"আহসান হাবীব"-এর বিভিন্ন সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

Barisalpedia থেকে
(উপন্যাস)
(জন্ম ও শিক্ষাজীবন)
 
(একই ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত ১২টি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না)
৭ নং লাইন: ৭ নং লাইন:
 
== জন্ম ও শিক্ষাজীবন ==
 
== জন্ম ও শিক্ষাজীবন ==
  
আহসান হাবীবের জন্ম ১৯১৭ সালের ২ জানুয়ারি পিরোজপুরের শংকরপাশা গ্রামে৷ পিতার নাম হামিজুদ্দীন হাওলাদার৷ মাতা জমিলা খাতুন৷ তাঁর পাঁচ ভাই ও চার বোন৷ অর্থনৈতিক ভাবে অসচ্ছল পিতা মাতার প্রথম সন্তান তিনি৷ পারিবারিক ভাবে আহসান হাবীব সাহিত্য সংস্কৃতির আবহের মধ্যে বড় হয়েছেন৷ সেই সূত্রে বাল্যকাল থেকেই লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত হন তিনি৷ সেইসময় তাঁর বাড়িতে ছিল আধুনিক সাহিত্যের বইপত্র ও কিছু পুঁথি৷ যেমন আনোয়ারা, মনোয়ারা, মিলন মন্দির প্রভৃতি৷ এসব পড়তে পড়তে একসময় নিজেই কিছু লেখার তাগিদ অনুভব করেন৷ সাহিত্যের অনুকূল পরিবেশ নিয়ে পিরোজপুর গভর্নমেন্ট স্কুল থেকে ১৯৩৫ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন৷ এরপর তিনি চলে আসেন বরিশালে৷ ভর্তি হন সেখানকার বিখ্যাত বিএম কলেজে৷ কিন্তু অর্থনৈতিক সংকটের কারণে কলেজের পড়াশোনার পাঠ শেষ পর্যন্ত অসমাপ্ত রাখতে হয় তাঁকে৷ বিএম কলেজে দেড় বছর পড়ার পর ১৯৩৬ সালের শেষার্ধে কাজের খোঁজে তিনি রাজধানী কলকাতায় পাড়ি জমান৷ এভাবেই কবি আহসান হাবীবের বরিশাল থেকে তত্‍কালীন রাজধানী কলকাতায় পদার্পণ৷
+
আহসান হাবীবের জন্ম ১৯১৭ সালের ২ জানুয়ারি পিরোজপুরের শংকরপাশা গ্রামে৷ পিতার নাম হামিজুদ্দীন হাওলাদার৷ মাতা জমিলা খাতুন৷ তাঁর পাঁচ ভাই ও চার বোন৷ পারিবারিক ভাবে আহসান হাবীব সাহিত্য সংস্কৃতির আবহের মধ্যে বড় হয়েছেন৷ সেই সূত্রে বাল্যকাল থেকেই লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত হন তিনি৷ সেইসময় তাঁর বাড়িতে ছিল আধুনিক সাহিত্যের বইপত্র ও কিছু পুঁথি৷ যেমন আনোয়ারা, মনোয়ারা, মিলন মন্দির প্রভৃতি৷ এসব পড়তে পড়তে একসময় নিজেই কিছু লেখার তাগিদ অনুভব করেন৷ সাহিত্যের অনুকূল পরিবেশ নিয়ে পিরোজপুর গভর্নমেন্ট স্কুল থেকে ১৯৩৫ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন৷ এরপর তিনি চলে আসেন বরিশালে৷ ভর্তি হন সেখানকার বিখ্যাত বিএম কলেজে৷ কিন্তু তখনকার মানদণ্ডে ম্যাট্রিক পাশের পরে আর লেখাপড়ার কী দরকার আছে এমনটাই মনে হলো পিতা হামিজুদ্দিনের নিকট। তাই তিনি পুত্রকে চাপ দিতে শুরু করলেন চাকরি নেয়ার জন্য। পিতার এই চাপ থেকে সৃষ্ট অভিমান থেকেই বিএম কলেজে দেড় বছর পড়ার পর ১৯৩৬ সালের শেষার্ধে পাড়ি জমালেন কলকাতায়৷ এভাবেই কবি আহসান হাবীবের বরিশাল থেকে তত্‍কালীন রাজধানী কলকাতায় পদার্পণ৷
  
 
== কর্ম ও ব্যক্তিগত জীবন ==
 
== কর্ম ও ব্যক্তিগত জীবন ==
১৩ নং লাইন: ১৩ নং লাইন:
 
আহসান হাবীব ১৯৪৭ সালের ২১ জুন বিয়ে করেন বগুড়া শহরের কাটনারপাড়া নিবাসী মহসীন আলী মিয়ার কন্যা সুফিয়া খাতুনকে। আহসান হাবীব দুই কন্যা (কেয়া চৌধুরী ও জোহরা নাসরীন) ও দুই পুত্রের (মঈনুল আহসান সাবের ও মনজুরুল আহসান জাবের) জনক ছিলেন। পুত্র মঈনুল আহসান সাবের একজন স্বনামখ্যাত বাংলা ঔপন্যাসিক।
 
আহসান হাবীব ১৯৪৭ সালের ২১ জুন বিয়ে করেন বগুড়া শহরের কাটনারপাড়া নিবাসী মহসীন আলী মিয়ার কন্যা সুফিয়া খাতুনকে। আহসান হাবীব দুই কন্যা (কেয়া চৌধুরী ও জোহরা নাসরীন) ও দুই পুত্রের (মঈনুল আহসান সাবের ও মনজুরুল আহসান জাবের) জনক ছিলেন। পুত্র মঈনুল আহসান সাবের একজন স্বনামখ্যাত বাংলা ঔপন্যাসিক।
 
১২/১৩ বছর বয়সে স্কুলে পড়ার সময়ই ১৯৩৩ সালে স্কুল ম্যাগাজিনে তাঁর একটি প্রবন্ধ ‘ধরম’ প্রকাশিত হয়৷ ১৯৩৪ সালে তাঁর প্রথম কবিতা ‘মায়ের কবর পাড়ে কিশোর’ পিরোজপুর গভর্নমেন্ট স্কুল ম্যাগাজিনে ছাপা হয়৷ পরবর্তী সময়ে ছাত্রাবস্থায় কলকাতার কয়েকটি সাহিত্য পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হলে নিজের সম্পর্কে আস্থা বেড়ে যায়৷ স্কুলে পড়াকালীন তিনি প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার বিষয়বস্তুকে কবিতায় উপস্থাপিত করে পুরস্কৃত হয়েছিলেন৷ ততদিনে অবশ্য দেশ, মোহাম্মদী, বিচিত্রার মতো নামি দামি পত্রপত্রিকায় তাঁর বেশ কিছু লেখা প্রকাশিত হয়ে গেছে৷ কলকাতা গিয়ে শুরু হয় আহসান হাবীবের সংগ্রামমুখর জীবনের পথচলা৷ তিনি কলকাতায় এসে ১৯৩৭ সালে দৈনিক তকবির পত্রিকার সহ-সম্পাদকের কাজে নিযুক্ত হন ।  বেতন মাত্র ১৭ টাকা৷ পরবর্তীতে তিনি ১৯৩৭ সাল থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত কলকাতার বুলবুল পত্রিকা ও ১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত মাসিক সওগাত পত্রিকায় কাজ করেন৷ এছাড়া তিনি আকাশবাণীতে কলকাতা কেন্দ্রের স্টাফ আর্টিস্ট পদে ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত কাজ করেন৷
 
১২/১৩ বছর বয়সে স্কুলে পড়ার সময়ই ১৯৩৩ সালে স্কুল ম্যাগাজিনে তাঁর একটি প্রবন্ধ ‘ধরম’ প্রকাশিত হয়৷ ১৯৩৪ সালে তাঁর প্রথম কবিতা ‘মায়ের কবর পাড়ে কিশোর’ পিরোজপুর গভর্নমেন্ট স্কুল ম্যাগাজিনে ছাপা হয়৷ পরবর্তী সময়ে ছাত্রাবস্থায় কলকাতার কয়েকটি সাহিত্য পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হলে নিজের সম্পর্কে আস্থা বেড়ে যায়৷ স্কুলে পড়াকালীন তিনি প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার বিষয়বস্তুকে কবিতায় উপস্থাপিত করে পুরস্কৃত হয়েছিলেন৷ ততদিনে অবশ্য দেশ, মোহাম্মদী, বিচিত্রার মতো নামি দামি পত্রপত্রিকায় তাঁর বেশ কিছু লেখা প্রকাশিত হয়ে গেছে৷ কলকাতা গিয়ে শুরু হয় আহসান হাবীবের সংগ্রামমুখর জীবনের পথচলা৷ তিনি কলকাতায় এসে ১৯৩৭ সালে দৈনিক তকবির পত্রিকার সহ-সম্পাদকের কাজে নিযুক্ত হন ।  বেতন মাত্র ১৭ টাকা৷ পরবর্তীতে তিনি ১৯৩৭ সাল থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত কলকাতার বুলবুল পত্রিকা ও ১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত মাসিক সওগাত পত্রিকায় কাজ করেন৷ এছাড়া তিনি আকাশবাণীতে কলকাতা কেন্দ্রের স্টাফ আর্টিস্ট পদে ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত কাজ করেন৷
 +
 +
পরে ঢাকায় এসে দৈনিক আজাদ, দৈনিক কৃষক, মাসিক  মোহাম্মদী, দৈনিক ইত্তেহাদ, ও সাপ্তাহিক প্রবাহে চাকুরি করেন। ফ্রাংকলিন বুক প্রোগ্রামস-এ প্রোডাকশন এ্যাডভাইজার হিসেবে চাকুরি করেন ১৯৫৭ থেকে ১৯৬৪ পর্যন্ত। ১৯৬৪ এর ১০ নভেম্বর দৈনিক পাকিস্তান (পরে দৈনিক বাংলা) পত্রিকার সাহিত্য পাতার সম্পাদক নিযুক্ত হন। প্রায় দুই দশক এই পদে দায়িত্ব পালন করেন। আশির দশকে সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। ১৯৮৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের এক অনুষ্ঠানে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন।
  
 
== মৃত্যু ==
 
== মৃত্যু ==
২৪ নং লাইন: ২৬ নং লাইন:
 
== কবিতা ==
 
== কবিতা ==
  
রাত্রিশেষ (১৯৪৮)
+
১. রাত্রিশেষ (১৯৪৮)
ছায়াহরিণ (১৯৬২)
+
সারা দুপুর (১৯৬৪)
+
আশায় বসতি (১৯৭৪)
+
মেঘ বলে চৈত্রে যাবো (১৯৭৬)
+
দু'হাতে দুই আদিম পাথর (১৯৮০)
+
প্রেমের কবিতা (১৯৮১)
+
বিদীর্ণ দর্পনে মুখ (১৯৮৫)
+
  
== উপন্যাস ==
+
২. ছায়াহরিণ (১৯৬২)
  
রাণী খালের সাঁকো
+
৩. সারা দুপুর (১৯৬৪)
  
আরণ্য নীলিমা
+
৪. আশায় বসতি (১৯৭৪)
  
== শিশু সাহিত্য ==
+
৫. মেঘ বলে চৈত্রে যাবো (১৯৭৬)
  
জোছনা রাতের গল্প
+
৬. দুই হাতে দুই আদিম পাথর (১৯৮০)
  
ছুটির দিন দুপুরে
+
৭. প্রেমের কবিতা (১৯৮১)
  
বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর
+
৮. বিদীর্ণ দর্পনে মুখ (১৯৮৫)
  
ছুটির দিন দুপুরে
+
== উপন্যাস ==
  
রেলগাড়ি ঝমামমে
+
১. আরণ্য নীলিমা (১৯৬২)
  
রাণীখালের সাঁকো
+
২. জাফরানী রঙ পায়রা
  
জোৎসনা রাতের গল্প
+
== শিশু সাহিত্য ==
  
ছোট মামা দি গ্রেট
+
১. ছুটির দিন দুপুরে (১৯৭৮)
  
পাখিরা ফিরে আসে
+
২. বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর (১৯৭৭)
  
রত্নদ্বীপ ( ট্রেজার আইল্যান্ডর সংৰিপ্ত অনুবাদ )
+
৩. রেলগাড়ি ঝমাঝম
  
হাজীবাবা
+
৪. রাণীখালের সাঁকো
  
প্রবাল দ্বীপে অভিযান ( কোরাল আইল্যান্ডর সংৰিপ্ত অনুবাদ )
+
৫. পাখিরা ফিরে আসে
 +
 
 +
৬. রত্নদ্বীপ ( ট্রেজার আইল্যান্ডর সংৰিপ্ত অনুবাদ )
 +
 
 +
৭. হাজীবাবা
 +
 
 +
৮. প্রবাল দ্বীপে অভিযান ( কোরাল আইল্যান্ডর সংক্ষিপ্ত অনুবাদ )
  
 
== সম্পাদিত গ্রন্থ ==
 
== সম্পাদিত গ্রন্থ ==
  
কাব্যলোক
+
১. কাব্যলোক
বিদেশের সেরা গল্প
+
 
 +
২. বিদেশের সেরা গল্প
  
 
== পুরস্কার ==
 
== পুরস্কার ==
  
ইউনেস্কো সাহিত্য পুরস্কার একাডেমী পুরস্কার (১৯৬১)
+
তার কাব্য প্রতিভার দীর্ঘ যাত্রার স্বীকৃতি স্বরূপ অসংখ্য পুরস্কার তিনি পেয়েছেন: বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬১), আদমজী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৪), রাষ্ট্রীয় একুশে পদক (১৯৭৮), নাসিউদ্দিন স্বর্ণপদক (১৯৭৭), আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮০), অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার, বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ পদক, কবিতালাপ সাহিত্য পুরস্কার, পদাবলী পুরস্কার, আবুল হাসান স্মৃতি পুরস্কার ইত্যাদি।
আদমজী পুরস্কার (১৯৬৪)
+
নাসির উদ্দিন স্বর্ণপদক (১৯৭৭)
+
একুশে পদক (১৯৭৮)
+
আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮০)
+
স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার
+
বাংলা একাডেমী পুরস্কার
+
  
  
 
----
 
----
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া
+
তথ্যসূত্র:১. উইকিপিডিয়া। ২. বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান।

০৮:৪১, ২৪ মে ২০১৬ তারিখে সম্পাদিত বর্তমান সংস্করণ

আহসান হাবীব.jpg

আহসান হাবীব (জন্ম: ২ জানুয়ারি, ১৯১৭ - মৃত্যু: ১০ জুলাই, ১৯৮৫) (ইংরেজি: Ahsan Habib) একজন খ্যাতিমান বাংলাদেশী কবি ও সাহিত্যিক। দীর্ঘ দিন দৈনিক বাংলা পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক পদের দায়িত্ব পালন সূত্রে তিনি স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের সাহিত্য অঙ্গনে অভিভাবকের ভূমিকা রেখেছেন। তিনি পঞ্চাশ দশকের অন্যতম প্রধান আধুনিক কবি হিসেবে পরিগণিত।


জন্ম ও শিক্ষাজীবন

আহসান হাবীবের জন্ম ১৯১৭ সালের ২ জানুয়ারি পিরোজপুরের শংকরপাশা গ্রামে৷ পিতার নাম হামিজুদ্দীন হাওলাদার৷ মাতা জমিলা খাতুন৷ তাঁর পাঁচ ভাই ও চার বোন৷ পারিবারিক ভাবে আহসান হাবীব সাহিত্য সংস্কৃতির আবহের মধ্যে বড় হয়েছেন৷ সেই সূত্রে বাল্যকাল থেকেই লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত হন তিনি৷ সেইসময় তাঁর বাড়িতে ছিল আধুনিক সাহিত্যের বইপত্র ও কিছু পুঁথি৷ যেমন আনোয়ারা, মনোয়ারা, মিলন মন্দির প্রভৃতি৷ এসব পড়তে পড়তে একসময় নিজেই কিছু লেখার তাগিদ অনুভব করেন৷ সাহিত্যের অনুকূল পরিবেশ নিয়ে পিরোজপুর গভর্নমেন্ট স্কুল থেকে ১৯৩৫ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন৷ এরপর তিনি চলে আসেন বরিশালে৷ ভর্তি হন সেখানকার বিখ্যাত বিএম কলেজে৷ কিন্তু তখনকার মানদণ্ডে ম্যাট্রিক পাশের পরে আর লেখাপড়ার কী দরকার আছে এমনটাই মনে হলো পিতা হামিজুদ্দিনের নিকট। তাই তিনি পুত্রকে চাপ দিতে শুরু করলেন চাকরি নেয়ার জন্য। পিতার এই চাপ থেকে সৃষ্ট অভিমান থেকেই বিএম কলেজে দেড় বছর পড়ার পর ১৯৩৬ সালের শেষার্ধে পাড়ি জমালেন কলকাতায়৷ এভাবেই কবি আহসান হাবীবের বরিশাল থেকে তত্‍কালীন রাজধানী কলকাতায় পদার্পণ৷

কর্ম ও ব্যক্তিগত জীবন

আহসান হাবীব ১৯৪৭ সালের ২১ জুন বিয়ে করেন বগুড়া শহরের কাটনারপাড়া নিবাসী মহসীন আলী মিয়ার কন্যা সুফিয়া খাতুনকে। আহসান হাবীব দুই কন্যা (কেয়া চৌধুরী ও জোহরা নাসরীন) ও দুই পুত্রের (মঈনুল আহসান সাবের ও মনজুরুল আহসান জাবের) জনক ছিলেন। পুত্র মঈনুল আহসান সাবের একজন স্বনামখ্যাত বাংলা ঔপন্যাসিক। ১২/১৩ বছর বয়সে স্কুলে পড়ার সময়ই ১৯৩৩ সালে স্কুল ম্যাগাজিনে তাঁর একটি প্রবন্ধ ‘ধরম’ প্রকাশিত হয়৷ ১৯৩৪ সালে তাঁর প্রথম কবিতা ‘মায়ের কবর পাড়ে কিশোর’ পিরোজপুর গভর্নমেন্ট স্কুল ম্যাগাজিনে ছাপা হয়৷ পরবর্তী সময়ে ছাত্রাবস্থায় কলকাতার কয়েকটি সাহিত্য পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হলে নিজের সম্পর্কে আস্থা বেড়ে যায়৷ স্কুলে পড়াকালীন তিনি প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার বিষয়বস্তুকে কবিতায় উপস্থাপিত করে পুরস্কৃত হয়েছিলেন৷ ততদিনে অবশ্য দেশ, মোহাম্মদী, বিচিত্রার মতো নামি দামি পত্রপত্রিকায় তাঁর বেশ কিছু লেখা প্রকাশিত হয়ে গেছে৷ কলকাতা গিয়ে শুরু হয় আহসান হাবীবের সংগ্রামমুখর জীবনের পথচলা৷ তিনি কলকাতায় এসে ১৯৩৭ সালে দৈনিক তকবির পত্রিকার সহ-সম্পাদকের কাজে নিযুক্ত হন । বেতন মাত্র ১৭ টাকা৷ পরবর্তীতে তিনি ১৯৩৭ সাল থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত কলকাতার বুলবুল পত্রিকা ও ১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত মাসিক সওগাত পত্রিকায় কাজ করেন৷ এছাড়া তিনি আকাশবাণীতে কলকাতা কেন্দ্রের স্টাফ আর্টিস্ট পদে ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত কাজ করেন৷

পরে ঢাকায় এসে দৈনিক আজাদ, দৈনিক কৃষক, মাসিক মোহাম্মদী, দৈনিক ইত্তেহাদ, ও সাপ্তাহিক প্রবাহে চাকুরি করেন। ফ্রাংকলিন বুক প্রোগ্রামস-এ প্রোডাকশন এ্যাডভাইজার হিসেবে চাকুরি করেন ১৯৫৭ থেকে ১৯৬৪ পর্যন্ত। ১৯৬৪ এর ১০ নভেম্বর দৈনিক পাকিস্তান (পরে দৈনিক বাংলা) পত্রিকার সাহিত্য পাতার সম্পাদক নিযুক্ত হন। প্রায় দুই দশক এই পদে দায়িত্ব পালন করেন। আশির দশকে সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। ১৯৮৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের এক অনুষ্ঠানে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন।

মৃত্যু

১৯৮৫ সালের ১০ জুলাই আহসান হাবীব মৃত্যুবরণ করেন।

রচনাবলী

কাব্যগ্রন্থ, বড়দের উপন্যাস, গল্প, প্রবন্ধ-নিবন্ধ, ছোটদের ছড়া ও কবিতার বই সব মিলিয়ে আহসান হাবীবের বইয়ের সংখ্যা ২৫টি।

কবিতা

১. রাত্রিশেষ (১৯৪৮)

২. ছায়াহরিণ (১৯৬২)

৩. সারা দুপুর (১৯৬৪)

৪. আশায় বসতি (১৯৭৪)

৫. মেঘ বলে চৈত্রে যাবো (১৯৭৬)

৬. দুই হাতে দুই আদিম পাথর (১৯৮০)

৭. প্রেমের কবিতা (১৯৮১)

৮. বিদীর্ণ দর্পনে মুখ (১৯৮৫)

উপন্যাস

১. আরণ্য নীলিমা (১৯৬২)

২. জাফরানী রঙ পায়রা

শিশু সাহিত্য

১. ছুটির দিন দুপুরে (১৯৭৮)

২. বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর (১৯৭৭)

৩. রেলগাড়ি ঝমাঝম

৪. রাণীখালের সাঁকো

৫. পাখিরা ফিরে আসে

৬. রত্নদ্বীপ ( ট্রেজার আইল্যান্ডর সংৰিপ্ত অনুবাদ )

৭. হাজীবাবা

৮. প্রবাল দ্বীপে অভিযান ( কোরাল আইল্যান্ডর সংক্ষিপ্ত অনুবাদ )

সম্পাদিত গ্রন্থ

১. কাব্যলোক

২. বিদেশের সেরা গল্প

পুরস্কার

তার কাব্য প্রতিভার দীর্ঘ যাত্রার স্বীকৃতি স্বরূপ অসংখ্য পুরস্কার তিনি পেয়েছেন: বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬১), আদমজী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৪), রাষ্ট্রীয় একুশে পদক (১৯৭৮), নাসিউদ্দিন স্বর্ণপদক (১৯৭৭), আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮০), অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার, বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ পদক, কবিতালাপ সাহিত্য পুরস্কার, পদাবলী পুরস্কার, আবুল হাসান স্মৃতি পুরস্কার ইত্যাদি।



তথ্যসূত্র:১. উইকিপিডিয়া। ২. বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান।