"ইয়াকুব আলী, মোহাম্মদ"-এর বিভিন্ন সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

Barisalpedia থেকে
("বরিশালের অন্যতম সাহিত্যিক, সাংবাদিক, ইতিহাসবিদ ও সমাজসে..." দিয়ে পাতা তৈরি)
 
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
 
বরিশালের অন্যতম সাহিত্যিক, সাংবাদিক, ইতিহাসবিদ ও সমাজসেবক। পিতার নাম মোহাম্মদ দুলাল মিয়া। জন্ম : ১৬ নভেম্বর ১৯০১ সাল। মৃত্যু: ১১ এপ্রিল ১৯৯০ সাল। গ্রাম: সেলিমাবাদ, থানা : মেহেন্দিগঞ্জ, জেলা : বরিশাল।  
 
বরিশালের অন্যতম সাহিত্যিক, সাংবাদিক, ইতিহাসবিদ ও সমাজসেবক। পিতার নাম মোহাম্মদ দুলাল মিয়া। জন্ম : ১৬ নভেম্বর ১৯০১ সাল। মৃত্যু: ১১ এপ্রিল ১৯৯০ সাল। গ্রাম: সেলিমাবাদ, থানা : মেহেন্দিগঞ্জ, জেলা : বরিশাল।  
  
== শিক্ষাজীবন ও রাজনৈতিক হাতেখড়ি ==
+
== শিক্ষাজীবন ও রাজনীতিতে হাতেখড়ি ==
  
 
১৯২০-২১ সালে বৃটিশ উপনিবেশবাদ বিরোধী খেলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনের ফলে যে নব উদ্যোগ ও প্রাণাবেগ তৎকালীন ছাত্র ও যুব সমাজে প্রবল আলোড়ন তুলেছিল মোহাম্মদ ইয়াকুব আলী সে আলোড়নে পুরোধা একজন ছিলেন। তিনি ১৯২৩ সালে ম্যাট্রিক এবং ১৯২৬ সালে মোক্তারী পাস করেন। উনবিংশ শতকের শেষভাগে বরিশালের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নব জাগরণের সুচনা হয় এবং বিংশ শতকের প্রথম দিকে বরিশাল বাংলা তথা ভারতের রাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান হয়ে ওঠে। এ সময়ে তিনি অশ্বিনী কুমার দত্ত, খান বাহাদুর হেমায়েত উদ্দীন আহমদ, শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক, খান বাহাদুর হাশেম আলী খান প্রমুখের সান্নিধ্যে আসেন।
 
১৯২০-২১ সালে বৃটিশ উপনিবেশবাদ বিরোধী খেলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনের ফলে যে নব উদ্যোগ ও প্রাণাবেগ তৎকালীন ছাত্র ও যুব সমাজে প্রবল আলোড়ন তুলেছিল মোহাম্মদ ইয়াকুব আলী সে আলোড়নে পুরোধা একজন ছিলেন। তিনি ১৯২৩ সালে ম্যাট্রিক এবং ১৯২৬ সালে মোক্তারী পাস করেন। উনবিংশ শতকের শেষভাগে বরিশালের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নব জাগরণের সুচনা হয় এবং বিংশ শতকের প্রথম দিকে বরিশাল বাংলা তথা ভারতের রাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান হয়ে ওঠে। এ সময়ে তিনি অশ্বিনী কুমার দত্ত, খান বাহাদুর হেমায়েত উদ্দীন আহমদ, শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক, খান বাহাদুর হাশেম আলী খান প্রমুখের সান্নিধ্যে আসেন।

০২:০০, ১৪ জুন ২০১৬ তারিখে সম্পাদিত বর্তমান সংস্করণ

বরিশালের অন্যতম সাহিত্যিক, সাংবাদিক, ইতিহাসবিদ ও সমাজসেবক। পিতার নাম মোহাম্মদ দুলাল মিয়া। জন্ম : ১৬ নভেম্বর ১৯০১ সাল। মৃত্যু: ১১ এপ্রিল ১৯৯০ সাল। গ্রাম: সেলিমাবাদ, থানা : মেহেন্দিগঞ্জ, জেলা : বরিশাল।

শিক্ষাজীবন ও রাজনীতিতে হাতেখড়ি

১৯২০-২১ সালে বৃটিশ উপনিবেশবাদ বিরোধী খেলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনের ফলে যে নব উদ্যোগ ও প্রাণাবেগ তৎকালীন ছাত্র ও যুব সমাজে প্রবল আলোড়ন তুলেছিল মোহাম্মদ ইয়াকুব আলী সে আলোড়নে পুরোধা একজন ছিলেন। তিনি ১৯২৩ সালে ম্যাট্রিক এবং ১৯২৬ সালে মোক্তারী পাস করেন। উনবিংশ শতকের শেষভাগে বরিশালের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নব জাগরণের সুচনা হয় এবং বিংশ শতকের প্রথম দিকে বরিশাল বাংলা তথা ভারতের রাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান হয়ে ওঠে। এ সময়ে তিনি অশ্বিনী কুমার দত্ত, খান বাহাদুর হেমায়েত উদ্দীন আহমদ, শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক, খান বাহাদুর হাশেম আলী খান প্রমুখের সান্নিধ্যে আসেন।

সাহিত্য ও সাংবাদিকতা

ইয়াকুব আলী একজন আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ হলেও তিনি একজন সাহিত্যিক ও দক্ষ সাংবাদিক ছিলেন। তিনি ছাত্র জীবনেই কলম ধরেন এবং বিশ ও তিরিশের দশকে একজন শক্তিমান প্রাবন্ধিক হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। এ সময় দুর্গামোহন সেনের সম্পাদনায় ‘বরিশাল হিতৈষী’তে তিনি লিখতেন। ১৯২৩-এ খান বাহাদুর হেমায়েত উদ্দীন আহমদ ও এ্যাডভোকেট মফিজউদ্দীনের সম্পাদনায় ‘বঙ্গমিহির’ বের হলে তিনি নিয়মিত এ পত্রিকায় লিখতেন। এ্যাডভোকেট মীর ফজলে আলীর পরিচালনায় এবং নূর আহমদের সম্পাদনায় ১৯২৭ সালে ‘নকীব’ প্রকাশিত হলে ইয়াকুব আলী এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন এবং এতে লেখালেখি করেন। ১৯৩৬ সালে তিনি দৈনিক আজাদের বরিশালস্থ প্রতিনিধি নিযুক্ত হন। অল্প দিনের মধ্যে তিনি সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক হিসেবে সুখ্যাতি লাভ করেন। বিশেষ করে তার আগে দৈনিক পত্রিকায় কোন উল্লেখযোগ্য মুসলমান সাংবাদিক ছিল না। তিনি ছিলেন বরিশালের সাংবাদিকদের পথ প্রদর্শক, অন্য কথায় মফস্বল সাংবাদিকতার শুরু।

এছাড়াও ১৯৪৭ -এ দেশ বিভাগের পর স্কুল পাঠ্যপুস্তকের অভাব দেখা দেয়। এ লক্ষ্যে তিনি বেশ কয়েকটি বই লেখেন। এর মধ্যে, ছোটদের ইতিহাস, আধুনিক নয়া ইতিহাস, প্রবেশিকা, ইসলামের ইতিহাস, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। ১৯৪৮-এ তার লেখা কাশ্মীরের আজাদী লড়াই সমগ্র ভারতবর্ষে প্রচুর সাড়া জাগিয়েছিল। ১৯৪৮-এ ঢাকা ও কোলকাতা থেকে প্রকাশিত মাসিক মোহাম্মদী ও গুলিস্তা পত্রিকায় তার বিখ্যাত ঐতিহাসিক প্রবন্ধ ‘আগাবাকের’ প্রকাশিত হয়। মাসিক মোহাম্মদী ও মাহেনও পত্রিকায় তিনি বরিশালের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরে অনেক প্রবন্ধ লিখেছিলেন। ১৯৬৫-তে বরিশাল জেলা প্রশাসকের পৃষ্ঠপোষকতায় ও মোহাম্মদ ইয়াকুব আলীর সম্পাদনায় ‘বরিশাল দর্পন’ প্রকাশিত হয়। আইয়ুব আমলে এটি সরকারের মুখপত্র ছিল। ১৯৭৭ সালে তাঁর সম্পাদনায় জেলা পরিষদের থেকে পাক্ষিক ‘বাকেরগঞ্জ পরিক্রমা’ প্রকাশিত হয়। তবে ১৯৮৫-তে তা বন্ধ হয়ে যায়।

সমাজসেবা ও চাকুরি

১৯২৭-এর ২ মার্চ কুলকাঠি মসজিদের সামনে মুসলিম হত্যার প্রতিবাদে ইয়াকুব আলী একজন যুবকর্মী হিসেবে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এ সময় তিনি আবদুস সামাদ, আনোয়ার হোসেন ও ফয়েজউদ্দীন মিয়ার সাথে আনসার সমিতি গঠন করেন। তৎকালীন অবহেলিত সমাজ জাগরণে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৩৭ সালে আজীজ উদ্দীন আহম্মদকে সভাপতি ও আফতাব উদ্দিন উকিলকে সম্পাদক করে বরিশালে মুসলিম লীগ গঠিত হয়। ইয়াকুব আলী ছিলেন এই কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। ১৯৪০ সালে তিনি পটুয়াখালী মহকুমার প্রোপাগান্ডা অফিসার নিযুক্ত হন। ১৯৪৬-এ প্রোপাগান্ডা অফিসার পদ বিলুপ্ত হলে তিনি থানা কৃষি অফিসার হিসাবে ভোলার লালমোহন ও উজিরপুরের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৪-তে মহকুমা কৃষি অফিসার হিসেবে পদোন্নতি হয়। ১৯৬০-এ সরকারি চাকুরী থেকে অবসর নেন।

অবসর ও মুত্যু

অবসরের পর আইনব্যবসা ও সাংবাদিকতায় নিজেকে জড়িয়ে রাখেন। বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরি অচল হয়ে পড়লে তিনি একে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেন এবং দীর্ঘদিন এর প্রধান লাইব্রেরীয়ানের দায়িত্ব পালন করেন। জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত পাক্ষিক ‘বাকেরগঞ্জ পরিক্রমা’ ১৯৮৫-তে তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তিনি তার গ্রামের বাড়ি মেহেন্দিগঞ্জের পাতানুনিয়ায় চলে যান। ১৯৯০ সালের ১১ এপ্রিল তিনি ইন্তেকাল করেন।


তথ্যসূত্র: রুসেলি রহমান চৌধুরী। বরিশালের প্রয়াত গুণীজন। ইউনিভার্সিটি বুক পাবলিশার্স, ঢাকা। ২০০৬।