"অশ্বিনীকুমার টাউন হল"-এর বিভিন্ন সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

Barisalpedia থেকে
("অশ্বিনীকুমার টাউন হল বরিশাল শহরের সাহিত্য-সংস্কৃতির ও র..." দিয়ে পাতা তৈরি)
 
 
১৭ নং লাইন: ১৭ নং লাইন:
 
আমরা এখন জানি অশ্বিনীকুমার টাউন হলে যে কোনো ধরনের খুশি অনুষ্ঠান করা যায়। কিন্তু এক সময় যেতো না। একসময় এর ট্রাস্ট দলিলে লিখিত ‘নির্দোষ আমোদ ও প্রমোদ অনুষ্ঠান’ শব্দটিকে বেশ গুরুত্বের সাথে দেখা হতো। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধানের এক তথ্য মোতাবেক দেখা যায় এখানে সিনেমা দেখানো আরম্ভ হলে তার প্রতিবাদ করে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা শরৎ কুমার ঘোষ অনশনব্রত পর্যন্ত পালন করেছিলেন।  
 
আমরা এখন জানি অশ্বিনীকুমার টাউন হলে যে কোনো ধরনের খুশি অনুষ্ঠান করা যায়। কিন্তু এক সময় যেতো না। একসময় এর ট্রাস্ট দলিলে লিখিত ‘নির্দোষ আমোদ ও প্রমোদ অনুষ্ঠান’ শব্দটিকে বেশ গুরুত্বের সাথে দেখা হতো। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধানের এক তথ্য মোতাবেক দেখা যায় এখানে সিনেমা দেখানো আরম্ভ হলে তার প্রতিবাদ করে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা শরৎ কুমার ঘোষ অনশনব্রত পর্যন্ত পালন করেছিলেন।  
  
পাকিস্তান আমলে বিশেষ করে ষাটের দশকে নির্লজ্জভাবে এই টাউন হলটি আইয়ুব খানের নামে নামকরণের প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছিল। জনতার রোষের সামনে তা করতে না পেরে সরকারিভাবে এর নাম বলা হচ্ছিলো এ. কে. হল, যা দিয়ে ভিতরে ভিতরে বোঝানো হতো আইয়ুব খান হল, কিন্তু ঠেকায় পড়লে বলা হতো এ. কে. মানে অশি^নী কুমার। সব মিলিয়ে অশি^নীকুমার টাউন হল বরিশালবাসীর এক জাগ্রত চেতনার প্রতীক।  
+
পাকিস্তান আমলে বিশেষ করে ষাটের দশকে নির্লজ্জভাবে এই টাউন হলটি আইয়ুব খানের নামে নামকরণের প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছিল। ১৯৬২ সালে হলটির নাম আইউব খান টাউন হল এবং গেট দুটি যথাক্রমে গেটে মিল্লাত ও কায়েদে আজম নাম লিখে তৎকালীন বিহারী জেলা প্রশাসক সাইনর্বোড টানিয়ে দিলে তা স্থানীয় লোকজন আন্দোলন করে ভেঙ্গে দেন। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে যারা ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন গণগঙ্গীতশিল্পী আক্কাস হোসেন। জনতার রোষের সামনে তা করতে না পেরে সরকারিভাবে এর নাম বলা হচ্ছিলো এ. কে. হল, যা দিয়ে ভিতরে ভিতরে বোঝানো হতো আইয়ুব খান হল, কিন্তু ঠেকায় পড়লে বলা হতো এ. কে. মানে অশ্বিনী কুমার। সব মিলিয়ে অশ্বিনীকুমার টাউন হল বরিশালবাসীর এক জাগ্রত চেতনার প্রতীক।  
  
  
 
----
 
----
 
তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০।
 
তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০।
২। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। ৩। অশি^নীকুমার টাউন হলের ট্রাস্ট দলিল।
+
২। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। ৩। অশ্বিনীকুমার টাউন হলের ট্রাস্ট দলিল।

০৭:৪০, ১৫ আগস্ট ২০২০ তারিখে সম্পাদিত বর্তমান সংস্করণ

অশ্বিনীকুমার টাউন হল বরিশাল শহরের সাহিত্য-সংস্কৃতির ও রাজনৈতিক সমাবেশের এক মিলনায়তন। ১৯৩০ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছিল।

অশ্বিনীকুমার টাউনহল.jpg

অশ্বিনীকুমার টাউন হল নির্মিত হওয়ার পূর্বে বরিশালের সভা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতো রাজা বাহাদুরের হাবেলিতে। এই টাউন হলের ট্রাস্ট দলিলে এর চৌহদ্দির যে বর্ণনা পাওয়া যায় সে বর্ণনামতে রাজা বাহাদুর হাবেলি ছিল এর পূর্ব দিকে বর্তমান কাঠপট্টি রোডের দক্ষিণে এবং চক বাজার রোডের পশ্চিমে অবস্থিত। ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে বাজা বাহাদুরের হাবেলিতে মিছিলের ওপর পুলিশ হামলা চালায়। এই ঘটনা থেকে বরিশালবাসীর নিকট অনুভূত হয় বরিশালের সভা-সমাবেশের জন্য একটি টাউন হল নির্মাণ প্রয়োজন। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে অশ্বিনী কুমারকে সভাপতি ও শরৎ চন্দ্র গুহকে সম্পাদক করে হল নির্মাণের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়।

এই কমিটির উদ্যোগে ১৯২০ সালে টাউন হলের জন্য জমি ক্রয় করা হয়। টাউন হলের ট্রাস্টি দলিলের তথ্যানুযায়ী বাংলা ১৩২৭ সালের ২৮ আশি^ন মোতাবেক ইংরেজি ১৯২০ সালের ১৩ অক্টোবর তারিখে এই জমি খরিদ করা হয়। ট্রাস্টি দলিলে লিখিত আছে-

‘আমরা অনেক পরিশ্রম করিয়া এবং নিজ হইতে যথাসাধ্য চাঁদা দিয়া এবং সর্বসাধারণ হইতে চাঁদা সংগ্রহ করিয়া বরিশালের সর্বসাধারণের উপকারার্থে সভাসমিতির অধিবেশন, নির্দোষ আমোদ ও প্রমোদ অনুষ্ঠান ও জনহিতকর কার্যের জন্য একটি টাউন হল স্থাপনার উদ্দেশ্যে নিম্নের (ক) তফসিলে লিখিত ভূমি মং ৪০০০/- (চারি হাজার) টাকা মূল্যে শ্রীযুক্ত কেদারনাথ মহাশয়ের নিকট হইতে ১৩২৭ সালের ২৮ আশ্বিন তারিখে সম্পাদিত রেজিস্ট্রিকৃত কবলামূলে শ্রীযুক্ত হরনাথ ঘোষ, অশি^নীকুমার দত্ত, তারিণীকুমার গুপ্ত এবং এ কে ফজলাল হক সাহেবের নামে খরিদ করিয়া পাকা টাউন হল নির্মাণ করিতেছি’।

সিরাজ উদ্দীন আহমেদ লিখেছেন যে ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ অক্টোবর উকিল বরদাকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় রাজা বাহাদুরের মালিকদের নিকট হতে উক্ত ভূমি ক্রয় করেন। কিন্তু ট্রাস্ট দলিলের ভাষ্য অনুযায়ী এই তথ্য সঠিক নয়। বরং সঠিক তথ্য হলো জমিটি কেনা হয়েছিল শ্রীযুক্ত কেদারনাথ মহাশয়ের নিকট থেকে শ্রীযুক্ত হরনাথ ঘোষ, অশি^নীকুমার দত্ত, তারিণীকুমার গুপ্ত এবং এ কে ফজলুল হকের নামে।

ট্রাস্ট দলিলে উল্লিখিত তারিখ মোতাবেক এই ট্রাস্ট দলিল সম্পাদিত হয়েছে ১৩৩২ বাংলা সনের ২৭শে বৈশাখ মোতাবেক ১৯২৫ সালের ১০ মে তারিখে। তখন আর অশ্বিনীকুমার দত্ত জীবিত নেই। ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের ৭ নভেম্বর তিনি কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ট্রাস্ট দলিলের ভাষ্য এবং সিরাজ উদ্দীন আহমেদের তথ্য অনুযায়ী ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দের আগষ্ট মাসে অশ্বিনীকুমার টাউন হলের ভিত্তি স্থাপন করেন অশি^নীকুমার নিজে। এই ঘটনা উল্লেখ করে ট্রাস্ট দলিলেই এর নাম উল্লেখ করা হয় অশ্বিনীকুমার টাউন হল হিসেবে। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ লিখেছেন তাঁর মৃত্যুর পর যে শোকসভা হয় সে সভায় অশ্বিনীকুমার টাউন হল নাম গৃহীত হয়। তিনি আরো লিখেছেন যে, টাউন হল নির্মাণ ও জমি ক্রয়ে চল্লিশ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। অসহযোগ, খেলাফত আন্দোলন ও ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দের প্রাদেশিক সম্মেলনে তহবিলের উদ্বৃত্ত টাকা নিয়ে নির্মাণ কাজ সুসম্পন্ন হয়। শরৎ চন্দ্র গুহ, বরদাকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গা মোহন সেন, ইঞ্জিনিয়ার জ্যোতিষ চন্দ্র লাহিড়ী, ওয়াহেদ রাজা চৌধুরী, হাশেম আলী খান, বাদশা মিয়া চৌধুরী, ইসমাইল চৌধুরী প্রমুখ অক্লান্ত পরিশ্রম করে হলের নির্মাণকাজ শেষ করেন। ১৯৩০ খৃৃস্টাব্দে হলের নির্মাণ কাজ শেষ এবং ২৪ ফেব্রæয়ারি ট্রাষ্ট দলিল সম্পন্ন হয়। ট্রাস্ট দলিলের ভাষ্য অনুযায়ী সিরাজ উদ্দীন আহমেদের এই শেষোক্ত তথ্যটিও ঠিক নয়। এর ট্রাস্ট দলিল সম্পন্ন হয়েছিল ১৯২৫ সালের ১০ মে তারিখে।

ট্রাস্ট দলিলের তথ্য অনুযায়ী অশ্বিনীকুমার টাউন হলের ট্রাস্টি ছিলেন ৫৩ জন। তন্মধ্যে কয়েকজন হলেন সরলকুমার দত্ত, ভূপেন্দ্রনাথ সেন, দিলীপ কুমার রায়, যোগেন্দ্রনাথ সেন, মহেন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী, দক্ষিণারঞ্জন রায়চৌধুরী, রমেশ চন্দ্র রায়চৌধুরী, জ্ঞানেন্দ্রকুমার রায়চৌধুরী, হাজি চৌধুরী মুহাম্মদ ইসমাইল খান, নওয়াবজাদা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, মৌলভী আবুল কাসেম ফজলাল হক, ফকরউদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ।

আমরা এখন জানি অশ্বিনীকুমার টাউন হলে যে কোনো ধরনের খুশি অনুষ্ঠান করা যায়। কিন্তু এক সময় যেতো না। একসময় এর ট্রাস্ট দলিলে লিখিত ‘নির্দোষ আমোদ ও প্রমোদ অনুষ্ঠান’ শব্দটিকে বেশ গুরুত্বের সাথে দেখা হতো। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধানের এক তথ্য মোতাবেক দেখা যায় এখানে সিনেমা দেখানো আরম্ভ হলে তার প্রতিবাদ করে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা শরৎ কুমার ঘোষ অনশনব্রত পর্যন্ত পালন করেছিলেন।

পাকিস্তান আমলে বিশেষ করে ষাটের দশকে নির্লজ্জভাবে এই টাউন হলটি আইয়ুব খানের নামে নামকরণের প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছিল। ১৯৬২ সালে হলটির নাম আইউব খান টাউন হল এবং গেট দুটি যথাক্রমে গেটে মিল্লাত ও কায়েদে আজম নাম লিখে তৎকালীন বিহারী জেলা প্রশাসক সাইনর্বোড টানিয়ে দিলে তা স্থানীয় লোকজন আন্দোলন করে ভেঙ্গে দেন। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে যারা ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন গণগঙ্গীতশিল্পী আক্কাস হোসেন। জনতার রোষের সামনে তা করতে না পেরে সরকারিভাবে এর নাম বলা হচ্ছিলো এ. কে. হল, যা দিয়ে ভিতরে ভিতরে বোঝানো হতো আইয়ুব খান হল, কিন্তু ঠেকায় পড়লে বলা হতো এ. কে. মানে অশ্বিনী কুমার। সব মিলিয়ে অশ্বিনীকুমার টাউন হল বরিশালবাসীর এক জাগ্রত চেতনার প্রতীক।



তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০। ২। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। ৩। অশ্বিনীকুমার টাউন হলের ট্রাস্ট দলিল।