খেলাফত আন্দোলনে বরিশাল

Barisalpedia থেকে

প্রথম মহাযুদ্ধে তুরষ্কের খলিফার পরাজয়ের পর ব্রিটিশ-ফ্রান্স খলিফাকে সিংহাসনচ্যুত করে তুরস্ককে ভাগ করে নেবার উদ্যোগ নেয়। সারা বিশ্বের মুসলমান তাদের ঐতিহ্য খলিফা পদের বিলুপ্তি ও তুরস্কের বিভক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। মাওলানা মুহাম্মদ আলী, শওকত আলী ও এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে ১৯১৯ খ্র্র্রিঃ ভারতের মুসলমানরা খেলাফত আন্দোলন শুরু করে। ১৯২০ খৃৃস্টাব্দে কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে অসহযোগ ও খেলাফত আন্দোলন একত্রে চালাবার প্রস্তাব পাস হয়ে যায়। উপাধি বর্জন, স্কুল-কলেজ বর্জন, বিদেশী দ্রব্য বয়কট প্রবল সাড়া জাগায়। বরিশালে খান বাহাদুর হেমায়েত উদ্দীনকে সভাপতি করে এবং হাশেম আলী খানকে সম্পাদক করে জেলা খেলাফত কমিটি গঠন করা হয়। খেলাফত আন্দোলনে বরিশালের সমাজ ঝাঁপিয়ে পড়ে। ইংরেজবিরোধী আন্দোলনে অনেক মুসলমান নেতা কারাবরণ করেন। খেলাফত আন্দোলনে বাকেরগঞ্জ জেলায় যারা বিশেষ অবদান রেখেছেন তাঁরা হলেন খান বাহাদুর হেমায়েত উদ্দীন আহমেদ, হাশেম আলী খান, উকিল মৌলভী আসগর আলী (ভোলা), উলানিয়ার ওয়াহেদ রাজা চৌধুরী, সুলতান আহমেদ চৌধুরী (বাদশা মিয়া), খোরশেদ আলম চৌধুরী, গৌরনদীর কসবা নিবাসী আবদুল মাজেদ কাজী, শায়েস্তাবাদের নবাব সৈয়দ মোহাম্মদ আফজাল, মঠবাড়িয়ার খান সাহেব হাতেম আলী জমাদ্দার, আজাহার উদ্দীন আহমেদ, বরগুনার আবদুল কাদের মিয়া, রমজান মাষ্টার, বেতাগীর আবি আব্দুল্লাহ (চান মিয়া), পটুয়াখালীর উকিল ফজলে করিম, ফুকু মিয়া, খান সাহেব আকরম, এমদাদ মোক্তার , ডা. মমতাজ উদ্দিন, ভোলার কবি মোজাম্মেল হক, খান বাহাদুর নুরুজ্জামন মোক্তার, তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী, নূর আহমদ শিকদার, মাওলানা নাসির উদ্দিন, চাখারের সৈয়দ আলী হোসেন উকিল (আলি মিয়া), মুলাদীর সৈয়দ শামসুজ্জোহা, মেহেন্দিগঞ্জের খান সাহেব আফাজ উদ্দিন, কলসকাঠির হাসেম তালুকদার, মুন্সী ইয়াসিন হাওলাদার প্রমুখ।১ ছাত্র ও যুবক কর্মীদের মধ্যে ছিলেন আজিজ উদ্দিন আহমেদ, আবদুল ওহাব খান, সৈয়দ আনসার উদ্দিন, মীর ফিদে আলী, সদরুদ্দিন, সৈয়দ কুতুব উদ্দিন, মুহাম্মদ হোসেন চৌধুরী, মোফাজ্জেল হক, আবদুর রাজ্জাক সিকদার, সৈয়দ হাবিবুর রহমান প্রমুখ। খেলাফত আন্দোলন বরিশালের প্রত্যেকটি গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে এবং মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে অংশ নেয়। খেলাফত আন্দোলন ও প্রজা আন্দোলনই বরিশালের মুসলিম সমাজে রাজনৈতিক চেতনা সৃষ্টি করে। ১৯২৩ খৃৃস্টাব্দে তুরষ্কের খলিফা পদ উঠিয়ে দিলে খেলাফত আন্দোলন বন্ধ হয়ে যায়।


তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০।