কালিশুরী-চাঁদকাঠি যুদ্ধ, পটুয়াখালী, ১৯৭১

Barisalpedia থেকে

বাউফলের সুবেদার পঞ্চম আলী জুন মাসে মুক্তিবাহিনী গঠন করেন। তিনি অনেক পাকিস্তানি দালাল ও রাজাকার হত্যা করে পাকসেনাদের মধ্যে ত্রাস সৃষ্টি করেন। তিনি কালীশূরী বন্দরের নিকট একটি লঞ্চ আক্রমণ করে কয়েকজন পাকসেনা, পুলিশ হত্যা করে ও অস্ত্র উদ্ধার করেন। প্রতিশোধ নেয়ার জন্য পাকসেনারা কালীশূরী বন্দরটি পুড়ে দেয়। কালীশূরী বন্দরে ছিল পাকসেনা ও রাজাকারদের ক্যাম্প। পঞ্চম আলী ক্যাম্প আক্রমণ করে কয়েকজন পাকসেনা ও রাজাকার হত্যা করেন। কালিশূরী বন্দরের নিকট ভাতশালা গ্রামে মুক্তিযোদ্ধার ঘাঁটি ছিল। কমান্ডার ছিলেন সেনাবাহিনীর সুবেদার পঞ্চম আলী। ১৯৭১ সারের ১১ সেপ্টেম্বর কালিশূরী বন্দরের হাটবার ৫০ জন পাকিস্তান সেনা ও রাজাকারের দল কালিশূরী বন্দর পোড়াতে আসে। প্রথমে হাট সংলগ্ন সাজজাল বাড়িতে আগুন দেয়। এ সময় কমান্ডার পঞ্জম আলী তার বাহিনী নিয়ে উত্তর দিক থেকে পাকবাহিনীকে আক্রমণ করে। বাধাপ্রাপ্ত হয়ে বাকবাহিনী কুমারখালী খালের হোগলা বনে অবস্থন নেয়। তারা মেশিনগান ও মর্টার দিয়ে মুক্তিবাহিনীকে আক্রমণ করে। মুক্তিবাহিনী ও গ্রামবাসী জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে পাকসেনাদের ঘিরে ফেলে। ৭ ঘন্টা যুদ্ধ চলে। কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয়। তারা রাতের আঁধারে রাজাকার কমান্ডার মান্নান দারোগার সহায়তায় বাউফল থানায় আশ্রয় নেয়। চাঁদকাঠির যুদ্ধে পাকবাহিনীর পরাজয়ের সংবাদ পটুয়াখালী পৌঁছে। চাঁদকাঠি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন- সুবেদার পঞ্চম আলী, ধুলিয়া; আওলাদ হোসেন, কালিশূরী; মকিম আলী, ধুলিয়া; কলম খাঁ, দাশপাড়া; মিয়া খাঁ, দাশপাড়া; ফজলুল হক, কনকাদিয়া; জসিম উদ্দিন, কমলাপুর; মোঃ আলম, ধুলিয়া; হাবিবুর রহমান, কাউখালী; মনোয়ার হোসেন, কাউখালী; আলী হোসেন, মমিনপুর; মতিয়ুর রহমান, কমলাপুর; সোলায়মান, মুমনপুর; হামেজ আলী, দুমকি; দেলওয়ার শরীফ, মুরাদিয়া; আউয়াল, দুমকী; রাজ্জাক মৃধা, মুরাদিয়া; এসএম ফরিদ, কালিশূরী; ও সালাম, মুরাদিয়া। চাঁদকাঠি যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর বিজয় চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধা ও জনগণের মনোবল বৃদ্ধি পায়। পাকবাহিনী পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য কয়েক দিন পর কালিশূরী বন্দর পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেয়। ধুলিয়া গ্রামের পাকবাহিনীর দালাল ছত্তার মওলানাকে মুক্তিবাহিনী হত্যা করে তার লাশ গাছে ঝুলিয়ে রাখে। এ সংবাদ পেয়ে পাকবাহিনী ধুলিয়া গ্রামে এসে ৬০ জন গ্রামবাসীকে তেঁতুলিয়া নদীর তীরে দাঁড় করে নির্মমভাবে হত্যা করে নদীতে ফেলে দেয়।


তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (দ্বিতীয় খণ্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১৫।