উদয় নারায়ণ মিত্র

Barisalpedia থেকে
Spadmin (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৩:৩২, ১২ জুন ২০১৭ পর্যন্ত সংস্করণে (" == উদয় নারায়ণ মিত্র == ১৭২৩ খ্রিস্টাব্দে প্রতাপ নারায়ণ..." দিয়ে পাতা তৈরি)

উদয় নারায়ণ মিত্র

১৭২৩ খ্রিস্টাব্দে প্রতাপ নারায়ণের মৃত্যুর পর তার অল্পবয়স্ক পুত্র প্রেম নারায়ণ সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি অল্পদিন রাজত্ব করে মারা যান। বৃন্দাবন পুততুন্ডের মতে প্রতাপ নারয়ণের জীবিতকালেই প্রেম নারায়ণ অল্পদিন রাজত্ব করে দেহত্যাগ করেন। খুব সম্ভব প্রেমনারায়ণ মাত্র কয়েক মাস রাজত্ব করেছিলেন। তার মৃত্যুর সাথে বসু বংশের ২২৫ বছরের রাজত্ব শেষ হয়। তারপর শুরু হয় মিত্র বংশের শাসন। প্রতাপ নারায়ণের কন্যা বিমলার ঢাকা জেলার উলাইলের জমিদার হরি নারায়ণের পুত্র গৌরীচরণ মিত্রের সাথে বিয়ে হয়। মিত্রের আদিপুরুষ কালিদাস মিত্র কান্যকুজ্য হতে বাংলাদেশ আগমন করে। ১৭২৩ খ্রিঃ প্রেমনারায়ণের মৃত্যুর পর উদয়নারায়ণ মিত্র সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে ঢাকার সুলতান প্রতাব ও আরও কয়েকটি জামিদারী প্রাপ্ত হন।

প্রতাপ নারায়ণ গঙ্গা¯œান থেকে প্রত্যাবর্তনের পথে এক ব্রাহ্মণ যুবকের সাক্ষাত লাভ করেন এবং তাকে রাজধানীতে নিয়ে আসেন। এই যুবকের নাম রাম নারায়ণ চক্রবর্তী । তিনি রহমপুর চক্রবর্তীদের পূর্ব-পুরুষ। প্রতাপ নারায়ণ তাকে রাজ্যের প্রধান দেওয়ান নিযুক্ত করেন। রাম নারয়ন মুর্শিদাবাদ ও দিল্লী গমন করে উদয় নারায়ণে রাজত্ব টিকেয়ে রাখেন। তিনি স¤্রাটের দেয় রাজস্ব পরিশোধ করে উদয় নারায়ণের নামে চন্দ্রদ্বীপের সনদ লাভ করেন। দিল্লীর স¤্রাট শাহ আলম উদয় নারয়ণকে সনদ প্রদান করেন। ১৮০১ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জুনের ঢাকার কলেক্টর মিঃ মেসির পত্রে দেখা যায় মোহাম্মদ শাহ আলমের (১৭১৯-৪৮) সময় নবাব জাফর মুর্শিদকুলী খানের সিলমোহর অঙ্কিত তিনখানা সনদ উদয় নারায়ণকে প্রদান করা হয়েছে। উদয় নারায়ণ এই সনদের বলে জমিদারী হিস্যাজাত ও পণকর ভ’মি লাভ করেন। এই পত্রে দেখা যায় ইন্দ্র নারায়ণের পর তিনি সিংহাসন প্রাপ্ত হন। খুব সম্ভব প্রেম নারয়ণের আর এক নাম চিল ইন্দ্র নারায়ণ। এ সময় বাংলার সবাদার ছিলেন মুর্শিদকুলি খান। ১৭১৭ খ্রিঃ মুর্শিদকুলি খানের মৃত্যুর পর সুজাউদ্দৌলা বাঙ্গালার সুবাদার নিযুক্ত হন।

নবাব আলিবর্দী খানের সময় আগা বাকের খাঁ বাকলা-চন্দ্রদ্বীপে প্রতাবশালী ব্যক্তি ছিলেন। আগা বাকেরের শ্যালক মেহেদী ও শরফুদ্দীন নবাবের পক্ষে বাকলা সরকারের অধীনস্থ সকল জমিদারের রাজস্ব আদায় করতেন। মজুমদার ভ্রাতৃদ্বয়ের সাথে উদয় নারায়ণের বিরোধ ছিল। তারা রাজস্ব না দেয়ার অভিযোগে উদয় নারায়ণকে রাজ্যচ্যুত করেন এবং তাকে বন্দী করে চাখারে নিয়ে যান। তাকে যেখানে বন্দী করে রাখা হয় সে স্থান রাজার হাউলী নামে পরিচিত। চাখার থেকে তাকে নবাবের নিকট প্রেরণ করেন। এই নবাব খুব সম্ভব আগা বাকের খান ছিলেন। তিনি প্রকৃতপক্ষে নবাব না হলে তিনি এ অঞ্চলের জনগণের নিকট নবাব বলে পরিচিত ছিলেন। তা ছাড়া তিনি চন্দ্রদ্বীপ পরগণার তত্ত্বাবধায়ন করতেন। বেভারিজ বলেছেন যে, নবাব মুমদারের সুন্দরী বোনকে বিয়ে করেছিলেন। স্থানীয় প্রবাদ ও প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় আগা বাকের মজুমদারের ভগ্নিকে বিয়ে করেছিলেন। রাজ্য উদ্ধারের জন্য উদয় নারায়ণ আগা বাকের খাঁর নিকট আবেদন করেন। আগা বাকের খাঁ উদয় নারায়ণকে বললেন তিনি যদি একটি জীবন্ত বাঘকে হত্যা করতে পারেন তবে জমিদারী ফেরত পারবেন। খাঁচা থেকে বাঘটি বের হয়ে এলো এবং উদয় নারায়ণকে আক্রমণ করে। উদয় আক্রমণ করে। উদয় নারায়ণ উন্মুক্ত তরবারির আঘাতে বাঘের মস্তক দ্বিখন্ডিত করলেন। আগা বাকের খুবই সন্তুষ্ট হলেন। কিন্তু এ কথা সত্য নয়। আমারা প্রায় এ ঘটনার ১৫০ বছর পূর্বে আবুল ফজলের আইন-ই-আকবরী ও র‌্যালফ ফিচের বিবরণে বাকলা নামের উল্লেখ দেখেছি। এ ঘটনার পর উদয় নারায়ণ তার রাজ্য ফিরে ফেলেন। ২

রাজনারায়ণ নামে উদয় নারায়ণের আর এক ভ্রাতা ছিলেন। তিনি সিংহাসনের দাবি পরিত্যাঘ করে মাধবপাশার নিকট প্রতাপপুরে বাস করতেন। উদয় নারয়ণ তাকে রাজমাতা তালুক হিস্যাজাত ও অজুহাজ প্রদান করেন। চন্দ্রদ্বীপের ২২টি পরগণায় তার তালুক ছিল। প্রতাপপুরে রাজনারায়নের প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ ও দীঘি আছে। উদয় নারায়ণের সময় শিল্প ও বাণিজ্যের উন্নতি হয়। বরিশাল শহরে নথুল্লাবাদে সেনানিবাস ও রাজস্ব দপ্তর ছিল। তিনি নথুল্লাবাদে কালীমন্দির প্রতিষ্ঠা এবং সেবায়েত নিযুক্ত করেন। তিনি কাশিরপুরে কাঠগড় পল্লীতে সৈন্যদের জন্য পুকুর খননকালে মহামায়ার মূর্তিপ্রাপ্ত হন। তিনি কাশিপুরে মন্দির নির্মাণ করে মহামায়ার মূর্তি স্থাপন করেন। প্রতিবছর মাঘী সপ্তমীতে মহামায়ার মেলা বসে তার দেওয়ান রাম নারায়ণ চক্রবর্তী রহমতপুরে বসতি স্থপন করেন। রহমতপুরে তার নির্মিত মন্দির ও দালান আছে। নলচিড়া নিবাসী শংকর চক্রবর্তী তার ভান্ডার রক্ষক বা কাইত ছিলেন। এই পদকে ভাড়ার কাইত বলা হতো। শংকর চক্রবর্তী গঙ্গা¯œানের সময় পাষাণময়ী বিষ্ণুমূর্তি পান। তিনি এই মূর্তি কাশিপুরের তৈতপুরে স্থাপন করেন। তার সময় ১৭৫৩ খ্রিঃ নলছিটি থানার কুলহরী গ্রামে বল্লভ বসু ও তার পুত্র সিতারাম বসু কাশিপুরে বসতি স্থাপন করেন। কাশিপুরে সীতারাম বসুর দীঘি সবচেয়ে বৃহৎ । রাজা উদয় নারায়ণ দীর্ঘ ৪৫ বছর রাজত্ব করেন।৩


তথ্য নির্দেশ

১. রোহিণী রায় চৌধুরী, বাকলা, পৃষ্ঠা ১২১-১২৩ ২. District of Bakerganj, Page 70-72 ৩. বৃন্ধাবন পুততু-, চন্দ্রদ্বীপের ইতহাস