আজিজুদ্দীন আহমদ

Barisalpedia থেকে

আইনজ্ঞ ও রাজনীতিবিদ জনাব আজিজুদ্দীন আহমদের পিতার নাম মৌলভী আব্দুল লতিফ। জন্ম: ২১ ফেব্রুয়ারী ১৮৯৭। মৃত্যু : ১০ জুলাই ১৯৬৮। গ্রাম : মদনপুর, থানা: দৌলতখাঁ, জেলা : ভোলা।

শিক্ষাজীবন

আজিজুদ্দীন আহমদের পিতা মৌলভী আবদুল লতিফ এই অঞ্চলের একজন সুপরিচিত আলেম ছিলেন। আজিজুদ্দীন আহমদ বরিশাল জেলা স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করেন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৮৫% নম্বর পাওয়ার কারণে স্বর্ণপদক লাভ করেন। বরিশাল বি এম কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে আই.এ. পাশ করে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে বি. এ-তে ভর্তি হন। এ সময় তিনি বিখ্যাত মুসলিম নেতা ও চিন্তাবিদ মাওলানা মোহাম্মদ আলীর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য লাভ করেন। পরবর্তীকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হলে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং দ্রুত একজন বিশিষ্ট ছাত্রনেতা ও বক্তা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে বি.এ অনার্স এবং বি.এল ডিগ্রী লাভ করেন।

কর্মজীবন

১৯২৭ সালে তিনি বরিশাল বারে যোগদান করেন এবং অতি অল্প সময়ের মধ্যেই আইন ব্যবসায়ে বিশেষ সাফল্য অর্জন করেন। তিনি বরিশাল বার সমিতির প্রথম মুসলিম সেক্রেটারি নির্বাচিত হন এবং তিনি প্রথম মুসলমান যিনি বরিশাল বারের সভাপতি হন। অচিরেই তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং শেরে বাংলা এ. কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী প্রমুখ নেতাদের সংস্পর্শে আসেন। তিনি বরিশাল জেলা মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক এবং পরে সভাপতি ছিলেন। তিনি নিখিল বঙ্গ প্রাদেশিক মুসলিম লীগ ওয়ার্কিং কমিটির একজন বিশিষ্ট সদস্য হিসেবে মুসলিম লীগের পাকিস্তান আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। তদানীন্তন বৃটিশ সরকার তাঁকে খান বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করে। কিন্তু স্বাধীনতা আন্দোলন ও বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে তিনি এই খেতাব বর্জন করেন।

কীর্তিসমূহ

১৯৪৭ সালে পাক-ভারত স্বাধীনতা লাভের পর তিনি প্রথম পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। গণপরিষদের তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের সদস্য হিসেবে তিনি বরাবরই এ অঞ্চলের স্বার্থ সংরক্ষণ ও ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য দাবী জানিয়ে আসেন। ১৯৪৯ সালে তিনি পাকিস্তানের প্রতিনিধি হিসেবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান করেন এবং একই বছর কমনওয়েলথ সম্মেলনে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৫১ সালে তিনি নওয়াবজাদা লিয়াকত আলী খানের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় যোগদান করেন এবং ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত সংখ্যালঘু দফতরের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৪ সালে তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম লীগের শোচনীয় পরাজয়ের পর তিনি গণপরিষদের অধিবেশন বর্জন করেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কর্তৃক আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার পর তিনি মুসলিম লীগ ত্যাগ করে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ১৯৫৮ সালে একটি উপ-নির্বাচনে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৮ সালে দেশে সামরিক আইন জারি হলে তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নেন। ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত শাসনতন্ত্র কমিশন ও পুলিশ কমিশনের সদস্য হিসেবে তিনি কাজ করেন। ১৯৬২ সালে তাঁকে দেশ সেবার স্বীকৃতি হিসেবে সিতারা-ই-পাকিস্তান উপাধিতে ভূষিত করা হয়। বরিশাল বারের একজন লব্ধপ্রতিষ্ঠ সফল আইনজ্ঞ হিসেবে দীর্ঘকাল অবদান রাখার পর ১৯৫৮ সালে তিনি ঢাকা হাইকোর্টে ও সুপ্রিম কোর্টে আইন ব্যবসায় সক্রিয়ভাবে আত্মনিবেশ করেন।

পারিবারিক জীবন

তাঁর নয় ছেলে ও নয় মেয়ের মধ্যে নুরুদ্দিন আল মাসুদ প্রথম। তিনি সরকারের সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি সচিব থাকাকালীন অবস্থায় ১৯৯৬ সালে ইন্তেকাল করেন। দ্বিতীয় সন্তান নাজির উদ্দিন আহমদ হাউস বিল্ডিং এর এম.ডি এবং বিভিন্ন ব্যাংকের কর্তাব্যক্তি ছিলেন। তিনি ১৯৯৯ সালে অবসর গ্রহণ করেন। নাসিরউদ্দিন নামে তাঁর তৃতীয় সন্তান জেলা প্রশাসক হিসেবে ১৯৯০ সালে ইন্তেকাল করেন।

মৃত্যু

১৯৬৮ সালের ১০ জুলাই ৭১ বছর বয়সে জনাব আজিজুদ্দীন আহমদ ইন্তেকাল করেন।



তথ্যসূত্র: রুসেলি রহমান চৌধুরী। বরিশালের প্রয়াত গুণীজন। ইউনিভার্সিটি বুক পাবলিশার্স, ঢাকা। ২০০৬।