"ইংরেজদের দখলে বরিশালের বাণিজ্য"-এর বিভিন্ন সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

Barisalpedia থেকে
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের পর অনেক ইংরেজ বণিক বাকেরগঞ্জ ও বারৈকরণে বাণিজ্য করতে আসে। বাকেরগঞ্জের জলপথ, চাল, লবণ ও সুপারি ইংরেজ বণিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তাই তারা এ অঞ্চলের বাণিজ্য বন্দর-বারৈকরণ, সুতালরী ও বাকেরগঞ্জ দখল করে নেয়। কথিত আছে যে রবার্ট ক্লাইভ নলছিটি থানার বারৈকরণ বন্দরে একবার এসেছিলেন। বারৈকরণে রাজবল্লভের জমিদারীর কাছারি ছিল। ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আমলে বারৈকরণে ইংরেজদের স্থায়ী বানিজ্য কর্মচারী (Commercial Resident) ) কেন্দ্র ছিল।৫ ইউরোপীয় বণিকদের মধ্যে পর্তুগীজরা প্রথম বাকলা-চন্দ্রদ্বীপে আগমন করে। তারা ১৫৫৯ খ্রিঃ বাকলা রাজ্যে বর্তমান বাকেরগঞ্জ ও বরিশাল শহরে বসতি স্থাপন করে। ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭ শতকের শেষভাগে সুবাদার শায়েস্তা খানের সময় প্রথম বাকলায় বানিজ্য শুরু করে। তারা বরিশালের নদীপথে ঢাকা-কলিকাতা যাতায়াত করত। ঢাকা হতে পদ্মা, মেঘনা, আড়িয়াল খাঁ, সুগন্ধা, ধানসিঁড়ি, পিরোজপুরে দামোদর নদী, বলেশ্বর ও ভৈরব নদী হয়ে কলিকাতায় ইংরেজদের বাণিজ্য তরী যাতায়াত করত। পথে তারা বরিশালের গিরদে বন্দর, বাকেরগঞ্জ ও সুতালরী বন্দরে ব্যবসা করত। পলাশীর যুদ্ধের পর ইংরেজ বণিকরা বাকেরগঞ্জের বন্দরগুলো দখল করে নেয়। ইংরেজ বণিকরা দেশীয় বণিকদের ওপর অত্যাচার শুরু করে। তারা বিনা শুল্কে বাণিজ্য করার জন্য ছাড়পত্র বা দস্তক ব্যবহার কত। অথচ দেশীয় বণিকদের শুল্ক দিতে হতো। কোম্পানি ও তাদের কর্মচারীদের অত্যাচারে বাকেরগঞ্জ, সুতালরী ও বারৈকরণ বন্দর পূর্ব গৌরব হারিয়ে ফেলে এবং দেশীয় বণিকরা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যের বিরুদ্ধে বাংলার নবাব মীর কাশিম প্রতিবাদ জানান এবং এ নিয়ে তার ইংরেজদের সাথে যুদ্ধ হয়। বাকেরগঞ্জ বন্দরে ইংরেজ বণিক ও তাদের গোমস্তাদের অত্যাচার এত তীব্র ছিল যে, ১৭৬২ খ্রিঃ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাংলার গভর্নর ভেন্সিটারট এ অত্যাচার বন্ধ করার জন্য সার্জেন্ট ব্রেগোকে প্রেরণ করেন। মিঃ ব্রেগো ১৭৬২ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মে গভর্নর ভেন্সিটারটের নিকট বাকেরগঞ্জ বন্দরের সার্বিক পরিস্থিতি জানিয়ে এক পত্র লেখেন৬-     
+
১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের পর অনেক ইংরেজ বণিক বাকেরগঞ্জ ও বারৈকরণে বাণিজ্য করতে আসে। বাকেরগঞ্জের জলপথ, চাল, লবণ ও সুপারি ইংরেজ বণিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তাই তারা এ অঞ্চলের বাণিজ্য বন্দর-বারৈকরণ, সুতালরী ও বাকেরগঞ্জ দখল করে নেয়। কথিত আছে যে রবার্ট ক্লাইভ নলছিটি থানার বারৈকরণ বন্দরে একবার এসেছিলেন। বারৈকরণে রাজবল্লভের জমিদারীর কাছারি ছিল। ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আমলে বারৈকরণে ইংরেজদের স্থায়ী বানিজ্য কর্মচারী (Commercial Resident) ) কেন্দ্র ছিল।১ ইউরোপীয় বণিকদের মধ্যে পর্তুগীজরা প্রথম বাকলা-চন্দ্রদ্বীপে আগমন করে। তারা ১৫৫৯ খ্রিঃ বাকলা রাজ্যে বর্তমান বাকেরগঞ্জ ও বরিশাল শহরে বসতি স্থাপন করে। ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭ শতকের শেষভাগে সুবাদার শায়েস্তা খানের সময় প্রথম বাকলায় বানিজ্য শুরু করে। তারা বরিশালের নদীপথে ঢাকা-কলিকাতা যাতায়াত করত। ঢাকা হতে পদ্মা, মেঘনা, আড়িয়াল খাঁ, সুগন্ধা, ধানসিঁড়ি, পিরোজপুরে দামোদর নদী, বলেশ্বর ও ভৈরব নদী হয়ে কলিকাতায় ইংরেজদের বাণিজ্য তরী যাতায়াত করত। পথে তারা বরিশালের গিরদে বন্দর, বাকেরগঞ্জ ও সুতালরী বন্দরে ব্যবসা করত। পলাশীর যুদ্ধের পর ইংরেজ বণিকরা বাকেরগঞ্জের বন্দরগুলো দখল করে নেয়। ইংরেজ বণিকরা দেশীয় বণিকদের ওপর অত্যাচার শুরু করে। তারা বিনা শুল্কে বাণিজ্য করার জন্য ছাড়পত্র বা দস্তক ব্যবহার কত। অথচ দেশীয় বণিকদের শুল্ক দিতে হতো। কোম্পানি ও তাদের কর্মচারীদের অত্যাচারে বাকেরগঞ্জ, সুতালরী ও বারৈকরণ বন্দর পূর্ব গৌরব হারিয়ে ফেলে এবং দেশীয় বণিকরা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যের বিরুদ্ধে বাংলার নবাব মীর কাশিম প্রতিবাদ জানান এবং এ নিয়ে তার ইংরেজদের সাথে যুদ্ধ হয়। বাকেরগঞ্জ বন্দরে ইংরেজ বণিক ও তাদের গোমস্তাদের অত্যাচার এত তীব্র ছিল যে, ১৭৬২ খ্রিঃ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাংলার গভর্নর ভেন্সিটারট এ অত্যাচার বন্ধ করার জন্য সার্জেন্ট ব্রেগোকে প্রেরণ করেন। মিঃ ব্রেগো ১৭৬২ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মে গভর্নর ভেন্সিটারটের নিকট বাকেরগঞ্জ বন্দরের সার্বিক পরিস্থিতি জানিয়ে এক পত্র লেখেন২-     
  
 
”এ স্থানের (বাকেরগঞ্জ) পরিস্থিতির জন্য আমি আপনাকে ভেন্সিটারট) লিখতে বাধ্য হচ্ছি এবং ভবিষ্যতে কি ব্যবস্থ গ্রহণ করব সে জন্য আপনার উপদেশ চাচ্ছি।  
 
”এ স্থানের (বাকেরগঞ্জ) পরিস্থিতির জন্য আমি আপনাকে ভেন্সিটারট) লিখতে বাধ্য হচ্ছি এবং ভবিষ্যতে কি ব্যবস্থ গ্রহণ করব সে জন্য আপনার উপদেশ চাচ্ছি।  
৭ নং লাইন: ৭ নং লাইন:
 
আমি তাদের কোথায় বাধা দিয়েছি তা আপনাকে জানাচ্ছি। অতীতে এ স্থান (বাকেরগঞ্জ) একটি বিখ্যাত বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল। কিন্তু বর্তমানে নি¤েœর কার্যাবলীর জন্য বানিজ্য ধ্বংস হতে যাচ্ছে। যখন একজন বণিক তার গোমস্তাকে একানে ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য পাঠায়, তখন সে নিজকে এমন শক্তিশালী মনে করে যে, স্থানীয় জনগণ তার পণ্য ক্রয় করতে বা তাদের পণ্য তার নিকট বিক্রি করতে বাধ্য। কেউ অস্বীকার করলে (যখন তার ক্ষমতা থাকে না) তাকে বেত্রাঘাত করা হয়। অথবা তখনই তাকে বন্দী করা হয়। তারা বাধ্য থাকলেও এখানে শেষ হয় না। দ্বিতীয়বার শক্তি প্রয়োগ করে সকল প্রকার বাণিজ্য নিজেরা দখল করে নেয়। তারা যে সকল পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করে তা অন্য কোন ব্যবসায়ী ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে না। যদি দেশীয় বণিকরা তা করে তবে তাদের ওপর একই রকম শাস্তি প্রদান করা হয়। তারা যদি কোন দ্রব্য ক্রয় করে তবে অন্য বণিকদের তুলনায় কম মূল্য দেবার চেষ্টা করে এবং অনেক সময় দ্রব্যের কোন মূল্য দেয় না। এ সময় আমি হস্তক্ষেপ করলে তারা অভিযোগ করে। আমি এ রকম অনেক অত্যাচারের কাহিনী বর্ণনা করতে পারি যা প্রত্যেকদিন বাঙালী গোমস্তরা করে থাকে। এ কারণে এ স্থান জনশূন্য হয়ে পড়ছে। প্রত্যেক দিন অনেকে এ বন্দর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছে। এ সেই বন্দর যেখানে একদিন প্রচুর পণ্য পাওয়া যেত; বর্তমানে সেখানে ব্যবহার্য তেমন কিছু পাওয়া যায় না। তাদের পিয়নেরা গরিবদের ওপর শক্তি প্রয়োগ করে। জমিদারেরা যদি বাধা দেয় তবে তাদের প্রতি একই রকম ব্যবহার করার ভয় দেখানো হয়। পূর্বে জনতার দরবারে বিচার পাওয়া যেত। বর্তমানে প্রত্যেক গোমস্তা বিচারক হয়েছে এবং প্রত্যেক বিচারালয়ে পরিণত হয়েছে। তারা জমিদারদের জরিমানা করে টাকা আদায় করে এ বলে যে, তাদের পিয়নের সাথে ঝগড়া হয়েছে বা তাদের টাকা পয়সা নিজেরা আত্মসাত করে বলে যে, তাদের ডাকাতি হয়েছে। আমার বিশ্বাস কোন গোমস্তার ক্ষমতা এত বেশি হয়নি যে, তারা সরকারের সাথে যা খুশি তাই করবে। গোমস্তাদের এ সকল ব্যবহারের কথা জানিয়ে আপনাকে এ অনুরোধ করছি, যদি আমি আপনার আদেশ কথা কার্যকর করি তবে আমি নির্দোষ থাকব। শ্রদ্ধা জানিয়ে শেষ করছি।”  
 
আমি তাদের কোথায় বাধা দিয়েছি তা আপনাকে জানাচ্ছি। অতীতে এ স্থান (বাকেরগঞ্জ) একটি বিখ্যাত বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল। কিন্তু বর্তমানে নি¤েœর কার্যাবলীর জন্য বানিজ্য ধ্বংস হতে যাচ্ছে। যখন একজন বণিক তার গোমস্তাকে একানে ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য পাঠায়, তখন সে নিজকে এমন শক্তিশালী মনে করে যে, স্থানীয় জনগণ তার পণ্য ক্রয় করতে বা তাদের পণ্য তার নিকট বিক্রি করতে বাধ্য। কেউ অস্বীকার করলে (যখন তার ক্ষমতা থাকে না) তাকে বেত্রাঘাত করা হয়। অথবা তখনই তাকে বন্দী করা হয়। তারা বাধ্য থাকলেও এখানে শেষ হয় না। দ্বিতীয়বার শক্তি প্রয়োগ করে সকল প্রকার বাণিজ্য নিজেরা দখল করে নেয়। তারা যে সকল পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করে তা অন্য কোন ব্যবসায়ী ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে না। যদি দেশীয় বণিকরা তা করে তবে তাদের ওপর একই রকম শাস্তি প্রদান করা হয়। তারা যদি কোন দ্রব্য ক্রয় করে তবে অন্য বণিকদের তুলনায় কম মূল্য দেবার চেষ্টা করে এবং অনেক সময় দ্রব্যের কোন মূল্য দেয় না। এ সময় আমি হস্তক্ষেপ করলে তারা অভিযোগ করে। আমি এ রকম অনেক অত্যাচারের কাহিনী বর্ণনা করতে পারি যা প্রত্যেকদিন বাঙালী গোমস্তরা করে থাকে। এ কারণে এ স্থান জনশূন্য হয়ে পড়ছে। প্রত্যেক দিন অনেকে এ বন্দর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছে। এ সেই বন্দর যেখানে একদিন প্রচুর পণ্য পাওয়া যেত; বর্তমানে সেখানে ব্যবহার্য তেমন কিছু পাওয়া যায় না। তাদের পিয়নেরা গরিবদের ওপর শক্তি প্রয়োগ করে। জমিদারেরা যদি বাধা দেয় তবে তাদের প্রতি একই রকম ব্যবহার করার ভয় দেখানো হয়। পূর্বে জনতার দরবারে বিচার পাওয়া যেত। বর্তমানে প্রত্যেক গোমস্তা বিচারক হয়েছে এবং প্রত্যেক বিচারালয়ে পরিণত হয়েছে। তারা জমিদারদের জরিমানা করে টাকা আদায় করে এ বলে যে, তাদের পিয়নের সাথে ঝগড়া হয়েছে বা তাদের টাকা পয়সা নিজেরা আত্মসাত করে বলে যে, তাদের ডাকাতি হয়েছে। আমার বিশ্বাস কোন গোমস্তার ক্ষমতা এত বেশি হয়নি যে, তারা সরকারের সাথে যা খুশি তাই করবে। গোমস্তাদের এ সকল ব্যবহারের কথা জানিয়ে আপনাকে এ অনুরোধ করছি, যদি আমি আপনার আদেশ কথা কার্যকর করি তবে আমি নির্দোষ থাকব। শ্রদ্ধা জানিয়ে শেষ করছি।”  
  
আগাবাকের খান ১৭৪০ খ্রিঃ বাকেরগঞ্জ বন্দর প্রতিষ্ঠা করেন।৭ বাকেরগঞ্জ বন্দর অল্প দিনের মধ্যে দক্ষিণবঙ্গের বিখ্যাত বন্দরে পরিণত হয়। ইংরেজ, ফরাসী ও পর্তুগীজ বণিকরা এ বন্দরে কুঠি নির্মাণ করে চাল, সুপারি ও লবণের ব্যবসা শুরু করে। গিরদে বন্দর (বরিশাল), সুতালরী ও বারৈকরণ প্রভৃতি বন্দরে দেশী-বিদেশী বণিকরা বানিজ্য করত। এ বন্দরগুলো ইউরোপীয় বণিকদের লুণ্ঠনের কেন্দ্র ছিল। তাদের অত্যাচারে নবাবের বাণিজ্য খাতের আয় হ্রাস পায় এবং দেশীয় ব্যবসা ধ্বংস হতে থাকে। তা ছাড়া স্থানীয় জমিদার ও জনগণ কোম্পানির নবাব মীর কাশিমের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। নবাব মীর কাশিম গভর্নর ভেন্সিটারটকে বাকেরগঞ্জের ইউরোপীয় বণিকদের অত্যাচার বন্ধের নির্দেশ দেন। ১৭৬২ খ্রিস্টাব্দে নবাব মীর কাশিমের নির্দেশে ভেন্সিটারট সাজর্ন্টে ব্রেগো ও মাত্র ৬ জন সিপাহীকে বাকেরগঞ্জ বন্দরে প্রেরণ করেন। প্রকৃতপক্ষে ভেন্সিটারট বাকেরগঞ্জ বন্দরের পরই গিরদে বন্দর বা বরিশাল ছিল ইংরেজ বণিকদের লুণ্ঠনের একটি কেন্দ্র। তারা নবাব মীর কাশিমের নির্দেশ উপেক্ষা করে এ অঞ্চলে বিনা শুল্কে ব্যবসা করত। বরিশাল বন্দরে ইংরেজ বণিকদের বিনা শুল্কে বাণিজ্য করার প্রতিবাদ জানিয়ে নবাব মীর কাশিম ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে ২৬ ডিসেম্বর গভর্নর ভেন্সিটারটের নিকট এক পত্র লেখেন:   
+
আগাবাকের খান ১৭৪০ খ্রিঃ বাকেরগঞ্জ বন্দর প্রতিষ্ঠা করেন।৩ বাকেরগঞ্জ বন্দর অল্প দিনের মধ্যে দক্ষিণবঙ্গের বিখ্যাত বন্দরে পরিণত হয়। ইংরেজ, ফরাসী ও পর্তুগীজ বণিকরা এ বন্দরে কুঠি নির্মাণ করে চাল, সুপারি ও লবণের ব্যবসা শুরু করে। গিরদে বন্দর (বরিশাল), সুতালরী ও বারৈকরণ প্রভৃতি বন্দরে দেশী-বিদেশী বণিকরা বানিজ্য করত। এ বন্দরগুলো ইউরোপীয় বণিকদের লুণ্ঠনের কেন্দ্র ছিল। তাদের অত্যাচারে নবাবের বাণিজ্য খাতের আয় হ্রাস পায় এবং দেশীয় ব্যবসা ধ্বংস হতে থাকে। তা ছাড়া স্থানীয় জমিদার ও জনগণ কোম্পানির নবাব মীর কাশিমের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। নবাব মীর কাশিম গভর্নর ভেন্সিটারটকে বাকেরগঞ্জের ইউরোপীয় বণিকদের অত্যাচার বন্ধের নির্দেশ দেন। ১৭৬২ খ্রিস্টাব্দে নবাব মীর কাশিমের নির্দেশে ভেন্সিটারট সাজর্ন্টে ব্রেগো ও মাত্র ৬ জন সিপাহীকে বাকেরগঞ্জ বন্দরে প্রেরণ করেন। প্রকৃতপক্ষে ভেন্সিটারট বাকেরগঞ্জ বন্দরের পরই গিরদে বন্দর বা বরিশাল ছিল ইংরেজ বণিকদের লুণ্ঠনের একটি কেন্দ্র। তারা নবাব মীর কাশিমের নির্দেশ উপেক্ষা করে এ অঞ্চলে বিনা শুল্কে ব্যবসা করত। বরিশাল বন্দরে ইংরেজ বণিকদের বিনা শুল্কে বাণিজ্য করার প্রতিবাদ জানিয়ে নবাব মীর কাশিম ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে ২৬ ডিসেম্বর গভর্নর ভেন্সিটারটের নিকট এক পত্র লেখেন:   
  
 
The following extract from a leter of the Nawab (Mir Kassim) to Mr. Vansittart gives another picture of the state of matters. It appears to have been written on 26th December 1762, and is printed at P. 167 of the 20 volume of Vansittart’s Narrative:  
 
The following extract from a leter of the Nawab (Mir Kassim) to Mr. Vansittart gives another picture of the state of matters. It appears to have been written on 26th December 1762, and is printed at P. 167 of the 20 volume of Vansittart’s Narrative:  
২০ নং লাইন: ২০ নং লাইন:
 
নবাব মীর কাশিমের উপরোক্ত পত্রখানা বরিশালের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ। তার পত্রে আমরা প্রথম বরিশালের নাম জানতে পারি। ইংরেজদের সাথে নবাব মীর কাশিমের যুদ্ধের অন্যতম কারণ ছিল বাংলাদেশ ইংরেজদের অবাধ বাণিজ্য। বরিশালে ইংরেজদের বিনা শুল্কে বাণিজ্য ও স্থানীয় বণিক এবং জনগণের ওপর অত্যাচার এ যুদ্ধকে ত্বরান্বিত করে। এ অঞ্চলের জনগণকে তিনি কোম্পানির শোষণের হাত থেকে রক্ষার জন্য পত্র লিখে ক্ষান্ত হননি। তিনি ইংরেজদের বিরুদ্ধে কয়েকটি যুদ্ধ করে পরাজয় বরণ করেন।  
 
নবাব মীর কাশিমের উপরোক্ত পত্রখানা বরিশালের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ। তার পত্রে আমরা প্রথম বরিশালের নাম জানতে পারি। ইংরেজদের সাথে নবাব মীর কাশিমের যুদ্ধের অন্যতম কারণ ছিল বাংলাদেশ ইংরেজদের অবাধ বাণিজ্য। বরিশালে ইংরেজদের বিনা শুল্কে বাণিজ্য ও স্থানীয় বণিক এবং জনগণের ওপর অত্যাচার এ যুদ্ধকে ত্বরান্বিত করে। এ অঞ্চলের জনগণকে তিনি কোম্পানির শোষণের হাত থেকে রক্ষার জন্য পত্র লিখে ক্ষান্ত হননি। তিনি ইংরেজদের বিরুদ্ধে কয়েকটি যুদ্ধ করে পরাজয় বরণ করেন।  
 
    
 
    
বুজুর্গ উমেদপুর বাকেরগঞ্জ জেলার একটি বৃহত্তর পরগণা। এ পরগণার জমিদার রাজবল্লভের পুত্র গোপাল কৃষ্ণের সাথে ইংরেজ বণিকদের বিরোধ দেখা দেয়। গোপাল কৃষ্ণের উকিলের একখানা পত্রে এ অঞ্চলে ইংরেজ বণিকদের অত্যাচারের কাহিনী ফুটে উঠেছে।৯
+
বুজুর্গ উমেদপুর বাকেরগঞ্জ জেলার একটি বৃহত্তর পরগণা। এ পরগণার জমিদার রাজবল্লভের পুত্র গোপাল কৃষ্ণের সাথে ইংরেজ বণিকদের বিরোধ দেখা দেয়। গোপাল কৃষ্ণের উকিলের একখানা পত্রে এ অঞ্চলে ইংরেজ বণিকদের অত্যাচারের কাহিনী ফুটে উঠেছে।৫
  
 
“কোম্পানি ফ্যাক্টরির কর্মচারী ও অনেক ইংরেজ বণিকদের অত্যাচারে সকল লোক পালিয়ে গেছে। ফ্যাক্টরির কর্মচারীরা ব্যবসায়ীদের নিকট হতে যা খুশি তা জোর করে কম মূল্যে নিয়ে যায়। স্থানীয় লোকের বাঁশ ও গাছপালা জোর করে কেটে নিয়ে যায়। কেউ অভিযোগ করলে তাকে শাস্তি প্রদান করা হয়। তারা জোর করে জনগণকে সুন্দরবনে নিয়ে যায় এবং তাদের মাত্র অর্ধেক মজুরি দেয়। তারা সুন্দরবনে জমি দখল করে লবণের তাফাল তৈরি করে। এ জন্য তারা কোন খাজনা দেয় না। তারা পরগণা ও কৃষকদের তাফালের লবণ অবরোধ করে নিয়ে যায়। তারা স্থানীয় জনগণকে তামাক, লবণ ও অন্যান্য পণ্য ক্রয় করতে বাধ্য করে। তারা যে ব্যবসা করে তার দেয় শুল্ক দিতে অস্বীকার করে। আমরা যদি কোম্পানির দস্তক বা ছাড়পত্র দেখতে চাই তা হলে তারা আমাদের বাঁশ দিয়ে পিটায়। তারা অনেকে ভান করে যে, তাদের ডাকাতি হয়েছে এর ক্ষতিপূরণের জন্য দাবি জানায়। তারা পিয়ন পাঠিয়ে দেয় এবং জরিমানা আদায় করে। তারা পিয়ন পাঠিয়ে পরগণার নায়েবকে বন্দী করে এবং পিয়নের জন্য প্রত্যেক দিন এক টাকা খরচ আদায় করে। তারা এ অঞ্চলের অনেক তালুকদার ও মহাজনদের জন্য পাহারাদার নিয়োগ করে। তারা আমাদের বাজারের কর আদায়ে বিরত রাখে এবং অনেক লোক ফ্যাক্টরিতে আশ্রয় নিয়ে খাজনা পরিশোধ করা এড়িয়ে যায়। এখান হতে চার দিনের যাত্রাপথে কোন লবণ তৈরি হয় না। তা সত্ত্বেও মিঃ ডবিন্স আমার পরগণায় দু’টি ফ্যাক্টরি প্রতিষ্ঠা করে সর্বপ্রকার ক্ষতি ও অত্যাচার করছে। তারা স্থানীয় জনগণের ও মহিলাদের ওপর পাশবিক অত্যাচার করছে। যে সকল স্থানে আজ পর্যন্ত কেউ যায়নি সেখানে তার কারখানা নির্মাণ করছে এবং স্থানীয় অধিবাসীদের তাড়িয়ে দিচ্ছে। তারা অনেকের নিকট হতে পাঁচ এবং দশ বছরের পাওনা আদায় করে।”
 
“কোম্পানি ফ্যাক্টরির কর্মচারী ও অনেক ইংরেজ বণিকদের অত্যাচারে সকল লোক পালিয়ে গেছে। ফ্যাক্টরির কর্মচারীরা ব্যবসায়ীদের নিকট হতে যা খুশি তা জোর করে কম মূল্যে নিয়ে যায়। স্থানীয় লোকের বাঁশ ও গাছপালা জোর করে কেটে নিয়ে যায়। কেউ অভিযোগ করলে তাকে শাস্তি প্রদান করা হয়। তারা জোর করে জনগণকে সুন্দরবনে নিয়ে যায় এবং তাদের মাত্র অর্ধেক মজুরি দেয়। তারা সুন্দরবনে জমি দখল করে লবণের তাফাল তৈরি করে। এ জন্য তারা কোন খাজনা দেয় না। তারা পরগণা ও কৃষকদের তাফালের লবণ অবরোধ করে নিয়ে যায়। তারা স্থানীয় জনগণকে তামাক, লবণ ও অন্যান্য পণ্য ক্রয় করতে বাধ্য করে। তারা যে ব্যবসা করে তার দেয় শুল্ক দিতে অস্বীকার করে। আমরা যদি কোম্পানির দস্তক বা ছাড়পত্র দেখতে চাই তা হলে তারা আমাদের বাঁশ দিয়ে পিটায়। তারা অনেকে ভান করে যে, তাদের ডাকাতি হয়েছে এর ক্ষতিপূরণের জন্য দাবি জানায়। তারা পিয়ন পাঠিয়ে দেয় এবং জরিমানা আদায় করে। তারা পিয়ন পাঠিয়ে পরগণার নায়েবকে বন্দী করে এবং পিয়নের জন্য প্রত্যেক দিন এক টাকা খরচ আদায় করে। তারা এ অঞ্চলের অনেক তালুকদার ও মহাজনদের জন্য পাহারাদার নিয়োগ করে। তারা আমাদের বাজারের কর আদায়ে বিরত রাখে এবং অনেক লোক ফ্যাক্টরিতে আশ্রয় নিয়ে খাজনা পরিশোধ করা এড়িয়ে যায়। এখান হতে চার দিনের যাত্রাপথে কোন লবণ তৈরি হয় না। তা সত্ত্বেও মিঃ ডবিন্স আমার পরগণায় দু’টি ফ্যাক্টরি প্রতিষ্ঠা করে সর্বপ্রকার ক্ষতি ও অত্যাচার করছে। তারা স্থানীয় জনগণের ও মহিলাদের ওপর পাশবিক অত্যাচার করছে। যে সকল স্থানে আজ পর্যন্ত কেউ যায়নি সেখানে তার কারখানা নির্মাণ করছে এবং স্থানীয় অধিবাসীদের তাড়িয়ে দিচ্ছে। তারা অনেকের নিকট হতে পাঁচ এবং দশ বছরের পাওনা আদায় করে।”
  
কোম্পানির বণিক ও তাদের কর্মচারীরা যখন শোষণ ও অত্যাচারের শেষ সীমা ছাড়িয়ে যায় তখন বরিশালের বিভিন্ন স্থানে কৃষকরা সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। বাংলাদেশের মধ্যে বরিশালে প্রথম কৃষক বিদ্রোহ দেখা দেয়। ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের পরপরই একদল কৃষক রাজবল্লভকে রাজস্ব প্রদানে অস্বীকার করে। তাদের দমন করার জন্য রাজবল্লভ সশ্রস্ত্র পর্তুগীজদের নিয়োগ করে। এ জেলার বিদ্রোহী কৃষকরা ইংরেজদের বাণিজ্য জাহাজ ও কুঠি আক্রমণ করে এবং অনেক ইউরোপীয়কে হত্যা করে। গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেষ্টিংসের এক বিবরণে দেখা যায় ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে একদল ফকির বরিশালের ইংরেজ রেসিডেন্টের কুঠি আক্রমণ করে।১০ কিন্তু বিদ্রোহীরা ইংরেজ, কুঠি দখল করতে ব্যর্থ হয়। ১৭৬৪ খ্রিঃ বিদ্রোহীরা বাকেরগঞ্জ বন্দরের নিকট ইংরেজ বণিক ক্যাপ্টেন রোজের বাণিজ্যতরী আক্রমণ করে এবং তাকে হত্যা করে। গভর্নর ভেন্সিটারট নবাব মীর জাফর আলী খানকে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দের ১৪ নভেম্বর এক পত্র লেখেন১১-
+
কোম্পানির বণিক ও তাদের কর্মচারীরা যখন শোষণ ও অত্যাচারের শেষ সীমা ছাড়িয়ে যায় তখন বরিশালের বিভিন্ন স্থানে কৃষকরা সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। বাংলাদেশের মধ্যে বরিশালে প্রথম কৃষক বিদ্রোহ দেখা দেয়। ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের পরপরই একদল কৃষক রাজবল্লভকে রাজস্ব প্রদানে অস্বীকার করে। তাদের দমন করার জন্য রাজবল্লভ সশ্রস্ত্র পর্তুগীজদের নিয়োগ করে। এ জেলার বিদ্রোহী কৃষকরা ইংরেজদের বাণিজ্য জাহাজ ও কুঠি আক্রমণ করে এবং অনেক ইউরোপীয়কে হত্যা করে। গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেষ্টিংসের এক বিবরণে দেখা যায় ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে একদল ফকির বরিশালের ইংরেজ রেসিডেন্টের কুঠি আক্রমণ করে।৬ কিন্তু বিদ্রোহীরা ইংরেজ, কুঠি দখল করতে ব্যর্থ হয়। ১৭৬৪ খ্রিঃ বিদ্রোহীরা বাকেরগঞ্জ বন্দরের নিকট ইংরেজ বণিক ক্যাপ্টেন রোজের বাণিজ্যতরী আক্রমণ করে এবং তাকে হত্যা করে। গভর্নর ভেন্সিটারট নবাব মীর জাফর আলী খানকে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দের ১৪ নভেম্বর এক পত্র লেখেন৭-
  
 
“আপনার সাথে আলাপের সময় ইতোমধ্যে আমি আপনাকে জানিয়েছি যে, যখন মিঃ রোজ নামে একজন ইংরেজ ভদ্রলোক টাকা ও পণ্যদ্রব্য নিয়ে নৌকায় ভ্রমণ করেছিল, তখন নৌকার লোকেরা বাকেরগঞ্জের নিকট তাকে হত্যা করে এবং তার টাকা ও পণ্যদ্রব্য নিয়ে যায়। তারা সিতারামের জমিদারীতে আশ্রয় নিয়েছে। এ ঘটনা তদন্তের জন্য আমি একজন ইংরেজকে উক্ত জমিদারের নিকট পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি তাকে কোন সম্মান দেখাননি। সুতরাং আপনার অবগতির জন্য আমি লুণ্ঠিত মাল ও টাকার হিসাব সংযোজন করে দিচ্ছি। আপনি অনুগ্রহ করে ঢাকার নায়েবকে লিখিত নির্দেশ দেবেন যে, তিনি যেন জমিদারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং দোষী ব্যক্তিদের এমন শাস্তি দিতে বলেন যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়। বাকেরগঞ্জের চারপাশে খুন ও ডাকাতির সংখ্যা দিন দিন এত বৃদ্ধি পাচ্ছে যে, ব্যবসায়ীরা এ অঞ্চল হয়ে যাতায়াত করতে ভয় পায়। সুতরাং আপনি অনুগ্রহ করে ঢাকার নায়েবকে নির্দেশ দেবেন যে, তিনি যেন ফ্যাক্টরির সিপাহী এবং নিজস্ব লোকদের পাঠিয়ে হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে কড়া শাস্তি দেন তা হলে ব্যবসায়ীরা খুব উপকৃত হবে।  
 
“আপনার সাথে আলাপের সময় ইতোমধ্যে আমি আপনাকে জানিয়েছি যে, যখন মিঃ রোজ নামে একজন ইংরেজ ভদ্রলোক টাকা ও পণ্যদ্রব্য নিয়ে নৌকায় ভ্রমণ করেছিল, তখন নৌকার লোকেরা বাকেরগঞ্জের নিকট তাকে হত্যা করে এবং তার টাকা ও পণ্যদ্রব্য নিয়ে যায়। তারা সিতারামের জমিদারীতে আশ্রয় নিয়েছে। এ ঘটনা তদন্তের জন্য আমি একজন ইংরেজকে উক্ত জমিদারের নিকট পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি তাকে কোন সম্মান দেখাননি। সুতরাং আপনার অবগতির জন্য আমি লুণ্ঠিত মাল ও টাকার হিসাব সংযোজন করে দিচ্ছি। আপনি অনুগ্রহ করে ঢাকার নায়েবকে লিখিত নির্দেশ দেবেন যে, তিনি যেন জমিদারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং দোষী ব্যক্তিদের এমন শাস্তি দিতে বলেন যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়। বাকেরগঞ্জের চারপাশে খুন ও ডাকাতির সংখ্যা দিন দিন এত বৃদ্ধি পাচ্ছে যে, ব্যবসায়ীরা এ অঞ্চল হয়ে যাতায়াত করতে ভয় পায়। সুতরাং আপনি অনুগ্রহ করে ঢাকার নায়েবকে নির্দেশ দেবেন যে, তিনি যেন ফ্যাক্টরির সিপাহী এবং নিজস্ব লোকদের পাঠিয়ে হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে কড়া শাস্তি দেন তা হলে ব্যবসায়ীরা খুব উপকৃত হবে।  
  
গভর্নর ভেন্সিটারটের পত্র পেয়ে নবাব মীর জাফর ঢাকার নায়েব আজিম জেসারত খানকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেন। জেসারত খান একদল সিপাহীকে বাকেরগঞ্জে প্রেরণ করেন। তারা স্থানীয় জনগণের ওপর অত্যাচার করে এবং কোম্পানির সন্তুষ্টি লাভের জন্য অনেক বিদ্রোহীকে গ্রেফতার করে। তখন বাকেরগঞ্জের জমিদার ছিলেন রাজবল্লভের পুত্র গোপাল কৃষ্ণ সেন। নবাব তাকে ক্ষতিপূরণ প্রদানে বাধ্য করেন। ইংরেজরা বরিশালের বিদ্রোহীদের ডাকাত বলে আখ্যায়িত করে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! হাজার হাজার মাইল দূর থেকে এসে ইংরেজ বণিকরা বরিশালে প্রকাশ্যে দস্যুবৃত্তি করত। তাদের লুণ্ঠনের যারা বিরোধিতা করেছে তারা ডাকাত বলে চিহ্নিত হয়। ইংরেজ ও তাদের অনুগত নবাবের কঠোর ব্যবস্থা অবলম্বন সত্ত্বেও এ অঞ্চলের বিদ্রোহী কৃষকরা তাদের আক্রমণ অব্যাহত রাখে। সিলেট জেলার ইংরেজ কালেক্টর মিঃ উইলিস যখন বাকেরগঞ্জ নদীপথ অতিক্রম করেন, তখন বিদ্রোহীরা তাকে আক্রমণ করে। তিনি তাড়াতাড়ি নৌকা তীরে রেখে পালাতে সক্ষম হন। ঢাকার কালেক্টর মিঃ ডে (১৭৮৫-৯০) বিদ্রোহীদের দমন করার জন্য সিপাহী প্রেরণ করেন। তারা মিঃ উইলিসের আক্রমণকারীদের অনেককে গ্রেফতার করে। আক্রমণকারীরা ১৮ মাস ধরে সুন্দরবনাঞ্চলে ঘুরে বেড়ায়। মিঃ ডের প্রেরিন সশস্ত্র নৌকাগুলো তাদের সন্দ্বীপ ও সমুদ্রোপকূল পর্যন্ত তাড়িয়ে নিয়ে যায়। তারা সমুদ্রের জলোচ্ছাসে প্রায় ডুবে যাচ্ছিল। দেড় দিন পর্যন্ত উভয় দলের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।১২ তারা শেষ প র্যন্ত ধরা পড়ে এবং তাদের কঠোর শাস্তির জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। ১৭৭৯ খ্রিঃ নলচিড়ার জমিদার সৈয়দ ইমামউদ্দিন ও পলাশী থেকে আগত নবাব সিরাজউদ্দৌলার একদল সৈন্যের সাথে ইংরেজদের শরিকলের নিকট যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে বিদ্রোহীরা পরাজয় বরণ করে। রাজস্ব দিতে অস্বীকার করলে ওয়ারেন হেষ্টিংস ১৭৭৭ খ্রিঃ উত্তর শাহবাজপুরের জমিদার লালরাম ও নলচিড়ার জমিদার সৈয়দ ইমামউদ্দিনকে গ্রেফতার করে কলিকাতায় নিয়ে যায়। ইদিলপুরের জমিদার রামকান্ত ঢাকার সোনারগাঁওয়ের ইংরেজ ফ্যাক্টরি আক্রমণ করেছিল। পরে রামকান্তকে বন্দী করে বাকেরগঞ্জ, ঢাকা ও মুর্শিদাবাদ জেলখানায় আটক করে রাখা হয়।  
+
গভর্নর ভেন্সিটারটের পত্র পেয়ে নবাব মীর জাফর ঢাকার নায়েব আজিম জেসারত খানকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেন। জেসারত খান একদল সিপাহীকে বাকেরগঞ্জে প্রেরণ করেন। তারা স্থানীয় জনগণের ওপর অত্যাচার করে এবং কোম্পানির সন্তুষ্টি লাভের জন্য অনেক বিদ্রোহীকে গ্রেফতার করে। তখন বাকেরগঞ্জের জমিদার ছিলেন রাজবল্লভের পুত্র গোপাল কৃষ্ণ সেন। নবাব তাকে ক্ষতিপূরণ প্রদানে বাধ্য করেন। ইংরেজরা বরিশালের বিদ্রোহীদের ডাকাত বলে আখ্যায়িত করে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! হাজার হাজার মাইল দূর থেকে এসে ইংরেজ বণিকরা বরিশালে প্রকাশ্যে দস্যুবৃত্তি করত। তাদের লুণ্ঠনের যারা বিরোধিতা করেছে তারা ডাকাত বলে চিহ্নিত হয়। ইংরেজ ও তাদের অনুগত নবাবের কঠোর ব্যবস্থা অবলম্বন সত্ত্বেও এ অঞ্চলের বিদ্রোহী কৃষকরা তাদের আক্রমণ অব্যাহত রাখে। সিলেট জেলার ইংরেজ কালেক্টর মিঃ উইলিস যখন বাকেরগঞ্জ নদীপথ অতিক্রম করেন, তখন বিদ্রোহীরা তাকে আক্রমণ করে। তিনি তাড়াতাড়ি নৌকা তীরে রেখে পালাতে সক্ষম হন। ঢাকার কালেক্টর মিঃ ডে (১৭৮৫-৯০) বিদ্রোহীদের দমন করার জন্য সিপাহী প্রেরণ করেন। তারা মিঃ উইলিসের আক্রমণকারীদের অনেককে গ্রেফতার করে। আক্রমণকারীরা ১৮ মাস ধরে সুন্দরবনাঞ্চলে ঘুরে বেড়ায়। মিঃ ডের প্রেরিন সশস্ত্র নৌকাগুলো তাদের সন্দ্বীপ ও সমুদ্রোপকূল পর্যন্ত তাড়িয়ে নিয়ে যায়। তারা সমুদ্রের জলোচ্ছাসে প্রায় ডুবে যাচ্ছিল। দেড় দিন পর্যন্ত উভয় দলের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।৮ তারা শেষ প র্যন্ত ধরা পড়ে এবং তাদের কঠোর শাস্তির জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। ১৭৭৯ খ্রিঃ নলচিড়ার জমিদার সৈয়দ ইমামউদ্দিন ও পলাশী থেকে আগত নবাব সিরাজউদ্দৌলার একদল সৈন্যের সাথে ইংরেজদের শরিকলের নিকট যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে বিদ্রোহীরা পরাজয় বরণ করে। রাজস্ব দিতে অস্বীকার করলে ওয়ারেন হেষ্টিংস ১৭৭৭ খ্রিঃ উত্তর শাহবাজপুরের জমিদার লালরাম ও নলচিড়ার জমিদার সৈয়দ ইমামউদ্দিনকে গ্রেফতার করে কলিকাতায় নিয়ে যায়। ইদিলপুরের জমিদার রামকান্ত ঢাকার সোনারগাঁওয়ের ইংরেজ ফ্যাক্টরি আক্রমণ করেছিল। পরে রামকান্তকে বন্দী করে বাকেরগঞ্জ, ঢাকা ও মুর্শিদাবাদ জেলখানায় আটক করে রাখা হয়।  
  
 
বরিশালের দক্ষিণ অঞ্চলে ইংরেজ বণিক ও তাদের কর্মচারীরা লবণ চাষী ও কৃষকদের ওপর অত্যাচার করে। বুজুর্গ উমেদপুরের তালকুদরের করাপুরের মোহাম্মদ হায়াত ও নিয়ামতির আইন উদ্দিন সিকদার  কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ঢাকার নায়েব নাজিব ও কোম্পানির সিপাহীরা ১৭৮৫ খ্রিঃ আইনউদ্দিন সিকদারের বাড়ি আক্রমণ করে তাকে ধরে নিয়ে যায় এবং বিষখালী নদীর মধ্যে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। মোহাম্মদ হায়াতকে গ্রেফতার করে কারাদ- দেয়া হয়। ১৭৮৭ খ্রিঃ বন্যার ফলে বরিশালে এক ভীষণ দুর্ভিক্ষ হয় এবং হাজার হাজার লোক প্রাণত্যাগ করে। এ সত্ত্বেও ইংরেজদের শোষণ ও অত্যাচার চলতে থাকে। সুগন্ধিয়ার ফকির বালকী শাহ একদল বিদ্রোহী নিয়ে ইংরেজদের রাজস্ব দেয়া বন্ধ করে দেয় এবং ঘোষণা করে ইংরেজ রাজত্ব শেষ। ১৭৯১ খ্রিঃ একদল সিপাহী বালকী শাহের দুর্গ আক্রমণ করে তিনি পরাজিত হয়ে পালিয়ে যান। এমনিভাবে বরিশালের তথাকথিত ডাকাত, যারা ছিল দেশপ্রেমিক এবং বিদ্রোহী তারা পলাশীর পর ইংরেজ শাসন নীরবে মেনে নেয়নি। ইংরেজ বণিকরা বরিশালে প্রথম ব্যবসা-বাণিজ্য ও রাজস্বের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করে। এ সময়ে বরিশালের স্বাধীনচেতা বিদ্রোহী কৃষকরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রবল বাধা সৃষ্টি করে। বিদ্রোহীদের সমূলে ধ্বংস করার জন্য কোম্পানি সরকার বাকেরগঞ্জে সিভিল জজ ও সুন্দরবন কমিশনার নিয়োগ করে। পরিশেষে তারা বাকেরগঞ্জকে ১৭৯৭ খ্রি. জেলায় পরিণত করতে বাধ্য হয়। ১৭৫৭ খ্রিঃ হতে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বরিশালের ইতিহাস এ জেলার জনগণের ইংরেজদের বিরুদ্ধে সগ্রামের ইতিহাস। দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বরিশালকে দখলে নিতে তীব্র বাধার সম্মুখীন হয়। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত এর মাধ্যমে এ জেলায় একদল অনুগত জমিদার সৃষ্টির ফলে ইংরেজদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ হ্রাস পেতে থাকে।  
 
বরিশালের দক্ষিণ অঞ্চলে ইংরেজ বণিক ও তাদের কর্মচারীরা লবণ চাষী ও কৃষকদের ওপর অত্যাচার করে। বুজুর্গ উমেদপুরের তালকুদরের করাপুরের মোহাম্মদ হায়াত ও নিয়ামতির আইন উদ্দিন সিকদার  কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ঢাকার নায়েব নাজিব ও কোম্পানির সিপাহীরা ১৭৮৫ খ্রিঃ আইনউদ্দিন সিকদারের বাড়ি আক্রমণ করে তাকে ধরে নিয়ে যায় এবং বিষখালী নদীর মধ্যে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। মোহাম্মদ হায়াতকে গ্রেফতার করে কারাদ- দেয়া হয়। ১৭৮৭ খ্রিঃ বন্যার ফলে বরিশালে এক ভীষণ দুর্ভিক্ষ হয় এবং হাজার হাজার লোক প্রাণত্যাগ করে। এ সত্ত্বেও ইংরেজদের শোষণ ও অত্যাচার চলতে থাকে। সুগন্ধিয়ার ফকির বালকী শাহ একদল বিদ্রোহী নিয়ে ইংরেজদের রাজস্ব দেয়া বন্ধ করে দেয় এবং ঘোষণা করে ইংরেজ রাজত্ব শেষ। ১৭৯১ খ্রিঃ একদল সিপাহী বালকী শাহের দুর্গ আক্রমণ করে তিনি পরাজিত হয়ে পালিয়ে যান। এমনিভাবে বরিশালের তথাকথিত ডাকাত, যারা ছিল দেশপ্রেমিক এবং বিদ্রোহী তারা পলাশীর পর ইংরেজ শাসন নীরবে মেনে নেয়নি। ইংরেজ বণিকরা বরিশালে প্রথম ব্যবসা-বাণিজ্য ও রাজস্বের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করে। এ সময়ে বরিশালের স্বাধীনচেতা বিদ্রোহী কৃষকরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রবল বাধা সৃষ্টি করে। বিদ্রোহীদের সমূলে ধ্বংস করার জন্য কোম্পানি সরকার বাকেরগঞ্জে সিভিল জজ ও সুন্দরবন কমিশনার নিয়োগ করে। পরিশেষে তারা বাকেরগঞ্জকে ১৭৯৭ খ্রি. জেলায় পরিণত করতে বাধ্য হয়। ১৭৫৭ খ্রিঃ হতে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বরিশালের ইতিহাস এ জেলার জনগণের ইংরেজদের বিরুদ্ধে সগ্রামের ইতিহাস। দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বরিশালকে দখলে নিতে তীব্র বাধার সম্মুখীন হয়। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত এর মাধ্যমে এ জেলায় একদল অনুগত জমিদার সৃষ্টির ফলে ইংরেজদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ হ্রাস পেতে থাকে।  
  
 
ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি জলে-স্থলে বরিশালকে দখল করে ক্ষান্ত হননি। অনেক ইংরেজ ও পর্তুগীজ স্থায়ীভাবে বাণিজ্য ও জমিদারী করার জন্য বরিশালে বসতি স্থাপন করে। ইউরোপীয় বণিকদের মধ্যে পর্তুগীজরা এ জেলায় প্রথম বসতি স্থাপন করে। পাদ্রী শিবপুরে কয়েক শ’ পর্তুগীজ বাস করত। এ গ্রামের ডি সালভা একজন বিখ্যাত ব্যবসায়ী ও জমিদার ছিলেন। এখনও কযেক ঘর পর্তুগীজ পাদ্রী শিবপুরে বাস করছে। পলাশীর পরে বাকেরগঞ্জ, ঝালকাঠি, বারৈকরণ ও বরিশালে ইউরোপীয় বণিকদের বাণিজ্য কুঠি প্রতিষ্ঠিত হয়। ওয়ারেন হেষ্টিংসের পত্রে দেখা যায় বরিশাল বন্দরে ইংরেজদের বাণিজ্য কুঠি ও ফ্যাক্টরি ছিল। বাকেরগঞ্জে শ্রীমন্ত খালের তীরে ইংরেজ ও ফরাসী বণিকদের ফ্যাক্টরিও ছিল। ইংরেজ বণিক মিঃ ডবিনসের বাকেরগঞ্জে দু’টি ফ্যাক্টরি ছিল। ফ্যাক্টরিতে কাপড় ও লবণ তৈরি হতো। বারৈকরণে কোম্পানির স্থায়ী বাণিজ্য কর্মচারী বাস করত। ঝালকাঠি বন্দরে লবণ এজেন্ট মিঃ উড ও ইউয়াট বাস করত। ইংল্যান্ডের অন্তর্গত স্কটল্যান্ডের অধিবাসী মিঃ উইলিয়ম রবিনসন ১৭৬৬ খ্রিঃ জুন মাসে ফ্যালমাউথ জাহাজযোগে সুন্দরবনে পৌঁছলে ঝড়ে তার জাহাজ ডুবে যায়। রবিনসন অতি কষ্টে নলছিটি থানার মধুপুরে এসে ব্যবসা শুরু করে। তিনি বরিশালে প্রথম স্থায়ী ইংরেজ বাসিন্দা। বরিশাল শহরের প্যারো পরিবার তার বংশধর ছিল। তারপর মিঃ গিল বারৈকরণে আগমন করেন। তিনি চালের ব্যবসা ও নৌকা নির্মাণ করাতেন। সিভিল সার্জেন্ট হার্পার ও গিল একত্রে নৌকা নির্মাণ করাতেন এবং তারা ১৭৯৪ খ্রিঃ নৌকা নির্মাণের জন্য এন্টয়েন পিয়াজি নামে একজন ফ্রেঞ্চ কর্মচারী নিয়োগ করেন। ব্রাউন পরিবার তার বংশধর ছিল। ন্যাথানিয়েল মনরো স্কটল্যান্ডের অধিবাসী ছিলেন। ১৭৮৬ খ্রিঃ তিনি ২৪ পরগণার লবণ এজেন্টের সহকারী ছিলেন। তিনি গভর্নর জেনারেলের অনুমতি নিয়ে ঝালকাঠিতে নীল চাষ শুরু করেন। পর্তুগীজ, ইংরেজ ও আর্মেনীয় ব্যতীয়ত ফরাসীদের বাকেরগঞ্জ বন্দরে ব্যবসা ছিল। ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জানুয়ারি ফরাসীদের সম্পর্কে এক প্রতিবেদনে দেখা যায় ফরাসী বণিকরা বাকেরগঞ্জে চাল ও সুতার ব্যবসা করত। বাকেরগঞ্জে তাদের ২/৩ জন সিপাহী ও গোমস্তা ছিল। ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দের পর হতে বরিশাল ইংরেজদের উপনিবেশভুক্ত হয় এবং অতি দ্রুতগতিতে এ অঞ্চলে তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
 
ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি জলে-স্থলে বরিশালকে দখল করে ক্ষান্ত হননি। অনেক ইংরেজ ও পর্তুগীজ স্থায়ীভাবে বাণিজ্য ও জমিদারী করার জন্য বরিশালে বসতি স্থাপন করে। ইউরোপীয় বণিকদের মধ্যে পর্তুগীজরা এ জেলায় প্রথম বসতি স্থাপন করে। পাদ্রী শিবপুরে কয়েক শ’ পর্তুগীজ বাস করত। এ গ্রামের ডি সালভা একজন বিখ্যাত ব্যবসায়ী ও জমিদার ছিলেন। এখনও কযেক ঘর পর্তুগীজ পাদ্রী শিবপুরে বাস করছে। পলাশীর পরে বাকেরগঞ্জ, ঝালকাঠি, বারৈকরণ ও বরিশালে ইউরোপীয় বণিকদের বাণিজ্য কুঠি প্রতিষ্ঠিত হয়। ওয়ারেন হেষ্টিংসের পত্রে দেখা যায় বরিশাল বন্দরে ইংরেজদের বাণিজ্য কুঠি ও ফ্যাক্টরি ছিল। বাকেরগঞ্জে শ্রীমন্ত খালের তীরে ইংরেজ ও ফরাসী বণিকদের ফ্যাক্টরিও ছিল। ইংরেজ বণিক মিঃ ডবিনসের বাকেরগঞ্জে দু’টি ফ্যাক্টরি ছিল। ফ্যাক্টরিতে কাপড় ও লবণ তৈরি হতো। বারৈকরণে কোম্পানির স্থায়ী বাণিজ্য কর্মচারী বাস করত। ঝালকাঠি বন্দরে লবণ এজেন্ট মিঃ উড ও ইউয়াট বাস করত। ইংল্যান্ডের অন্তর্গত স্কটল্যান্ডের অধিবাসী মিঃ উইলিয়ম রবিনসন ১৭৬৬ খ্রিঃ জুন মাসে ফ্যালমাউথ জাহাজযোগে সুন্দরবনে পৌঁছলে ঝড়ে তার জাহাজ ডুবে যায়। রবিনসন অতি কষ্টে নলছিটি থানার মধুপুরে এসে ব্যবসা শুরু করে। তিনি বরিশালে প্রথম স্থায়ী ইংরেজ বাসিন্দা। বরিশাল শহরের প্যারো পরিবার তার বংশধর ছিল। তারপর মিঃ গিল বারৈকরণে আগমন করেন। তিনি চালের ব্যবসা ও নৌকা নির্মাণ করাতেন। সিভিল সার্জেন্ট হার্পার ও গিল একত্রে নৌকা নির্মাণ করাতেন এবং তারা ১৭৯৪ খ্রিঃ নৌকা নির্মাণের জন্য এন্টয়েন পিয়াজি নামে একজন ফ্রেঞ্চ কর্মচারী নিয়োগ করেন। ব্রাউন পরিবার তার বংশধর ছিল। ন্যাথানিয়েল মনরো স্কটল্যান্ডের অধিবাসী ছিলেন। ১৭৮৬ খ্রিঃ তিনি ২৪ পরগণার লবণ এজেন্টের সহকারী ছিলেন। তিনি গভর্নর জেনারেলের অনুমতি নিয়ে ঝালকাঠিতে নীল চাষ শুরু করেন। পর্তুগীজ, ইংরেজ ও আর্মেনীয় ব্যতীয়ত ফরাসীদের বাকেরগঞ্জ বন্দরে ব্যবসা ছিল। ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জানুয়ারি ফরাসীদের সম্পর্কে এক প্রতিবেদনে দেখা যায় ফরাসী বণিকরা বাকেরগঞ্জে চাল ও সুতার ব্যবসা করত। বাকেরগঞ্জে তাদের ২/৩ জন সিপাহী ও গোমস্তা ছিল। ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দের পর হতে বরিশাল ইংরেজদের উপনিবেশভুক্ত হয় এবং অতি দ্রুতগতিতে এ অঞ্চলে তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
 +
 +
১। Principles Heads of the History and Statistics of the Decca Division-Report on Bakerganj, H.C, Southerland.
 +
২। Vansittart’s Narrative-London, 1766, Vol-11, Page-111. Reprinted in the District of Bakerganj, its History and Statistics, H. Beveridge, Page-267-269.
 +
৩। আগাবাকের, পৃষ্ঠা-৩৯-৪১
 +
৪। The District of Bakergainj, Page-270
 +
৫। Mr. Long’s Selection, Page-408, Reprinted-in the district of Bakerganj. H. Beveridge, Page-86-87.
 +
৬। G.M. Ghose, Faqquir and Sanyasi Raids in Bengal, Page-73-74
 +
৭। Long’s Selection, Page-361, Reprinted in the District of Bakerganj, Page-272-273.
 +
৮। The District of Bakerganj, Page-273-274

২২:১৮, ১৩ জুন ২০১৭ তারিখের সংস্করণ

১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের পর অনেক ইংরেজ বণিক বাকেরগঞ্জ ও বারৈকরণে বাণিজ্য করতে আসে। বাকেরগঞ্জের জলপথ, চাল, লবণ ও সুপারি ইংরেজ বণিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তাই তারা এ অঞ্চলের বাণিজ্য বন্দর-বারৈকরণ, সুতালরী ও বাকেরগঞ্জ দখল করে নেয়। কথিত আছে যে রবার্ট ক্লাইভ নলছিটি থানার বারৈকরণ বন্দরে একবার এসেছিলেন। বারৈকরণে রাজবল্লভের জমিদারীর কাছারি ছিল। ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আমলে বারৈকরণে ইংরেজদের স্থায়ী বানিজ্য কর্মচারী (Commercial Resident) ) কেন্দ্র ছিল।১ ইউরোপীয় বণিকদের মধ্যে পর্তুগীজরা প্রথম বাকলা-চন্দ্রদ্বীপে আগমন করে। তারা ১৫৫৯ খ্রিঃ বাকলা রাজ্যে বর্তমান বাকেরগঞ্জ ও বরিশাল শহরে বসতি স্থাপন করে। ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭ শতকের শেষভাগে সুবাদার শায়েস্তা খানের সময় প্রথম বাকলায় বানিজ্য শুরু করে। তারা বরিশালের নদীপথে ঢাকা-কলিকাতা যাতায়াত করত। ঢাকা হতে পদ্মা, মেঘনা, আড়িয়াল খাঁ, সুগন্ধা, ধানসিঁড়ি, পিরোজপুরে দামোদর নদী, বলেশ্বর ও ভৈরব নদী হয়ে কলিকাতায় ইংরেজদের বাণিজ্য তরী যাতায়াত করত। পথে তারা বরিশালের গিরদে বন্দর, বাকেরগঞ্জ ও সুতালরী বন্দরে ব্যবসা করত। পলাশীর যুদ্ধের পর ইংরেজ বণিকরা বাকেরগঞ্জের বন্দরগুলো দখল করে নেয়। ইংরেজ বণিকরা দেশীয় বণিকদের ওপর অত্যাচার শুরু করে। তারা বিনা শুল্কে বাণিজ্য করার জন্য ছাড়পত্র বা দস্তক ব্যবহার কত। অথচ দেশীয় বণিকদের শুল্ক দিতে হতো। কোম্পানি ও তাদের কর্মচারীদের অত্যাচারে বাকেরগঞ্জ, সুতালরী ও বারৈকরণ বন্দর পূর্ব গৌরব হারিয়ে ফেলে এবং দেশীয় বণিকরা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যের বিরুদ্ধে বাংলার নবাব মীর কাশিম প্রতিবাদ জানান এবং এ নিয়ে তার ইংরেজদের সাথে যুদ্ধ হয়। বাকেরগঞ্জ বন্দরে ইংরেজ বণিক ও তাদের গোমস্তাদের অত্যাচার এত তীব্র ছিল যে, ১৭৬২ খ্রিঃ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাংলার গভর্নর ভেন্সিটারট এ অত্যাচার বন্ধ করার জন্য সার্জেন্ট ব্রেগোকে প্রেরণ করেন। মিঃ ব্রেগো ১৭৬২ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মে গভর্নর ভেন্সিটারটের নিকট বাকেরগঞ্জ বন্দরের সার্বিক পরিস্থিতি জানিয়ে এক পত্র লেখেন২-

”এ স্থানের (বাকেরগঞ্জ) পরিস্থিতির জন্য আমি আপনাকে ভেন্সিটারট) লিখতে বাধ্য হচ্ছি এবং ভবিষ্যতে কি ব্যবস্থ গ্রহণ করব সে জন্য আপনার উপদেশ চাচ্ছি।

আমার ওপর নির্দেশ ছিল যে, যদি কোন ইউরোপীয় বণিক বা তাদের কর্মচারী অত্যাচার করে তাহলে কোন রকম আপত্তি না শুনে তাদের যেন কলিকাতায় পাঠানো হয়। কঠোর নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও আমি ভদ্রলোকদের কয়েকজন গোমস্তাকে (যখনই কোন সাধারণ ঘটনা দেখা দেয়) শান্তভাবে কাজ করার জন্য ন¤্রভাবে অনুরোধ জানাই। বার বার নির্দেশ দেয়া সত্ত্বেও কোন কাজ হচ্ছে না। অধিকন্তু তারা তাদের মনিবদের নিকট লিখিত অভিযোগ করছে যে, আমি তাদেরকে দায়িত্ব পালনে বাধা দিচ্ছি এবং তাদের সাথে অন্যায় আচরণ করছি। ফলে কয়েকজন মনিব আমাকে আপত্তিকর পত্র দিয়ে ভীতি প্রদর্শন করেছে এবং বলছে যে, আমি যদি তাদের কর্মচারীদের বাধা দিই তা হলে তারা এমন প্রতিশোধ নেবে যাতে পরে আমাকে অনুশোচনা করতে হবে। তারা এ কথা বলে শেষ করেনি। তাদের গোমস্তারা এখানে প্রচার করছে যে, আমি যদি তাদের কাজে বাধা দিই তাহলে তারা একই রকম আচরণ করবে। তাদের এ আচরণের অনেক সত্য প্রমাণ আমার নিকট আচে।

আমি তাদের কোথায় বাধা দিয়েছি তা আপনাকে জানাচ্ছি। অতীতে এ স্থান (বাকেরগঞ্জ) একটি বিখ্যাত বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল। কিন্তু বর্তমানে নি¤েœর কার্যাবলীর জন্য বানিজ্য ধ্বংস হতে যাচ্ছে। যখন একজন বণিক তার গোমস্তাকে একানে ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য পাঠায়, তখন সে নিজকে এমন শক্তিশালী মনে করে যে, স্থানীয় জনগণ তার পণ্য ক্রয় করতে বা তাদের পণ্য তার নিকট বিক্রি করতে বাধ্য। কেউ অস্বীকার করলে (যখন তার ক্ষমতা থাকে না) তাকে বেত্রাঘাত করা হয়। অথবা তখনই তাকে বন্দী করা হয়। তারা বাধ্য থাকলেও এখানে শেষ হয় না। দ্বিতীয়বার শক্তি প্রয়োগ করে সকল প্রকার বাণিজ্য নিজেরা দখল করে নেয়। তারা যে সকল পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করে তা অন্য কোন ব্যবসায়ী ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে না। যদি দেশীয় বণিকরা তা করে তবে তাদের ওপর একই রকম শাস্তি প্রদান করা হয়। তারা যদি কোন দ্রব্য ক্রয় করে তবে অন্য বণিকদের তুলনায় কম মূল্য দেবার চেষ্টা করে এবং অনেক সময় দ্রব্যের কোন মূল্য দেয় না। এ সময় আমি হস্তক্ষেপ করলে তারা অভিযোগ করে। আমি এ রকম অনেক অত্যাচারের কাহিনী বর্ণনা করতে পারি যা প্রত্যেকদিন বাঙালী গোমস্তরা করে থাকে। এ কারণে এ স্থান জনশূন্য হয়ে পড়ছে। প্রত্যেক দিন অনেকে এ বন্দর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছে। এ সেই বন্দর যেখানে একদিন প্রচুর পণ্য পাওয়া যেত; বর্তমানে সেখানে ব্যবহার্য তেমন কিছু পাওয়া যায় না। তাদের পিয়নেরা গরিবদের ওপর শক্তি প্রয়োগ করে। জমিদারেরা যদি বাধা দেয় তবে তাদের প্রতি একই রকম ব্যবহার করার ভয় দেখানো হয়। পূর্বে জনতার দরবারে বিচার পাওয়া যেত। বর্তমানে প্রত্যেক গোমস্তা বিচারক হয়েছে এবং প্রত্যেক বিচারালয়ে পরিণত হয়েছে। তারা জমিদারদের জরিমানা করে টাকা আদায় করে এ বলে যে, তাদের পিয়নের সাথে ঝগড়া হয়েছে বা তাদের টাকা পয়সা নিজেরা আত্মসাত করে বলে যে, তাদের ডাকাতি হয়েছে। আমার বিশ্বাস কোন গোমস্তার ক্ষমতা এত বেশি হয়নি যে, তারা সরকারের সাথে যা খুশি তাই করবে। গোমস্তাদের এ সকল ব্যবহারের কথা জানিয়ে আপনাকে এ অনুরোধ করছি, যদি আমি আপনার আদেশ কথা কার্যকর করি তবে আমি নির্দোষ থাকব। শ্রদ্ধা জানিয়ে শেষ করছি।”

আগাবাকের খান ১৭৪০ খ্রিঃ বাকেরগঞ্জ বন্দর প্রতিষ্ঠা করেন।৩ বাকেরগঞ্জ বন্দর অল্প দিনের মধ্যে দক্ষিণবঙ্গের বিখ্যাত বন্দরে পরিণত হয়। ইংরেজ, ফরাসী ও পর্তুগীজ বণিকরা এ বন্দরে কুঠি নির্মাণ করে চাল, সুপারি ও লবণের ব্যবসা শুরু করে। গিরদে বন্দর (বরিশাল), সুতালরী ও বারৈকরণ প্রভৃতি বন্দরে দেশী-বিদেশী বণিকরা বানিজ্য করত। এ বন্দরগুলো ইউরোপীয় বণিকদের লুণ্ঠনের কেন্দ্র ছিল। তাদের অত্যাচারে নবাবের বাণিজ্য খাতের আয় হ্রাস পায় এবং দেশীয় ব্যবসা ধ্বংস হতে থাকে। তা ছাড়া স্থানীয় জমিদার ও জনগণ কোম্পানির নবাব মীর কাশিমের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। নবাব মীর কাশিম গভর্নর ভেন্সিটারটকে বাকেরগঞ্জের ইউরোপীয় বণিকদের অত্যাচার বন্ধের নির্দেশ দেন। ১৭৬২ খ্রিস্টাব্দে নবাব মীর কাশিমের নির্দেশে ভেন্সিটারট সাজর্ন্টে ব্রেগো ও মাত্র ৬ জন সিপাহীকে বাকেরগঞ্জ বন্দরে প্রেরণ করেন। প্রকৃতপক্ষে ভেন্সিটারট বাকেরগঞ্জ বন্দরের পরই গিরদে বন্দর বা বরিশাল ছিল ইংরেজ বণিকদের লুণ্ঠনের একটি কেন্দ্র। তারা নবাব মীর কাশিমের নির্দেশ উপেক্ষা করে এ অঞ্চলে বিনা শুল্কে ব্যবসা করত। বরিশাল বন্দরে ইংরেজ বণিকদের বিনা শুল্কে বাণিজ্য করার প্রতিবাদ জানিয়ে নবাব মীর কাশিম ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে ২৬ ডিসেম্বর গভর্নর ভেন্সিটারটের নিকট এক পত্র লেখেন:৪

The following extract from a leter of the Nawab (Mir Kassim) to Mr. Vansittart gives another picture of the state of matters. It appears to have been written on 26th December 1762, and is printed at P. 167 of the 20 volume of Vansittart’s Narrative:

“As the Company’s gomastahs make salt at Sundeep, & c., I desire you will write to them not to make any more there, but, like other merchants, to purchase it from the molunghies at the market price.”

“In the Parganas of Gopalpur and Dakhanbarpur [Dakhin Shahbapur], and other districts where salt is made, the people of the Company’s factory work the saltpans; and they take possession of all the salt which the molunghies of other parganas have made, by which means I suffer a very great loss. Moreover, they oblige the ryots to receive money from them for purchasing rice, and by force and violence they take more than the market price affords, and the ryots all run away on account of these oppressions. For many years it has been customary for the Cashmere merchants to advance money at Sunderbund, and provide molunghies to work the salt-pans there: they paid the rents for the salt-pans at the several parganas; and the duties on the slat, which were paid at Burry-saul Chokey, belonging to the Shahbunder, amounted to near Rs. 30,000. At present the people of the factory have dispossessed the Cashmere merchants, and have appropriated all the salt to themselves.”


“যেহেতু সন্দ্বীপ ও অন্যান্য স্থানে কোম্পানির গোমস্তারা লবণ তৈরি করে, আমি আশা করি আপনি তাদের নির্দেশ দেবেন যাতে তারা আর তৈরি না করে। অন্যান্য ব্যবসায়ীদের মতো তারা যেন মোলঙ্গীদের নিকট হতে বাজারদরে লবণ ক্রয় করে গোলাপপুর, দক্ষিণ শাহবাজপুর পরগণা ও অন্যান্য জেলায় যেখানে লবণ তৈরি হয় সেখানে কোম্পানির লবণ মাটি আহরণ করে এবং অন্যান্য পরগণার মোলঙ্গীরা যে লবণ তৈরি করে তা তারা দখল করে নিয়ে যায়। এ কারণে আমার প্রচুর ক্ষতি হয়। অধিকন্তু তারা স্থানীয় জনগণকে চাল ক্রয়ের জন্য তাদের নিকট হতে টাকা গ্রহণ করতে বাধ্য করে। তারা জোর-জুলুম করে তাদের নিকট হতে বাজারের মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে চাল ক্রয় করে। এ অত্যাচারের ফলে কৃষকরা পালিয়ে যায়। অনেক বছর নিয়ম ছিল যে, কাশ্মীরের বণিকরা সুন্দরবন অঞ্চলে টাকা লগ্নি দিত এবং লবণের তাফালে কাজ করার জন্য কর প্রদান করত। তারা বরিশালের সরকারী (শাহবন্দর) লবণ চৌকিতে ৩০,০০০ টাকা লবণ শুল্ক জমা দিত। বর্তমানে ফ্যাক্টরির কর্মচারীরা কাশ্মীরী বণিকদের বিতাড়িত করে সমস্ত লবণ অধিকার করে নিয়েছে।”

নবাব মীর কাশিমের উপরোক্ত পত্রখানা বরিশালের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ। তার পত্রে আমরা প্রথম বরিশালের নাম জানতে পারি। ইংরেজদের সাথে নবাব মীর কাশিমের যুদ্ধের অন্যতম কারণ ছিল বাংলাদেশ ইংরেজদের অবাধ বাণিজ্য। বরিশালে ইংরেজদের বিনা শুল্কে বাণিজ্য ও স্থানীয় বণিক এবং জনগণের ওপর অত্যাচার এ যুদ্ধকে ত্বরান্বিত করে। এ অঞ্চলের জনগণকে তিনি কোম্পানির শোষণের হাত থেকে রক্ষার জন্য পত্র লিখে ক্ষান্ত হননি। তিনি ইংরেজদের বিরুদ্ধে কয়েকটি যুদ্ধ করে পরাজয় বরণ করেন।

বুজুর্গ উমেদপুর বাকেরগঞ্জ জেলার একটি বৃহত্তর পরগণা। এ পরগণার জমিদার রাজবল্লভের পুত্র গোপাল কৃষ্ণের সাথে ইংরেজ বণিকদের বিরোধ দেখা দেয়। গোপাল কৃষ্ণের উকিলের একখানা পত্রে এ অঞ্চলে ইংরেজ বণিকদের অত্যাচারের কাহিনী ফুটে উঠেছে।৫

“কোম্পানি ফ্যাক্টরির কর্মচারী ও অনেক ইংরেজ বণিকদের অত্যাচারে সকল লোক পালিয়ে গেছে। ফ্যাক্টরির কর্মচারীরা ব্যবসায়ীদের নিকট হতে যা খুশি তা জোর করে কম মূল্যে নিয়ে যায়। স্থানীয় লোকের বাঁশ ও গাছপালা জোর করে কেটে নিয়ে যায়। কেউ অভিযোগ করলে তাকে শাস্তি প্রদান করা হয়। তারা জোর করে জনগণকে সুন্দরবনে নিয়ে যায় এবং তাদের মাত্র অর্ধেক মজুরি দেয়। তারা সুন্দরবনে জমি দখল করে লবণের তাফাল তৈরি করে। এ জন্য তারা কোন খাজনা দেয় না। তারা পরগণা ও কৃষকদের তাফালের লবণ অবরোধ করে নিয়ে যায়। তারা স্থানীয় জনগণকে তামাক, লবণ ও অন্যান্য পণ্য ক্রয় করতে বাধ্য করে। তারা যে ব্যবসা করে তার দেয় শুল্ক দিতে অস্বীকার করে। আমরা যদি কোম্পানির দস্তক বা ছাড়পত্র দেখতে চাই তা হলে তারা আমাদের বাঁশ দিয়ে পিটায়। তারা অনেকে ভান করে যে, তাদের ডাকাতি হয়েছে এর ক্ষতিপূরণের জন্য দাবি জানায়। তারা পিয়ন পাঠিয়ে দেয় এবং জরিমানা আদায় করে। তারা পিয়ন পাঠিয়ে পরগণার নায়েবকে বন্দী করে এবং পিয়নের জন্য প্রত্যেক দিন এক টাকা খরচ আদায় করে। তারা এ অঞ্চলের অনেক তালুকদার ও মহাজনদের জন্য পাহারাদার নিয়োগ করে। তারা আমাদের বাজারের কর আদায়ে বিরত রাখে এবং অনেক লোক ফ্যাক্টরিতে আশ্রয় নিয়ে খাজনা পরিশোধ করা এড়িয়ে যায়। এখান হতে চার দিনের যাত্রাপথে কোন লবণ তৈরি হয় না। তা সত্ত্বেও মিঃ ডবিন্স আমার পরগণায় দু’টি ফ্যাক্টরি প্রতিষ্ঠা করে সর্বপ্রকার ক্ষতি ও অত্যাচার করছে। তারা স্থানীয় জনগণের ও মহিলাদের ওপর পাশবিক অত্যাচার করছে। যে সকল স্থানে আজ পর্যন্ত কেউ যায়নি সেখানে তার কারখানা নির্মাণ করছে এবং স্থানীয় অধিবাসীদের তাড়িয়ে দিচ্ছে। তারা অনেকের নিকট হতে পাঁচ এবং দশ বছরের পাওনা আদায় করে।”

কোম্পানির বণিক ও তাদের কর্মচারীরা যখন শোষণ ও অত্যাচারের শেষ সীমা ছাড়িয়ে যায় তখন বরিশালের বিভিন্ন স্থানে কৃষকরা সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। বাংলাদেশের মধ্যে বরিশালে প্রথম কৃষক বিদ্রোহ দেখা দেয়। ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের পরপরই একদল কৃষক রাজবল্লভকে রাজস্ব প্রদানে অস্বীকার করে। তাদের দমন করার জন্য রাজবল্লভ সশ্রস্ত্র পর্তুগীজদের নিয়োগ করে। এ জেলার বিদ্রোহী কৃষকরা ইংরেজদের বাণিজ্য জাহাজ ও কুঠি আক্রমণ করে এবং অনেক ইউরোপীয়কে হত্যা করে। গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেষ্টিংসের এক বিবরণে দেখা যায় ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে একদল ফকির বরিশালের ইংরেজ রেসিডেন্টের কুঠি আক্রমণ করে।৬ কিন্তু বিদ্রোহীরা ইংরেজ, কুঠি দখল করতে ব্যর্থ হয়। ১৭৬৪ খ্রিঃ বিদ্রোহীরা বাকেরগঞ্জ বন্দরের নিকট ইংরেজ বণিক ক্যাপ্টেন রোজের বাণিজ্যতরী আক্রমণ করে এবং তাকে হত্যা করে। গভর্নর ভেন্সিটারট নবাব মীর জাফর আলী খানকে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দের ১৪ নভেম্বর এক পত্র লেখেন৭-

“আপনার সাথে আলাপের সময় ইতোমধ্যে আমি আপনাকে জানিয়েছি যে, যখন মিঃ রোজ নামে একজন ইংরেজ ভদ্রলোক টাকা ও পণ্যদ্রব্য নিয়ে নৌকায় ভ্রমণ করেছিল, তখন নৌকার লোকেরা বাকেরগঞ্জের নিকট তাকে হত্যা করে এবং তার টাকা ও পণ্যদ্রব্য নিয়ে যায়। তারা সিতারামের জমিদারীতে আশ্রয় নিয়েছে। এ ঘটনা তদন্তের জন্য আমি একজন ইংরেজকে উক্ত জমিদারের নিকট পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি তাকে কোন সম্মান দেখাননি। সুতরাং আপনার অবগতির জন্য আমি লুণ্ঠিত মাল ও টাকার হিসাব সংযোজন করে দিচ্ছি। আপনি অনুগ্রহ করে ঢাকার নায়েবকে লিখিত নির্দেশ দেবেন যে, তিনি যেন জমিদারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং দোষী ব্যক্তিদের এমন শাস্তি দিতে বলেন যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়। বাকেরগঞ্জের চারপাশে খুন ও ডাকাতির সংখ্যা দিন দিন এত বৃদ্ধি পাচ্ছে যে, ব্যবসায়ীরা এ অঞ্চল হয়ে যাতায়াত করতে ভয় পায়। সুতরাং আপনি অনুগ্রহ করে ঢাকার নায়েবকে নির্দেশ দেবেন যে, তিনি যেন ফ্যাক্টরির সিপাহী এবং নিজস্ব লোকদের পাঠিয়ে হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে কড়া শাস্তি দেন তা হলে ব্যবসায়ীরা খুব উপকৃত হবে।

গভর্নর ভেন্সিটারটের পত্র পেয়ে নবাব মীর জাফর ঢাকার নায়েব আজিম জেসারত খানকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেন। জেসারত খান একদল সিপাহীকে বাকেরগঞ্জে প্রেরণ করেন। তারা স্থানীয় জনগণের ওপর অত্যাচার করে এবং কোম্পানির সন্তুষ্টি লাভের জন্য অনেক বিদ্রোহীকে গ্রেফতার করে। তখন বাকেরগঞ্জের জমিদার ছিলেন রাজবল্লভের পুত্র গোপাল কৃষ্ণ সেন। নবাব তাকে ক্ষতিপূরণ প্রদানে বাধ্য করেন। ইংরেজরা বরিশালের বিদ্রোহীদের ডাকাত বলে আখ্যায়িত করে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! হাজার হাজার মাইল দূর থেকে এসে ইংরেজ বণিকরা বরিশালে প্রকাশ্যে দস্যুবৃত্তি করত। তাদের লুণ্ঠনের যারা বিরোধিতা করেছে তারা ডাকাত বলে চিহ্নিত হয়। ইংরেজ ও তাদের অনুগত নবাবের কঠোর ব্যবস্থা অবলম্বন সত্ত্বেও এ অঞ্চলের বিদ্রোহী কৃষকরা তাদের আক্রমণ অব্যাহত রাখে। সিলেট জেলার ইংরেজ কালেক্টর মিঃ উইলিস যখন বাকেরগঞ্জ নদীপথ অতিক্রম করেন, তখন বিদ্রোহীরা তাকে আক্রমণ করে। তিনি তাড়াতাড়ি নৌকা তীরে রেখে পালাতে সক্ষম হন। ঢাকার কালেক্টর মিঃ ডে (১৭৮৫-৯০) বিদ্রোহীদের দমন করার জন্য সিপাহী প্রেরণ করেন। তারা মিঃ উইলিসের আক্রমণকারীদের অনেককে গ্রেফতার করে। আক্রমণকারীরা ১৮ মাস ধরে সুন্দরবনাঞ্চলে ঘুরে বেড়ায়। মিঃ ডের প্রেরিন সশস্ত্র নৌকাগুলো তাদের সন্দ্বীপ ও সমুদ্রোপকূল পর্যন্ত তাড়িয়ে নিয়ে যায়। তারা সমুদ্রের জলোচ্ছাসে প্রায় ডুবে যাচ্ছিল। দেড় দিন পর্যন্ত উভয় দলের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।৮ তারা শেষ প র্যন্ত ধরা পড়ে এবং তাদের কঠোর শাস্তির জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। ১৭৭৯ খ্রিঃ নলচিড়ার জমিদার সৈয়দ ইমামউদ্দিন ও পলাশী থেকে আগত নবাব সিরাজউদ্দৌলার একদল সৈন্যের সাথে ইংরেজদের শরিকলের নিকট যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে বিদ্রোহীরা পরাজয় বরণ করে। রাজস্ব দিতে অস্বীকার করলে ওয়ারেন হেষ্টিংস ১৭৭৭ খ্রিঃ উত্তর শাহবাজপুরের জমিদার লালরাম ও নলচিড়ার জমিদার সৈয়দ ইমামউদ্দিনকে গ্রেফতার করে কলিকাতায় নিয়ে যায়। ইদিলপুরের জমিদার রামকান্ত ঢাকার সোনারগাঁওয়ের ইংরেজ ফ্যাক্টরি আক্রমণ করেছিল। পরে রামকান্তকে বন্দী করে বাকেরগঞ্জ, ঢাকা ও মুর্শিদাবাদ জেলখানায় আটক করে রাখা হয়।

বরিশালের দক্ষিণ অঞ্চলে ইংরেজ বণিক ও তাদের কর্মচারীরা লবণ চাষী ও কৃষকদের ওপর অত্যাচার করে। বুজুর্গ উমেদপুরের তালকুদরের করাপুরের মোহাম্মদ হায়াত ও নিয়ামতির আইন উদ্দিন সিকদার কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ঢাকার নায়েব নাজিব ও কোম্পানির সিপাহীরা ১৭৮৫ খ্রিঃ আইনউদ্দিন সিকদারের বাড়ি আক্রমণ করে তাকে ধরে নিয়ে যায় এবং বিষখালী নদীর মধ্যে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। মোহাম্মদ হায়াতকে গ্রেফতার করে কারাদ- দেয়া হয়। ১৭৮৭ খ্রিঃ বন্যার ফলে বরিশালে এক ভীষণ দুর্ভিক্ষ হয় এবং হাজার হাজার লোক প্রাণত্যাগ করে। এ সত্ত্বেও ইংরেজদের শোষণ ও অত্যাচার চলতে থাকে। সুগন্ধিয়ার ফকির বালকী শাহ একদল বিদ্রোহী নিয়ে ইংরেজদের রাজস্ব দেয়া বন্ধ করে দেয় এবং ঘোষণা করে ইংরেজ রাজত্ব শেষ। ১৭৯১ খ্রিঃ একদল সিপাহী বালকী শাহের দুর্গ আক্রমণ করে তিনি পরাজিত হয়ে পালিয়ে যান। এমনিভাবে বরিশালের তথাকথিত ডাকাত, যারা ছিল দেশপ্রেমিক এবং বিদ্রোহী তারা পলাশীর পর ইংরেজ শাসন নীরবে মেনে নেয়নি। ইংরেজ বণিকরা বরিশালে প্রথম ব্যবসা-বাণিজ্য ও রাজস্বের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করে। এ সময়ে বরিশালের স্বাধীনচেতা বিদ্রোহী কৃষকরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রবল বাধা সৃষ্টি করে। বিদ্রোহীদের সমূলে ধ্বংস করার জন্য কোম্পানি সরকার বাকেরগঞ্জে সিভিল জজ ও সুন্দরবন কমিশনার নিয়োগ করে। পরিশেষে তারা বাকেরগঞ্জকে ১৭৯৭ খ্রি. জেলায় পরিণত করতে বাধ্য হয়। ১৭৫৭ খ্রিঃ হতে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বরিশালের ইতিহাস এ জেলার জনগণের ইংরেজদের বিরুদ্ধে সগ্রামের ইতিহাস। দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বরিশালকে দখলে নিতে তীব্র বাধার সম্মুখীন হয়। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত এর মাধ্যমে এ জেলায় একদল অনুগত জমিদার সৃষ্টির ফলে ইংরেজদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ হ্রাস পেতে থাকে।

ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি জলে-স্থলে বরিশালকে দখল করে ক্ষান্ত হননি। অনেক ইংরেজ ও পর্তুগীজ স্থায়ীভাবে বাণিজ্য ও জমিদারী করার জন্য বরিশালে বসতি স্থাপন করে। ইউরোপীয় বণিকদের মধ্যে পর্তুগীজরা এ জেলায় প্রথম বসতি স্থাপন করে। পাদ্রী শিবপুরে কয়েক শ’ পর্তুগীজ বাস করত। এ গ্রামের ডি সালভা একজন বিখ্যাত ব্যবসায়ী ও জমিদার ছিলেন। এখনও কযেক ঘর পর্তুগীজ পাদ্রী শিবপুরে বাস করছে। পলাশীর পরে বাকেরগঞ্জ, ঝালকাঠি, বারৈকরণ ও বরিশালে ইউরোপীয় বণিকদের বাণিজ্য কুঠি প্রতিষ্ঠিত হয়। ওয়ারেন হেষ্টিংসের পত্রে দেখা যায় বরিশাল বন্দরে ইংরেজদের বাণিজ্য কুঠি ও ফ্যাক্টরি ছিল। বাকেরগঞ্জে শ্রীমন্ত খালের তীরে ইংরেজ ও ফরাসী বণিকদের ফ্যাক্টরিও ছিল। ইংরেজ বণিক মিঃ ডবিনসের বাকেরগঞ্জে দু’টি ফ্যাক্টরি ছিল। ফ্যাক্টরিতে কাপড় ও লবণ তৈরি হতো। বারৈকরণে কোম্পানির স্থায়ী বাণিজ্য কর্মচারী বাস করত। ঝালকাঠি বন্দরে লবণ এজেন্ট মিঃ উড ও ইউয়াট বাস করত। ইংল্যান্ডের অন্তর্গত স্কটল্যান্ডের অধিবাসী মিঃ উইলিয়ম রবিনসন ১৭৬৬ খ্রিঃ জুন মাসে ফ্যালমাউথ জাহাজযোগে সুন্দরবনে পৌঁছলে ঝড়ে তার জাহাজ ডুবে যায়। রবিনসন অতি কষ্টে নলছিটি থানার মধুপুরে এসে ব্যবসা শুরু করে। তিনি বরিশালে প্রথম স্থায়ী ইংরেজ বাসিন্দা। বরিশাল শহরের প্যারো পরিবার তার বংশধর ছিল। তারপর মিঃ গিল বারৈকরণে আগমন করেন। তিনি চালের ব্যবসা ও নৌকা নির্মাণ করাতেন। সিভিল সার্জেন্ট হার্পার ও গিল একত্রে নৌকা নির্মাণ করাতেন এবং তারা ১৭৯৪ খ্রিঃ নৌকা নির্মাণের জন্য এন্টয়েন পিয়াজি নামে একজন ফ্রেঞ্চ কর্মচারী নিয়োগ করেন। ব্রাউন পরিবার তার বংশধর ছিল। ন্যাথানিয়েল মনরো স্কটল্যান্ডের অধিবাসী ছিলেন। ১৭৮৬ খ্রিঃ তিনি ২৪ পরগণার লবণ এজেন্টের সহকারী ছিলেন। তিনি গভর্নর জেনারেলের অনুমতি নিয়ে ঝালকাঠিতে নীল চাষ শুরু করেন। পর্তুগীজ, ইংরেজ ও আর্মেনীয় ব্যতীয়ত ফরাসীদের বাকেরগঞ্জ বন্দরে ব্যবসা ছিল। ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জানুয়ারি ফরাসীদের সম্পর্কে এক প্রতিবেদনে দেখা যায় ফরাসী বণিকরা বাকেরগঞ্জে চাল ও সুতার ব্যবসা করত। বাকেরগঞ্জে তাদের ২/৩ জন সিপাহী ও গোমস্তা ছিল। ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দের পর হতে বরিশাল ইংরেজদের উপনিবেশভুক্ত হয় এবং অতি দ্রুতগতিতে এ অঞ্চলে তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

১। Principles Heads of the History and Statistics of the Decca Division-Report on Bakerganj, H.C, Southerland. ২। Vansittart’s Narrative-London, 1766, Vol-11, Page-111. Reprinted in the District of Bakerganj, its History and Statistics, H. Beveridge, Page-267-269. ৩। আগাবাকের, পৃষ্ঠা-৩৯-৪১ ৪। The District of Bakergainj, Page-270 ৫। Mr. Long’s Selection, Page-408, Reprinted-in the district of Bakerganj. H. Beveridge, Page-86-87. ৬। G.M. Ghose, Faqquir and Sanyasi Raids in Bengal, Page-73-74 ৭। Long’s Selection, Page-361, Reprinted in the District of Bakerganj, Page-272-273. ৮। The District of Bakerganj, Page-273-274