আবদুর রহিম খান

Barisalpedia থেকে

বরিশাল শহরের ভাটিখানার জোড় মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা ও ব্রজমোহন কলেজের আরবি শিক্ষক আবদুর রহিম খানের জন্ম তারিখ অজ্ঞাত, তবে তাঁর মৃত্যু ১৯১৫ সালে।

শিক্ষাজীবন

আবদুর রহিম খানের জন্ম বরিশালের আমানতগঞ্জ এলাকার ভাটিখান রোডের খান পরিবারে। তাঁর পূর্ব পুরুষরা ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে এখানে আগমন করেন। স্থানীয় মাদ্রাসার শিক্ষা সমাপ্ত হলে তাঁর পিতা আবদুর রহিম খানকে আলিগড় মাদ্রাসায় উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রেরণ করেন। সেখান থেকে কৃতিত্বের সাথে আরবী ও ফার্সী ভাষায় ব্যুৎপত্তি অর্জন করে ফিরে আসেন। আবদুর রহিম এই দুই ভাষার পাশাপাশি নিজের চেষ্টায় ইংরেজি ও বাংলা ভাষাও শিখে ফেলেন। দেশে ফিরে আসার পর ব্রজমোহন কলেজে আরবী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।

পারিবারিক ও কর্মজীবন

এই সময় তাঁর মাতৃবিয়োগ ঘটে, তাই পিতা তাঁর বিয়ে দেন। কয়েক বছরের মধ্যে তাঁর দুই ছেলে ও এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। এরপর তাঁর পিতাও ইন্তেকাল করেন। আবদুর রহিম পিতার ইচ্ছা পূরণ করার জন্য বাড়ির সামনের পুরাতন মসজিদের পাশে আরেকটি নতুন মসজিদ নির্মাণ করেন। সেই থেকে তাঁদের বাড়িটি জোড় মসজিদ বাড়ি হিসেবে পরিচিত। সেই সময় পানীয় জলের বড় অসুবিধা ছিল। স্থানীয় মানুষের সুবিধার জন্য তিনি জোড় মসজিদের সামনে দীঘির আকারে একটি বৃহৎ পুকুর খনন করেন। ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলনে গোটা ভারতবাসী যখন একত্র হয় তারই প্রভাবে তিনি আন্দোলনে যোগ দেন। সে সময় বরিশালে প্রভাবশালী নেতারা অবস্থান করতেন। আবদুর রহিম আন্দোলনের প্রচারণা বিভাগে কাজ করতেন। একদিন হ্যান্ডবিল বিলি করার সময় তিনি ইংরেজ সরকারের পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। তাঁকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে রাখা হল। তিনি অতিমাত্রায় ভালো মানুষ ছিলেন বলে বিচারকও তাঁকে শাস্তি দিতে বিব্রত বোধ করেন। তাঁকে হ্যান্ডবিল বিলি করার বিষয়টি অস্বীকার করতে বলা হলে তিনি রাজী হননি। তিনি স্বাধীনতার স্বার্থে সত্য কথাই বললেন, ফলে তাঁর জেল হয়ে গেল। তাঁকে পাঠানো হলো হুগলী জেলে। এ সময় ইংরেজ সরকার ভারতবাসীদের উপর অত্যন্ত কঠোর পন্থা অবলম্বন করায় জেলবন্দী স্বদেশীদের উপর অমানবিক অত্যাচার করা হয়। অত্যাচার ও নির্যাতনের ফলে আবদুর রহিম খান পেটে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। জেলে রাজবন্দী মারা গেলে আন্দোলন আরও বেগবান হতে পারে এই ভয়ে এক বছর জেলে আটক রাখা পর তাঁকে মুক্তি দেয়া হয় কিন্তু বি.এম. কলেজের চাকরী থেকে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। এরপর আবদুর রহিম খানের বিনয়, সততা ও ভদ্রোচিত ব্যবহারের জন্য ইংরেজ সরকার তাঁকে ম্যারেজ রেজিস্ট্রারের চাকরী দেয় নিজেদের অপরাধ লাঘব করার জন্য।

মৃত্যু

পেটে আঘাত পাওয়ার জন্য তিনি মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়ে পড়তেন। এ সময় তাঁর আরেকটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। কন্যা সন্তানটির আঠার মাস বয়সের সময় আবদুর রহিম খান শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন এবং একদিন পাকস্থলী ফেটে গিয়ে নাক মুখ দিয়ে রক্ত ক্ষরণ হয়ে তিনি ১৯১৫ সালে ইন্তেকাল করেন। তখন তাঁর চার সন্তান সবাই নাবালক। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের বীর আবদুর রহিম খানের সমাধি জোড়মসজিদের পাশেই কিংবদন্তীর সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে ভাটিখানা রোডে।



তথ্যসূত্র: রুসেলি রহমান চৌধুরী। বরিশালের প্রয়াত গুণীজন। ইউনিভার্সিটি বুক পাবলিশার্স, ঢাকা। ২০০৬।