আড্ডা ধানসিড়ি, বরিশাল

Barisalpedia থেকে

‘আড্ডা ধানসিড়ি’ বরিশালের সাহিত্যামোদীদের একটি আড্ডার নাম। এর কোনো সাংগঠনিক পরিষদ নেই, কোনো লিখিত গঠনতন্ত্র নেই এবং কোনো দাপ্তরিক ঠিকানা নেই। তবে ২০১২ সালের ৩১ আগস্ট অনুষ্ঠিত প্রথম আড্ডার দিন থেকে এর নিয়মিত কর্মকাণ্ড ও কার্যক্রম আছে। আড্ডার কর্মকাণ্ডর আবশ্যিক শর্ত হলো শিল্পবোধ এবং এ আড্ডার কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র হলো বরিশাল ও বরিশালের ঐতিহ্য। এই শর্ত মেনে এবং এই কেন্দ্রকে ঘিরে এ যাবৎ আড্ডার তিনটি আয়োজন চলমান: মাসের প্রতি দ্বিতীয় ও চতুর্থ শুক্রবার আড্ডায় বসা, ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ঘিরে তিনটি লিটলম্যাগ প্রকাশনা ও অনলাইন বরিশালপিডিয়া সম্পাদনা। আড্ডা ধানসিড়ি কর্তৃক আয়োজিত ও প্রকাশিত তিনটি ছোটকাগজ হলো ‘ধানসিড়ি’, ‘বিজন অশ্রুবিন্দু’ ও ‘ভিনভাংড়া’।

আড্ডা ধানসিড়ির একটি আসর.jpg

আড্ডা

আড্ডা ধানসিড়ির নিয়মিত আড্ডা বসে ইংরেজি মাসের দ্বিতীয় ও চতুর্থ শুক্রবার। প্রথম দুবছর ধরে এ আড্ডা বসতো বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে। বর্তমানে এ আড্ডা বসে জীবনানন্দ অঙ্গনে। আড্ডায় নিয়মিত স্বরচিত কবিতা ও গল্প পাঠ হয় এবং তার উপর আলোচনা হয়। এছাড়া বরিশালের ক্লাসিক লেখক-কবিদের জন্ম ও মৃত্যু দিবসে তাঁদের ওপর বিশেষ আলোচনা আয়োজিত হয়। বাংলা ভাষার প্রখ্যাত কবি-লেখকগণ বরিশালে আগমন করলে তাঁদেরকে ঘিরেও আয়োজিত হয় আড্ডা। এমন আড্ডা এ যাবৎ যাঁদেরকে ঘিরে আয়োজিত হয়েছে তাঁদের মধ্যে রয়েছেন প্রয়াত কবি খোন্দকার আশরাফ হোসেন, বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, কবি আসাদ চৌধুরী, কবি বেলাল চৌধুরী, ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক ড. ফকরুল আলম, পশ্চিমবঙ্গের লেখক অভিজিৎ সেন, স্বপ্নময় চক্রবর্তী, মিহির সেনগুপ্ত, কবি ও সমালোচক জহর সেনমজুমদার, ঔপন্যাসিক রবিশংকর বল প্রমুখ। আড্ডা ধানসিড়ির আড্ডায় ও কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের জন্য কোনো সদস্যপদ গ্রহণ করতে হয় না। বস্তুত আড্ডা ধানসিড়িতে সদস্যপদ গ্রহণ বা অগ্রহণের কোনো সিস্টেমই নেই। কেবল মাসের দ্বিতীয় ও চতুর্থ শুক্রবার অংশগ্রহণ করলেই আড্ডার অংশ হয়ে উঠতে পারেন যে কোনো আগ্রহীব্যক্তি। এই আড্ডায় ও কর্মকাণ্ডে বরিশালের যে-সকল ব্যক্তি মোটামুটি নিয়মিত অংশগ্রহণ করেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মুহসিন, কবি আসমা চৌধুরী, অমৃতলাল দে কলেজের অধ্যক্ষ তপংকর চক্রবর্তী, কবি শিমুল আজাদ, গল্পকার শফিক আমিন, স্বভাবকবি জয়নাল আবেদীন, গল্পকার কামরুন্নাহার মুন্নী, অনিন্দ্য দীপ, মাহমুদ মিটুল, হাসান মেহেদী, শান্ত রায়, সানাউল্লাহ সাগর, আবদুর রহমান, কিশোর কর্মকার, ইয়াসিন হীরা, রুমান শরীফ, সিফাত আরা বাধন, ফাহিমা ইয়াসমিন, আবু সাঈদ, সুরাইয়া আকতার সুমনা প্রমুখ।

ধানসিড়ি

এটি শুধু প্রবন্ধভিত্তিক একটি লিটলম্যাগ। এটি দুবছরে একবার প্রকাশিত হয়। এ যাবৎ ৬টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। এর প্রথম দুই সংখ্যার সম্পাদক ছিলেন কবি শামীম রেজা। ৩য় সংখ্যা থেকে এর সম্পাদক মুহম্মদ মুহসিন। মূলত জীবনানন্দ পুরস্কারকে ঘিরেই এটি প্রকাশ করা হয়। প্রতি দুবছর অন্তর দুজন সাহিত্যিক ‘জীবনানন্দ পুরস্কার’ পান ‘ধানসিড়ি’ ও ‘দূর্বা’র আয়োজনে। প্রতি দুবছর অন্তর সে আয়োজনকে ঘিরে প্রকাশিত হয় ‘ধানসিড়ি’র একটি সংখ্যা। প্রতিবারের ‘ধানসিড়ি’ আয়োজিত হয় পাঁচ জন সাহিত্যিককে ঘিরে। পাঁচ জনের একজন স্থায়ীভাবে জীবনানন্দ দাশ; দুজন সংশ্লিষ্ট বছরের জীবনানন্দ পুরস্কার প্রাপ্ত সাহিত্যিকদ্বয়; একজন নির্বাচিত হন বিশ্বসাহিত্য থেকে, বিশেষ করে এশিয়া, আফ্রিকা বা লাতিন আমেরিকা থেকে; এবং পঞ্চম জন নিয়মিতভাবে কালের যাত্রায় টিকে গেছেন এমন একজন চান্দ্রদ্বীপি তথা বরিশালের ক্লাসিক সাহিত্যিক। সর্বশেষ প্রকাশিত সংখ্যাটির প্রবন্ধসমূহ যাঁদের ওপর লিখিত হয়েছিল তাঁরা হলেন জীবনানন্দ পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি খালেদ হোসাইন ও ঔপন্যাসিক ইমতিয়ার শামীম; বিশ্বসাহিত্য থেকে সুদানীয় ঔপন্যাসিক তায়েব সালেহ; এবং বরিশালের ক্লাসিক ঔপন্যাসিক অমরেন্দ্র ঘোষ।

বিজন অশ্রুবিন্দু

এই ছোটো কাগজটি অনেকটা আড্ডা ধানসিড়ির মুখপত্র। এখন পর্যন্ত এর সম্পাদক আড্ডারু মাহমুদ মিটুল। গত দুই সংখ্যা ধরে এর তিনটি অংশ রয়েছে: আড্ডা ধানসিড়ির আড্ডায় পঠিত আড্ডারুদের লেখালেখির নির্বাচিত অংশ, সাধারণভাবে বরিশাল অঞ্চলের কবি-লেখকদের লেখা এবং বরিশালের বর্তমান লেখকদের বইয়ের ওপর আলোচনা। সম্প্রতি এক আড্ডায় সিদ্ধান্ত হয়েছে আগামী সংখ্যা থেকে এ পত্রিকাটিতে বরিশালের ক্লাসিক লেখকদের ৫টি করে ক্লাসিক গ্রন্থের ওপর রিভিউ প্রকাশিত হবে যাতে বরিশালের অতীতের লেখকগণের গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থসমূহ ধীরে ধীরে বরিশালের এ প্রজন্মের পাঠকদের কাছে পরিচিত করে তোলা যায়।

ভিনভাংড়া

এটি সম্পূর্ণভাবে বরিশালের ভাষায় তথা সম্পূর্ণভাবে আঞ্চলিক ভাষায় লিখিত দেশের একমাত্র লিটলম্যাগ। এ পত্রিকাটিতে কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, অনুবাদ সব লিখিত হয় সম্পূর্ণভাবে বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায়। এটির গত সংখ্যার সম্পাদক ছিলেন রুমান শরীফ।

বরিশালপিডিয়া

আড্ডা ধানসিড়ির ৩৩তম আড্ডায় ২২ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, বরিশালের সম্ভব সকল বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে উইকিপিডিয়ার আদলে একটি অনলাইন এনসাইক্লোপিডিয়া উন্মুক্ত করা হবে। উক্ত সিদ্ধান্তের ফসল হিসেবে ২৫ মার্চ ২০১৬ তারিখ বিকাল ৪:৪০ ঘটিকায় যাত্রা শুরু করে এই ওয়েবসাইট। এ ওয়েবসাইটে বরিশালপিডিয়ার সাথে থাকছে আরো দুটো পেইজ- ‘অবাক ও সবাক চিত্রে বরিশাল’ ও ‘আড্ডা ধানসিড়ির টুকিটাকি’। বরিশালপিডিয়া লিখিত হচ্ছে বাংলায়, অভ্র বা বিজয় ইউনিকোডে। আড্ডা ধানসিড়ির আড্ডারুদের দ্বারা এটি সম্পাদিত হচ্ছে, তবে উইকিপিডিয়ার মতোই এটি লিখিত হচ্ছে বরিশাল বিষয়ে আগ্রহী এপার ও ওপার বাংলার শত শত মানুষের স্বেচ্ছাপ্রণোদিত সেবায়। এটি ব্যবহারের বিষয়ে এবং এটিতে লেখার বিষয়ে কতিপয় নিয়ম ও শর্ত নির্ধারিত হয়েছে। নিয়ম ও শর্তাবলি: ১. প্রাচীন বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ এবং বর্তমান বরিশাল বিভাগ বলতে যে ভূখ- বোঝায় সেই ভূখণ্ডের সাথে সম্পর্কিত নয় এমন কোনো নিবন্ধ এখানে লিখিত হবে না। ২. এখানে কোনো নিবন্ধে এমন কিছু লিখিত হবে না যা কোনো বিশেষ ধর্ম, বর্ণ, জাতি, সম্প্রদায় বা লিঙ্গের প্রতি বিদ্রূপাত্মক বা সমালোচনামূলক। ৩. কোনো জীবিত ব্যক্তির ওপরে এখানে কোনো নিবন্ধ লিখিত হবে না। ৪. কোনো ধর্ম, দর্শন, রাজনৈতিক বিশ্বাস ইত্যাদি দ্বারা তাড়িত হয়ে কোনো বিশেষ নিবন্ধ গ্রহণ কিংবা কোনো বিশেষ নিবন্ধ বর্জন করা হবে না। ৫. ব্যক্তির ওপর লিখিত নিবন্ধসমূহে নঞর্থক বিষয়াদি পরিহার করে শুধু সদর্থক বিষয়াদির উল্লেখ বাঞ্ছনীয়। ৬. ব্যবহারকারী কর্তৃক নতুন নিবন্ধ সৃষ্টি কিংবা পুরনো নিবন্ধের সম্পাদনার ক্ষেত্রে লেখকের ফোন ও ইমেইল ঠিকানাসহ পরিচয় এবং নিবন্ধের তথ্যসূত্র উল্লেখপূর্বক নিবন্ধটি বা সম্পাদিত অংশটি অত্র ওয়েবসাইটের নির্দিষ্ট ফরমাটে জমা প্রদান করতে হবে। ৭. জমাপ্রদত্ত নিবন্ধ প্রকাশিত হলে নিবন্ধের শেষে সংশ্লিষ্ট লেখকের নাম-পরিচয় উল্লেখ করা হবে। ৮. জমাপ্রদত্ত নিবন্ধ প্রয়োজনমাফিক সম্পাদনার কিংবা প্রকাশ করা-না-করার অধিকার আড্ডা ধানসিড়ির আড্ডারুদের সংরক্ষিত থাকবে। ৯. ব্যবহারকারীগণ অত্র এনসাইক্লোপিডিয়ার যে কোনো তথ্য যথাযথ রেফারেন্সসহ যে কোনো কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। ১০. অত্র এনসাইক্লোপিডিয়ার তথ্যসমূহের যথাযথতা বিষয়ে শুধু সংশ্লিষ্ট লেখক ও তথ্যসূত্রে উল্লিখিত উৎস দায়ী থাকবে।

বরিশাল পিডিয়িার অন্তর্ভুক্ত ‘অবাক ও সবাক চিত্রে বরিশাল’ শীর্ষক ওয়েবপেইজটি স্থিরচিত্রে ও ভিডিওচিত্রে সংরক্ষণযোগ্য বৃহত্তর বরিশালের জীবন ও সংস্কৃতির একটি অনলাইন আর্কাইভ। এ আর্কাইভে থাকছে বিশেষ করে বিলুপ্তির দিকে অগ্রসরমান বরিশালের প্রাণিজগৎ ও উদ্ভিদজগতের আলোকচিত্র। বরিশালের ভাষার নিজস্ব শব্দে ও সংস্কৃতিতে সে-সকল প্রাণি ও উদ্ভিদের কোনো বিশেষ নাম ও পরিচয় থাকলে তা-ও উক্ত আলোকচিত্রের সাথে উল্লেখ থাকছে। ভিডিওচিত্রে থাকছে বরিশালের পেশাগত ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কর্মকাণ্ডের পূর্ণদৈর্ঘ্য ডকুমেন্টারি।



লেখক: মাহমুদ মিটুল