ছারছিনার পির সাহেব

Barisalpedia থেকে
Spadmin (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৬:০৮, ১৯ এপ্রিল ২০১৬ পর্যন্ত সংস্করণে ("ছারছিনার পির সাহেব বলে খ্যাত শাহ সূফী নেছারউদ্দীন আহমদ ১..." দিয়ে পাতা তৈরি)

(পরিবর্তন) ←পুর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ→ (পরিবর্তন)

ছারছিনার পির সাহেব বলে খ্যাত শাহ সূফী নেছারউদ্দীন আহমদ ১৮৭৩ সালে তথা বাংলা ১২৭৯ সালে বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি থানার মাগুরা (ছারছিনা) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আলহাজ্ব ছদরুদ্দীন আহমদ। তিনি ফুরফুরা শরীফের খলিফা হিসেবে সারা বাংলায় খ্যাতিমান এক ইসলামী ব্যক্তিত্ব।

শিক্ষাজীবন

স্থানীয় পাঠশালায় নেছারউদ্দীন আহমদের প্রাথমিক শিক্ষা শেষ হয়। পিতা হজ্বযাত্রার পূর্বে ১৮৮৮ সালে পুত্র নেছারউদ্দীনকে বিবাহ করান। তিনি তখন মাদারীপুর প্রাথমিক ইসলামিয়া মাদ্রাসায় পড়তেন। মাদারীপুরে শিক্ষা সমাপ্ত করে ঢাকা হাম্মাদিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। পরে তিনি কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। তারপর তিনি হুগলী মোহসেনিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। এ মাাদ্রাসায় অধ্যয়নকালে ১৮৯৫ সালে ফুরফুরা শরীফের পীর হযরত আবু বকর সিদ্দিকীর হাতে হাত দিয়ে বায়াত হন। তিনি এলমে শরীয়ত ও এলমে মারেফতে পারদর্শিতা অর্জন করেন।

কর্মজীবন

১৯০১ সালে ফুরফুরা পীরের নির্দেশে সূফী নেছারউদ্দীন আহমদ তার মাতা, দুই পুত্র ও ভগ্নিপতি হাফেজ আব্দুর রশীদসহ মক্কা হিযরতের উদ্দেশে যান। মক্কায় তার স্ত্রী ও দুই পুত্র মৃত্যুবরণ করেন। মা ও ভগ্নিপতিকে নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। ১৯০৫ সালে তিনি গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ার কুশলা গ্রামের আব্দুল ওয়াফী চৌধুরীর কন্যাকে বিয়ে করেন। তিনি ইসলাম প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন। দ্বীন প্রচারের জন্য তিনি ১৯০৫ সালে গোলপাতার কুতুবখানা নির্মাণ করেন। ১৯১৩ সালে তিনি কেরাতিয়া মাদ্রাসা বা মক্তব প্রতিষ্ঠা করেন। শাহ সূফী নেছারউদ্দীন তার সম্পত্তি ১৯৩৪ সালে মাদ্রাসার জন্য ওয়াক্ফ করে দেন। এই মাদ্রাসাই পরবর্তীতে ১৯৩৮ সালে শেরে বাংলার চেষ্টায় কলকাতার বাইরে প্রথম টাইটেল ক্লাস খোলার অনুমতি পায়। ১৯৪৬ সালে পাকিস্তান দাবির প্রেক্ষিতে কলকাতা মোহাম্মদ আলী পার্কে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত ওলামা কনফারেন্সের অন্যতম সংগঠক ছিলেন শাহ সুফী নেছারউদ্দীন আহমদ (রহ.)। ১৯৪৭ সালে সিলেট রেফারেন্ডামে কাজ করার জন্য পীর সাহেব তার বড় ছেলে মওলানা আবু জাফর মোহাম্মদ ছালেহ এর নেতৃত্বে ৮ সদস্যের একটি টিম প্রেরণ করেন। তাদের মধ্যে ঝালকাঠির হযরত মাওলানা আজিজুর রহমান নেছারাবাদী কায়েদ ছাহেবও ছিলেন । পাকিস্তানের ইসলামী শাসনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য ছারছীনাতে সর্বদলীয় ওলামা কনফারেন্স করে ২২ দফা রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়। ১৯৫২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ১৩৫৮ সালের ১৮ মাঘ রোজ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৯:৪৫ মিনিটে মওলানা শাহ সূফী নেছারউদ্দনি আহমদ (রহ.) ইন্তেকাল করেন। তাকে ছারছীনার মসজিদের উদ্দর পাশে দাফন করা হয়।

গ্রন্থাবলি

শাহ সূফী নেছারউদ্দীন আহমদ কোরান সুন্নাহ সম্পর্কে একাধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। পীর সাহেব লিখিত গ্রন্থসমূহ: মোছলেম রতœদার, ফুরফুরা পীর সাহেবের অছিয়তনামা, তালিমে মারেফাত, তাহকীকে বর্জখ, খেলাফত আন্দোলন পদ্ধতি, সমাজ উন্নতি, মাওলানার উক্তি খ-ন, ছোবহেছাদেক, রদ্দে বদগুমান, দাড়ি গোঁফ সমস্যা ও হক কথা, নুরুন হেদায়েত ও বেদাত ফকিরের ধোকা ভঞ্জন, ফতোয়ায়ে ছিদ্দিকী, তরিকুল ইসলাম, নারী ও পরদা, জুমার অকাট্য দলীল ইত্যাদি। এ সকল কেতাবসমূহ পীর সাহেব জনাব এমদাদ আলী ও অন্যান্যের সহায়তায় লিখেছেন।


তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (দ্বিতীয় খণ্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১৫।