কেওড়ার বাকলাই পরিবার

Barisalpedia থেকে
Spadmin (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:৪৮, ১১ জুন ২০১৮ পর্যন্ত সংস্করণে

(পরিবর্তন) ←পুর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ→ (পরিবর্তন)

ঝালকাঠি শহরের অদূরে কেওড়া গ্রামের বাকলাই পরিবারটি চন্দ্রদ্বীপ রাজবংশের হিন্দু ছুঁৎমার্গের এক কঠিন ইতিহাসের অংশ। এই পরিবার বা বংশ মূলত চন্দ্রদ্বীপের রাজা কীর্তিনারায়ণের বংশ যা তাঁর জাতিচ্যুতি থেকে সৃষ্ট। ফলত এঁদের জমিদারি ছিল চন্দ্রদ্বীপ পরগণায়ই।


বাকলাই পরিবারের প্রতিষ্ঠা

চন্দ্রদ্বীপের রাজা রামচন্দ্র বসুর পুত্র কীর্তিনারায়ণ ১৬৬৮ খৃৃস্টাব্দে সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি মগ-পর্তুগীজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে সুখ্যাতি অর্জন করেন। নবাব দরবারে গোমাংসের ঘ্রাণ নিয়ে কীর্তিনারায়ণ দুঃখজনকভাবে জাতিচ্যুত হন। জাতিচ্যুত হওয়ার কারণে তিনি রাজ্যচ্যুত হন এবং রাজধানী মাধবপাশার বাদলা গ্রামে কিছুদিন বাস করার পর ঝালকাঠির কেওড়া গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। তাঁর নামানুসারে কীর্তিপাশা গ্রামের নাম হয়েছে মর্মে মতামত রয়েছে।


কীর্তিনারায়ণের মুসলমান জীবন

প্রকাশ থাকে যে তিনি মগদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন এবং তাঁকে পিপলিতা গ্রামে সমাধিস্থ করা হয়। এখানে তার প্রিয় ঘোড়ার কবরও আছে। পিপলিতা শিববাড়ির নিকটে ৮ হাত লম্বা কঙ্কাল পাওয়া গেছে। অনেকে মনে করেন এ কঙ্কাল কীর্তিনারায়ণের হতে পারে। কীর্তিনারায়ণ মুসলমান হলেও তিনি হিন্দু প্রথা সর্ম্পূণভাবে পরিত্যাগ করেননি। কথিত আছে তিনি বণিক বৈশ্য মেয়ে বিয়ে করেন। আবার অনেকে বলেন তিনি মুসলমান মেয়ে বিয়ে করেছিলেন। খুব সম্ভব তিনি উভয় ধর্মের অনুষ্ঠান পালন করতেন। তাঁর বাড়িতে শিবমন্দির ছিল। আজও বাকলাই বাড়ির নিকটে শিববাড়ির ভিটা আছে। তবে কীর্তিনারায়ণের পুত্র মাহমুদ তক্কী বাড়িতে মসজিদ নির্মাণ করেন। মসজিদটি ধ্বংস হয়ে গেছে।


বাকলাই পরিবারের বংশলতিকা

রাজা রামচন্দ্র বসুর পুত্র রাজা কীর্তিনারায়ণ, তদীয় পুত্র মাহমুদ হাসান তক্কী, তদীয় পুত্র মাহমুদ গজনফর আলী, মাহমুদ সাদেক ও এজাজ মাহমুদ, মাহমুদ সাদেকের পুত্র কুতুব মাহমুদ, তদীয় পুত্র জান মাহমুদ, তদীয় পুত্র রহমত আলী বাকলাই, তদীয় পুত্র মাহমুদ আলী বাকলাই, তদীয় পুত্র আমুদ আলী বাকলাই, তদীয় পুত্র আহম্মদ আলী বাকলাই এবং তদীয় পুত্র আবদুল মজিদ বাকলাই।


বাকলাই বংশের পরবর্তী সময়

চন্দ্রদ্বীপ ও সেলিমাবাদ পরগণায় কীর্তিনারায়ণের বংশধরদের অনেক ভূসম্পত্তি ছিল। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সময় তারা জমিদারী হারিয়ে ফেলে। মঠবাড়িয়া ও মোরেলগঞ্জে তাদের তালুক ছিল। কীর্তিনারায়ণের পরিবার রাজস্ব হারিয়ে বাকলা নামটি ধরে রাখে। তারা শত শত বছর ধরে নিজেদের বাকলাই বলে পরিচয় দিয়ে আসছে। প্রায় ৫০ বছর পূর্বেও বাকলাই পরিবারে কিছু হিন্দু আচার পালিত হতো। আমুদ আলী বাকলাইয়ের স্ত্রী ফুলমতি বাকলাই পরিবারেরই মেয়ে এবং তিনি নিজেকে হিন্দু বলে দাবি করতেন। তিনি ১২৮ বছর বেঁচে ছিলেন। ১৯২৮ খৃৃস্টাব্দে ফুলমতির মৃত্যু হয়। কীর্তিনারায়ণের বংশে বর্তমানে এক হাজারের মতো লোক আছে।



তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খণ্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০।