"উদয় নারায়ণ মিত্র"-এর বিভিন্ন সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

Barisalpedia থেকে
১৬ নং লাইন: ১৬ নং লাইন:
  
 
রাজনারায়ণ নামে উদয় নারায়ণের আর এক ভ্রাতা ছিলেন। তিনি সিংহাসনের দাবি পরিত্যাগ করে মাধবপাশার নিকট প্রতাপপুরে বাস করতেন। উদয় নারয়ণ তাকে রাজমাতা তালুক হিস্যাজাত ও অজুহাজ প্রদান করেন। চন্দ্রদ্বীপের ২২টি পরগণায় রাজনারায়নের তালুক ছিল। প্রতাপপুরে রাজনারায়নের প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ ও দীঘি আছে।  
 
রাজনারায়ণ নামে উদয় নারায়ণের আর এক ভ্রাতা ছিলেন। তিনি সিংহাসনের দাবি পরিত্যাগ করে মাধবপাশার নিকট প্রতাপপুরে বাস করতেন। উদয় নারয়ণ তাকে রাজমাতা তালুক হিস্যাজাত ও অজুহাজ প্রদান করেন। চন্দ্রদ্বীপের ২২টি পরগণায় রাজনারায়নের তালুক ছিল। প্রতাপপুরে রাজনারায়নের প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ ও দীঘি আছে।  
 +
 +
 +
== দানশীলতা ==
 +
 +
উদয় নারায়ণ উদারচেতা ও দানশীল রাজা ছিলেন। তিনি দেব-দ্বিজে ভক্তিপরায়ণ ছিলেন। চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণকালে প্রত্যেক তিথিতে তিনি ব্রাহ্মণকে ভূমি দান করতেন। বাকলা চন্দ্রদ্বীপে প্রায় সব ব্রাহ্মণ তার প্রদত্ত নিষ্কর ভূমি ভোগ করতেন। চন্দ্রদ্বীপ রাজাদের মধ্যে দানশীলতায় তার সমতুল্য কেউ ছিলেন না। বাকলার প্রখ্যাত প-িত, ব্রাহ্মণ, দরবেশ, মসজিদ, দরগাহ ও মন্দিরে তিনি নিষ্কর ভূমি দান করেন। তার সময় রহমতপুরের চক্রবর্তী, কড়াপুরের হায়াত মাহমুদ, রাজা রাম সেন, কৃষ্ণ প্রসাদ সেন, নূরুল্লা, সোনাউল্লা, ক্রোশ ও কৃষ্ণরাম সেন প্রমুখের নামে তালুক সৃষ্টি হয়। চন্দ্রদ্বীপের ইতিহাস লেখক শ্রীবৃন্দাবন পুততু-ের পূর্ব পুরুষ তিতুরাম পুততু- উদয় নারাায়ণ কর্তৃক সনদপ্রাপ্ত হন। লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি গোবর্ধন আচার্য গৌর পতনের পর বাকলা রাজ্যে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তার অধীনস্থ তিতুরাম পুততু- হোসেনপুরের সূর্যদেব চক্রবর্তীর কন্যাকে বিয়ে করেন এবং ১৭৪১ খৃৃস্টাব্দে হোসেনপুরে বসতি স্থাপন করেন। তিতুরাম জ্যোতিষ শাস্ত্রে অগাধ প-িত ছিলেন। তিনি উদয় নারায়ণের ভবিষ্যতে গণনা করে চারখানা সনদ লাভ করেন। তিনি নিজ গ্রামে ১১৬৫ সনের ২৭ পৌষ, বাউফল থানার আদমপুরে, ১১৬৭ সনের ২ মাঘ, ঝালকাঠির রামচন্দ্রপুরে ১১৬৭ ও ১১৭১ সনে পুত্র প্রাণকৃষ্ণ ও সূর্য নারায়ণের নামে ঝালকাঠি কল্যাণকাঠি ও শিবনকাঠি গ্রামে সম্পত্তি লাভ করেন। এই সনদগুলো ১৮০০ খ্যিঃ ঢাকার কালেক্টরের নিকট জমা দেয়া হয়।
  
  

১০:০৬, ৫ নভেম্বর ২০১৭ তারিখের সংস্করণ

রাজা উদয় নারায়ণ মিত্র চন্দ্রদ্বীপ রাজ বংশের চতুর্দশ রাজা। তার মধ্য দিয়ে চন্দ্রদ্বীপে শুরু হয় মিত্র রাজবংশ।

সিংহাসনে আরোহণ

১৭২৩ খ্রিস্টাব্দে প্রতাপ নারায়ণের মৃত্যুর পর তার অল্পবয়স্ক পুত্র প্রেম নারায়ণ সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি অল্পদিন রাজত্ব করে মারা যান। বৃন্দাবন পুততুন্ডের মতে প্রতাপ নারায়ণের জীবিতকালেই প্রেম নারায়ণ অল্পদিন রাজত্ব করে দেহত্যাগ করেন। খুব সম্ভব প্রেমনারায়ণ মাত্র কয়েক মাস রাজত্ব করেছিলেন। তার মৃত্যুর সাথে বসু বংশের ২২৫ বছরের রাজত্ব শেষ হয়। তারপর শুরু হয় মিত্র বংশের শাসন। প্রতাপ নারায়ণের কন্যা বিমলার সাথে ঢাকা জেলার উলাইলের জমিদার হরি নারায়ণের পুত্র গৌরীচরণ মিত্রের বিয়ে হয়। মিত্রের আদিপুরুষ কালিদাস মিত্র কান্যকুব্জ হতে বাংলাদেশ আগমন করে। ১৭২৩ খ্রিঃ প্রেমনারায়ণের মৃত্যুর পর উদয়নারায়ণ মিত্র সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে ঢাকার সুলতান প্রতাব ও আরও কয়েকটি জমিদারী প্রাপ্ত হন।


সম্রাটের সনদ লাভ

প্রতাপ নারায়ণ গঙ্গাস্নান থেকে প্রত্যাবর্তনের পথে এক ব্রাহ্মণ যুবকের সাক্ষাৎ লাভ করেন এবং তাকে রাজধানীতে নিয়ে আসেন। এই যুবকের নাম রাম নারায়ণ চক্রবর্তী । তিনি রহমতপুর চক্রবর্তীদের পূর্ব-পুরুষ। প্রতাপ নারায়ণ তাকে রাজ্যের প্রধান দেওয়ান নিযুক্ত করেন। রাম নারায়ন মুর্শিদাবাদ ও দিল্লী গমন করে উদয় নারায়ণের রাজত্ব টিকিয়ে রাখেন। তিনি স¤্রাটের দেয় রাজস্ব পরিশোধ করে উদয় নারায়ণের নামে চন্দ্রদ্বীপের সনদ লাভ করেন। দিল্লীর স¤্রাট শাহ আলম উদয় নারয়ণকে সনদ প্রদান করেন। ১৮০১ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জুনের ঢাকার কালেক্টর মিঃ মেসির পত্রে দেখা যায় মোহাম্মদ শাহ আলমের (১৭১৯-৪৮) সময় নবাব জাফর মুর্শিদকুলী খানের সিলমোহর অঙ্কিত তিনখানা সনদ উদয় নারায়ণকে প্রদান করা হয়েছে। উদয় নারায়ণ এই সনদের বলে জমিদারী হিস্যাজাত ও পণকর ভূমি লাভ করেন।


আগা বাকেরের সাথে সম্পর্ক

নবাব আলিবর্দী খানের সময় আগা বাকের খাঁ বাকলা-চন্দ্রদ্বীপে প্রতাপশালী ব্যক্তি ছিলেন। আগা বাকেরের শ্যালক মেহেদী ও শরফুদ্দীন মজুমদার নবাবের পক্ষে বাকলা সরকারের অধীনস্থ সকল জমিদারের রাজস্ব আদায় করতেন। মজুমদার ভ্রাতৃদ্বয়ের সাথে উদয় নারায়ণের বিরোধ ছিল। তারা রাজস্ব না দেয়ার অভিযোগে উদয় নারায়ণকে রাজ্যচ্যুত করেন এবং তাকে বন্দী করে চাখারে নিয়ে যান। তাকে যেখানে বন্দী করে রাখা হয় সে স্থান রাজার হাউলী নামে পরিচিত। চাখার থেকে তাকে আগা বাকের খানের নিকট নিয়ে যাওয়া হয়। রাজ্য উদ্ধারের জন্য উদয় নারায়ণ আগা বাকের খাঁর নিকট আবেদন করেন। আগা বাকের খাঁ উদয় নারায়ণকে বললেন তিনি যদি একটি জীবন্ত বাঘকে হত্যা করতে পারেন তবে জমিদারী ফেরত পাবেন। খাঁচা থেকে বাঘটি বের হয়ে এলো এবং উদয় নারায়ণকে আক্রমণ করলো। উদয় নারায়ণ উন্মুক্ত তরবারির আঘাতে বাঘের মস্তক দ্বিখন্ডিত করলেন। আগা বাকের খুবই সন্তুষ্ট হলেন। কিন্তু এ কথার সত্যতা অপ্রমাণিত।

রাজনারায়ণ নামে উদয় নারায়ণের আর এক ভ্রাতা ছিলেন। তিনি সিংহাসনের দাবি পরিত্যাগ করে মাধবপাশার নিকট প্রতাপপুরে বাস করতেন। উদয় নারয়ণ তাকে রাজমাতা তালুক হিস্যাজাত ও অজুহাজ প্রদান করেন। চন্দ্রদ্বীপের ২২টি পরগণায় রাজনারায়নের তালুক ছিল। প্রতাপপুরে রাজনারায়নের প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ ও দীঘি আছে।


দানশীলতা

উদয় নারায়ণ উদারচেতা ও দানশীল রাজা ছিলেন। তিনি দেব-দ্বিজে ভক্তিপরায়ণ ছিলেন। চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণকালে প্রত্যেক তিথিতে তিনি ব্রাহ্মণকে ভূমি দান করতেন। বাকলা চন্দ্রদ্বীপে প্রায় সব ব্রাহ্মণ তার প্রদত্ত নিষ্কর ভূমি ভোগ করতেন। চন্দ্রদ্বীপ রাজাদের মধ্যে দানশীলতায় তার সমতুল্য কেউ ছিলেন না। বাকলার প্রখ্যাত প-িত, ব্রাহ্মণ, দরবেশ, মসজিদ, দরগাহ ও মন্দিরে তিনি নিষ্কর ভূমি দান করেন। তার সময় রহমতপুরের চক্রবর্তী, কড়াপুরের হায়াত মাহমুদ, রাজা রাম সেন, কৃষ্ণ প্রসাদ সেন, নূরুল্লা, সোনাউল্লা, ক্রোশ ও কৃষ্ণরাম সেন প্রমুখের নামে তালুক সৃষ্টি হয়। চন্দ্রদ্বীপের ইতিহাস লেখক শ্রীবৃন্দাবন পুততু-ের পূর্ব পুরুষ তিতুরাম পুততু- উদয় নারাায়ণ কর্তৃক সনদপ্রাপ্ত হন। লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি গোবর্ধন আচার্য গৌর পতনের পর বাকলা রাজ্যে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তার অধীনস্থ তিতুরাম পুততু- হোসেনপুরের সূর্যদেব চক্রবর্তীর কন্যাকে বিয়ে করেন এবং ১৭৪১ খৃৃস্টাব্দে হোসেনপুরে বসতি স্থাপন করেন। তিতুরাম জ্যোতিষ শাস্ত্রে অগাধ প-িত ছিলেন। তিনি উদয় নারায়ণের ভবিষ্যতে গণনা করে চারখানা সনদ লাভ করেন। তিনি নিজ গ্রামে ১১৬৫ সনের ২৭ পৌষ, বাউফল থানার আদমপুরে, ১১৬৭ সনের ২ মাঘ, ঝালকাঠির রামচন্দ্রপুরে ১১৬৭ ও ১১৭১ সনে পুত্র প্রাণকৃষ্ণ ও সূর্য নারায়ণের নামে ঝালকাঠি কল্যাণকাঠি ও শিবনকাঠি গ্রামে সম্পত্তি লাভ করেন। এই সনদগুলো ১৮০০ খ্যিঃ ঢাকার কালেক্টরের নিকট জমা দেয়া হয়।


শাসনামল ও কীর্তি

উদয় নারায়ণের সময় শিল্প ও বাণিজ্যের উন্নতি হয়। বরিশাল শহরে নথুল্লাবাদে সেনানিবাস ও রাজস্ব দপ্তর ছিল। তিনি নথুল্লাবাদে কালীমন্দির প্রতিষ্ঠা এবং সেবায়েত নিযুক্ত করেন। তিনি কাশীপুরে কাঠগড় পল্লীতে সৈন্যদের জন্য পুকুর খননকালে মহামায়ার মূর্তিপ্রাপ্ত হন। তিনি কাশীপুরে মন্দির নির্মাণ করে মহামায়ার মূর্তি স্থাপন করেন। প্রতিবছর মাঘী সপ্তমীতে মহামায়ার মেলা বসে। তার দেওয়ান রাম নারায়ণ চক্রবর্তী রহমতপুরে বসতি স্থপন করেন। রহমতপুরে তার নির্মিত মন্দির ও দালান আছে। নলচিড়া নিবাসী শংকর চক্রবর্তী তার ভান্ডার রক্ষক বা কাইত ছিলেন। এই পদকে ভাড়ার কাইত বলা হতো। শংকর চক্রবর্তী গঙ্গা¯œানের সময় পাষাণময়ী বিষ্ণুমূর্তি পান। তিনি এই মূর্তি কাশিপুরের চৈতপুরে স্থাপন করেন। তার সময় ১৭৫৩ খ্রিঃ নলছিটি থানার কুলহরী গ্রামে বল্লভ বসু ও তার পুত্র সিতারাম বসু কাশিপুরে বসতি স্থাপন করেন। কাশিপুরে সীতারাম বসুর দীঘি সবচেয়ে বৃহৎ ।


মৃত্যু

রাজা উদয় নারায়ণ দীর্ঘ ৪৫ বছর রাজত্ব করে সম্ভবত ১৭৬৮ সালে মৃত্যু বরণ করেন।



তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০।