"জগদানন্দ বসু"-এর বিভিন্ন সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

Barisalpedia থেকে
(" == রাজা জগদানন্দ বসু == রাজা পরমানন্দের মৃত্যুর পর ১৫৭০ খ্র..." দিয়ে পাতা তৈরি)
 
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
 +
রাজা জগদানন্দ বসু ছিলেন চন্দ্রদ্বীপের রাজবংশের ৮ম রাজা। তিনি পিতার মতো দুর্জয় সাহসী ও দক্ষ শাসক ছিলেন না। তিনি সহজ-সরল ও ন্যায়বান ছিলেন।
  
== রাজা জগদানন্দ বসু ==
+
== সিংহাসনে আরোহণ ==
  
রাজা পরমানন্দের মৃত্যুর পর ১৫৭০ খ্রিস্টাব্দে তার পুত্র জগদানন্দ বসু চন্দ্রদ্বীপের সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি পিতার মতো দুর্জয় সাহসী ও দক্ষ শাসক ছিলেন না। তিনি সহজ-সরল ও ন্যায়বান ছিলেন। বিভিন্ন শাস্ত্রে তার পান্ডিত্য ছিল। জ্যোতিষ শাস্ত্রে তার অগাধ বিশ্বাস ছিল।
+
রাজা পরমানন্দের মৃত্যুর পর ১৫৭০ খ্রিস্টাব্দে তার পুত্র জগদানন্দ বসু চন্দ্রদ্বীপের সিংহাসনে আরোহণ করেন। বিভিন্ন শাস্ত্রে তার পান্ডিত্য ছিল। জ্যোতিষ শাস্ত্রে তার অগাধ বিশ্বাস ছিল।
  
== রাজা জগদানন্দের রাজত্বকাল ==
+
== রাজত্বকাল ==
  
রাজা জগদানন্দের রাজত্বকালে দাউদ কররানী গৌড়ের সুলতান ছিলেন। স¤্রাট আকবর বাংলা দখলের জন্য সেনাপতি মুনিম খাঁকে প্রেরণ করেন। মুনিম খাঁ ১৫৭৫ সালে দাউদ কররানীকে আক্রমন করেন। ১৫৭৫ সালে ১২ এপ্রিল দাউদ কররানী সন্ধি করেন। মুনিম খাঁ রাজধানী তানড়া থেকে ফতেহাবাদ ও বাকলায় সৈন্য প্রেরণ করেন। কিন্তু তিনি বাকলায় কোন প্রতিনিধি প্রেরণ করেননি। তার প্রেরিত সেনাবাহিনী বাকলা দখল করতে ব্যর্থ হয়। মনে হয় চন্দ্রদ্বীপ রাজা জগদানন্দ ও পাঠানরা মিলিতভাবে মোগলবাহিনীকে প্রতিহত করে। ১৫৭৬ সালে ১২ জুলাই রাজমহলের যুদ্ধে দাউদ কররানী পরাজিত ও নিহিত হলে মোগল স¤্রাট সেনাপতি মুরাদ খাঁকে ফতেহাবাদত ও বাকলা অভিযানে প্রেরণ করেন। মুরাদ খাঁ ফতেহাবাদ জয় করেন এবং মোগল শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু তিনি বাকলা দখল ও মোগল শাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হন। মনে হয় তিনি যুবরাজ কন্দর্প নারায়ণের নিকট বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ফতেহাবাদে ফিরে যান। ১৫৭৬ সালে হতে শুরু হলো বারভূইয়ার শাসন। স¤্রাট আকবর নামেমাত্র বাংলাদেশ দখল করেন। কিন্তু এ প্রদেশে তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হন। ১৫৭৬ সাল হতে ১৬১১ সাল পর্যন্ত বারভূঁইয়াগণ স্বাধীনভাবে বাংলাদেশ শাসন করেন। রাজা জগদানন্দ বারভূঁইয়াদের অন্যতম  ছিলেন। তিনি অন্যান্য ভূঁইয়ার মতো ১৫৭৬ সাল হতে ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত স্বাধীনভাবে রাজত্ব করেন।
+
রাজা জগদানন্দ বসুর রাজত্বকাল ছিল ১৫৭৬ থেকে ১৫৮৪ পর্যন্ত। রাজা জগদানন্দের রাজত্বকালে দাউদ কররানী গৌড়ের সুলতান ছিলেন। সম্রাট আকবর বাংলা দখলের জন্য সেনাপতি মুনিম খাঁকে প্রেরণ করেন। মুনিম খাঁ ১৫৭৫ সালে দাউদ কররানীকে আক্রমন করেন। ১৫৭৫ সালে ১২ এপ্রিল দাউদ কররানী সন্ধি করেন। মুনিম খাঁ রাজধানী তানড়া থেকে ফতেহাবাদ ও বাকলায় সৈন্য প্রেরণ করেন। কিন্তু তিনি বাকলায় কোন প্রতিনিধি প্রেরণ করেননি। তার প্রেরিত সেনাবাহিনী বাকলা দখল করতে ব্যর্থ হয়। মনে হয় চন্দ্রদ্বীপ রাজা জগদানন্দ ও পাঠানরা মিলিতভাবে মোগলবাহিনীকে প্রতিহত করে। ১৫৭৬ সালে ১২ জুলাই রাজমহলের যুদ্ধে দাউদ কররানী পরাজিত ও নিহত হলে মোগল সম্রাট সেনাপতি মুরাদ খাঁকে ফতেহাবাদ ও বাকলা অভিযানে প্রেরণ করেন। মুরাদ খাঁ ফতেহাবাদ জয় করেন এবং মোগল শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু তিনি বাকলা দখল ও মোগল শাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হন। মনে হয় তিনি যুবরাজ কন্দর্প নারায়ণের নিকট বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ফতেহাবাদে ফিরে যান। ১৫৭৬ সালে হতে শুরু হলো বারভূইয়ার শাসন। সম্রাট আকবর নামেমাত্র বাংলাদেশ দখল করেন। কিন্তু এ প্রদেশে তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হন। ১৫৭৬ সাল হতে ১৬১১ সাল পর্যন্ত বারভূঁইয়াগণ স্বাধীনভাবে বাংলাদেশ শাসন করেন। রাজা জগদানন্দ বারভূঁইয়াদের অন্যতম  ছিলেন। তিনি অন্যান্য ভূঁইয়ার মতো ১৫৭৬ সাল হতে ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত স্বাধীনভাবে রাজত্ব করেন।
  
 
== বৈবাহিক অবস্থা ও পারিবারিক জীবন ==
 
== বৈবাহিক অবস্থা ও পারিবারিক জীবন ==
  
জগদানন্দ ভাগ্যমন্ত রায়ের কন্যাকে বিয়ে করেন। তার এক পুত্র কন্দর্প নারায়ন ও এক কন্যা কমলাদেবী। কমলাকে বাকলার রামচন্দ্র নিয়োগীর পুত্র গুণানন্দের নিকট বিয়ে দেন। রামচন্দ্র নিয়োগী বাকলার গুহ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বানারীপাড়া গুহ পরিবার তার বংশধর। তিনি সুুলেমান কররানীর দরবারে চাকরি করতেন। তার পুত্র ভবানন্দ ও গুণানন্দ। ভবানন্দের পুত্র বিক্রমাদিত্য ও গুণানন্দের পুত্র বসন্ত রায়। বিক্রমাদিত্যের পুত্র যশোরের বিখ্যাত রাজা প্রতাপাদিত্য রায়। যশোর রাজ্য ও যশোর সমাজ প্রতিষ্ঠার পর বিক্রমাদিত্য ও বসন্ত রায় তাদের বাসস্থান বাকলা থেকে যশোর ধামে স্থানান্তরিত করেন।
+
জগদানন্দ ভাগ্যমন্ত রায়ের কন্যাকে বিয়ে করেন। তার এক পুত্র কন্দর্প নারায়ন ও এক কন্যা কমলাদেবী। কমলাকে বাকলার রামচন্দ্র নিয়োগীর পুত্র গুণানন্দের নিকট বিয়ে দেন। রামচন্দ্র নিয়োগী বাকলার গুহ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বানারীপাড়া গুহ পরিবার তার বংশধর। তিনি সুুলেমান কররানীর দরবারে চাকরি করতেন। তার পুত্র ভবানন্দ ও গুণানন্দ। ভবানন্দের পুত্র বিক্রমাদিত্য ও গুণানন্দের পুত্র বসন্ত রায়। বিক্রমাদিত্যের পুত্র যশোরের বিখ্যাত রাজা প্রতাপাদিত্য রায়। যশোর রাজ্য ও যশোর সমাজ প্রতিষ্ঠার পর বিক্রমাদিত্য ও বসন্ত রায় তাদের বাসস্থান বাকলা থেকে যশোর ধামে স্থানান্তরিত করেন।
  
 
+
----
 
+
তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস। ভাস্কর প্রকাশনী, ২০১০।
== তথ্য নির্দেশ ==
+
 
+
১. রোহিণী রায় চৌধুরী, বাকলা
+
২. শ্রী বৃন্দাবন পুততুন্ড, চন্দ্রদ্বীপের ইতিহাস
+
৩. Sir Jadunath Sarkar, History of Bengal, age 358
+
৪. Dr. Atul Chandra Roy, Muslim Rule in Bengal
+
৫. H. Beveridge, District of Bakarganj, page 64-70
+

০৯:৫২, ২০ জুলাই ২০১৭ তারিখে সম্পাদিত বর্তমান সংস্করণ

রাজা জগদানন্দ বসু ছিলেন চন্দ্রদ্বীপের রাজবংশের ৮ম রাজা। তিনি পিতার মতো দুর্জয় সাহসী ও দক্ষ শাসক ছিলেন না। তিনি সহজ-সরল ও ন্যায়বান ছিলেন।

সিংহাসনে আরোহণ

রাজা পরমানন্দের মৃত্যুর পর ১৫৭০ খ্রিস্টাব্দে তার পুত্র জগদানন্দ বসু চন্দ্রদ্বীপের সিংহাসনে আরোহণ করেন। বিভিন্ন শাস্ত্রে তার পান্ডিত্য ছিল। জ্যোতিষ শাস্ত্রে তার অগাধ বিশ্বাস ছিল।

রাজত্বকাল

রাজা জগদানন্দ বসুর রাজত্বকাল ছিল ১৫৭৬ থেকে ১৫৮৪ পর্যন্ত। রাজা জগদানন্দের রাজত্বকালে দাউদ কররানী গৌড়ের সুলতান ছিলেন। সম্রাট আকবর বাংলা দখলের জন্য সেনাপতি মুনিম খাঁকে প্রেরণ করেন। মুনিম খাঁ ১৫৭৫ সালে দাউদ কররানীকে আক্রমন করেন। ১৫৭৫ সালে ১২ এপ্রিল দাউদ কররানী সন্ধি করেন। মুনিম খাঁ রাজধানী তানড়া থেকে ফতেহাবাদ ও বাকলায় সৈন্য প্রেরণ করেন। কিন্তু তিনি বাকলায় কোন প্রতিনিধি প্রেরণ করেননি। তার প্রেরিত সেনাবাহিনী বাকলা দখল করতে ব্যর্থ হয়। মনে হয় চন্দ্রদ্বীপ রাজা জগদানন্দ ও পাঠানরা মিলিতভাবে মোগলবাহিনীকে প্রতিহত করে। ১৫৭৬ সালে ১২ জুলাই রাজমহলের যুদ্ধে দাউদ কররানী পরাজিত ও নিহত হলে মোগল সম্রাট সেনাপতি মুরাদ খাঁকে ফতেহাবাদ ও বাকলা অভিযানে প্রেরণ করেন। মুরাদ খাঁ ফতেহাবাদ জয় করেন এবং মোগল শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু তিনি বাকলা দখল ও মোগল শাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হন। মনে হয় তিনি যুবরাজ কন্দর্প নারায়ণের নিকট বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ফতেহাবাদে ফিরে যান। ১৫৭৬ সালে হতে শুরু হলো বারভূইয়ার শাসন। সম্রাট আকবর নামেমাত্র বাংলাদেশ দখল করেন। কিন্তু এ প্রদেশে তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হন। ১৫৭৬ সাল হতে ১৬১১ সাল পর্যন্ত বারভূঁইয়াগণ স্বাধীনভাবে বাংলাদেশ শাসন করেন। রাজা জগদানন্দ বারভূঁইয়াদের অন্যতম ছিলেন। তিনি অন্যান্য ভূঁইয়ার মতো ১৫৭৬ সাল হতে ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত স্বাধীনভাবে রাজত্ব করেন।

বৈবাহিক অবস্থা ও পারিবারিক জীবন

জগদানন্দ ভাগ্যমন্ত রায়ের কন্যাকে বিয়ে করেন। তার এক পুত্র কন্দর্প নারায়ন ও এক কন্যা কমলাদেবী। কমলাকে বাকলার রামচন্দ্র নিয়োগীর পুত্র গুণানন্দের নিকট বিয়ে দেন। রামচন্দ্র নিয়োগী বাকলার গুহ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বানারীপাড়া গুহ পরিবার তার বংশধর। তিনি সুুলেমান কররানীর দরবারে চাকরি করতেন। তার পুত্র ভবানন্দ ও গুণানন্দ। ভবানন্দের পুত্র বিক্রমাদিত্য ও গুণানন্দের পুত্র বসন্ত রায়। বিক্রমাদিত্যের পুত্র যশোরের বিখ্যাত রাজা প্রতাপাদিত্য রায়। যশোর রাজ্য ও যশোর সমাজ প্রতিষ্ঠার পর বিক্রমাদিত্য ও বসন্ত রায় তাদের বাসস্থান বাকলা থেকে যশোর ধামে স্থানান্তরিত করেন।


তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস। ভাস্কর প্রকাশনী, ২০১০।