"আবদুল গনি বয়াতি"-এর বিভিন্ন সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

Barisalpedia থেকে
 
(একই ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত একটি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না)
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
জারীসম্রাট ও গীতিকার। জারীসম্রাট আবদুল গনি বয়াতি বাংলা ১৩১৬ সাল ২রা বৈশাখ (১৯০৯ খৃস্টাব্দ) ঝালকাঠি জেলার নুরুল্লাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা সোনামদ্দি বিশ্বাস ও মাতা সাহেরা বিবি। পিতা সোনামদ্দি বিশ্বাসের আরেকটি বাড়ি ছিল পাশের গ্রাম মেহেদীপুর বা মোদিপুরে। ফলে তার জন্মস্থান মোদিপুর বলেও উল্লেখ করা হয়। পিতা সোনামদ্দি বিশ্বাস ও পিতামহ ফটিকচান বিশ্বাসও খ্যাতিমান বয়াতি ছিলেন। পিতার কাছ থেকেই তিনি জারী গানের প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। অবশ্য তাঁর আরও কয়েকজন শিক্ষাগুরু ছিলেন। তাদের মধ্যে বাবু হরিচরণ সরকার ও হিরণ নট্ট অন্যতম।
+
জারীসম্রাট ও গীতিকার। জারীসম্রাট আবদুল গনি বয়াতি বাংলা ১৩১৬ সাল ২রা বৈশাখ (১৯০৯ খৃস্টাব্দ) ঝালকাঠি জেলার নুরুল্লাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা সোনামদ্দি বিশ্বাস ও মাতা সাহেরা বিবি।  
মাত্র তের বছর বয়সে পোনাবালিয়ার জমিদার হীরালাল চৌধুরীর বাড়িতে গান গেয়ে তিনি তাঁর প্রতিভার প্রথম স্বাক্ষর রাখেন। হীরালাল বাবুর বাড়িতে নীল পূজা উপলক্ষ্যে আয়েজিত জারী ও যাত্রায় বাংলা ১৩২৯ সালে তের বছরের আবদুল গনি একটি ক্ষুদে দল গঠন করে গান পরিবেশন করেন। তার গানে সভাস্থ সমস্ত লোক এত মুগ্ধ হয় যে, দর্শকদের ঘড়ি, কলম, আংটি, রুমাল প্রভৃতি পুরস্কারে ক্ষুদে গায়ক সেদিন অভিনন্দিত হয়। স্বয়ং হীরালাল বাবু তাকে কোলে তুলে আদর ও আশীর্বাদ করেন।  
+
 
 +
== শৈশব ==
 +
 
 +
আবদুল গনি বয়াতীর শৈশব কাটে নুরুল্লাপুরে। তবে পিতা সোনামদ্দি বিশ্বাসের আরেকটি বাড়ি ছিল পাশের গ্রাম মেহেদীপুর বা মোদিপুরে। ফলে তার জন্মস্থান মোদিপুর বলেও উল্লেখ করা হয়। পিতা সোনামদ্দি বিশ্বাস ও পিতামহ ফটিকচান বিশ্বাসও খ্যাতিমান বয়াতি ছিলেন। পিতার কাছ থেকেই তিনি জারী গানের প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। অবশ্য তাঁর আরও কয়েকজন শিক্ষাগুরু ছিলেন। তাদের মধ্যে বাবু হরিচরণ সরকার ও হিরণ নট্ট অন্যতম।
 +
মাত্র তের বছর বয়সে পোনাবালিয়ার জমিদার হীরালাল চৌধুরীর বাড়িতে গান গেয়ে তিনি তাঁর প্রতিভার প্রথম স্বাক্ষর রাখেন। হীরালাল বাবুর বাড়িতে নীল পূজা উপলক্ষ্যে আয়েজিত জারী ও যাত্রায় বাংলা ১৩২৯ সালে তের বছরের আবদুল গনি একটি ক্ষুদে দল গঠন করে গান পরিবেশন করেন। তার গানে সভাস্থ সমস্ত লোক এত মুগ্ধ হয় যে, দর্শকদের ঘড়ি, কলম, আংটি, রুমাল প্রভৃতি পুরস্কারে ক্ষুদে গায়ক সেদিন অভিনন্দিত হয়। স্বয়ং হীরালাল বাবু তাকে কোলে তুলে আদর ও আশীর্বাদ করেন।
 +
 
 +
== কীর্তি ও কৃতিত্ব ==
 +
 
 
দিনে দিনে তিনি এতদঞ্চলের শ্রেষ্ঠ জারীশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। তিনি যাঁদের সাথে বিপক্ষ হয়ে জারী পরিবেশন ও কবিগান করেছেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন যশোরের বিজয় সরকার, যশোরের মোসলেম বয়াতী, ভোলার আব্দুর রশিদ বয়াতী, বারৈকরনের আফসার বয়াতী, মেহেন্দীগঞ্জের হাসেম বয়াতী, উজিরপুরের খোরশেদ বয়াতী, পেয়ারী বয়াতী, দক্ষিণ ঝালকাঠির কলম বয়াতী, মোনাসেব বয়াতী প্রমুখ।   
 
দিনে দিনে তিনি এতদঞ্চলের শ্রেষ্ঠ জারীশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। তিনি যাঁদের সাথে বিপক্ষ হয়ে জারী পরিবেশন ও কবিগান করেছেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন যশোরের বিজয় সরকার, যশোরের মোসলেম বয়াতী, ভোলার আব্দুর রশিদ বয়াতী, বারৈকরনের আফসার বয়াতী, মেহেন্দীগঞ্জের হাসেম বয়াতী, উজিরপুরের খোরশেদ বয়াতী, পেয়ারী বয়াতী, দক্ষিণ ঝালকাঠির কলম বয়াতী, মোনাসেব বয়াতী প্রমুখ।   
বাংলা ১৩৬৩ সালে বাংলার দুর্দশার কাহিনী অবলম্বনে তিনি একটি গান রচনা করে শোনালে ন্যাশনাল আওয়ামী লীগ নেতা মাওলানা ভাসানী সে গান শুনে কেঁদে ফেলেন। ১৯৬৩ সালে তিনি কবি জসীম উদ্দীনের উদ্যোগে ঢাকা বেতার কেন্দ্রে একটি জারী প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করেন। ৩৭টি দল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। আবদুল গনি বয়াতী প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন। এরপর ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৫ পর্যন্ত তিনি ঢাকা বেতারে নিয়মিত গান পরিবেশন করেন। তিনি ১০০০ এর অধিক গান ও ১৬টি জারী রচনা করেন।
+
বাংলা ১৩৬৩ সালে বাংলার দুর্দশার কাহিনী অবলম্বনে তিনি একটি গান রচনা করে শোনালে ন্যাশনাল আওয়ামী লীগ নেতা মাওলানা ভাসানী সে গান শুনে কেঁদে ফেলেন। ১৯৬৩ সালে তিনি কবি জসীম উদ্দীনের উদ্যোগে ঢাকা বেতার কেন্দ্রে একটি জারী প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করেন। ৩৭টি দল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। আবদুল গনি বয়াতী প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন এবং স্বর্ণপদক লাভ করেন। এরপর ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৫ পর্যন্ত তিনি ঢাকা বেতারে নিয়মিত গান পরিবেশন করেন। তিনি ১০০০ এর অধিক গান ও ১৬টি জারী রচনা করেন।
 
১৯৭৯ সনের ১৯ আগস্ট, বাংলা ১৩৮৫ সালের ২ ভাদ্র, শনিবার সকাল ৮ ঘটিকায় জনাব আবদুল গনি বয়াতী নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন।
 
১৯৭৯ সনের ১৯ আগস্ট, বাংলা ১৩৮৫ সালের ২ ভাদ্র, শনিবার সকাল ৮ ঘটিকায় জনাব আবদুল গনি বয়াতী নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন।
  
 
----
 
----
 
তথ্যসূত্র: সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, আবদুল গনি বয়াতীর জারীগ্রন্থের ভূমিকা ও আবদুল গনি বয়াতীর পুত্র আবদুল বারেক বয়াতীর সাক্ষাৎকার।
 
তথ্যসূত্র: সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, আবদুল গনি বয়াতীর জারীগ্রন্থের ভূমিকা ও আবদুল গনি বয়াতীর পুত্র আবদুল বারেক বয়াতীর সাক্ষাৎকার।

০৬:২৪, ২৯ মার্চ ২০১৬ তারিখে সম্পাদিত বর্তমান সংস্করণ

জারীসম্রাট ও গীতিকার। জারীসম্রাট আবদুল গনি বয়াতি বাংলা ১৩১৬ সাল ২রা বৈশাখ (১৯০৯ খৃস্টাব্দ) ঝালকাঠি জেলার নুরুল্লাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা সোনামদ্দি বিশ্বাস ও মাতা সাহেরা বিবি।

শৈশব

আবদুল গনি বয়াতীর শৈশব কাটে নুরুল্লাপুরে। তবে পিতা সোনামদ্দি বিশ্বাসের আরেকটি বাড়ি ছিল পাশের গ্রাম মেহেদীপুর বা মোদিপুরে। ফলে তার জন্মস্থান মোদিপুর বলেও উল্লেখ করা হয়। পিতা সোনামদ্দি বিশ্বাস ও পিতামহ ফটিকচান বিশ্বাসও খ্যাতিমান বয়াতি ছিলেন। পিতার কাছ থেকেই তিনি জারী গানের প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। অবশ্য তাঁর আরও কয়েকজন শিক্ষাগুরু ছিলেন। তাদের মধ্যে বাবু হরিচরণ সরকার ও হিরণ নট্ট অন্যতম। মাত্র তের বছর বয়সে পোনাবালিয়ার জমিদার হীরালাল চৌধুরীর বাড়িতে গান গেয়ে তিনি তাঁর প্রতিভার প্রথম স্বাক্ষর রাখেন। হীরালাল বাবুর বাড়িতে নীল পূজা উপলক্ষ্যে আয়েজিত জারী ও যাত্রায় বাংলা ১৩২৯ সালে তের বছরের আবদুল গনি একটি ক্ষুদে দল গঠন করে গান পরিবেশন করেন। তার গানে সভাস্থ সমস্ত লোক এত মুগ্ধ হয় যে, দর্শকদের ঘড়ি, কলম, আংটি, রুমাল প্রভৃতি পুরস্কারে ক্ষুদে গায়ক সেদিন অভিনন্দিত হয়। স্বয়ং হীরালাল বাবু তাকে কোলে তুলে আদর ও আশীর্বাদ করেন।

কীর্তি ও কৃতিত্ব

দিনে দিনে তিনি এতদঞ্চলের শ্রেষ্ঠ জারীশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। তিনি যাঁদের সাথে বিপক্ষ হয়ে জারী পরিবেশন ও কবিগান করেছেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন যশোরের বিজয় সরকার, যশোরের মোসলেম বয়াতী, ভোলার আব্দুর রশিদ বয়াতী, বারৈকরনের আফসার বয়াতী, মেহেন্দীগঞ্জের হাসেম বয়াতী, উজিরপুরের খোরশেদ বয়াতী, পেয়ারী বয়াতী, দক্ষিণ ঝালকাঠির কলম বয়াতী, মোনাসেব বয়াতী প্রমুখ। বাংলা ১৩৬৩ সালে বাংলার দুর্দশার কাহিনী অবলম্বনে তিনি একটি গান রচনা করে শোনালে ন্যাশনাল আওয়ামী লীগ নেতা মাওলানা ভাসানী সে গান শুনে কেঁদে ফেলেন। ১৯৬৩ সালে তিনি কবি জসীম উদ্দীনের উদ্যোগে ঢাকা বেতার কেন্দ্রে একটি জারী প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করেন। ৩৭টি দল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। আবদুল গনি বয়াতী প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন এবং স্বর্ণপদক লাভ করেন। এরপর ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৫ পর্যন্ত তিনি ঢাকা বেতারে নিয়মিত গান পরিবেশন করেন। তিনি ১০০০ এর অধিক গান ও ১৬টি জারী রচনা করেন। ১৯৭৯ সনের ১৯ আগস্ট, বাংলা ১৩৮৫ সালের ২ ভাদ্র, শনিবার সকাল ৮ ঘটিকায় জনাব আবদুল গনি বয়াতী নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন।


তথ্যসূত্র: সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, আবদুল গনি বয়াতীর জারীগ্রন্থের ভূমিকা ও আবদুল গনি বয়াতীর পুত্র আবদুল বারেক বয়াতীর সাক্ষাৎকার।