কাশীপুর নিবাসী

Barisalpedia থেকে

‘কাশীপুর নিবাসী’ বরিশালের প্রাচীন সাপ্তাহিক পত্রিকাগুলোর একটি। ১৮৮০ সাল থেকে ‘কাশীপুর নিবাসী’ পত্রিকাটি রায় সাহেব প্রতাপচন্দ্র মুখোপাধ্যায় এর সম্পাদনায় প্রকাশিত হতে থাকে। তখন এটি ছিল বিনামূল্যে বিতরণের জন। জে. সি. জ্যাক- এর মতে পত্রিকাটির প্রকাশকাল ১৮৮১ সাল এবং এর গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৮০০।

এ পত্রিকাটি সম্পর্কে শরৎকুমার রায় লিখেছেন: ‘অশ্বিনীকুমারেরর বরিশাল আগমনের পর বাঙ্গলা ১২৮৮ অব্দে ‘কাশীপুর নিবাসী’ পত্রিকা প্রকাশিত হইয়া অদ্যাবধি চলিতেছে। এই যে সময়ের কথা আলোচিত হইতেছে তখন দেশের লোক সংবাদপত্রের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করিত না। কেবল অল্প সংখ্যক দেশহিতৈষী যুবক হয়তো সময় সময় ইহার কিঞ্চিৎ অভাববোধ করিতেন। ‘কাশীপুর নিবাসী’ পত্রিকাটি রায় সাহেব প্রতাপচন্দ্র মুখোপাধ্যায় মাহাশয়ের সম্পাদিত। এই কাগজ জনমত প্রকাশের উপযোগী বলিয়া বিবেচিত হইত না।’

১৮৮৪ সালে ‘কাশীপুর নিবাসী’ মুদ্রণ যন্ত্র স্থাপিত হলে ঐ মুদ্রণযন্ত্র থেকে পত্রিকাটি নিয়মিত সাপ্তাহিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এ পত্রিকাটি ছিল রক্ষণশীল মতবাদের সমর্থক এবং রাজভক্তির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। পত্রিকাটিতে সরকারি বিজ্ঞাপনের বাহুল্য পরিলক্ষিত হতো। এই পত্রিকাটি প্রায় ৭০ বছরের মতো একনাগাড়ে প্রকাশিত হয়েছিল। মুনতাসীর মামুন মাসিক হিসেবে এই পত্রিকাটির প্রকাশকাল ১৮৮৬ এবং সাপ্তাহিক হিসেবে ১৮৮৮ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

সুরেশচন্দ্র গুপ্ত বলেছেন যে, বাংলা ১২৮৮ সনে পত্রিকাটি ডিমাই ১/৮ সাইজে মাসিকপত্র হিসেবে প্রকাশিত হতো। তিনি আরো বলেছেন যে, বাংলা ১২৯২ সনে ‘কাশীপুর নিবাসী’ মুদ্রণযন্ত্র স্থাপিত। পত্রিকাটির প্রকাশকাল সম্পর্কে ১৩০৬ সনের ৭ আষাঢ় সংখ্যা সাপ্তাহিক ‘অনুসন্ধান’ পত্রিকায় লেখা হয়েছে যে, ‘কাশীপুর নিবাসী’র সম্পাদক বাবু প্রতাপচন্দ্র মুখোপাধ্যায় মাহশয় আজ প্রায় ১৭/১৮ বৎসর যাবৎ নিঃস্বার্থভাবে’ পত্রিকাটি প্রকাশ করে যাচ্ছেন। রোহিনীকুমার সেনও মনে করেন যে, পত্রিকাটি ১৮৮১ সালে পাক্ষিক পত্রিকা হিসেবে প্রকাশিত হয়েছিল। তাঁর মতে পত্রিকাটি প্রথমে ছিল হাতে লেখা, পরে মুদ্রণযন্ত্র কিনে তাতে পত্রিকাটি ছাপানো হয়। ‘বাখরগঞ্জের ইতিহাস’ গ্রন্থের প্রণেতা খোসালচন্দ্র রায়ের মতেও পত্রিকাটির প্রকাশকাল ১২৮৮ সন। ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে এটি ছিল সাপ্তাহিক পত্রিকা এবং এর প্রকাশকাল ছিল বাংলা ১২৮৮ সন।

‘কাশীপুর নিবাসী’ পত্রিকাটির ব্যাপারে নানান বিরূপ সমালোচনা থাকলেও প্রতাপচন্দ্র মুখোপাধ্যায় যে একজন অসাধারণ উদ্যমী ও সমাজহিতৈষী ছিলেন এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। বৃদ্ধ বয়সে চাকুরী থেকে পেনশন লাভের পর তিনি আমৃত্যু যেভাবে পত্রিকাটি পরিচালনা করেন তা সত্যিই সাধুবাদ পাবার যোগ্য। নানান সূত্র থেকে জানা যায়, তার পত্রিকার পাঠক সংখ্যাও নিতান্ত কম ছিল না। রায় সাহেব প্রতাপচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর তার ছেলে অক্ষয়কুমার মুখোপাধ্যায় কিছুকাল পত্রিকাটি সম্পাদন করেন। পত্রিকাটির কার্যালয় ছিল হাসপাতাল রোডে, বর্তমান কারিকর বিড়ি ফ্যাক্টরীর উল্টো দিকে। ১৯৯৭ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর সংখ্যা ‘নিরীক্ষা’ পত্রিকায় প্রকাশিত বাংলাদেশের সংবাদপত্রের ইতিহাস (১৭৮০-১৯৪৭), নিবন্ধে এই পত্রিকাটি সম্পর্কে বলা হয়েছে: এটি ‘বাংলা সাপ্তাহিক। প্রচার সংখ্যা ৫০০। বার্ষিক মূল্য শহরে ২টাকা ৪আনা। মফস্বলে ১টাকা ১২ আনা। সম্পাদক ও প্রকাশক বিনোদ বিহারী বর। তারিণীচরণ দাস কর্তৃক কাশীপুর প্রেস, বাকেরগঞ্জ থেকে মুদ্রিত এবং সম্পাদক কর্তৃক বাখেরগঞ্জ থেকে প্রকাশিত। প্রেস এবং পত্রিকার স্বত্বাধিকারী ছিলেন অক্ষয় কুমার মুখোপাধ্যায়।’

বাংলা ১৩৩৭ সনের (অর্থাৎ ইংরেজি ১৯৩০) আষাঢ় সংখ্যা ‘ব্রহ্মবাদী’ লিখেছে: ‘বিগত ৩১ মে রাতে রায় সাহেব প্রতাপচন্দ্র মুখোপাধ্যায় মহাশয়ের পরিচালিত ‘কাশীপুর নিবাসী’ পত্রিকার পঞ্চাশৎ বর্ষ পূর্ণ উপলক্ষে তাহার নিদর্শনস্বরূপ ক্ষুদ্র মন্দির গাত্রে একখানি প্রস্তরফলক স্থাপিত হয়। ডিষ্ট্রিক্ট ম্যাজিষ্ট্রেট জে. টি. ডোনোভোন সাহেব সভাপতি রূপে এই অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেন। সভায় প্রতাপ বাবুর বন্ধুবান্ধবগণ উপস্থিত হইয়াছিলেন।’ ১৯৩০ সালে ‘কাশীপুর নিবাসীর পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হওয়া মানে হলো পত্রিকাটি ১৮৮০ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়।



তথ্যসূত্র: তপংকর চক্রবর্তী। বরিশালের সংবাদ ও সাময়িকপত্র। বাংলা একাডেমি। ২০০১।