এমদাদ আলী, মাওলানা মোহাম্মদ

Barisalpedia থেকে
Spadmin (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২১:১৩, ২ মে ২০১৬ পর্যন্ত সংস্করণে

(পরিবর্তন) ←পুর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ→ (পরিবর্তন)

মাওলানা মোহাম্মদ এমদাদ আলী ছারছিনার পির নেছার উদ্দিন সাহেবের কামেল মুরিদ এবং বিখ্যাত ছারছিনা আলীয়া মাদ্রাসার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বাংলা ১২৯৭ মোতাবেক ১৮৯১ সালে বর্তমান পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া থানার ভান্ডারিয়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মৌলভী মাহমুদ, ওরফে গগন মুনশী।

শিক্ষা ও কর্মজীবন

মোহাম্মদ এমদাদ আলী আট বছর বয়সে স্থানীয় পাঠশালায় ভর্তি হন। পাঠশালার শিক্ষা সমাপ্ত করে তিনি প্রাইমারী স্কুলের সেন্টার পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে পাশ করে ছাত্র বৃত্তি লাভ করেন। এরপর ইংরেজী শিক্ষার জন্য তিনি উজিরপুর ও পিরোজপুর হাই স্কুলে ভর্তি হন। কর্মজীবনে প্রথমে পটুয়াখালী ট্রেনিং স্কুলে শিক্ষকতা ও পরে বরগুনা থানার চরকগাছি বোর্ড স্কুলে প্রধান শিক্ষক পদে নিযুক্ত হন। এর কিছুদিন পরে তিনি প্রধান শিক্ষকের কাজে ইস্তফা দিয়ে স্বেচ্ছায় ছারছিনা চলে আসেন এবং নিজ হাতে কলাগাছ ও ঝোপ জংগল পরিস্কার করে ২২/২৩ হাত দৈর্ঘ্য ও ৭ হাত প্রস্থের একখানা গোলপাতার ঘর নির্মাণ করেন যা বর্তমান বিখ্যাত ছারছিনা মাদ্রাসার ভিত্তি। শুধু মাদ্রাসার ভিত্তিই নয়, মাদ্রাসার বোর্ডিং, দারুল হাদীস, ডাক বাংলো, জেলা বোর্ডের রাস্তা, মাদ্রাসা প্রেস, পত্রিকা, লাইব্রেরী, মসজিদ, মোসলেম স্টোর, ক্যাশিয়ার খানা, ডাকঘর, স্টিমার ঘাট, হিজবুল্লাহ ও এহিয়া সুন্নাত তহবিল এসবকিছুই প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনায় তার অবদান অবিস্মরণীয়।

কীর্তি ও রচনা

তৎকালীন ছোট লাটকে ছারছিনা আনয়ন এবং শেরে বাংলা ফজলুল হক, শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও খাজা নাজিমুদ্দিনের সহায়তায় এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য তিনি যে পরিশ্রম ও কুশলতার নজীর স্থাপন করেছেন, তা অবিস্মরণীয়। ছারছিনা নামকরণও তাঁর প্রস্তাবে বাস্তবায়িত হয়েছিলো। তিনি মাতৃভাষায় ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব আরোপ করে নিজেই বাংলা ভাষায় পুস্তাকাদি লিখতে শুরু করেন। তিনি ইসলামী আদর্শে শিশু পাঠ্যপুস্তক “বালক নূর” ও “বালিকা নূর” প্রনয়ণ করেন। অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার ফলে তিনি গ্রন্থ দু’খানিকে সরকার কর্তৃক অনুমোদন করিয়ে পাঠ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত করেন। এ পুস্তক দু’খানি প্রকাশের সংগে সংগে আসাম-বাংলাসহ মাদ্রাসা ও প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিপুলভাবে সমাদৃত হয়। সমাজের শিক্ষা, সমাজের বিদআত এবং সৎ শিক্ষা প্রচারের জন্য তিনি শতাধিক ইসলামী গ্রন্থ রচনা করেন। এইসব ইসলামী গ্রন্থের মধ্যে তরিকুল ইসলাম, ওয়াজেদ ইসলাম, হজরতের ভবিষ্যৎবাণী, আমার সৌভাগ্য জীবন, মোসলেম মালা, তালিমে মারফত, মাওলানার উক্তি খন্ডন, সমাজ শিক্ষা, কুরীতি বর্জন, এবং নারী ও পর্দা প্রভৃতি গ্রন্থসমূহ আজো বাংলার ঘরে ঘরে সমাদৃত।

মৃত্যু

তিনি ১৯৬৯ সালের ৯ই এপ্রিল ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। তাঁকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।


তথ্যসূত্র: রফিকুল ইসলাম। বরিশাল দর্পণ। ঢাকা, ১৯৯০।