"কন্দর্প নারায়ণ"-এর বিভিন্ন সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

Barisalpedia থেকে
(কন্দর্প নারায়ণের শাসনামল)
১৯ নং লাইন: ১৯ নং লাইন:
 
== কন্দর্প নারায়ণের শাসনামল ==
 
== কন্দর্প নারায়ণের শাসনামল ==
  
একদিকে মগ জলদস্যুদের উপদ্রব অন্য দিকে জলোচ্ছ্বাসের জন্য কন্দর্প নারায়ণ রাজধানী বাকলা থেকে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ কনে। খুব সম্ভব রাজধানী বাকলা তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙ্গনের সম্মুখীন হয়েছিল। তাই তিনি ১৫৯২ খ্রিঃ বাউফল থানার বগার নিকট রাজনগরে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন। এখানে তিনি কযেকটি দীঘি খনন ও দূর্গ নির্মাণ করেন। রাজধানী ছিল বলে গ্রামের নাম রাজনগর হয়েছে। কারখানা গ্রামে তিনি এক বিরাট দীঘি খনন করেন। এ দীঘির নামে মদনপুর ও পুত্র রামচন্দ্রের নামে শ্রীরামপুরে গ্রাম আছে। রীরপাশা গ্রামে তার অমাত্য ও কর্মচারীরা বসতি স্থাপন করেন। তিনি ঝিলানার নিকটে বন্দর স্থাপন করেন। রাজধানীর পাশেই ৬৪ দাঁড়ের পানসি নৌকার ঘাট ছিল। এ স্থান পানসিঘাটা নামে পরিচিত। রাজনগরে দক্ষিন-পশ্চিমে কুড়ি ঘর পাইক বাস করত। তাই গ্রামের নাম কুড়িপাইকা। তিনি প্রতাপাদিত্যের নামে প্রতাপপুর গ্রাম প্রতিষ্ঠা করেন। এক বছর পরেই তিনি রাজধানী রাজনগর থেকে বাকেরগঞ্জ থানার বিশারীকাঠী গ্রামে স্থানান্তিরত করেন। কুলীন কায়স্থ ব্রাক্ষ্মণ রাজার নির্দেশে ভাতশালা, কাকরদা, কোষাবর ও বিশারীকাঠী গ্রামে বসতি স্থাপন করে। তিনি বিশারীকাঠীতে রাজবাড়ি ও দুর্গ নির্মান করেন। বিশারীকাঠীর নিকটে রাজা ৬৪ দ্বারের নৌকা ঘাট ছিল। কোষাবর গ্রামের নাম তার কোষানৌকা থেকে হয়েছে। তিনি অনেক দীঘি খনন ও মন্দির নির্মান করেন। বিশারীকাঠীতে নির্মিত রাজধানীর ধ্বংসাবশেষ আছে। কাকরদা গ্রামে কবিরাজের বৃহৎ দীঘি তার স্মৃতি বহন করে। তার নির্মিত মন্দির মঠবাড়ী নামে পরিচিত।
+
'''কচুয়া থেকে রাজধানী স্থানান্তর''': একদিকে মগ জলদস্যুদের উপদ্রব অন্য দিকে জলোচ্ছ্বাসের জন্য কন্দর্প নারায়ণ রাজধানী বাকলা থেকে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ কনে। খুব সম্ভব রাজধানী বাকলা তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙ্গনের সম্মুখীন হয়েছিল। তাই তিনি ১৫৯২ খ্রিঃ বাউফল থানার বগার নিকট রাজনগরে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন। এখানে তিনি কযেকটি দীঘি খনন ও দূর্গ নির্মাণ করেন। রাজধানী ছিল বলে গ্রামের নাম রাজনগর হয়েছে। কারখানা গ্রামে তিনি এক বিরাট দীঘি খনন করেন। এ দীঘির নামে মদনপুর ও পুত্র রামচন্দ্রের নামে শ্রীরামপুরে গ্রাম আছে। রীরপাশা গ্রামে তার অমাত্য ও কর্মচারীরা বসতি স্থাপন করেন। তিনি ঝিলানার নিকটে বন্দর স্থাপন করেন। রাজধানীর পাশেই ৬৪ দাঁড়ের পানসি নৌকার ঘাট ছিল। এ স্থান পানসিঘাটা নামে পরিচিত। রাজনগরে দক্ষিন-পশ্চিমে কুড়ি ঘর পাইক বাস করত। তাই গ্রামের নাম কুড়িপাইকা। তিনি প্রতাপাদিত্যের নামে প্রতাপপুর গ্রাম প্রতিষ্ঠা করেন। এক বছর পরেই তিনি রাজধানী রাজনগর থেকে বাকেরগঞ্জ থানার বিশারীকাঠী গ্রামে স্থানান্তিরত করেন। কুলীন কায়স্থ ব্রাক্ষ্মণ রাজার নির্দেশে ভাতশালা, কাকরদা, কোষাবর ও বিশারীকাঠী গ্রামে বসতি স্থাপন করে। তিনি বিশারীকাঠীতে রাজবাড়ি ও দুর্গ নির্মান করেন। বিশারীকাঠীর নিকটে রাজার ৬৪ দ্বারের নৌকা ঘাট ছিল। কোষাবর গ্রামের নাম তার কোষানৌকা থেকে হয়েছে। তিনি অনেক দীঘি খনন ও মন্দির নির্মান করেন। বিশারীকাঠীতে নির্মিত রাজধানীর ধ্বংসাবশেষ আছে। কাকরদা গ্রামে কবিরাজের বৃহৎ দীঘি তার স্মৃতি বহন করে। তার নির্মিত মন্দির মঠবাড়ী নামে পরিচিত।
  
সম্রাট আকবর বারভূঁইয়াদেও দমন করতে ব্যর্থ হওয়ায় ১৫৯৪ খ্রিঃ তার সেনাপতি রাজা মানসিংহকে বাংলার সুবেদার ও প্রধান সেনাপতি করে প্রেরণ করেন। মানসিংহের আহবানে কন্দর্প নারয়ণ মোগল স¤্রাটের বশ্যতা স্বীকার করেন। রাজ্য শাসনের সুবিধার জন্য তিনি রাজধানী পুনরায় বিশারীকাঠী হতে বাবুগঞ্জ থানার ক্ষুদ্রকাঠী গ্রামে স্থানান্তরিত করেন। এ সময় খানপুরা, ক্ষুদ্রকাঠী, রহমতপুর, হোসেনপুর, ডহরপাড়া, গাজীরপার, গুঠিয়া প্রভৃতি গ্রাম মুসলামান অধ্যুষিত ছিল। ক্ষুদ্রকাঠী সংলগ্ন খানপুরা গ্রামে খাঁ পদবির পাঠানদের বাস ছিল। রহমত খাঁ ও তার ভ্রাতাকে হত্যা করেন। রহমত খাঁর নামানুসারে রাহমপুর এবং খাঁ পদবীর পাঠানদের অন্যত্র সরিয়ে দিয়ে রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেন। ক্ষুদ্রকাঠীর ওয়াহেদ শিকদারের বাড়ির নিকটে রাজবাড়ি ছিল। এই বাড়িতে পূর্বে প্রাচীন ইট পাওয়া যেত। এখানে রাজবাড়ি দীঘির এক অংশে পুকুর আছে এবং বাকি অংশে দালান ছিল। কন্দর্প নারায়ণ এই তোষাখানায় বিভিন্ন উপঢৌকন সংরক্ষণ করতেন। শিকদার বাড়িতে একটি প্রাচীন বৃহৎ  চাবি পাওয়া যায়। এ বাড়িতে মসজিদ নির্মাণ করার সময় একটি করব আবিষ্কৃত হয়। এ বাড়িতে একটি প্রাচীন গোলা আছে। কন্দর্প নারায়ণ দোয়ারিকা গ্রামে একটি দীঘি খনন করেন। দীঘিতে পাকা ঘাটলা ছিল। দীঘির পাশেই একটি উচু মাটির ঢিবি আছে। মনে হয় রাজার দ্বাররক্ষক এখানে বাস করত এবং তার নামানুসারে দোয়ারিকা নাম হয়েছে।
+
সম্রাট আকবর বারভূঁইয়াদেও দমন করতে ব্যর্থ হওয়ায় ১৫৯৪ খ্রিঃ তার সেনাপতি রাজা মানসিংহকে বাংলার সুবেদার ও প্রধান সেনাপতি করে প্রেরণ করেন। মানসিংহের আহবানে কন্দর্প নারয়ণ মোগল স¤্রাটের বশ্যতা স্বীকার করেন। রাজ্য শাসনের সুবিধার জন্য তিনি রাজধানী পুনরায় বিশারীকাঠী হতে বাবুগঞ্জ থানার ক্ষুদ্রকাঠী গ্রামে স্থানান্তরিত করেন। এ সময় খানপুরা, ক্ষুদ্রকাঠী, রহমতপুর, হোসেনপুর, ডহরপাড়া, গাজীরপার, গুঠিয়া প্রভৃতি গ্রাম মুসলামান অধ্যুষিত ছিল। ক্ষুদ্রকাঠী সংলগ্ন খানপুরা গ্রামে খাঁ পদবির পাঠানদের বাস ছিল। রহমত খাঁ ও তার ভ্রাতাকে হত্যা করেন। রহমত খাঁর নামানুসারে রাহমপুর এবং খাঁ পদবীর পাঠানদের অন্যত্র সরিয়ে দিয়ে রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেন। ক্ষুদ্রকাঠীর ওয়াহেদ শিকদারের বাড়ির নিকটে রাজবাড়ি ছিল। এই বাড়িতে পূর্বে প্রাচীন ইট পাওয়া যেত। এখানে রাজবাড়ি দীঘির এক অংশে পুকুর আছে এবং বাকি অংশে দালান ছিল। কন্দর্প নারায়ণ এই তোষাখানায় বিভিন্ন উপঢৌকন সংরক্ষণ করতেন। শিকদার বাড়িতে একটি প্রাচীন বৃহৎ  চাবি পাওয়া যায়। এ বাড়িতে মসজিদ নির্মাণ করার সময় একটি কবর আবিষ্কৃত হয়। এ বাড়িতে একটি প্রাচীন গোলা আছে। কন্দর্প নারায়ণ দোয়ারিকা গ্রামে একটি দীঘি খনন করেন। দীঘিতে পাকা ঘাটলা ছিল। দীঘির পাশেই একটি উচু মাটির ঢিবি আছে। মনে হয় রাজার দ্বাররক্ষক এখানে বাস করত এবং তার নামানুসারে দোয়ারিকা নাম হয়েছে।
  
'''কন্দর্প নারায়ণ রাজা মানসিংহের সাথে সন্ধি'''
+
'''কন্দর্প নারায়ণ রাজা মানসিংহের সাথে সন্ধি''': মোগলদের সাথে যুদ্ধে পরাজয় বরণ করে বিহার, উড়িষ্যা ও বাংলার কয়েক স্থান থেকে পাঠানরা এই রাজ্যে দলে দলে প্রবেশ করে। তারা স্থানীয় অধিবাসেিদর নিকট থেকে রাজস্ব আদায় শুরু করে । এমনকি তারা রাজা কন্দর্প নারায়ণের নিকট নিয়মিত কর দাবি করে এবং তাকে মোগলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য অনুরোধ জানায়। জনৈক সওদাগরা পাঠানদের নেতা ছিলেন। পাঠানরা ক্ষুদ্রকাঠী , লাখুটিয়া, রহমতপুর, কসবা প্রভৃতি গ্রাম থেকে বিতাড়িত হয়ে হোসেনপুর, ডহরপাড়া ও গাজীরপারে ঘাঁটি স্থাপন করেন। কন্দর্প নারায়ণ রাজা মানসিংহের সাথে ইতোমধ্যে সন্ধি করে মোগলদের বশ্যতা স্বীকার করেন।
  
মোগলদের সাথে যুদ্ধে পরাজয় বরণ করে বিহার, উড়িষ্যা ও বাংলার কয়েক স্থান থেকে পাঠানদের দলে দলে রাজ্যে প্রবেশ করে। তারা স্থানীয় অধিবাসেিদর নিকট থেকে রাজস্ব আদায় শুরু করে । এমনকি তারা রাজা কন্দর্প নারায়ণের নিকট নিয়মিত কর দাবি করে এবং তাকে মোগলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য অনুরোধ জানায়। জনৈক সওদাগরা পাঠানদের নেতা ছিলেন। পাঠানরা ক্ষুদ্রকাঠী , লাখুটিয়া, রহমতপুর, কসবা প্রভৃতি গ্রাম থেকে বিতাড়িত হয়ে হোসেনপুর, ডহরপাড়া ও গাজীরপারে ঘাঁটি স্থাপন করেন। কন্দর্প নারায়ণ রাজা মানসিংহের সাথে ইতোমধ্যে সন্ধি করে মোগলদের বশ্যতা স্বীকার করেন।  
+
'''হোসেনপুরের যুদ্ধ''': কন্দর্প নারায়ণ চুক্তি অনুসারে হোসেনপুরের পাঠানদের আক্রমন করেন। হোসেনপুরের যুদ্ধে পরাজয় বরণ করে পাঠানরা ডহরপাড়া ও গাজীরপার থেথে পশ্চাদপসরণ করেন। যুদ্ধে উভয়পক্ষের অনেক সৈন্য নিহত হয়। অনেকে বাকলা ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যায়। কন্দর্প নারায়ণ গাজীরপারে যুদ্ধে গুরুতরভাবে আহত অবস্থায় ক্ষুদ্রকাঠী ফিরে আসেন। তিনি বন্দীদের মানসিংহের নিকট পাঠিয়ে দেন। রাজবৈদ্য অনেক চেষ্টা করে কন্দর্প নারায়ণের চিকিৎসায় ব্যর্থ হন। তিনি ক্ষুদ্রকাঠী রাজবাড়িতে ১৫৯৮ খ্রিঃ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ক্ষুদ্রকাঠী গ্রামের উত্তর-পূর্ব দিক দিয়ে প্রবাহিত আমতলী নদীর তীরে তাকে সমাধিস্থ করা হয়। তার স্মরণে নদীর তীরে এক বিরাট মন্দির নির্মিত হয়। মন্দিরের জন্য গ্রামের নাম হয় মঠবাড়ী। মঠের ধ্বংসাবশেষ কয়েক বছর পূর্বে আমতলী নদীতে বিলীন হয়ে যায়।
  
'''হোসেনপুরের যুদ্ধ'''
 
  
কন্দর্প নারায়ণ চুক্তি অনুসারে হোসেনপুরের পাঠানদের আক্রমন করেন। হোসেনপুরের যুদ্ধে পরাজয় বরণ করে পাঠানরা ডহরপাড়া ও গাজীরপার থেথে পশ্চাদপসরণ করেন। যুদ্ধে উভয়পক্ষের অনেক সৈন্য নিহত হয়। অনেকে বাকলা ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যায়। কন্দর্প নারায়ণ গাজীরপারে যুদ্ধে গুরুতরভাবে আহত অবস্থায় ক্ষুদ্রকাঠী ফিরে আসেন। তিনি বন্দীদের মানসিংহের নিকট পাঠিয়ে দেন। রাজবৈদ্য অনেক চেষ্টা করে কন্দর্প নারায়ণের চিকিৎসায় ব্যর্থ হন। তিনি ক্ষুদ্রকাঠী রাজবাড়িতে ১৫৯৮ খ্রিঃ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ক্ষুদ্রকাঠী গ্রামের উত্তর-পূর্ব দিক দিয়ে প্রবাহিত আমতলী নদীর তীরে তাকে সমাধিস্থ করা হয়। তার স্মরণে নদীর তীওে এক বিরাট মন্দিও নির্মিত হয়। মন্দিরের জন্য গ্রামের নাম হয় মঠবাড়ী। মঠের ধ্বংসাবশেষ কয়েক বছর পূর্বে আমতলী নদীতে বিলীন হয়ে যায়। রাজা কন্দর্প নারায়ণ বাকলার পূর্ণানন্দ ঘোষের কন্যা এবং পাচু গুহের কন্যাকে বিয়ে করেন। তার প্রথম পুত্র রামচন্দ্র রায় ও তৃতীয় পুত্র রাম জীবন রায় দ্বিতীয় স্ত্রীর গর্ভে এবং দ্বিতীয় পুত্র রাঘবেন্দ্র রায় প্রথম স্ত্রীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন। কন্দর্প নারায়ণের মৃত্যুও সময় পুত্রগণ শিশু ছিল। রাঘবেন্দ্র বসু টাকীর চৌধুরী পরিবাওে বিবাহ কওে সেখানে চলে যান। টাকীর বসুরা তার বংশধর। কন্দর্প নারায়ণের কনিষ্ঠ পুত্র রামেশ্বও বসু ফরিদপুওে জালালাবাগ পরগণায় চলে যান। তার বংশের অনেকে ভারতে বসবাস করছেন।
+
== পারিবারিক জীবন ==
 +
রাজা কন্দর্প নারায়ণ বাকলার পূর্ণানন্দ ঘোষের কন্যা এবং পাচু গুহের কন্যাকে বিয়ে করেন। তার প্রথম পুত্র রামচন্দ্র রায় ও তৃতীয় পুত্র রাম জীবন রায় দ্বিতীয় স্ত্রীর গর্ভে এবং দ্বিতীয় পুত্র রাঘবেন্দ্র রায় প্রথম স্ত্রীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন। কন্দর্প নারায়ণের মৃত্যুর সময় পুত্রগণ শিশু ছিল। রাঘবেন্দ্র বসু টাকীর চৌধুরী পরিবারে বিবাহ করে সেখানে চলে যান। টাকীর বসুরা তার বংশধর। কন্দর্প নারায়ণের কনিষ্ঠ পুত্র রামেশ্বর বসু ফরিদপুরে জালালাবাগ পরগণায় চলে যান। তার বংশের অনেকে ভারতে বসবাস করছেন।
  
'''কন্দর্প নারায়ণের শাসন এলাকা'''
+
 
 +
== কন্দর্প নারায়ণের শাসন এলাকা ==
  
 
কন্দর্প নারায়ণের রাজ্য খুলনা জেলার বাগরেহাট হতে ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ, কোটালীপাড়া ও পূর্বে হাতিয়া-সন্দ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ভুলুয়ার লাজা লক্ষ্মণ মানিক্য ও শ্রীপুরের চাঁদ রায়-কোদরা রায়ের সাথে তার সীমান্ত নিয়ে শত্রুতা ছিল। তার সাথে পার্শ্ববর্তী ভূঁইয়াগণ শক্তি পরীক্ষায় পারতেন না। তার নির্মিত অনেক কামান ছিল। একটি কামানের দৈর্ঘ্য পৌনে আট ফুট এবং পরিধি সাড়ে উনত্রিশ ফুট ছিল। কামানের উপরে বাংলা অক্ষওে কন্দর্প নারায়ণের নাম ও কামান নির্মাতা রূপিয়া খাঁ সাং শ্রীপুর অঙ্কিত ছিল। কামানের উপরে ৩১৮ অঙ্ক লেখা ছিল। ৩১৮ দিয়ে রাজবংশের ১৪০০ খ্রিঃ হতে কন্দর্প নারায়ণ পর্যন্ত রাজত্বকাল বুঝতে পারে অথবা এ দ্বারা কামানের সংখ্যাও বুঝাতে পারে। কামানটি বর্তমানে নিখোঁজ। রাজবাড়িতে আর একটি কামানে গোবিন্দ চন্দ্র কর্মকৃত নাম লেখা ছিল। এই কামানটি ১২৯৭ খ্রিঃ রোহিণী রায় চৌধুরীর ছোট ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে কীর্তিপাশার বাড়িতে নেয়া হয়। কিছু লোক কামানের মধ্যে আগুন দিলে কামানটি ফেটে যায়। আর একটি কামান বরিশালের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিঃ স্ট্রং বরিশাল সাহিত্য পরিষদের সভাপতি দেব কুমার রায় চৌধুরীকে প্রদান করেন। দেশ বিভাগের পর দেব কুমারের বাড়িটি হস্তান্তরিত এবং জনৈক ব্যক্তি লৌহ ব্যবসায়ীদের নিকট কামানটি মাত্র ১২ টাকায় বিক্রি করে।
 
কন্দর্প নারায়ণের রাজ্য খুলনা জেলার বাগরেহাট হতে ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ, কোটালীপাড়া ও পূর্বে হাতিয়া-সন্দ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ভুলুয়ার লাজা লক্ষ্মণ মানিক্য ও শ্রীপুরের চাঁদ রায়-কোদরা রায়ের সাথে তার সীমান্ত নিয়ে শত্রুতা ছিল। তার সাথে পার্শ্ববর্তী ভূঁইয়াগণ শক্তি পরীক্ষায় পারতেন না। তার নির্মিত অনেক কামান ছিল। একটি কামানের দৈর্ঘ্য পৌনে আট ফুট এবং পরিধি সাড়ে উনত্রিশ ফুট ছিল। কামানের উপরে বাংলা অক্ষওে কন্দর্প নারায়ণের নাম ও কামান নির্মাতা রূপিয়া খাঁ সাং শ্রীপুর অঙ্কিত ছিল। কামানের উপরে ৩১৮ অঙ্ক লেখা ছিল। ৩১৮ দিয়ে রাজবংশের ১৪০০ খ্রিঃ হতে কন্দর্প নারায়ণ পর্যন্ত রাজত্বকাল বুঝতে পারে অথবা এ দ্বারা কামানের সংখ্যাও বুঝাতে পারে। কামানটি বর্তমানে নিখোঁজ। রাজবাড়িতে আর একটি কামানে গোবিন্দ চন্দ্র কর্মকৃত নাম লেখা ছিল। এই কামানটি ১২৯৭ খ্রিঃ রোহিণী রায় চৌধুরীর ছোট ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে কীর্তিপাশার বাড়িতে নেয়া হয়। কিছু লোক কামানের মধ্যে আগুন দিলে কামানটি ফেটে যায়। আর একটি কামান বরিশালের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিঃ স্ট্রং বরিশাল সাহিত্য পরিষদের সভাপতি দেব কুমার রায় চৌধুরীকে প্রদান করেন। দেশ বিভাগের পর দেব কুমারের বাড়িটি হস্তান্তরিত এবং জনৈক ব্যক্তি লৌহ ব্যবসায়ীদের নিকট কামানটি মাত্র ১২ টাকায় বিক্রি করে।
 
রাজা কন্দর্প নারায়ণ একজন প্রভাবশালী ভূঁইয়া ছিলেন। তিনি মোগল সুবেদার মানসিংহের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেন এবং স্বাধীনভাবে রাজ্য শাসন করতেন। তার প্রধান সেনাপতি রঘুনন্দ ফৌজদার ও প্রধানমন্ত্রী সারাই আচার্য ও প্রধান শরীর রক্ষক রামমোহন মাল রাজ্য শাসনে তাকে সর্বদা সহায়তা করতেন।
 
রাজা কন্দর্প নারায়ণ একজন প্রভাবশালী ভূঁইয়া ছিলেন। তিনি মোগল সুবেদার মানসিংহের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেন এবং স্বাধীনভাবে রাজ্য শাসন করতেন। তার প্রধান সেনাপতি রঘুনন্দ ফৌজদার ও প্রধানমন্ত্রী সারাই আচার্য ও প্রধান শরীর রক্ষক রামমোহন মাল রাজ্য শাসনে তাকে সর্বদা সহায়তা করতেন।
 
  
 
== তথ্য নির্দেশ ==
 
== তথ্য নির্দেশ ==

০৭:৫৮, ২৩ জুলাই ২০১৭ তারিখের সংস্করণ

রাজা কন্দর্প নারায়ণ ছিলেন চন্দ্রদ্বীপের ৯ম রাজা। একই সাথে তিনি ছিলেন বাংলার শাসনকারী বার ভূঁইয়াদের মধ্যে বিশিষ্ট একজন।

সিংহাসনে আরোহণ

১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে জগদানন্দের মৃত্যুর পর তার পুত্র কন্দর্প নারায়ণ বসু সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি চন্দ্রদ্বীপ রাজাদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন। তিনি বীরযোদ্ধা ও শক্তিশালী শাসক ছিলেন। ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের জলোচ্ছাসের পর তিনি দৃঢ়তার সাথে প্রজাদের পুনর্বাসনে আত্মনিয়োগ করেন। চারদিকে হাজার হাজার মৃতদেহ। জীবিত প্রজারা আশ্রয়হীন। খাদ্যের অভাব, বস্ত্রের অভাব। তিনি এক ধ্বংসস্তুপের উপর শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি অতি অল্প সময়ের মধ্যে বন্যাপীড়িত প্রজাদের পুনর্বাসন করেন। কন্দর্প নারায়ণ মোগলদের অধীনতা ছিন্ন করে স্বাধীনভাবে রাজ্য শাসন করতেন। এ সময় মগ-পর্তুগীজরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত হয়ে বাকলা রাজ্যে লুন্ঠন শুরু করে। তিনি তাদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য রামনাবাদ নদীর তীরে দু’টি মাটির দুর্গ নির্মাণ করেন এবং সৈন্য মোতায়েন করেন। দুর্গ দু’টি আগুনমুখা নদীর ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেছে।

র‌্যালফ ফিচের রিপোর্ট

১৫৮৫ খ্রিঃ জেসুইট মিশনারি র‌্যালফ ফিচ তার সুনাম শুনে রাজধানী বাকলানগরে আগমন করেন। মি. ফিচ প্রথমে দিল্লিতে আসেন। দিল্লী থেকে তিনি জলপথে সাতগাঁও ও সোনারগাঁও হয়ে চট্টগ্রাম গমন করেন। চট্টগ্রাম থেকে তিনি জাহাজযোগে রাজধানী বাকলায় আগমন করেন। তিনি বাকলা সম্পর্কে তার ভ্রমন বৃত্তান্তে লিখেছেন, “From chatigam, in Bengala, I came to Bacala ,the king where of is a gentile (i.c Hindu) a man very well disposed and delighteth much to shoot in a gun. His country is very great and fruitfull and hath store of rice, much cotton cloth, and cloth of silk. The houses be very fair and high builded he streets large, the people naked except a little cloth about their waist. The woman was great store of silver hoops about their necksa and arms and their legs are reinged about whith silver and copper and tings made of elephants teeth.”৩

মি. ফিচ বর্ণিত বাকলা সম্পূর্ণভাবে তেতুলিয়া নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। কচুয়ার কিনারেই বাকলা শহর ছিল। মি. ফিচের বিবরণে আমরা এক বছর পূর্বে বাকলার উপর দিয়ে প্রবাহিত ঝড়ের কোন ইঙ্গিত পাইনি। তাতে মনে হয় রাজা কন্দর্প অতি দ্রুত রাজধানীসহ রাজ্যের পুর্নগঠন করেছিলেন।

মিঃ ফিচ সুন্দর বাকলা শহরের বর্ণনা দিয়েছেন। আশ্চর্যের বিষয় তিনি প্রলঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের কথা উল্লেখ করেননি। বন্যা ও মগ-পর্তুগীজদের আক্রমণের কারণে রাজা কন্দর্প নারায়ণ বাকলা থেকে রাজধানী স্থানান্তর করেন। তারপর বাকলা পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। ১৮৭৪ খ্রিঃ এইচ বেভারিজ বাকলা পরিদর্শন করেন। তিনি একটি উঁচু মন্দির ও কয়েকটি ভগ্ন ভবন দেখেছেন। খুব সম্ভব মি. ফিচ বর্ণিত বাকলা শহর তেঁতুলিয়া নদীতে বিলীন হয়েছে।

রাজা প্রতাপাদিত্য ও কন্দর্প নারায়ণের মৈত্রি চুক্তি

যশোরের রাজা প্রতাপাদিত্য কন্দর্প নারায়ণের আত্মীয় ও বন্ধু ছিলেন। প্রকাশ থাকে যে, বাকলার গুহ পরিবারের রামচন্দ্র নিয়োগীর প্রৌপুত্র হলেন প্রতাপাদিত্য। প্রতাপাদিত্যের পিতৃব্য বসন্ত রায় কন্দর্প নারায়ণের ভগ্নি কমলাকে বিয়ে করেছিলেন। কন্দর্প নারায়ণ বাকলা রাজ্য হতে মগ জলদস্যুদের বিতাড়িত করার জন্য প্রতাপাদিত্যের সাথে মৈত্রি চুক্তি করেন। চুক্তি অনুসারে প্রতাপাদিত্য বাকলা রাজাকে সৈন্য ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেন। কথিত আছে ১৫৯০খ্রিঃ প্রতাপাদিত্য চন্দ্রদ্বীপের রাজধানী বাকলায় আগমন করেন। তার আগমনের উদ্দেশ্যে ছিল তার কন্যা বিমলা বা বিভার সাথে কন্দর্প নারায়ণের পুত্র রামচন্দ্রের বিবাহ সর্ম্পকে স্থাপন করা ও মগ পর্তুগীজগের দমন করা। রামচন্দ্র ও বিমলা উভয়ের বয়স তখন ৪/৫ বছর হবে। যশোর ও চন্দ্রদ্বীপ রাজা তাদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনে সম্মত হলেন। প্রতাপাদিত্যের সাথে ভবানন্দ মজুমদারের পুত্র হরানন্দ মজুমদার বাকলা এসেছিলেন। হরানন্দ পটুয়াখালীর মুরাদিয়া গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। মুরাদিয়ার মুজমদারগণ তার বংশধর। বৈবাহিক সর্ম্পর্কের যৌতুকস্বরূপ রাজা কন্দর্প নারায়ণ বাগেরহাটের রামপাল থানায় চাকশ্রী মহল প্রতাপাদিত্যকে ছেড়ে দেন। চন্দ্রদ্বীপ রাজ্য এ সময় খুলনার রূপসা নদী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

কন্দর্প নারায়ণের শাসনামল

কচুয়া থেকে রাজধানী স্থানান্তর: একদিকে মগ জলদস্যুদের উপদ্রব অন্য দিকে জলোচ্ছ্বাসের জন্য কন্দর্প নারায়ণ রাজধানী বাকলা থেকে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ কনে। খুব সম্ভব রাজধানী বাকলা তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙ্গনের সম্মুখীন হয়েছিল। তাই তিনি ১৫৯২ খ্রিঃ বাউফল থানার বগার নিকট রাজনগরে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন। এখানে তিনি কযেকটি দীঘি খনন ও দূর্গ নির্মাণ করেন। রাজধানী ছিল বলে গ্রামের নাম রাজনগর হয়েছে। কারখানা গ্রামে তিনি এক বিরাট দীঘি খনন করেন। এ দীঘির নামে মদনপুর ও পুত্র রামচন্দ্রের নামে শ্রীরামপুরে গ্রাম আছে। রীরপাশা গ্রামে তার অমাত্য ও কর্মচারীরা বসতি স্থাপন করেন। তিনি ঝিলানার নিকটে বন্দর স্থাপন করেন। রাজধানীর পাশেই ৬৪ দাঁড়ের পানসি নৌকার ঘাট ছিল। এ স্থান পানসিঘাটা নামে পরিচিত। রাজনগরে দক্ষিন-পশ্চিমে কুড়ি ঘর পাইক বাস করত। তাই গ্রামের নাম কুড়িপাইকা। তিনি প্রতাপাদিত্যের নামে প্রতাপপুর গ্রাম প্রতিষ্ঠা করেন। এক বছর পরেই তিনি রাজধানী রাজনগর থেকে বাকেরগঞ্জ থানার বিশারীকাঠী গ্রামে স্থানান্তিরত করেন। কুলীন কায়স্থ ব্রাক্ষ্মণ রাজার নির্দেশে ভাতশালা, কাকরদা, কোষাবর ও বিশারীকাঠী গ্রামে বসতি স্থাপন করে। তিনি বিশারীকাঠীতে রাজবাড়ি ও দুর্গ নির্মান করেন। বিশারীকাঠীর নিকটে রাজার ৬৪ দ্বারের নৌকা ঘাট ছিল। কোষাবর গ্রামের নাম তার কোষানৌকা থেকে হয়েছে। তিনি অনেক দীঘি খনন ও মন্দির নির্মান করেন। বিশারীকাঠীতে নির্মিত রাজধানীর ধ্বংসাবশেষ আছে। কাকরদা গ্রামে কবিরাজের বৃহৎ দীঘি তার স্মৃতি বহন করে। তার নির্মিত মন্দির মঠবাড়ী নামে পরিচিত।

সম্রাট আকবর বারভূঁইয়াদেও দমন করতে ব্যর্থ হওয়ায় ১৫৯৪ খ্রিঃ তার সেনাপতি রাজা মানসিংহকে বাংলার সুবেদার ও প্রধান সেনাপতি করে প্রেরণ করেন। মানসিংহের আহবানে কন্দর্প নারয়ণ মোগল স¤্রাটের বশ্যতা স্বীকার করেন। রাজ্য শাসনের সুবিধার জন্য তিনি রাজধানী পুনরায় বিশারীকাঠী হতে বাবুগঞ্জ থানার ক্ষুদ্রকাঠী গ্রামে স্থানান্তরিত করেন। এ সময় খানপুরা, ক্ষুদ্রকাঠী, রহমতপুর, হোসেনপুর, ডহরপাড়া, গাজীরপার, গুঠিয়া প্রভৃতি গ্রাম মুসলামান অধ্যুষিত ছিল। ক্ষুদ্রকাঠী সংলগ্ন খানপুরা গ্রামে খাঁ পদবির পাঠানদের বাস ছিল। রহমত খাঁ ও তার ভ্রাতাকে হত্যা করেন। রহমত খাঁর নামানুসারে রাহমপুর এবং খাঁ পদবীর পাঠানদের অন্যত্র সরিয়ে দিয়ে রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেন। ক্ষুদ্রকাঠীর ওয়াহেদ শিকদারের বাড়ির নিকটে রাজবাড়ি ছিল। এই বাড়িতে পূর্বে প্রাচীন ইট পাওয়া যেত। এখানে রাজবাড়ি দীঘির এক অংশে পুকুর আছে এবং বাকি অংশে দালান ছিল। কন্দর্প নারায়ণ এই তোষাখানায় বিভিন্ন উপঢৌকন সংরক্ষণ করতেন। শিকদার বাড়িতে একটি প্রাচীন বৃহৎ চাবি পাওয়া যায়। এ বাড়িতে মসজিদ নির্মাণ করার সময় একটি কবর আবিষ্কৃত হয়। এ বাড়িতে একটি প্রাচীন গোলা আছে। কন্দর্প নারায়ণ দোয়ারিকা গ্রামে একটি দীঘি খনন করেন। দীঘিতে পাকা ঘাটলা ছিল। দীঘির পাশেই একটি উচু মাটির ঢিবি আছে। মনে হয় রাজার দ্বাররক্ষক এখানে বাস করত এবং তার নামানুসারে দোয়ারিকা নাম হয়েছে।

কন্দর্প নারায়ণ রাজা মানসিংহের সাথে সন্ধি: মোগলদের সাথে যুদ্ধে পরাজয় বরণ করে বিহার, উড়িষ্যা ও বাংলার কয়েক স্থান থেকে পাঠানরা এই রাজ্যে দলে দলে প্রবেশ করে। তারা স্থানীয় অধিবাসেিদর নিকট থেকে রাজস্ব আদায় শুরু করে । এমনকি তারা রাজা কন্দর্প নারায়ণের নিকট নিয়মিত কর দাবি করে এবং তাকে মোগলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য অনুরোধ জানায়। জনৈক সওদাগরা পাঠানদের নেতা ছিলেন। পাঠানরা ক্ষুদ্রকাঠী , লাখুটিয়া, রহমতপুর, কসবা প্রভৃতি গ্রাম থেকে বিতাড়িত হয়ে হোসেনপুর, ডহরপাড়া ও গাজীরপারে ঘাঁটি স্থাপন করেন। কন্দর্প নারায়ণ রাজা মানসিংহের সাথে ইতোমধ্যে সন্ধি করে মোগলদের বশ্যতা স্বীকার করেন।

হোসেনপুরের যুদ্ধ: কন্দর্প নারায়ণ চুক্তি অনুসারে হোসেনপুরের পাঠানদের আক্রমন করেন। হোসেনপুরের যুদ্ধে পরাজয় বরণ করে পাঠানরা ডহরপাড়া ও গাজীরপার থেথে পশ্চাদপসরণ করেন। যুদ্ধে উভয়পক্ষের অনেক সৈন্য নিহত হয়। অনেকে বাকলা ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যায়। কন্দর্প নারায়ণ গাজীরপারে যুদ্ধে গুরুতরভাবে আহত অবস্থায় ক্ষুদ্রকাঠী ফিরে আসেন। তিনি বন্দীদের মানসিংহের নিকট পাঠিয়ে দেন। রাজবৈদ্য অনেক চেষ্টা করে কন্দর্প নারায়ণের চিকিৎসায় ব্যর্থ হন। তিনি ক্ষুদ্রকাঠী রাজবাড়িতে ১৫৯৮ খ্রিঃ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ক্ষুদ্রকাঠী গ্রামের উত্তর-পূর্ব দিক দিয়ে প্রবাহিত আমতলী নদীর তীরে তাকে সমাধিস্থ করা হয়। তার স্মরণে নদীর তীরে এক বিরাট মন্দির নির্মিত হয়। মন্দিরের জন্য গ্রামের নাম হয় মঠবাড়ী। মঠের ধ্বংসাবশেষ কয়েক বছর পূর্বে আমতলী নদীতে বিলীন হয়ে যায়।


পারিবারিক জীবন

রাজা কন্দর্প নারায়ণ বাকলার পূর্ণানন্দ ঘোষের কন্যা এবং পাচু গুহের কন্যাকে বিয়ে করেন। তার প্রথম পুত্র রামচন্দ্র রায় ও তৃতীয় পুত্র রাম জীবন রায় দ্বিতীয় স্ত্রীর গর্ভে এবং দ্বিতীয় পুত্র রাঘবেন্দ্র রায় প্রথম স্ত্রীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন। কন্দর্প নারায়ণের মৃত্যুর সময় পুত্রগণ শিশু ছিল। রাঘবেন্দ্র বসু টাকীর চৌধুরী পরিবারে বিবাহ করে সেখানে চলে যান। টাকীর বসুরা তার বংশধর। কন্দর্প নারায়ণের কনিষ্ঠ পুত্র রামেশ্বর বসু ফরিদপুরে জালালাবাগ পরগণায় চলে যান। তার বংশের অনেকে ভারতে বসবাস করছেন।


কন্দর্প নারায়ণের শাসন এলাকা

কন্দর্প নারায়ণের রাজ্য খুলনা জেলার বাগরেহাট হতে ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ, কোটালীপাড়া ও পূর্বে হাতিয়া-সন্দ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ভুলুয়ার লাজা লক্ষ্মণ মানিক্য ও শ্রীপুরের চাঁদ রায়-কোদরা রায়ের সাথে তার সীমান্ত নিয়ে শত্রুতা ছিল। তার সাথে পার্শ্ববর্তী ভূঁইয়াগণ শক্তি পরীক্ষায় পারতেন না। তার নির্মিত অনেক কামান ছিল। একটি কামানের দৈর্ঘ্য পৌনে আট ফুট এবং পরিধি সাড়ে উনত্রিশ ফুট ছিল। কামানের উপরে বাংলা অক্ষওে কন্দর্প নারায়ণের নাম ও কামান নির্মাতা রূপিয়া খাঁ সাং শ্রীপুর অঙ্কিত ছিল। কামানের উপরে ৩১৮ অঙ্ক লেখা ছিল। ৩১৮ দিয়ে রাজবংশের ১৪০০ খ্রিঃ হতে কন্দর্প নারায়ণ পর্যন্ত রাজত্বকাল বুঝতে পারে অথবা এ দ্বারা কামানের সংখ্যাও বুঝাতে পারে। কামানটি বর্তমানে নিখোঁজ। রাজবাড়িতে আর একটি কামানে গোবিন্দ চন্দ্র কর্মকৃত নাম লেখা ছিল। এই কামানটি ১২৯৭ খ্রিঃ রোহিণী রায় চৌধুরীর ছোট ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে কীর্তিপাশার বাড়িতে নেয়া হয়। কিছু লোক কামানের মধ্যে আগুন দিলে কামানটি ফেটে যায়। আর একটি কামান বরিশালের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিঃ স্ট্রং বরিশাল সাহিত্য পরিষদের সভাপতি দেব কুমার রায় চৌধুরীকে প্রদান করেন। দেশ বিভাগের পর দেব কুমারের বাড়িটি হস্তান্তরিত এবং জনৈক ব্যক্তি লৌহ ব্যবসায়ীদের নিকট কামানটি মাত্র ১২ টাকায় বিক্রি করে। রাজা কন্দর্প নারায়ণ একজন প্রভাবশালী ভূঁইয়া ছিলেন। তিনি মোগল সুবেদার মানসিংহের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেন এবং স্বাধীনভাবে রাজ্য শাসন করতেন। তার প্রধান সেনাপতি রঘুনন্দ ফৌজদার ও প্রধানমন্ত্রী সারাই আচার্য ও প্রধান শরীর রক্ষক রামমোহন মাল রাজ্য শাসনে তাকে সর্বদা সহায়তা করতেন।

তথ্য নির্দেশ

১. Aine-Akbar, Adul Fazal ,Translated by Gladicin ২. H.Beveridge, The District History of Bakerganj, Page 37-38 ৩. Ibidi, Page 23-25 ৪. Ibidi, Page 23-25 ৫. সাক্ষাৎকার-প্রয়াত আতাউর রহমান সিকদার, ক্ষুদ্রকাঠি, বাবুগঞ্জ।