মুক্তিযুদ্ধে ভোলা

Barisalpedia থেকে
Spadmin (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৪:০৫, ২৩ মার্চ ২০১৬ পর্যন্ত সংস্করণে ("তৎকালীন বরিশাল জেলাধীন ভোলা মহকুমায় মুক্তিযুদ্ধের ৯ মা..." দিয়ে পাতা তৈরি)

(পরিবর্তন) ←পুর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ→ (পরিবর্তন)

তৎকালীন বরিশাল জেলাধীন ভোলা মহকুমায় মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস অত্যন্ত ঘটনাবহুল। ২৬ মার্চ স্থানীয় এমপিএ মোশাররফ হোসেন শাহজাহানের বাসভবনে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠন বিষয়ে এক সভা হয়। ২৭ মার্চ হাবিলদার সিদ্দিকুর রহমানসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে অস্ত্রের জন্য ট্রেজারিতে গমন করেন। এসডিও তাদের গুলিসহ ৭৫টি রাইফেল দেন। তৌফিক আলী তখন ভোলার এসডিও ছিলেন। ২৮ মার্চ যুবক-ছাত্রদের প্রশিক্ষণ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বরিশাল থেকে মেজর জলিল একদল মুক্তিযোদ্ধা পাঠাতে বলেন। এমএল ভোলা-৩ লঞ্চে হাবিলদার সিদ্দিকুর রহমান ও জব্বার বরিশাল যাত্রা করেন। তাঁরা বরিশাল, খুলনা ও সুন্দরবনে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন।

ভোলায় ছাত্র-জনতার প্রশিক্ষণ

১৯৭১ সালের ৪ মার্চ ভোলা কলেজ মাঠে প্রথম প্রশিক্ষণ শুরু হয় কলেজের ডামি রাইফেল দিয়ে। ৭ মার্চের পর প্রশিক্ষণের হার বৃদ্ধি পায়। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার পর যুদ্ধ প্রস্তুতি চলছে। ভোলায় বাংলা স্কুল, সরকারি স্কুল ও কলেজে প্রশিক্ষণ দেয়ে হতো। প্রশিক্ষকদের নামে তালিকা: ১. সুবেদার গাজী জয়নাল আবেদীন; ২. নায়েক আবদুর রব; ৩. বশির আহমদ; ও ৯. সিপাহী শাহজাহান। ভোলা সরকারি স্কুল মাঠ, কলেজ মাঠে প্রশিক্ষণ চলে। প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীদে খাবার ব্যবস্থা করেন মোশাররফ হোসেন শাহজাহান ও অন্যান্যরা। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম ট্রেনিং সেন্টার বাংলাবাজার। বাংলাবাজার মাদ্রাসা মাঠে ট্রেনিং ও সভা হতো। হাবিলদার আফসার উদ্দিনের নেতৃত্বে গড়ে উঠে এ কেন্দ্র।


হানাদার বাহিনীর কাছে ভোলার প্রাকযুদ্ধ পতন

১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল বরিশালের পতন হয়। পাকবাহিনী শহর দখল করে নেয়। নেতৃবৃন্দও মুক্তিযোদ্ধারা ভারতে ও নিরাপদ স্থানে চলে যায়। জেলার নেতৃবৃন্দকে তারা কোনো দিকনির্দেশনা দিতে ব্যর্থ হন। ভোলার এমএনএ ও এমপিএগণ নিরাপদ স্থানে চলে যান। বরিশালের এডিসি জেনারেল কাজী আজিজুল ইসলাম ভোলায় অবস্থান করছেন।২৭ এপ্রিল মোশাররফ হোসেন শাহজাহান এমপিএ মাইকে ট্রেজারীর অস্ত্র ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেন। অনেকে অস্ত্র জমা দেন। মোশাররফ হোসেন নিরাপদ স্থানে চলে যান। ভোলা শহর অরক্ষিত যে কোনো মুহূর্তে পাকবাহিনী আসতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল বলে যে তারা ট্রেজারির অর্থ নিয়ে যুদ্ধের জন্য অস্ত্র ক্রয় করবে। আর এক দল এ প্রস্তাবে বাঁধা দেয়। ফলে কয়েকজন তরুণ মুক্তিযোদ্ধাকে জীবন দিতে হলো। ভোলা ট্রেজারিতে ৩ কোটি টাকা জমা ছিল। ২৯ এপ্রিল বৃহস্পাতিবার এই ভোলা ট্রেজারি ট্রাজেডি ঘটে। ১৯৭১ সালের ৩ মে পাকিস্তান বাহিনী বরিশাল হতে বিনা বাধায় ভোলা আসে। লঞ্চঘাটে তাদের ফুলের মালা দিয়ে অভ্যর্থনা জানায় মুসলিম লীগ নেতা শাহ মোঃ মতিউর রহমান, হাজী খোরশেদ আলী, ইলিয়াস মাস্টার প্রমুখ। পাকবাহিনী যুগীরখোলাস্থ ওয়াপদা রেস্ট হাউজে ক্যাম্প স্থাপন করে। কয়েকদিনের মধ্যে সুবেদার আবদুল মান্নান তার কয়েকজন অনুসারী নিয়ে পাকবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করে। এই মান্নানই ট্রেজারিতে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধকে গুলি করে হত্যা করে। মুসলিম লীগ ও জামায়াত পাক বাহিনরি আহ্বানে ভোলায় শান্তি কমিটি গঠন করে। ভোলায় জামায়াতে ইসলাম ও ছাত্রসংঘ আল বদর বাহিনী গঠন করে। বদর বাহিনী, রাজাকার, শান্তি কমিটি পাক বাহিনীর সাথে গণহত্যা চালায়। পাক বাহিনীর দোসর আবদুল্লাহ মৌলভী ছিল ভোলার ত্রাস। পাক বাহিনী, রাজাকার, শান্তি কমিটি হিন্দুদের বাড়িঘর লুট হত্যা, ধর্ষণ চালায়। পাকবাহিনী রাজাকারদের সহযোগিতায় শান্তি কমিটির সাহায্যে জেলার বিভিন্ন থানা থেকে স্বাধীনতা কর্মীদের ধরে এনে ভোলা খেয়াঘাট লঞ্চ টার্মিনালে লাইন দিয়ে দাঁড় করে গুলি করে ও বেয়নেট চার্জ করে হত্যা করে নদীতে ফেলে দেয়। অনেককে ওয়াপদাতে নির্যাতন করে হত্যা করে ওয়াপদার পেছনে দেয়ালের বাইরে মাটি চাপা দেয়। পাকসেনারা গ্রাম থেকে মেয়েদের ধরে এনে নির্যাতন করত। ওয়াপদা ও কলেজে পাশে ভোলার সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি।জুলাই আগস্ট থেকে মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর এসকল নির্যাতনের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে শুরু করে।

ওসমানগঞ্জের অপারেশন

চরফ্যাশন থানার ওসমানগঞ্জের জয়নগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বেলায়েত মিয়ার চরের বাড়ি। এ বাড়িতে হাবিলদার সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে ২৭ জন এবং সিরাজ সিকদারের দলের ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান নিয়েছেন। তাদের উদ্দেশ্য থানা দখল। মুক্তিযোদ্ধারা থানার ৯ পুলিশ ৩১ জন মিলিশিয়া মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প আক্রমণ করার জন্য ১৯৭১ সালের ৯ আগস্ট ওসমানগঞ্জে আসে। তাদের সংবাদ পেয়ে কমান্ডার সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা গাছের আড়ালে অবস্থান নেয়। থানার পুলিশ সাঁকো পার হচ্ছে এমনি সময় মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করে। যুদ্ধে পুলিশ মিলিশিয়া নিহত হলো ১১ জন এবং চরফ্যাশন থানার ওসিসহ ৯ জন ধরা পড়ে এবং ১৩টি রাইফেল উদ্ধোর হলো। অস্ত্র পেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তি বৃদ্ধি পায়। ওসমানগঞ্জে ভোলার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম যুদ্ধ। যুদ্ধের খবর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।

দেউলার যুদ্ধ, ১৫ অক্টোবর

সাঁচড়া ইউনিয়নে এক খুনের মামলা তদন্তে আসে ১৪ জন রাজাকার ও দুই পুলিশ। তারা প্রথম দেওলাকুটি চৌধুরীবাড়িতে ওঠে। তাদের সংবাদ পেয়ে কমান্ডার সিদ্দিকুর রহমান ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে বাড়ি ঘিরে ফেলেন। দুটি দল করা হলো, এক দলের নেতৃত্ব সিদ্দিকুর রহমান, দ্বিতীয় দলের নেতা শামসুল হক। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে রাজাকার-পুলিশ ভীত হয়ে আত্মসমর্পণ করে। ১২টি অস্ত্র ও গুলি হস্তগত হয়। রাজাকার-পুলিশের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ১৬ অক্টোবর পাকবাহিনী তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে দেউলা যাত্রা করে। তাদের আগমনের সংবাদ পেয়ে কমান্ডার সিদ্দিকুর রহমান মুক্তিযোদ্ধদের নিয়ে দেউলা তালুকদারবাড়ির পাশে ওঁৎ পেতে থাকে। ৫০ গজ সামনে এলে তারা হঠাৎ পাকবাহিনীকে আক্রমণ করে ৮-১০ জনকে হত্যা করে। অবশিষ্টরা পালাতে থাকে। গ্রামবাসী লাঠিলেজা নিয়ে তাদের আক্রমণ করে। দিনের ১২টা হতে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। এ যুদ্ধে ২৯ জন পাকসেনা, বোরহানউদ্দিন থানার ওসি ও দুই পুলিশ নিহত হয়। রাজাকার গ্রেপ্তার হয় ৮ জন। মুক্তিযোদ্ধারা ৪০টি অস্ত্র পায়। দেউলা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা: ১. সিদ্দিকুর রহমান, কমান্ডার; ২. মওলানা মাকসুদুর রহমান; ৩. আলহ্জ্ব শামসুল হক; ৪. মোহাম্মদ হোসেন চৌধুরী; ৫. নায়েক আছমত আলী; ৬. ল্যান্স নায়েক জিয়াউল হক; ৭. নায়েক গিয়াস উদ্দিন; ৮. হাবিলদার নাসির; ৯. বাংলাবাজারের সিদ্দিক; ১০. নায়েক শান্ত; ১১. গাজী জয়নাল আবেদীন; ও ১২.কমান্ডার শহীদুল আলমসহ শতাধিক।দেউলার যুদ্ধে বিজয়ের কাহিনী শুনে মোতাহার মাস্টার এমপিএ, রেজা-ই করিম চৌধুরী এমপিএ কমান্ডার সিদ্দিককে ধন্যবাদ জানাতে আসেন।

লালমোহন থানা দখল, ২১ অক্টোবর, ১ রমজান

দেউলা যুদ্ধে জয়লাভের পর মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস বেড়ে যায়। ভোলার দক্ষিণের থানাগুলো দখল করতে পারলে পাকসেনারা ভোলা শহরে আটকে থাকবে। তাই হাইকমান্ড সিদ্দিক লালমোহন থানা দখলের সিদ্ধান্ত নেয়। ২০ অক্টোবর রাতে খাবার শেষ করে ১শ’ জন মুক্তিযোদ্ধা লালমোহন যাত্রা করে। আজানের সময় তারা শাহবাজপুর কলেজের নিকট পৌঁছে। কমান্ডার সিদ্দিক মুক্তিযোদ্ধাদের ৪টি ভাগে বিভক্ত করেন। ১. থানার পশ্চিম দিক-দলনেতা শামসুল হক ও তার দল; ২. উত্তরে মোহাম্মদ সিদ্দিক; ৩. দক্ষিণে হাবিলদার গিয়াস উদ্দিন; ৪. পূর্ব দিকে হাবিলদার শাহু। ২১ অক্টোবর ভোর ৫টায় আরসিও অফিসের সামনে আমগাছের সাথে রাইফেল ঠেকিয়ে প্রথম গুলি বর্ষণ করার সাথে সাথে চারদিক থেকে গুলি শুরু হয়ে যায়। বিকেল ৩টা পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। পুলিশ-রাজাকার মিলিশিয়াকে মাইকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। রাজাকারের মা ও শান্তি কমিটির দ্বারা অনুরোধ করা হয়। থানার ছালাম দারোগা বলে প্রাণ থাকতে আত্মসমর্পণ করব না। দুপক্ষের গুলিতে ৪ জন পথচারী নিহত হয়। স্থানীয় এমপিএ মোতাহার মাস্টার ও নেতৃবৃন্দ মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করছেন। তিনদিক থেকে মুক্তিযোদ্ধারা থানায় প্রবেশ করে। তখন পুলিশ-রাজাকার আত্মসমর্পণ করে। থানা থেকে ৭২টি রাইফেল উদ্ধার কর হয়। লালমোহন থানার পতন হয়। দক্ষিণ ভোলা সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে যায়।


বোরহানউদ্দিন থানা দখল, ১৮ অক্টোবর ১৯৭১

দেউলা যুদ্ধের পর পাকবাহিনী বোরহানউদ্দিন থানায় অবস্থান করত না। ১৮ অক্টোবর ভোরে ১শ’ মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে কমান্ডার সুবেদার সিদ্দিকুর রহমান বোরহানউদ্দিন থানা ঘিরে ফেলেন। থানার ওসি সাদা পতাকা উড়িয়ে দেয়। আলোচনার জন্য মোতাহার উদ্দিন মাস্টার এমপিএ, রেজায়ে করিম চৌধুরী এমপিএ, সিও আজিজুল ইসলাম প্রমুখ থানার সাথে আলোচনা করে থানার লোকজনকে আত্মসমর্পণ করান। ৭০টি রাইফেল ও গোলাবারুদ মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে।মুক্তিযোদ্ধার অবস্থান ছিল এরূপ: ১. চরফ্যাশনের আবুল কাশেমের দল- বোরহাউদ্দিন হাইস্কুল মাঠ; ২.হাবিলদার মজিবুর রহমানের দল- বোরহানউদ্দিন প্রাথমিক বিদ্যালয়; এবং ৩. হাইকমান্ড সিদ্দিকুর রহমানের ৫শ’ যোদ্ধা বোরহানউদ্দিন থানার আশপাসে অবস্থান করছিল। ভারত থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দলের নিকট আধুনিক অস্ত্র ছিল। ভোলার সার্কেল অফিসার ডেভ মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বিক সহযোগিতা করতেন। মুক্তিযোদ্ধাদের ধারণা ছিল পাকবাহিনী স্থলপথে ভোলা থেকে আসতে পারে। কিন্তু নদীপথে যে আসতে পারে তা তারা ভাবেননি। ২৯ অক্টোবর ভোরে পাক আর্মিরা লঞ্চ ও গানবোটে বোরহানউদ্দিন পৌঁছে। মুক্তিযোদ্ধারা সংবাদ জানতেন না। পাকবাহিনী থানার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধারা গুলি ছুড়লে পাকবাহিনী বৃষ্টির মতো গুলি বর্ষণ করে। মুক্তিযোদ্ধা তানসেন ও জলিল পাকবাহিনীর গাড়িতে গুলি করে। পাকবাহিনী গুলি করলে তাদের শরীর গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায়। পাকবাহিনী বোরহানউদ্দিন বাজারে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে। তারা বোরহানগঞ্জও পুড়ে দেয়। তারা ২৯ অক্টোবর বোরহানউদ্দিন থানা সদর ও আশপাশে ৭১ জনকে হত্যা করে। তারা বোরহানউদ্দিনের পোস্টমাস্টার সৈয়দ আহমদকে গুলি করে হত্যা করে। পাকসেনারা দুপুরের পরে চলে যায়। একদল থেকে যায় এবং তারা সিও ডেভের অফিসে ক্যাম্প করে। বোরহানউদ্দিন থানার যুদ্ধে মুক্তিবাহিনী পরাজিত হয়ে দূরে অবস্থন নেয়। বাজার পুড়ে ধ্বংসলীলায় পরিণত হয়। এ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী: ১. কমান্ডার সিদ্দিকুর রহমান. ২. বড়ভাই আকবর আলী, ৩. জুলফিকার আলী, ৪. শামসুল হক, ৫. ইব্রাহিম মিয়া, ৬. আবুল কাশেম, ৭. মোহাম্মদ সিদ্দিক, ৮. আছমত, ৯. জিয়াউল হক, ও ১০. চুন্নু প্রমুখ।

দৌলতখান থানা দখল, ২৩ অক্টোবর

দৌলতখান থানা দখলে নেতৃত্ব দেন এয়ার সার্জেন্ট ইব্রাহিম মিয়া। এ যুদ্ধ সংঘটিত হয় ২৩ অক্টোবর ১৯৭১। ভারত থেকে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা হাজীপুরে অবস্থান কনে। থানার ওসির সাথে আলোচনা করে থানা আক্রমণের সিদ্ধান্ত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে রাতে থানা আক্রমণ করে। সকাল ১০টায় জনতা থানা ঘিরে ফেলে। বিকাল ৩টায় দারোগা হাবিবুর রহমান ও রাজাকার কমান্ডার শেরু থানা থেকে হাত উঁচিয়ে বেরিয়ে আসেন। থানার অস্ত্র মুক্তিযোদ্ধারা দখলে নিয়ে যায়। এ যুদ্ধে ফরিদপুরের মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রশীদ নিহত হন। তাকে দৌলতখানে কবর দেয়া হয়। থানা দখলে সিও ডেভ আবদুল হামিদ সাহায্য করেন। ওসি হাবিবুর রহমান পালিয়ে যায়। পাকসেনারা এসে সিও আবদুল হামিদ ও তার স্ত্রীকে নির্মমভাবে হত্যা করে।



বাংলাবাজার যুদ্ধ, ২৮ অক্টোবর

ভোলা জেলা সদরে পাকবাহিনীর অবস্থান। মুক্তিবাহিনী দক্ষিণাঞ্চলে ক্যাম্প করেছে। ভোলা শহর থেকে ৭ মাইল দূরে বাংলাবাজার ও ঘুইঙ্গারহাটে মুক্তিবাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তোলে। বাংলাবাজারে ৭৭টি এবং ঘুইঙ্গারহাট ১০টি বাংকার খনন করা হয়েছিল। পাকবাহিনী বাংলাবাজার হয়ে লালমোহন-চরফ্যাশন অভিযান চালালে তাদের বাধা দেয়া হবে। পাকবাহিনী ভোলায় সীমাবদ্ধ ছিল। অক্টোবর মাসে তারা দক্ষিণাঞ্চলে অভিযান চালায়। ২৭ অক্টোবর রাত ১২টায় ভোলা খেয়াঘাট থেকে লঞ্চযোগে বাঘমারা আসে। তাদের পথ প্রদর্শক রাজাকার কমান্ডার টন্নি ও মকবুল। পূর্বেই টন্নি ও তোফাজ্জল দখলদার মুক্তিযোদ্ধা ও কুদ্দুস মোল্লার দলের আগমনের কথা পাকবাহিনীকে জানিয়ে দেয়। ইতোপূর্বে মেহেন্দিগঞ্জ হতে কুদ্দুস মোল্লার নেতৃত্বে একটি দল বাংলাবাজারে আগমন করে। ২৭ অক্টোবর রাতে পাকবাহিনী বাঘমারা থেকে দু’ভাভে বিভক্ত হবে-একটি দল বাংলাবাজার আর একটি দল ঘুইঙ্গারহাট চলে যাবে। বাংলাবাজারে মুক্তিযোদ্ধাদের ৩টি দল ছিল। কমান্ডার ছিলেন কাঞ্চন মিয়া, হজরত আলী এবং কমান্ডার সিদ্দিক। পাকবাহিনী রাত তিনটায় বাংরাবাজারে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি হঠাৎ আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা বাংকারে ছিল। তারা অপ্রস্তুত এবং ৩০৩ রাইফেল ব্যতীত উন্নত অস্ত্র ছিল না। বাংকারে বাংকারে ব্রাশ ফায়র করে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করা হচ্ছে-এ সময় কোন উপায় না দেখে কমান্ডার কাঞ্চন মিয়ার ইঙ্গিতে মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু বাংকারের প্রায় সকলে শহীদ হন। রাতে পাকবাহিনীর অতর্কিত হামলায় ৬০ জন মুক্তিযোদ্ধ নিহত এবং প্রায় ১শ’ স্থনীয় লোক নিহত হয়। সুরক্ষিত বাংলাবাজার মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প পর্যুদস্ত হয়ে যায়। এত বড় বিপর্যয় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আমাদের জানামতে আর কোথাও হয়নি। বাংলাবাজার যুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ১. মোঃ ফজর আলী, ২. শাহে আলম, ২. আনোয়ার আলী, ৩. খোরশেদ আলী, ৪. দাইমুদ্দিন, ৪. দরবেশ আলী, ৫. রেনু বেগম, ৬. খোরশেদ আলম-২, ৭. তাজুল ইসলাম, ৮. মোঃ ফরিদ, ৯. মোঃ মোস্তাফিজ, ১০. আবদুল বারেক সুবেদার, ১১. আলমগীর, ১২. তোফায়েল আহমদ, ১৩. মোঃ মোজাফফর, ১৪. শামসুল হক শরীফ, ১৫. মোজাফফর আহমদ, ১৬. হাসমত আলী, ১৭. খোরশেদ আলম-৩, ১৮. মোজাম্মেল বেপারী, ১৯. য়ৈদ আহমদ, ২০. সেকান্দার আলী, ২১. শহীদুল হক, ২২. মোহাম্মদ সিরাজী, ২৩. আবদুল জব্বার বেপারী, ২৪. আবদুল হক, ২৫. ডা. সৈয়দ আহমদ, ২৬. আবুল হোসেন, ২৭. আবদুল বারেক, ২৮. আকরাম আলী, ২৯. আবদুল মুনাফ।ভোলার বাইরের মুক্তিযোদ্ধাদের ঠিকানা পাওয়া না যাওয়ায় তাদের নাম লেখা হয়নি। বাংলাবাজার যুদ্ধে পরাজয়ের প্রধান কারণ নেতৃত্বের কোন্দল। ১৮ অক্টোবর ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ভোলায় ফিরে আনসার এ্যাডজুটেন্ট আলী আকবর নিজেকে বড়ভাই পরিচয় দিয়ে ভোলায় মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্বে দাবি করেন। মুজিবনগর সরকার তাকে এ ব্যাপারে বৈধতা দিয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। ভোলা রণাঙ্গনে কোনো কমিশন্ড অফিসার না থাকায় এনসিওদের মধ্যে যে সিনিয়র তিনি কমান্ডার হবেন। এমপিএ মোতাহার মাস্টার ও রেজাউল করিম চুন্নু মিয়ার উপস্থিতিতে বৈঠক হয়। দুই প্রাদেশিক সংসদ সদস্য মুজিবনগরের নিয়োগপত্র দেখে আলী আকবরকে কমান্ডার হিসেবে স্বীকৃতি দেন। হাবিলদার সিদ্দিকুর রহমানকে সেকেন্ড ইন কমান্ডারের দায়িত্ব দেয়া হয়। আলী আকবর দায়িত্ব পেয়ে প্রথমেই ভুল করলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে দিয়ে। কমান্ডার ইব্রাহিমকে পাঠালেন ঘুইঙ্গারহাট, নাজু মিয়াকে চৌকিঘাট, সিদ্দিকুর রহমানকে পাঠালেন বোরহানউদ্দিন, হাবিলদার শামসুল হককে পাঠালেন আব্বাস সর্দারের বাড়ির ক্যাম্পে। মুক্তিযোদ্ধারা বিভক্ত হয়ে বাংলাবাজার যেদিন ছেড়েছেন সেদনি রাতেই পাকবাহিনী বাংলাবাজার আক্রমণ করে। ভোলা থেকে এসডিও অফিসের সালাম কাজী সংবাদ দেন যে, পাকবাহিনী বাংলাবাজার আক্রমণ করতে পারে, কারণ তারা কয়েকটি গাড়ি রিকুইজিশন করেছে। কমান্ডার আলী আকবর-এ সংবাদের গুরুত্ব দেয়নি। বাংকারগুলো ছিল উত্তরমুখী পাকবাহিনী ভোলা থেকে দক্ষিণে আসবে- পশ্চিম দিকে নদীপথে আসতে পারে-এ ধারণা তাদের ছিল না। বাংকারের কোনো গোপনীয়তা ছিল না। টন্নির লোকজন বাংকারের অবস্থান জানে। দু’দিক থেকে পাকবাহিনী বাংকার আক্রমণ করে এবং বেয়নেট দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করে। দেউলার কমান্ডার সিদ্দিকুর রহমান এবং বাংলাবাজারের সিদ্দিক ২৭ অক্টোবর চলে যান শশীগঞ্জ অস্ত্র আনতে। ঐদিন সন্ধ্যায় গুজব ছড়ানো হয় যে, কুদ্দুস মোল্লার দল আসবে। কিন্তু তারা আসেনি। দক্ষিণ দিঘলীর চেয়ারম্যান মোঃ টন্নি, দালাল শামসুল হক ও মকবুল পাকবাহিনীর সাথে পরিকল্পনা করে একটি লঞ্চ ও গানবোট নিয়ে নদীপথে বাংলাবাজার যাত্রা করে। কমান্ডার ছিলেন লে. কর্নেল জানজেব খান। তার সাথে কিল ক্যাপ্টেন আলতাফ হোসেন ও ক্যাপ্টেন তারেক। পাকবাহিনী তিন ভাবে বিভক্ত হয়ে বাংলাবাজার আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা মাদ্রাসার পিছন থেকে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। পাকবাহিনী সমস্ত বাংলাবাজার পুড়ে ফেলে। এই বিপর্যয়ের পর কমান্ডার সিদ্দিককে পুনরায় ভোলার দায়িত্ব দেয়া হয়।

ঘুইঙ্গারহাট যুদ্ধ, ২৭-২৮ অক্টোবর

ভোলা থেকে ৫ মাইল দক্ষিণে ঘুইঙ্গারহাট। পাকবাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য ঘুইঙ্গারহাটে ১০টি বাংকার খনন করা হয়। ২৭ অক্টোবর পাকবাহিনী লঞ্চে বাগমারা এসে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। একদল বাংলাবাজার যায় আর একটি দল ঘুইঙ্গারহাট যায়। ঘুইঙ্গারহাট সংলগ্ন শরৎ ডাক্তারের বাড়ি মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প, কমান্ডার ফারুক বাচ্চু। ২৭ অক্টোবর তিনি কয়েকজনকে পাহারায় রেখে ক্যাম্পে চলে যান। তিনি কমান্ডার আলী আকবরের নির্দেশের অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু কোনো নির্দেশ আসেনি। পাকবাহিনী ছদ্মবেশে রাজাকারদের নিয়ে ঘুইঙ্গারহাটে পৌঁছে। তারা কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ধরে ফেলে। খবর পেয়ে ফারুক বাচ্চু মুক্তিযোদ্ধা মনির হোসেনের নেতৃত্বে ৫০ জনের একদি দল হাটে পাঠালেন। পাকবাহিনী বাগানে পালিয়ে ছিল। মনিরের দল কাছে এলে পাকসেনারা গুলিবর্ষণ করে এবং মনির ও শামসুদ্দিন ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করে। ডা. আবুল বাশারসহ কয়েকজন আহত হন। পরে বৈঠক করে মুক্তিযোদ্ধারা পাঁচভাগে বিভক্ত হয়ে চারদিক থেকে পাক আর্মিকে আক্রমণ করে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত গোলাগুলি চলে। এক ফাঁকে পাকবাহিনীর অনেকে গাড়িতে পালিয়ে যায়। ১৫ জন পাক সৈন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তারা ধরা পড়ে এবং অনেকে নিহত হয়। আস্তে আস্তে জনতা ও মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। সম্পূর্ণ হাট মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে। ঘুইঙ্গারহাট যুদ্ধে শহীদ হলেন:১. মনিরুল এসলাম এলএমজি চালক, ২. আবদুল মান্নান, ৩. চাপরাশী, ৪. দিলীপ, ৫. শামসুদ্দিন, ৬. খলিলুর রহমান ও ৭. উত্তম।


গুপ্তগঞ্জ যুদ্ধ, ১০ অক্টোবর

১৯৭১ সালে দৌলতখান থানায় এক প্লাটুন পাক আর্মি অবস্থান করত। তারা ১০ অক্টোবর গুপ্তেরবাজারে লুট করতে য়ায়। তাদের সাথে ছিল দেশীয় রাজাকার। আনসার কমান্ডার আলী আকবরের দলের নায়েক নূরুল ইসলাম মানিক ওরফে শিশু, ল্যান্স নায়েক খোরশেদ আলম, শহীদ, মোখলেছুর রহমান, কাঞ্চন মিয়াসহ ৮ জন বাগানে লুকিয়ে ছিল। বাজার লুট করে পাকবাহিনী ফিরছিল। এমন সময় মুক্তিযোদ্ধারা তাদের আক্রমণ করেন। ৯ জন পাকসেনা ঘটনাস্থলে নিহত হয়। কয়েকজন পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে জনতার হাতে ধরা পড়ে মৃত্যুবরণ করে।


গুরুচৌকা খালের যুদ্ধ, ১৭ নভেম্বর

১৭ নভেম্বর কমান্ডার আলী আকবর জানায় যে, একদল পাকসেনা নৌকায় গরুচৌকা খাল দিয়ে ভোলার দিকে যাচ্ছে। তারা সন্দ্বীপ থেকে আসছে। দলনেতা ১৯ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে সকাল ১১ টায় আক্রমণ করে। দুদলের মধ্যে সন্ধ্যা পর্যন্ত গুলি বিনিময় হয়। ক্ষিরোদ চন্দ্র ও ল্যান্স নায়েক মোঃ হানিফ গ্রেনেড চার্জ করার জন্য পাকসেনাদের নৌকার কাছে গেলে পাকবাহিনীর সুবেদার আবদুল মালেক চিৎকার করে আত্মসমর্পণের ঘোষণা দেয়। ওবায়েদ মিয়ার নির্দেশে ১৮ জন পাকসেনা ও ১৩ জন রাজাকার আত্মসমর্পণ করে। হাজার হাজার গ্রামবাসী তাদের ঘিরে ফেলে। তাদেরকে পরবর্তীতে বরিশালে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

চালতাতলার যুদ্ধ, ২৯ অক্টোবর

বাংলাবাজার যুদ্ধের পরে মুক্তিযোদ্ধারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। একটি দল ইয়াসিন জমাদারের নেতৃত্বে চালতাতলার ফকিরবাড়িতে আশ্রয় নেয়। পাকবাহিনী জয়লাভ করে বিভিন্ন থানায় ছড়িয়ে পড়ে। ২৯ অক্টোবর দুপুরে পাকবাহিনীর একটি দল দৌলতখানের দিকে যাচ্ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের জন্য ফকিরবাড়িতে ওঁৎ পেতে থাকে। কাছাকাছি এলে মুক্তিযোদ্ধারা গুলি বর্ষণ করে ও তজন রাজাকার ধরাশায়ী করে। পরে পাকবাহিনী প্রচন্ড গুলিবর্ষণ করলে মুক্তিযোদ্ধারা পালিয়ে যান। এ যুদ্ধে ১জন আনসার ও ফকিরবাড়ির ১জন বৃদ্ধ মারা যান। এ যুদ্ধে অংশ নেন হজরত আলী, শহীদুল আলম, আনসার আলী প্রমুখ। ভোলা দ্বীপ মুক্ত হয় ১৯৭১ সারের ১০ ডিসেম্বর। বরিশাল মুক্ত হয় ৮ ডিসেম্বর। ভোলায় অবস্থনরত পাকবাহিনী ভীত হয়ে ১০ ডিসেম্বর প্রত্যূষে শান্তি কমিটির নেতা ও রাজাকারদের নিয়ে কার্গো লঞ্চে পালিয়ে যায়। পালাবার পথে ভেদুরিয়া ও চর শামাইয়া এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারা তাদের আাক্রমণ করেন। তারা গোলাবর্ষণ করতে করতে ঢাকায় যাবার চেষ্টা করে। শান্তি কমিটি ও রাজাকারদের বিভিন্ন চরে নামিয়ে দেয়। চাঁদপুরের নিকট মিত্র বাহিনীর বিমান হামলায় লঞ্চটি ডুবে যায়। পাকবাহিনী পলায়নের পর হাজার হাজার মানুষ ১০ ডিসেম্বর ভোরে ভোলা শহরে প্রবেশ করে এবং বিজয় উৎসব করে। তাদের জয় বাংলা স্লোগানে ভোলার আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়ে উঠে।


তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (দ্বিতীয় খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১৫।

          ২। মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম মনজুর। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে দক্ষিণাঞ্চল। গতিধারা, ঢাকা। ২০১৬।