ঊনবিংশ শতকে বরিশালের সুপারির বাণিজ্য

Barisalpedia থেকে

প্রাচীনকাল হতে বরিশালে প্রচুর সুপারি উৎপন্ন হতো। অক্টোবর মাসে সুপারি পাকে এবং শীতকাল পর্যন্ত সুপারির ব্যবসা চলে। দৌলতখাঁ, আমতলী, পাতারহাট, নলছিটি, নীলগঞ্জ, গালুয়া, ভাণ্ডারিয়া প্রভৃতি স্থান সুপারির ব্যবসাকেন্দ্র ছিল। বর্মী ও চীনারা সুপারি ক্রয়ের জন্য নলছিটি আসত। বার্মার মগরা নলছিটির এক পাড়ায় বাস করত। নলছিটি বন্দরে চীনা ও মগ ব্যবসায়ীদের কবর আছে। বরিশালের বিভিন্ন বন্দর হতে সুপারি কলকাতা, চট্টগ্রাম ও রেঙ্গুনে রপ্তানিহতো। বার্মার লোকরা সুপারি জাল দিয়ে এ প্রকার রং তৈরি করত। সুপারী ‘ঘা’ হিসেবে গণনা করা হয়। সুপারি দু’প্রকারের ছিল- টাটি ও মগই। পাকা সুপারি শুকিয়ে টাটি করা হয়। সুপারি পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরে শুকানো হয়। এ সুপারি মগাই বলা হয়।


সুপারি হতে বছরে প্রায় বর্তমানে মূল্যে দেড়’শ কোটি টাকা উর্ধে আয় হতো। সুপারি সবচেয়ে বড় বাগান ছিল ভোলা ও মেহেন্দিগঞ্জে। ১৯০৭ খৃৃস্টাব্দে জেলায় মোট ৩৫,০০০,০০০ সুপারি, ২৫,০০,০০০ নারিকেল এবং ১০,০০,০০০ খেজুর গাছ ছিল। হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জে ৫০,০০,০০০, ঝালকাঠিতে ৩৫,০০,০০০, পিরোজপুরে ৩০,০০,০০০, ভোলায় ৩০,০০,০০০, বোরহানউদ্দিন ২০,০০,০০০, পটুয়াখালীতে ২০,০০,০০০, বাকেরগঞ্জে ২০,০০০ সুপারি গাছ ছিল। মেহেন্দিগঞ্জ ও শাহবাজপুরের সুপারি সবচেয়ে বড় ছিল। ১৯০০ খৃৃস্টাব্দে এক হাজার বা এক মণ সুপারির দাম ছিল ৮ টাকা। বরিশালে হতে প্রায় ৮,০০,০০০ মণ সুপারি রপ্তানি করা হতো। দুই-তৃতীয়াংশ সুপারি কলকাতায় রপ্তানি হতো। ১৮৯৪ খৃৃস্টাব্দে এক প্রকার রোগে হাজার সুপারি গাছ মরে যায়।


তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০।