ছারছিনা দারুস সুন্নাত আলিয়া মাদ্রাসা / শর্শিনা মাদ্রাসা

Barisalpedia থেকে
Spadmin (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৫:১৮, ৩ এপ্রিল ২০১৬ পর্যন্ত সংস্করণে

(পরিবর্তন) ←পুর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ→ (পরিবর্তন)

ছারছিনা দারুস সুন্নাত আলিয়া মাদ্রাসা সারা বাংলার জমিনে অন্যতম সেরা ইসলামী বিদ্যাপীঠ। শর্শিনার পির সাহেব বলে খ্যাত শাহ সূফী নেছারউদ্দীন আহমদ বর্তমান পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি থানায় ছারছিনা গ্রামে ১৯০৫ সালে এই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন।

ছারছিনা মাদ্রাসা.jpg

ইতিহাস

দ্বীন প্রচারের জন্য স্বরূপকাঠি থানায় শাহ সূফী নেছারউদ্দীন আহমদ তাঁর নিজ গ্রাম মাগুরায় ১৯০৫ সালে একখানা গোলপাতার কুতুবখানা জাতীয় ঘর নির্মাণ করেন। পীর সাহেবের ইচ্ছায় নির্মিত ৪০ হাত লম্বা ৭ হাত প্রস্থ সেই ঘরে ১৯১৮ সালে কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসার পাঠ্য তালিকা অনুসারে কয়েক জামাত নিয়ে একটি মাদ্রাসা উন্মুক্ত করা হয়। মাদ্রাসার নামকরণ করা হয় ছারছিনা দারুস সুন্নাত আলিয়া মাদ্রাসা। এই নামের মধ্য দিয়ে মাগুরা গ্রাম ছারছিনায় রূপান্তরিত হয়। মাদ্রাসার প্রথম হেড মৌলভী ছিলেন ইদিলপুরের মৌলভী মির্জা আলী। ১৯১৯ সালে গোলপাতা নির্মিত কুতুবখানাকে পাকা ভবনে উন্নীত করা হয়। ১৯২০ সালে প্রথম পাকা মসজিদ নির্মাণ করা হয়। ১৯২৩ সালে বিভাগীয় পর্যায়ে দশটি নিউ স্কীম মাদ্রাসা খোলার পরিকল্পনা হয়। কারণ ওল্ড স্কীম মাদ্রাসার অনুমোদন সরকার আর দেয় না। পীর সাহেব এ প্রস্তাবে রাজি হননি। পূর্বেই এ কে ফজলুল হককে নিয়ে মাদ্রাসার জন্য ম্যানেজিং কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ১. এ কে ফজলুল হক,প্রেসিডেন্ট; ২. পীর সাহেব শাহ সূফী নেছারউদ্দীন আহমদ, সেক্রেটারি; ৩. হাজী গোলাম উদ্দিন তালুকদার, সদস্য; ৪. হাজী ইউসুফ আলী, কৌড়িখাড়া, সদস্য; ৬. হাজী দুদু ব্যাপারী, জগন্নাথকাঠি,সদস্য; ৭. এনসার উদ্দিন, সুটিয়াকাঠি, সদস্য; ৮. আবদুল গণি সরদার, শর্শিনা, সদস্য। ১৯১৫ হতে ১৯২৭ পর্যন্ত সময়কে মাদ্রাসার প্রাথমিক স্তর বলা চলে। জেলা ম্যাজিস্টেট ডনোভন ৪-১২-১৯২৬ তারিখে ছারছিনা পরিদর্শন করেন। তিনি ছারছিনা সড়ক নির্মাণ করেন। ১৯২৭ সালে মাদ্রাসাটি প্রথম দাখিল পরীক্ষা দেয়ার সরকারি মঞ্জুরিপ্রাপ্ত হয়। ১৯২৮ সালে মাদ্রাসাটি জামাতে উলার পরীক্ষা দেয়ার অনুমতি লাভ করে। ১৯৩৭ সালে জামাতে উলার স্থায়ী মঞ্জুরি পাওয়া যায়। ১৯২০ সালে মাদ্রাসার লিল্লাহ বোর্ডিং শুরু হয়। ফুরফুরার পীর হযরত আবু বকর সিদ্দিকী ছারছিনা আগমন করেন এবং ১৯৩১ সালে মাদ্রাসার জন্য পাকা ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯৩৩ সাল থেকে ছাত্ররা বরিশাল কেন্দ্রে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পায়। ১৯৩৪ সালে শিক্ষামন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিন ছারছিনা মাদ্রাসা পরিদর্শন করেন। ১৯৫০ সালে ছারছিনায় পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপিত হয়। শাহ সূফী নেছারউদ্দীন তার সম্পত্তি ১৯৩৪ সালে মাদ্রাসার জন্য ওয়াকফ করে দেন। ১৯৩৫ সালে দ্বিতল ছাত্রাবাস নির্মিত হয়। ১৯৩৮ সালে এই মাদ্রাসায় টাইটেল পড়ানো শুরু হয়। তখন কলকাতার বাইরে আর কোথাও টাইটেল মাদ্রাসা ছিল না। কলকাতার বাইরে টাইটেল খোলার অনুমতি ছিল না। এই মাদ্রাসার জন্য এ কে ফজলুল হক পূর্বের আদেশ বাতিল করে কলকাতার বাইরে টাইটেল খোলার অনুমতি দেন। দ্বিতীয় বর্ষ টাইটেল খোলার উদ্বোধন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী এ কে ফজলুল হক চাখার আগমন করেন। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে বরিশাল চলে যান। ১৯৪৪ সালে ছারছিনা মাদ্রাসার টাইটেল মঞ্জুর করা হয়। টাইটেল মঞ্জুরি দেয়ার জন্য বাংলার গভর্নর জন হারবার্ট এবং বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা একে ফজলুল হক ১৯৪০ সালে ছারছিনা মাদ্রাসা পরিদর্শন করেন। শেরে বাংলার চেষ্টায় গ্রাম বাংলায় সর্বপ্রথম এই ছারছিনাই টাইটেল খোলার অনুমতি পায়। ১৯৫০ সালে ছারছিনা আলিয়া মাদ্রাসায় টাইটেল পরীক্ষা কেন্দ্র মঞ্জুর হয়। ওল্ড স্কীম মাদ্রাসায় সরকার অনুদান দিত না। কিন্তু পীর সাহেবের চেষ্টায় ছারছিনা মাদ্রাসা ওল্ডস্কীমে অনেক সরকারি অনুদান পেত। ১৯৫১ সালে মাদ্রাসার দারুল হাদীস ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়।

সহশিক্ষা কার্যক্রম

১৯১৫ সালেই মাদ্রাসায় তথা পিরের দরবারে প্রথম ১৪, ১৫, ১৬ অগ্রহায়ণ মাহফিলের তারিখ নির্ধারিত হয়। ১৯৩২ সালের ২৮ ও ২৯ ফাল্গুন দ্বিতীয় মাহফিল শুরু হয়। ১৯৪৮ সালে মাদ্রাসার নিজস্ব ছাপাখানা নির্মাণ করা হয়। ১৯৪৯ সালে পাক্ষিক তাবলীগ নামে পত্রিকা প্রকাশ করে ঘরে ঘরে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়।


তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (দ্বিতীয় খণ্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১৫।