অজিতনারায়ণ বসু

Barisalpedia থেকে

ড. অজিতনারায়ণ বসু একজন বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী, খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ এবং খড়গপুর আই. আই. টি.’র অধ্যাপক। তিনি ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯২৭ তারিখে বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার হাবিবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা যতীন্দ্রনারায়ণ বসু এবং মাতা চারুবালা বসু। তাঁর মৃত্যু ২৮ নভেম্বর ২০০৪।


প্রাথমিক কর্মজীবন

অধ্যাপক ড. অজিতনারায়ণ শালকিয়া জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক (১৯৪২)। সেন্ট পল্স কলেজ থেকে ১৯৪৭ খ্রি. বি.এ. পাশ করে ওই বছরই লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক হিসেবে রাইটার্স বিল্ডিংস-এ তদানীন্তন স্বায়ত্তশাসন বিভাগে কর্মজীবন শুরু করেন। স্কুলের ছাত্রাবস্থায় লেবার পার্টির সংস্পর্শে আসেন। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। সরকারি কর্মচারীদের সংগঠিত আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯৪৯ খ্রি. রেল ধর্মঘটের সময় রাইটার্স বিল্ডিংস থেকে গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় দুবছর কারারুদ্ধ থাকেন। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে শিশু সাহিত্য সংসদের প্রতিষ্ঠাতা স্বর্গত মহেন্দ্রনাথ দত্তের কন্যা অঞ্জলির সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে প্রাইভেটে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এম. এ. পাশ করে অধ্যাপক সত্যেন সেনের তত্ত্বাবধানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্ভে ও প্ল্যানিঙ প্রোজেক্টে কর্মরত হন। পঞ্চাশের দশকের শেষের দিকে ডাইরেক্টরেট অফ ইন্ডাস্ট্রিজ-এ যোগ দেন। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা মেট্রোপলিটন প্ল্যানিং অরগানাইজেশন (সিএম.পি.ও.) গঠিত হলে তিনি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকনমিস্ট হিসাবে সেখানে যোগদান করেন, বেসিক মে্েট্রাপলিটন প্ল্যানিং তৈরিতে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।


উচ্চতর শিক্ষা

সি.এম.পি.ও থেকে ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে নেদারল্যান্ডের হেগ শহরের ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল স্টাডিজ-এ পাঠানো হয় (প্ল্যানিং সম্পর্কে বিশেষ শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা অর্জনের উদ্দেশ্যে)। সেখানে নোবেলবিজয়ী প্রফেসর টিনবার্জেনের নির্দেশনামায় তিনি অতি অল্পসময়ে নেদারল্যান্ড স্কুল অফ ইকনমিক্স থেকে ডি.এসসি. ডিগ্রি লাভ করেন (১৯৬৫)। কর্মসূত্রে কলকাতা শিল্পাঞ্চল সম্পর্কে তিনি যে ব্যাপক ও বিস্তারিত অনুসন্ধান ও পরীক্ষানিরীক্ষা করেন তারই ভিত্তিতে তাঁর থিসিস 'Implication of Capacity Utilisation: A Study of the Calcutta Metropolitan District


কর্মজীবনে উচ্চতর পদে আরোহণ

১৯৬৫ খ্রি. দেশে ফেরেন। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে জুট এনকোয়ারি কমিশনের মেম্বার-সেক্রেটারি হিসাবে তিনি কমিশণের প্রেসিডেন্ট নির্মল সেনগুপ্তের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের পাট চাষিদের অবস্থা বুঝতে গ্রামে গ্রামে ঘুরেছেন। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে গঠিত প্রথম পশ্চিমবঙ্গ প্ল্যানিং বোর্ডের সদস্য হিসাবে পাঁচ বছর অত্যন্ত উদ্যম নিয়ে কাজ করেন। ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে আইন দ্বারা গঠিত কমপ্রিহেনসিভ এরিয়া ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন (সি.এ.ডি.সি)-র তিনি প্রথম একজিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান টেগোর সোসাইটি ফর রুরাল ডেভলপমেন্ট-এর তিনি অন্যতম উদ্যোগী সদস্য হিসেবে গ্রামোন্নয়ন প্রকল্পে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে খড়গপুর আইআইটি কর্তৃপক্ষের আমন্ত্রণে সেখানের নব প্রতিষ্ঠিত গ্রামোন্নয়ন কেন্দ্রের অধ্যাপক ও পরিচালকপদ গ্রহণ করেন। এই কেন্দ্রটি যে রিসার্চ প্রোজেক্ট নেয় তার প্রধান উপপাদ্য বিষয় ছিল গ্রামের মানুষেরা চেষ্টা করলে নিজ নিজ গ্রামের পরিকল্পনা প্রণয়ন, তার বাস্তব রূপায়ণ এবং তার তত্ত্বাবধান করতে পারে। মেদিনীপুর জেলা পরিষদ উৎসাহের সঙ্গে এই রিসার্চের অংশীদার হয়। রচিত হয় ‘গ্রামবাসেিদর দ্বারা গ্রাম পরিকল্পনা- মেদিনীপুর জেলার গ্রামের মানুষ ১৯৮৬’। ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি আই.আই.টি. থেকে অবসরগ্রহণ করলেও পঠনপাঠন, স্টাডি সার্কেল, গবেষণা ও লেখা প্রভৃতি বহুমুখী কার্যকলাপে নিয়োজিত ছিলেন। ২০০১ খ্রিস্টাব্দে গঠিত নতুন প্ল্যানিং বোর্ডে গ্রামোন্নয়ন বিশেষজ্ঞ হিসেবে তিনি আমন্ত্রিত হন। পরিণত বয়সের উপলব্ধি ও সারা জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে নতুনতর গ্রামবিকাশের পরিকল্পনা-পদ্ধতি প্রতিপাদনের কাজে আমৃত্যু ব্যাপৃত ছিলেন। বহু প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সঙ্গে তিনি সক্রিয়ভাবে নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন। রিজিওন্যাল সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-এর প্রথম সম্পাদনা করেছেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল নাগরিক মঞ্চ ও এন.এ.পি.এম.-এর সঙ্গেও। তিন বছর তিনি এন.এ.পি.এম.-এর সর্বভারতীয় বুলেটিন সম্পাদনা করেন।


গ্রন্থাবলি

অসংখ্য রিপোর্ট ও পত্রিকার নিবন্ধ ছাড়াও অনেক প্রবন্ধ, মনোগ্রাম ও বই লিখেছেন। তাঁর লেখা বই: ‘মহাকাশ জয়ের রূপকথা’ (১৯৫৯ ইউনেস্কোর সহযোগিতায়); 'Calcutta and Rural Bengal- Small sector symbiosis' (১৯৭৮-এ I.L.O. প্রকাশিত); `Economics and Politics of Rural Poverty: A Case Study of Rural-Assam and West Bengal' (১৯৯০); ‘পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি ও অর্থনীতি’ (২য় সং. ২০০৩)।



তথ্যসূত্র: সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান।