চারুবালা গঙ্গোপাধ্যায়

Barisalpedia থেকে

নারীনেত্রী ও সমাজকর্মী চারুবালা গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন মনোরমা মাসিমার সহযোদ্ধা। ১৯০৫ সালে বরিশাল শহরে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতা পুলিশ অফিসার রাজেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়; মাতা লক্ষ্মীসুন্দরী। চারুবালা গঙ্গোপাধ্যায়ের মৃত্যু ২২ জুন ১৯৯৯।

বরিশাল অঞ্চলের কিংবদন্তী নেত্রী মনোরমা বসুর একান্ত সহযোদ্ধা চারুবালা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পর আর কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার সুযোগ পাননি। মনোরমা বসু (মাসিমা) ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে বরিশাল শহরে যে-কয়জন নারীকে নিয়ে মহিলা সমিতি গঠন করেন তিনি তাঁদের অন্যতমা। এসময় তিনি কংগ্রেসে যোগ দেন এবং বিভিন্ন মিছিল-মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে আইন অমান্য আন্দোলনে মনোরমা বসু গ্রেপ্তার হলে তিনিই সাংগঠনিক কাজকর্ম চালিয়ে নেন। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে মাসিমা নিজের বাড়িতে স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে তিনিই সর্বাধিক সহযোগিতা করেন। ১৯৩৩-৩৪ খ্রিস্টাব্দে মনোরমা বসুর উদ্যোগে তিনি মাতৃমন্দিরে সমাজের পরিত্যক্ত মেয়েদের জন্য ‘অনাথ আশ্রয় কেন্দ্র’ গড়ে তোলেন। আশ্রয় কেন্দ্রের মেয়েদের লেখাপড়ার দায়িত্বের পাশাপাশি সার্বক্ষণিক দেখাশোনার দায়িত্বও তিনি পালন করেন। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে কালেক্টরিতে চাকরিরত ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। ওই বছরই দুর্ভিক্ষ ও মহামারি শুরু হলে তিনি ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। আশ্রয়চ্যুত মেয়েদের জন্য গঠিত হয় ‘নারী কল্যাণ সমিতি’। তিনি মনোরমা বসুর সঙ্গে গ্রামে গ্রামে গৃহবধূদের সংগঠিত করেন এবং বরিশাল জেলা ‘মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি’র সদস্য হিসেবে যোগ দেন। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি সাম্যবাদের মন্ত্রে দীক্ষিত হন্ মনোরমা বসু যে- সময়গুলিতে কারারুদ্ধ ছিলেন তিনিই তখন সংগঠনের কাজ চালিয়ে যান। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে বাংলা ভাষার দাবিতে বরিশালে অনুষ্ঠিত মিছিলে অংশ নিয়ে তিনি গ্রেপ্তার হন ও কয়েকদিন পর ছাড়া পান। ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে গণ-আন্দোলনে তিনি সক্রিয় অংশ নিয়েছেন। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বরিশাল সদর গার্লস স্কুলে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি হিসেবে ছাত্রীদের যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় তাতে এবং বরিশালে মুক্তিবাহিনী গঠনে তাঁর সহযোগিতা ছিল। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে আবার মাতৃমন্দির প্রাথমিক বিদ্যালয় পুনর্গঠনের কাজে এবং পাশাপাশি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির হয়ে নারীদের সংগঠিত করার কাজে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। যতদিন কর্মক্ষম ছিলেন একাজ থেকে তিনি বিরত থাকেননি।


তথ্যসূত্র: সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান