কাজী গোলাম মাহবুব

Barisalpedia থেকে

ভাষা আন্দোলনের অন্যতম নক্ষত্র তৎকালীন সময়ের রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক জননেতা কাজী গোলাম মাহবুব ১৯২৭ সালের ২৩ ডিসেম্বর বরিশালের গৌরনদী উপজেলার কসবা গ্রামে জন্মগ্রহন করেন । তাঁর পিতা মরহুম আঃ মজিদ ছিলেন শের – এ-বাংলা এ, কে. ফজলুল হকের ঘনিষ্ট সহচর ও বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা। তাঁর মায়ের নাম আছিয়া খাতুন ।

কাজী গোলাম মাহবুব.jpg


শিক্ষাজীবন

কাজী গোলাম মাহবুব ১৯৪২ সালে টরকী বন্দর ভিক্টোরীয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। কোলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে ১৯৪৪ সালে তিনি ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন এবং একেই কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি ভি. পি. নির্বাচিত হন । তিনিই প্রথম বাঙালি যিনি আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৫১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে তিনি এল. এল. বি ডিগ্রি লাভ করেন।


কর্মজীবন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সহপাঠী । দীর্ঘ ৪০ বছর তিনি অতিবাহিত করেছেন বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ সান্নিধ্যে । ১৯৫১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে তিনি এল. এল. বি ডিগ্রি লাভ করে ১৯৫৩ সালে আইন ব্যবসা শুরু করেন । ১৯৯৩ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি নির্বাচিত হন । তিনি ১৯৪৮ সালে ৪ জানুয়ারি ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।

তিনি বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে পাকিস্তান আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন সহ সমস্ত আন্দোলন সংগ্রামের পুরোভাগে ছিলেন। ১৯৪২ সালে “কুইট ইন্ডিয়া” বা “ভারত ছাড়” আন্দোলন শুরু হলে তিনি বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন । ১৯৪৮ সালে ১১ মার্চ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে হরতাল পালনকালে তিনি গ্রেফতার হন। তিনি ১৯৫২ সালের ৩১ জানুয়ারি গঠিত সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক নির্বাচিত হন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী বাংলা ভাষার স্বপক্ষে তৎকালিন সময়ে ছাত্র-জনতার উদ্যোগে যে আন্দোলন পড়ে ওঠে তারও নেতৃত্বে ছিলেন তিনি । এজন্য তিনি গ্রেফতার হয়ে এক বছর কারাবরণ করেন।

গোলাম মাহবুব ১৯৪৯ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রাদেশিক কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৫৩ সালে বৃহত্তর বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালে ৬ দফার আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের নির্বাচনসহ পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন অর্জনের পথে সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। গোলাম মাহবুব ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠনের বিরোধিতা করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে যোগ দেন এবং এ দলের ভাইস চেয়ারম্যান এবং রাজনৈতিক গবেষণা কাউন্সিলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ এবং ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল -১ আসনে তিনি বিএনপি’র প্রার্থী ছিলেন। কাজী গোলাম মাহবুব ছিলেন বাংলাদেশে আওয়ামীলীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, আবার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান।


পুরস্কার ও পদক

ভাষা আন্দোলনে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ২০০২ সালে একুশে পদক পান । ১৯৯৩ সালে প্রিন্সিপ্যাল আবুল কাসেম রাষ্টভাষা স্বর্ণপদক, ১৯৯৭ সালে জাসাস পদক, ১৯৯৮ সালে জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোট পদক, ২০০০ সালে তমদ্দুন মজলিসের মাতৃভাষা পদক, ২০০১ সালে সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত জিয়া সৃজনশীল সংসদ পদক, ২০০২ সালে সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত একুশে পদক ও আওয়ামীলীগ কর্তৃক ভাষা সৈনিক পদক, ২০০৪ সালে প্রিন্সিপ্যাল আবুল কাসেম পদক, সিলেট ভাষা সৈনিক সম্বর্ধনা পদক ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন পদকে ভূষিত হন । এছাড়া বরিশাল সিটি করপোরেশন তাকে ভাষা সৈনিক হিসেবে সম্বর্ধনা জানায় ।


উপসংহার

ভাষা আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা কাজী গলাম মাহবুব ২০০৬ সালে ১৯ মার্চ আজকের এই দিনে ঢাকার ল্যাবইড ইন্তেকাল করেন। ধানমন্ডি এলাকায় একটি সড়কের নামকরন করা হয় ”



তথ্যউৎস: Barisal-250 Years’ History in Photograph শীর্ষক পেইজ