আব্দুর রহিম

Barisalpedia থেকে
Spadmin (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২১:৩৩, ২২ মে ২০১৬ পর্যন্ত সংস্করণে

(পরিবর্তন) ←পুর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ→ (পরিবর্তন)

রাজনীতিবিদ মাওলানা আব্দুর রহিমের জন্মতারিখ ২ মার্চ ১৯১৮। মৃত্যু: ১ অক্টোবর ১৯৮৯। গ্রাম: শিয়ালকাঠি, থানা: কাউখালী, জেলা: পিরোজপুর।

শিক্ষা ও কর্ম জীবন

মাওলানা আব্দুর রহিম ১৯৪২ সালে কলকাতা আলীয়া মাদ্রাসা হতে কামিল পাশ করে ১৯৪৫-৪৭ সালে বরিশালের নাজিরপুর হাই মাদ্রাসা এবং ১৯৪৭ - ১৯৪৮ সালে কেউন্দিয়া-কাউখালী মাদ্রাসার হেড মাওলানা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫০ সালে বরিশালে ‘তানজীম’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা সম্পাদনা করেন। এ সময় তিনি বরিশাল জেলা জামায়াতে ইসলামী সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৫০ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৫৫ সাল থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমীর ছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পূর্ব পর্যন্ত তিনি অল পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ছিলেন।

১৯৭২ সালের সংবিধান মোতাবেক ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকায় তিনি প্রত্যক্ষ রাজনীতির পরিবর্তে সাহিত্য সাধনায় নিয়োজিত হন। ১৯৭৫ সালে দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তিনি উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম এবং রাজনৈতিক নেতা খতিবে আজম মাওলানা সিদ্দিক আহমদ (রঃ) এর নেতৃত্বে নেজামে ইসলাম পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, পি.ডি.পি. খেলাফতে রাব্বানী প্রভৃতি দল সমন্বয়ে ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি। বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশ ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ ভেঙ্গে গেলে তিনি ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ (আইডএল) জামায়াত গ্রুপের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে আইডএল মুসলিম লীগ নির্বাচনী জোটের প্রার্থী হিসেবে তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। সংসদে তিনি আইডিএল পার্লামেন্টারী গ্রুপের নেতা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮১ সালে আইডিএল প্রার্থী হিসেবে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন।

পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জী হুজুরের নেতৃত্বে ১১টি ইসলামী সংগঠনের সমন্বয়ে সম্মিলিত খেলাফত সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে গোটা দেশব্যাপী ব্যাপক গণ-জোয়ার এবং গণ-আন্দোলন গড়ে তোলেন। তিনি কয়েকটি ইসলামী রাজনৈতিক দল, আলেম, পীর মাশায়েখদের সমন্বয়ে “ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন” গড়ে তোলেন। রাজনৈতিক নেতৃত্ব ছাড়াও তিনি বহু সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। ১৯৫৯-৬০ সালে তিনি দৈনিক নাজাত পত্রিকার জেনারেল ম্যানেজার ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, বাংলাদেশ ইসলামী ইনস্টিটিউট এবং ওআইসি-র ফিকহ একাডেমীরও সদস্য ছিলেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনার ও সম্মেলনে যোগদানের জন্য তিনি সৌদি আরব, ইরান, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, বার্মা, থাইল্যান্ড, বৃটেন প্রভৃতি দেশ সফর করেন। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ১৯৭৭ সালে মক্কার বাদশাহ আবদুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বিশ্ব ইসলামী শিক্ষা সম্মেলন, ১৯৭৭ সালে করাচীতে অনুষ্ঠিত রাবেতার প্রথম এশীয় ইসলামী সম্মেলন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ছাড়াও বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠত ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় তাঁর চিন্তাগত অবদান রয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আন্দোলনেও তিনি বিশেষভাবে অবদান রাখেন।

রচনাবলী

মাওলানাআব্দুর রহিম-এর গ্রন্থসমূহ: ‘বর্তমান বিশ্বে ইসলামের পুনর্জাগরণের সম্ভাবনা’, ‘মানবতা বিধ্বংসী দু’টি মতবাদ’, ‘ইসলামে ভূমি, কৃষি, শিল্প ও শ্রম আইন’, ‘হাদিসের আলোকে সমাজজীবন’, ‘বিশ্ব সভ্যতার মুক্তি কোন পথে’, ‘ইসলামী সভ্যতায় নারীর মর্যাদা’, ‘সুরায়ে ফাতেহায় তফসীর’, ‘বিশ্ব মানবতার মুক্তি সনদ’, ‘ঈমানের অগ্নি পরীক্ষা’, ‘জিয়ারাতে বায়তুল্লাহ’, ‘পরকালের সাথী’, ‘বেহেশতের চাবি’, ‘যুগের দুর্জন’, ‘নাজাতের পথ’, ‘ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান’ ইত্যাদি।


মৃত্যু

মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুর রহিম ১৯৮৯ সালের ১লা অক্টোবর ইন্তেকাল করেন।


তথ্যসূত্র: রুসেলি রহমান চৌধুরী। বরিশালের প্রয়াত গুণীজন। ইউনিভার্সিটি বুক পাবলিশার্স, ঢাকা। ২০০৬।