"আলতাফ মাহমুদ"-এর বিভিন্ন সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

Barisalpedia থেকে
২ নং লাইন: ২ নং লাইন:
 
[[চিত্র:আলতাফ_মাহমুদ.jpg ]]
 
[[চিত্র:আলতাফ_মাহমুদ.jpg ]]
  
জন্ম ১৯৩৩। মৃত্যু ১৯৭১। জন্মস্থান ফকিরবাড়ি রোড, বরিশাল। বরিশাল জেলা স্কুলে পড়ার সময় খ্যাতিমান বেহালাবদক সুরেন রায়ের কাছে তিনি সংগীতের তালিম নেন। বাংলার সংস্কৃতি বিকাশে সাংস্কৃতিক সংগঠক হিসাবে তাঁর বিশেষ ভূমিকা ছিল। আবদুল গাফফার চৌধুরীর বিখ্যাত কবিতা ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি’ - গানের সুরকার ছিলেন তিনি। এই গানের চেতনার সঙ্গে স্বাধিকার আন্দোলন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম একাত্ম হয়েছিল।  এই কারণেই তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের শাসকশ্রেণির বিরূপ নজরে পড়েন। ৩১.৮.১৯৭১ খ্রি. পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী তাঁর বাসা গিরে ফেলে। বাড়িতে মাটি খুঁড়ে অস্ত্রভরতি একটি ট্রাঙ্ক পেয়ে তাঁকে মারতে মারতে গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে যায়। তিনি আর ফিরে আসেননি।
+
বিখ্যাত গীতিকার, সুরকার ও শহীদ বুদ্ধিজীবী আলতাফ মাহমুদের জন্ম ১৯৩৩ সালে। মৃত্যু ১৯৭১। জন্মস্থান ফকিরবাড়ি রোড, বরিশাল। পৈত্রিক নিবাস মুলাদী থানার পাতারচরে। তার পিতার নাম এম নাজেম আলী।
 +
 
 +
== সঙ্গীত প্রতিভার বিকাশ ও শিক্ষাজীবন ==
 +
 
 +
আলতাফ মাহমুদ ১৯৪৮ সালে ম্যাট্রিক পাশ করার পর বরিশাল ব্রজমোহন কলেজে ভর্তি হন। এর পর কিছুদিন কলিকাতা আর্ট স্কুলেও পড়াশোনা করেন। আলতাফ মাহমুদ সঙ্গীত শিল্পী, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, এ দেশের সাংস্কৃতিক বিকাশের ক্ষেত্রে অন্যতম সংগ্রামী পুরুষ। ১৫-১৬ বছর বয়সে নিজের চেষ্টায় গণসঙ্গীত আয়ত্ত করেন। বরিশালের খ্যাতনামা বেহালাবাদক সুরেন রায়ের কাছে বেহালাবাদন শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৯৪৯ সালে বরিশালে পাট চাষীদের এক সভায় “ম্যায় ভূখা হুঁ” গানটি গেয়ে শ্রোতাদের মন জয় করেন।
 +
 
 +
== কর্মজীবন ==
 +
 +
১৯৫০-এ বরিশাল ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৫১ সালে যুবলীগের সাংস্কৃতিক ফ্রন্ট “পূর্ব পাকিস্তান শিল্পী সংসদ”- এ যোগদান করে সংসদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সমবেত ও একক কন্ঠে গণসঙ্গীত পরিবেশন করে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। কিছুদিনের মধ্যে এর সঙ্গীত পরিচালক নিযুক্ত হন। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী রচিত “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভুলিতে পারি” (রচনাকাল ২৩ ফেব্রুয়ারী, ১৯৫২) আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই গানটিতে সুর সংযোজন করে খ্যাতির শীর্ষে আরোহণ করেন। বায়ান্নর অমর একুশের প্রথম বার্ষিকীতে (১৯৫৩) ভাষা শহীদদের স্মরণে মোশাররফ উদ্দিন আহমদ রচিত “মৃত্যুকে যারা তুচ্ছ করিল, ভাষা বাঁচাবার তরে”, গাজীউল হক রচিত “ভুলবো না ভুলবো না একুশে ফেব্রুয়ারী ভুলবো না” ও আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ রচিত “মেয়েটার বর মরেছে আর বছর” গানের সুরারোপ করে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেন। ১৯৫৪-তে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী সভায় গণসঙ্গীত গেয়ে জনসাধারণকে উদ্দীপ্ত করেন। একই বছর (১৯৫৪) ৩০ মে পূর্ব বাংলায় ৯২-ক ধারা আরোপ করা হলে তাঁর ওপর হুলিয়া জারি করা হয়। আত্মগোপন অবস্থায় তিনি ছয় মাস অতিবাহিত করেন। হুলিয়া প্রত্যাহৃত হওয়ার পর সাড়া জাগানো ছায়ানাট্য “শিল্পী”-র সঙ্গীত পরিচালনা ও সঙ্গীতে কণ্ঠদান করেন।
 +
   
 +
১৯৫৬-৬৩ পর্যন্ত আলতাফ মাহমুদ করাচিতে বাস করেন। করাচির বেতার কেন্দ্র থেকে পূর্ব বাংলার লোক সঙ্গীতের উপর অনুষ্ঠন “ইত্তেহাদ ম্যুসিকি” পরিচালনা করেন। এখানে অবস্থানকালে স্বকণ্ঠে গীত প্রায় ৩৫টি গানের রেকর্ড প্রকাশ করেন। ১৯৬৩-তে করাচি ছেড়ে ঢাকায় ‘আগুন নিয়ে খেলা’, ‘দুই ভাই’, ‘সংসার’, ‘আঁকাবাঁকা’, ‘আদর্শ ছাপাখানা’, ‘নয়নতারা’, শপত নিলাম’, ‘প্রতিশোধ’, ‘কখগঘঙ’, ‘শিরকুমারী’, ‘কুচবরণ কন্যা’, ‘সুয়োরাণী দুয়োরাণী’, ‘আপন দুলাল’, ‘সপ্তডিঙ্গা’ ইত্যাদি ছবির সঙ্গীত পরিচালনা করেন। ১৯৬৯-এর জানুয়ারী-মার্চে গণআন্দোলন ও ১৯৭১-এর মার্চে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে, মিছিলে ও পথসভায় গণসঙ্গীত গেয়ে সংগ্রামমুখর জনতাকে উজ্জীবিত করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ঢাকায় বসে গণজাগরণমূলক গান রচনা করে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রেরণ করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়, খাদ্য ও আর্থিক সাহায্য প্রদান করেন। এদেশের গণমুখী সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম অগ্রনায়ক ছিলেন আলতাফ মাহমুদ। পূর্ব বাংলায় বাঙালির জাতিসত্তার বিকাশ ও সাধারণ মানুষের কল্যাণ সাধনই ছিল তাঁর সঙ্গীত চর্চার চালিকাশক্তি।
 +
 
 +
== মৃত্যু ==
 +
 +
৩০ আগষ্ট ১৯৭১ ঢাকার আউটার সার্কুলার রোডের বাসা থেকে পাক বাহিনী তাঁকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। দখলদার বাহিনীর হাতে তিনি নির্মমভাবে নিহত হন।
 +
 
 +
 
  
 
----
 
----
তথ্যসূত্র: সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান।
+
তথ্যসূত্র: ১. সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। ২. রুসেলি রহমান চৌধুরী। বরিশালের প্রয়াত গুণীজন। ইউনিভার্সিটি বুক পাবলিশার্স, ঢাকা। ২০০৬।

১০:০২, ২৩ মে ২০১৬ তারিখের সংস্করণ

আলতাফ মাহমুদ.jpg

বিখ্যাত গীতিকার, সুরকার ও শহীদ বুদ্ধিজীবী আলতাফ মাহমুদের জন্ম ১৯৩৩ সালে। মৃত্যু ১৯৭১। জন্মস্থান ফকিরবাড়ি রোড, বরিশাল। পৈত্রিক নিবাস মুলাদী থানার পাতারচরে। তার পিতার নাম এম নাজেম আলী।

সঙ্গীত প্রতিভার বিকাশ ও শিক্ষাজীবন

আলতাফ মাহমুদ ১৯৪৮ সালে ম্যাট্রিক পাশ করার পর বরিশাল ব্রজমোহন কলেজে ভর্তি হন। এর পর কিছুদিন কলিকাতা আর্ট স্কুলেও পড়াশোনা করেন। আলতাফ মাহমুদ সঙ্গীত শিল্পী, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, এ দেশের সাংস্কৃতিক বিকাশের ক্ষেত্রে অন্যতম সংগ্রামী পুরুষ। ১৫-১৬ বছর বয়সে নিজের চেষ্টায় গণসঙ্গীত আয়ত্ত করেন। বরিশালের খ্যাতনামা বেহালাবাদক সুরেন রায়ের কাছে বেহালাবাদন শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৯৪৯ সালে বরিশালে পাট চাষীদের এক সভায় “ম্যায় ভূখা হুঁ” গানটি গেয়ে শ্রোতাদের মন জয় করেন।

কর্মজীবন

১৯৫০-এ বরিশাল ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৫১ সালে যুবলীগের সাংস্কৃতিক ফ্রন্ট “পূর্ব পাকিস্তান শিল্পী সংসদ”- এ যোগদান করে সংসদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সমবেত ও একক কন্ঠে গণসঙ্গীত পরিবেশন করে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। কিছুদিনের মধ্যে এর সঙ্গীত পরিচালক নিযুক্ত হন। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী রচিত “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভুলিতে পারি” (রচনাকাল ২৩ ফেব্রুয়ারী, ১৯৫২) আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই গানটিতে সুর সংযোজন করে খ্যাতির শীর্ষে আরোহণ করেন। বায়ান্নর অমর একুশের প্রথম বার্ষিকীতে (১৯৫৩) ভাষা শহীদদের স্মরণে মোশাররফ উদ্দিন আহমদ রচিত “মৃত্যুকে যারা তুচ্ছ করিল, ভাষা বাঁচাবার তরে”, গাজীউল হক রচিত “ভুলবো না ভুলবো না একুশে ফেব্রুয়ারী ভুলবো না” ও আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ রচিত “মেয়েটার বর মরেছে আর বছর” গানের সুরারোপ করে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেন। ১৯৫৪-তে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী সভায় গণসঙ্গীত গেয়ে জনসাধারণকে উদ্দীপ্ত করেন। একই বছর (১৯৫৪) ৩০ মে পূর্ব বাংলায় ৯২-ক ধারা আরোপ করা হলে তাঁর ওপর হুলিয়া জারি করা হয়। আত্মগোপন অবস্থায় তিনি ছয় মাস অতিবাহিত করেন। হুলিয়া প্রত্যাহৃত হওয়ার পর সাড়া জাগানো ছায়ানাট্য “শিল্পী”-র সঙ্গীত পরিচালনা ও সঙ্গীতে কণ্ঠদান করেন।

১৯৫৬-৬৩ পর্যন্ত আলতাফ মাহমুদ করাচিতে বাস করেন। করাচির বেতার কেন্দ্র থেকে পূর্ব বাংলার লোক সঙ্গীতের উপর অনুষ্ঠন “ইত্তেহাদ ম্যুসিকি” পরিচালনা করেন। এখানে অবস্থানকালে স্বকণ্ঠে গীত প্রায় ৩৫টি গানের রেকর্ড প্রকাশ করেন। ১৯৬৩-তে করাচি ছেড়ে ঢাকায় ‘আগুন নিয়ে খেলা’, ‘দুই ভাই’, ‘সংসার’, ‘আঁকাবাঁকা’, ‘আদর্শ ছাপাখানা’, ‘নয়নতারা’, শপত নিলাম’, ‘প্রতিশোধ’, ‘কখগঘঙ’, ‘শিরকুমারী’, ‘কুচবরণ কন্যা’, ‘সুয়োরাণী দুয়োরাণী’, ‘আপন দুলাল’, ‘সপ্তডিঙ্গা’ ইত্যাদি ছবির সঙ্গীত পরিচালনা করেন। ১৯৬৯-এর জানুয়ারী-মার্চে গণআন্দোলন ও ১৯৭১-এর মার্চে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে, মিছিলে ও পথসভায় গণসঙ্গীত গেয়ে সংগ্রামমুখর জনতাকে উজ্জীবিত করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ঢাকায় বসে গণজাগরণমূলক গান রচনা করে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রেরণ করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়, খাদ্য ও আর্থিক সাহায্য প্রদান করেন। এদেশের গণমুখী সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম অগ্রনায়ক ছিলেন আলতাফ মাহমুদ। পূর্ব বাংলায় বাঙালির জাতিসত্তার বিকাশ ও সাধারণ মানুষের কল্যাণ সাধনই ছিল তাঁর সঙ্গীত চর্চার চালিকাশক্তি।

মৃত্যু

৩০ আগষ্ট ১৯৭১ ঢাকার আউটার সার্কুলার রোডের বাসা থেকে পাক বাহিনী তাঁকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। দখলদার বাহিনীর হাতে তিনি নির্মমভাবে নিহত হন।



তথ্যসূত্র: ১. সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। ২. রুসেলি রহমান চৌধুরী। বরিশালের প্রয়াত গুণীজন। ইউনিভার্সিটি বুক পাবলিশার্স, ঢাকা। ২০০৬।