আবদুল লতিফ চৌধুরী

Barisalpedia থেকে

পিতা: আবদুল আজহার চৌধুরী। জন্ম : ১৮৮২ সাল। মৃত্যু : ২৬ এপ্রিল ১৯৭৩ সাল। গ্রাম : উলানিয়া। থানা : মেহেন্দীগঞ্জ। জেলা : বরিশাল। উলানিয়ার জমিদার বংশের সর্বশেষ জমিদার খান বাহাদুর আবদুল লতিফ চৌধুরী ছিলেন একজন স্বনামধন্য সমাজসেবক ও সরকারি কর্মকর্তা। বরিশাল শহরে অবস্থিত আল জামেয়া মাহমুদিয়া মাদ্রাসার তিনি অন্যতম উদ্যোক্তা ও পৃষ্ঠপোষক ছিলেন এবং মঠবাড়িয়ার বিখ্যাত কে এম লতিফ ইনস্টিটিউশনের তিনি প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।

বাকেরগঞ্জর মঠবাড়িয়ায় সার্কেল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তাঁর উদ্যোগে ও প্রচেষ্টায় ১৯২৮ সালে “কে এম লতিফ ইন্সটিটিউশন” নামক হাইস্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় এবং মাত্র দুই বছর পর, অর্থাৎ ১৯৩০ সালেই কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক স্কুলটি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হয়। উল্লেখ্য যে, স্কুলটির শিক্ষার মাধ্যম ছিল ইংরেজি এবং পাঠ্যক্রমে কৃষি ও কৃষি-বিজ্ঞান অর্ন্তভূক্ত ছিল। অর্থের অভাবে যাতে ভবিষ্যতে স্কুলটি বন্ধ হয়ে না যায় সে জন্য তিনি নিজ ব্যয়ে স্কুলের নামে জমি এবং পুকুর ক্রয় করে দেন। স্কুলটি আজও ঐ অঞ্চলের একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। এছাড়া তিনি ঐ অঞ্চলের আরও কয়েকটি প্রাথমিক স্কুল ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠায় মুখ্য ভূমিকা করেন।

পরবর্তীতে ১৯৩১ সাল থেকে ১৯৩৬ সাল পযর্ন্ত খান বাহাদুর আবদুল লতিফ চৌধুরী যখন খেপুপাড়ায় Colonisation Officer হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তখন ১৯৩৩ সালে “স্টিভেন্স এম. ই. ইন্সটিটিউশন” প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি যখন প্রথম দায়িত্ব গ্রহন করেন, তখন খেপুপাড়ায় সেন্ট্রাল ব্যাংক দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিল। খান বাহাদুর সাহেবের সুদক্ষ প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা, ব্যয় সংকোচন ও গ্রাহকদের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী ঝণ প্রদানের ব্যবস্থা অল্প দিনের মধ্যেই ব্যাংকটিকে একটি লাভজনক ও কল্যাণকর আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করেন।

সরকারী দায়িত্ব থেকে অবসর নেয়ার পরও তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও জনকল্যাণমূলক কাজের সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি ঢাকার সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন। এছাড়াও তিনি অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযুক্ত ছিলেন, যেমন: ১. চেয়ারম্যান, ইসলামিয়া আরবান ব্যাংক, বরিশাল; ২. ডেপুটি চেয়ারম্যান, বরিশাল সেন্ট্রাল ব্যাংক; ৩. প্রেসিডেন্ট, আঞ্জুমান-ই-ইসলাম; ৪. প্রেসিডেন্ট, বরিশাল রেইট পেয়ার্স এসোসিয়েশন; ও ৫. প্রেসিডেন্ট, বাকেরগঞ্জ ল্যান্ড-ওনারস এসোসিয়েশন।

তাঁর জনহিতকরন কাজের জন্য তিনি তৎকালীন বৃটিশ সরকার কর্তৃক ১৯৩০ সালে খান সাহেব এবং ১৯৪২ সালে খান বাহাদুর হিসেবে উপাধিতে ভূষিত হন। তিনি Bengal Legislative Council-এর Member হিসাবে দেশ ও জাতির স্বার্থে কাজ করে গেছেন। অবিভক্ত বাংলার তিনি জমিদার সমিতির এবং হজ্ব কমিটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন। দেশ ভাগের পর তিনি State Bank of Pakistan-এর ডিরেক্টর পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। খান বাহাদুর আবদুল লতিফ চৌধুরী ঢাকার বিখ্যাত কাজী বাড়ির খান বাহাদুর জহিরুল হকের কন্যা দুরদানা বেগমকে বিয়ে করেন। তিনি ১৯৭৩ সালের ২৬শে এপ্রিল ঢাকায় ৯১ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।


তথ্যসূত্র: রুসেলি রহমান চৌধুরী। বরিশালের প্রয়াত গুণীজন। ইউনিভার্সিটি বুক পাবলিশার্স: ঢাকা। ২০০৬।