্ধারা তখন সচেতন। তাই তারা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী প্রতিরোধ গড়ে তোলে। সেই প্রতিরোধের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে দুটো যুদ্ধ হয়। তার একটি ‘জুনাহার যুদ্ধ’ নামে পরিচিত। ২৫ এপ্রিল পাকবাহিনী জলে-স্থলে ও আকাশ পথে বরিশালের উপর ত্রিমুখী আক্রমণ চালায়। পাকবাহিনীর ধারণা ছিল বরিশাল, পটুয়াখালী মুক্তিযোদ্ধাদের শক্ত ঘাঁটি। তাই তারা শক্তিশালী বাহিনী নিয়ে বরিশালে আক্রমণ চালায়। ২৫ এপ্রিল সকাল ১১ টা ৪৫ মিনিটে পাকিস্তান নৌবাহিনী জুনাহার আক্রমণ করে। সায়েস্তাবাদ নদী হতে জুনাহার হয়ে কীর্তনখোলা নদীতে যেতে হয়। জুনাহারের পশ্চিমে সায়েস্তাবাদ এবং পূর্ব দিকে চরমোনাই ইউনিয়ন এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে চরবাড়িয়া ইউনিয়ন ও তালতলী। জুনাহারের পশ্চিম পাড়ে হবিনগরে, পূর্ব পাড়ে রাজাপুরে এবং দক্ষিণ পাড়ে ফোটকার চরে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নেয়। জুনাহার নদীর দু’পারে ইরানী ও মাজভী স্টীমার। একদল মুক্তিযোদ্ধা হবিনগরে ওয়াজেদ হাওলাদারের বাড়ি, একদল তালতলীর কাছে নাজিরবাড়ির স্কুল এবং একদল বেলতলায় ছিল। লে. ইমাম আলী মেহেদী, লেঃ নাসির, ফ্লাইট সার্জেন্ট মুহাম্মদ ফজলুল হক মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচালনা করেন। সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন নূরুল ইসলাম মঞ্জুর। তিনি তালতলী অবস্থান করছিলেন। প্রথমে গানবোট হতে সায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের হবিনগর ও পার্শ্ববর্তী গ্রামে গোলাবর্ষণ শুরু হয়। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ৩০৩ রাইফেল দিয়ে পাল্টা আক্রমণ চালায়। গানবোট ঘায়েল করার জন্য তাদের কোন অস্ত্র ছিল না। কিছুক্ষণের মধ্যে গোলার আঘাতে স্টীমার ইরানী ও মাজভী ডুবে যায়। আজও স্টীমার দুটো জুনাহারের দু’পারে ডুবে আছে। নৌবাহিনীর ভারী অস্ত্রের আক্রমণে মুক্তিবাহিনীর বাংকার ধ্বংস হয়ে যায় এবং অনেকে নিহত ও আহত হয়। জুনাহারে ইছাকাটির আবদুল মোতালেব আকন্দ, গৌরনদী থানার স্যারালের সিপাহী সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন। মুক্তিযোদ্ধারা ভারী অস্ত্রের সাথে টিকতে না পেরে পিছু হটে যায়। ৩ ঘন্টা যুদ্ধের পর জুনাহারে মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটির পতন হয়। মুক্তিবাহিনী জুনাহার ত্যাগ করার পরও পাকিস্তানী নৌবাহিনী জুনাহার অতিক্রম করার সাহস পায়নি। ২৬ এপ্রিল ভোরে তারা বরিশাল আইডব্লিউটি ঘাটে পৌঁছে।



তথ্যসূত্র: সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (২য় খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১৫।