"বাকেরগঞ্জ জেলা"-এর বিভিন্ন সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

Barisalpedia থেকে
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
মোগল ও নবাবী আমলে বাকেরগঞ্জ ও পটুয়াখালী জেলা বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ নামে পরিচিত ছিল। একজন ফৌজদার বাকলার শাসনকর্তা ছিলেন। তিনি ঢাকায় থাকতেন। কোন মোগল কর্মচারী বাকলায় স্থায়ীভাবে বাস করেননি। তারা এ অঞ্চ হতে প্রচুর অর্থ আদায় করে ঢাকায় বাস করতেন। পলাশী যুদ্ধের পর বাকেরগঞ্জের স্বাধীনচেতা জনগণ ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। কয়েকজন ইংরেজ বিদ্রোহীদের হাতে প্রাণ হরায়। বিদ্রোহীদের দমন করার জন্য ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাকেরগঞ্জকে নিয়ে একটি স্বতন্ত্র জেলা গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয়। বাকেরগঞ্জ ঢাকা জেলার অন্তর্ভূক্ত ছিল। ভারতের গভর্নর জেনারেল স্যার জন শোর ১৭৯৭ খ্রিঃ ঢাকা জেলার দক্ষিণাঞ্চল বর্তমান বাকেরগঞ্জকে একটি জেলা হিসেবে ঘোষণা করেন। ১৭৯৭ খ্রিস্টাব্দের ৭ নম্বর রেগুলেশন দ্বারা সুন্দরবন কমিশনার পদ বিলুপ্ত করে বাকেরগঞ্জকে একটি জেলা করা হয়। ১৭৯৭ খ্রিস্টাব্দের ৭ নম্বর রেগুলেশনে ঢাকা-জালালপুর জেলাকে দু’ভাগে বিভক্ত করা হয়। উত্তর ভাগ জেলা ঢাকা জালালপুর (বর্তমান ফরিদপুর) এবং দক্ষিন ভাগ বাকেরগঞ্জ জেলা নামে অভিহিত হয়। ৭ নম্বর রেগুলেশনে ১ নম্বর সেকশনে বাকেরগঞ্জ জেলা গঠনের উদ্দেশ্যে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। রেগুলেশনে বলা হয়েছে যে, বাকেরগঞ্জের সুন্দরবন কমিশনারের ম্যাজিষ্ট্রেটের ক্ষমতাছিল কিন্তু তার দেওয়ানী ক্ষমতা ছিল না। সুন্দরবন ও পার্শ্ববর্তী এলাকা যা এতদিন তার অধীনে ছিল সেখানে কার্যকরী আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা বাকেরগঞ্জ জেলা গঠনের অন্যতম উদ্দেশ্য। ঢাকা জেলাকে প্রথমে াকা ও ঢাকা জালালপুর জেলায় ভাগ করা হয়। ঢাকা বর্তমান ঢাকা জেলা নিয়ে এবং বাকেরগঞ্জ ও ফরিদপুর নিয়ে ঢাকা-জালালপুর জেলা গঠিত ছিল। ১৭৯৭ খ্রিঃ ঢাকা জালালপুরের দক্ষিণ ভাগ নিয়ে বাকেরগঞ্জ জেলা গঠন করা হয়। বাকেরগঞ্জ জেলায় ১৭৯৭ খ্রিস্টাব্দের ১০টি থানা ছিল: ১. বারৈকরণ, ২. আঙ্গারিয়া, ৩. বাউফল, ৪. খলিসাখালী, ৫. চান্দিয়া, ৬. বুখাইনগর, ৭. নলচিরা, ৮. কেওয়ারী, ৯. কাউখালী এবং ১০. টেগরা। ঢাকা জালালপুর পরে ফরিদপুর জেলা নামে অভিহিত হয়। বাকেরগঞ্জ, পটুয়াখালী, মাদারীপুর, কোটালীপাড়া, বাগেরহাটের কচুয়া, মোরেলগঞ্জ ও ভোলা নিয়ে বাকেরগঞ্জ জেলাধীন ছিল। বাকেরগঞ্জ জেলা উত্তরে চাঁদপুর, পূর্বে নোয়াখালী, পশ্চিমে বাগেরহাট এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগ পর্যন্ত বিস্তৃত ছির। জেলার আয়তন ছিল ৪৩০০ বর্গমাইল। বাকেরগঞ্জ জেলা ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত ছিল। বাকেরগঞ্জ জেলার প্রশাসন সম্পর্কে এইচ. বেভারিজ ছিলেন: “The Civil Judges of Bakarganj had, I belive, Magisterial powers also. I do not know the exact nature of the office of Commissioner of Bakarganj, but I believe he had at first only preventive powers, and did not acquire judicial powers until 1794. These seem to have been conferred by the replealed Regulation 9 of 1793, the preamble to which gives a resume of the various judicial systems. The same Regulation (sect. 40) makes Bakarganj one of the stations of the Dacca Court of Circuit. The office of Commissioner was abolished by Regulation 7 of 1797, which divided Dacca Jalalpur into two divisions- the northern to be denominated the zilla of Dacca Jalalpur (now Faridpur), and the sourthern dividison the zilla of Bakarganj.” Section I states that one object of the Regulation is “to provide for the more effectual administration of justice in the Sundarbans and the district adjacent, heretofore included in the jurisdiction of the Commissioner of Bakarganj, who was invested with the powers of a Magistrte, but was not authorized to exercise any civil jurisdication.”
+
বাকেরগঞ্জ (বৃটিশ আমল): বাকেরগঞ্জ বর্তমানে বরিশাল জেলার একটি থানার নাম। তবে পূর্ববর্তীতে ১৭৪০ সালে এটি সরকার বাকলার অন্তর্গত বুজুর্গ উমেদপুর পরগণার কেন্দ্র একটি বিখ্যাত বন্দর ছিল। পরবর্তীতে ১৭৯৭ সালে এই নামে বৃটিশ সরকার এতদঞ্চলে একটি জেলা গঠন করেন এবং বাকেরগঞ্জ বন্দরটি জেলার সদর দপ্তরে পরিণত হয়। ১৮০১ সালে বাকেরগঞ্জের সাথে যোগাযোগের নদী নাব্যতা হারালে বরিশাল (বা গিরদে বন্দর) শহরে বাকেরগঞ্জ জেলার সদরদপ্তর স্থাপিত হয়। সদর দপ্তর বরিশাল হলেও জেলার নাম বাকেরগঞ্জই থেকে যায়। 
  
Mr. Middleton is said to have removed the offices from Baroikaran to Bakarganj. Probably this was in 1792, when he was appointed Commissioner. Mr. Middleton remained at Bakarganj till 1800, when he was succeeded by Mr. Spedding, who agian was succeeded by Mr. Wintle who removed (1801) the offices to Barisal.
 
  
The town of Bakarganj stands on a small river called the Srimantapur Khal. The situation can never have been very healthy or pleasant, and it became worse in consequence of the formation of a char in front of the cutcheries. Its advantages were that it was central, that it had a large market, and that it was near the Golabari, where the tahsildar of Buzurgumedpur had his cutchery, and the Portuguese settlement of Sibpur. Very few remains of the old buildings now exist. The cutcheries appear to have been situated where the thana now is, and there is still a brick terrace there. The jail was higher up the khal, and on the bank of a small stream which is still called the Jailkhana khal. There was a good deal of correspondence about the change of iste. Mr. Middleton recommended Mohanganj, but eventually Barisal was fixed upon. A letter of Nizamat Adalat, dated 1st May 1801, directs the Magistrate to remove to Barisa, which was the place recommended by the Dacca Court of Circuit. See also letter of 29th April 1801 to the Governor-General. It must, I think, be admitted that the new site was well chosen, and that it has stood the test of time very well, as Barisal is about the healthiest and most-conveniently situated town in the district. ১০
+
== নামকরণ ==
+
বাকেরগঞ্জের প্রথম জজ ম্যাজিষ্ট্রেট হলেন সুন্দরবন কমিশনার স্যামুয়েল মিডলটন। তিনি ১৮০০ খ্রিঃ পর্যন্ত বাকেরগঞ্জে ছিলেন। তিনি দীর্ঘ ৮ বছর ধরে তার স্ত্রীকে নিয়ে বাকেরগঞ্জ বন্দরে বাস করেন। তার একমাত্র ইংরেজ প্রতিবেশ ছিলেন সিভিল সার্জন হারপার। ১৭৯৭ খ্রিঃ জেলা হলেও ১৮১৭ খ্রিঃ পূর্বে বাকেরগঞ্জ স্বতন্ত্র জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ঢাকার কালেক্টর বাকেরগঞ্জের কালেক্টর ছিলেন। একজন সহকারী কালেক্টর বাকেরগঞ্জে থাকতেন এবং তিনি জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের অধীনে কালেক্টরের দায়িত্ব পালন করতেন। মিঃ ডে ১৭৮৫ খ্রি তার স্থলে ডগলাস ঢাকার কালেক্টর হয়ে আসেন। তার সময় এ জেলায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু হয়। ১৭৯৭ হতে ১৭৯৫ খ্রিঃ পর্যন্ত টমসন এবং ১৭৯৬ খ্রিঃ হতে ১৭৯৮ খ্রিঃ পর্যন্ত আর্মষ্ট্রং ঢাকার কালেক্টর ছিলেন। ১৭৯৮ খ্রিঃ মেসি ঢাকার কালেক্টর হয়ে আসেন। তার সময় ১৭৯৯ খ্রিঃ চন্দ্রদ্বীপ পরগণা নিলামে বিক্রি হয়। ১৭৯৭ খ্রিঃ হতে বাকেরগঞ্জে একজন সহকারী কালেক্টর ছিল। মিঃ ই বেইজ বাকেরগঞ্জের প্রথম সহকারী কালেক্টর। তার স্থলে মিঃ লী ওয়ারনার এবং তারপর পিগু সহকারী কালেক্টর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৮১৭ খ্রিঃ বাকেরগঞ্জ পৃথক কালেক্টরেটের মর্যাদা লাভ করে এবং উইলিয়ম হান্টার সহকারী কালেক্টর ফ্রেজারের নিকট হতে কালেক্টর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৮১৭ খ্রিঃ বাকেরগঞ্জ বঙ্গদেশে একটি পূর্ণাঙ্গ জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
+
  
বাকেরগঞ্জে প্রথম জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মিডলটন দক্ষ শাসক ছিলেন না। ১৮০১ খ্রিঃ মিডলটন বদলি হয়ে যান এবং তার স্থলে স্পীডিং জজ-ম্যাজিষ্ট্রেট হয়ে আসেন। ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের ৯ নভেম্বর রেগুলেশন দ্বারা বাকেরগঞ্জকে ঢাকা কোর্ট অব সারকুইটের অন্যতম কেন্দ্র করা হয়। বিচারকরা পাল্কিতে চড়ে কোর্টে যেতেন। পাল্কি বহন করতে অস্বীকার করায় ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জুলাই সারকুইট জজ ক্রিসপ কয়েকজনকে আদালত অবমাননার দায়ে ১৫ দিন শাস্তি প্রদান করেন। ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের ২৫ ডিসেম্বর সারকুইট জজ মিঃ রেয়ার্ড পাাল্কি বহন করতে অস্বীকার করায় বাকেরগঞ্জের তিন জনকে ১৫ দিন কারাদন্ড প্রদান করেন। বরিশালের লোক স্বাধীনচেতা ও সম্পদশালী ছিল তাই তারা ইংরেজদের পাল্কি বহন করতে অস্বীকার করে। যখন বাংলার উদীয়মান ধনিক, বণিক ও জমিদারেরা ইংরেজদের পদলেহনে ব্যস্ত, তখন বাকেরগঞ্জের বিদ্রোহী কৃষক জনতা ইংরেজ শাসকদের ঘৃণা করত। তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছে। এমনকি তারা জেলের ভয় দেখানো সত্ত্বেও ইংরেজদের সেবা করতে রাজি হয়নি।
+
১৭৪০ খ্রিস্টাব্দে আলীবর্দী খাঁ আগাবাকেরকে চট্টগ্রামের ফৌজদার ও সরকার বাকলার অন্তর্গত বুজুর্গ উমেদপুর পরগণার জমিদারী প্রদান করেন। এই জমিদারির সদর দপ্তর হিসেবে আগা বাকেরের নামানুসারে বাকেরগঞ্জ বন্দরের পত্তন হয়। পলাশী যুদ্ধের পর বাকেরগঞ্জের স্বাধীনচেতা জনগণ ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। কয়েকজন ইংরেজ বিদ্রোহীদের হাতে প্রাণ হারায়। বিদ্রোহীদের দমন করার জন্য ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাকেরগঞ্জকে নিয়ে একটি স্বতন্ত্র জেলা গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয়।
  
১৮০০ খ্রিস্টাব্দের শেষ ভাগে স্পীডিংয়ের স্থলে জন উইন্টল বাকেরগঞ্জের জজ-ম্যাজিষ্ট্রেট নিযুক্ত হন। তিনি ১৮০১ খ্রিস্টাব্দের ২৪ ফেব্রুয়ারি জজকোর্ট উদ্বোধন করেন। মিডলটন ম্যাজিষ্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করতেন। ১৮০১ খ্রিস্টাব্দেই উইন্টল প্রথম জেলা জজের কাজ করতে শুরু করেন। ১৮০২ খ্রিস্টাব্দের ৭ জানুয়ারি উইন্টল রাজস্ব বোর্ডের নিকট জেলার প্রশাসন ও সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে এক প্রতিবেদন পাঠিয়েছিলেন। তার বিবরণে দেখা যায় ১৭৯৭ খ্রিঃ এপ্রিল মাসের পূর্বে সিভিল কোর্টগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বাকেরগঞ্জ সিভিল কোর্ট ১৭৮১ খ্রিঃ শুরু হয়েছিল। কিন্তু এ কোর্টের ক্ষমতা সীমিত ছিল। কর্নওয়ালিশের শাসন সংস্কার ও নতুন জেলার কাঠামো অনুযায়ী সিভিল কোর্টের কাজ ১৭৯৭ খ্রিস্টাব্দেই শুরু হয়। ১৮০১ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে জজকোর্ট বন্ধ ছিল কারণ এ সময় কোর্ট বরিশালে স্থানান্তরিত হয়। বাকেরগঞ্জ নদীতে চর পড়ে যাওয়ায় নদীপথে যাতায়াত জটিল হয়ে পড়ে। তাই বাকেরগঞ্জ জেলা সদর দপ্তর ১৮০১ খ্রিঃ বরিশালের স্থানান্তরিত করা হয়।১১ উইন্টল বরিশাল শহরে জেলখানা, দেওয়ানী ও ফৌজদারী ভবন, বন্দর রোড, চকবাজার রোডে কয়েকটি পুল নির্মাণ ও পুকুর খনন করেন। ১৮০১ খ্রিস্টাব্দের মে মাস হতে ডিসেম্বরের মধ্যে উইন্টল বাকেরগঞ্জ হতে সদর দপ্তর বরিশালে স্থানান্তরিত করেন। তিনি ১৮০২ খ্রিস্টাব্দের ৭ জানুয়ারি বোর্ডের নিকট বরিশাল সম্পর্কে এক বিস্তারিত বিবরণ দাখিল করেন।১২ উইন্টল তার বিবরণে বরিশালের জনগণের চরিত্র সম্পর্কে বন্ডাহীন মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, এ জেলার নারী-পুরুষ রাগী, সামান্য কারণে খুন করতে পারে এবং চুরি-ডাকাতি তাদের পেশা। জনগণ ইংরেজ শাসনামলে শান্তিতে আছে এবং তারা হিন্দু বা মোগল যুদের তুলনায় অধিক স্বাধীনতা ভোগ করে। ষ্ট্যাম্প ফী প্রবর্তনের ফলে মামলাল সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। ষ্ট্যাম্পের মূল্য খুব বেশি ছিল। ২ টাকা দাবি মামলার জন্য একজন অভিযোগকারীকে ষ্ট্যাম্প ফীসহ ৭ টাকা ৬ পয়সা খরচ করতে হতো। ওকালতনামার মূল্য ছিল ৪ পয়সা। উকিলেরা মামুলিভাবে মামলা পরিচালনা করত এবং তাদের মধ্যে কোন প্রতিভাশালী উকিল ছিল না। অপরাধ দমনের জন্য তিনি তিন বা চারটি থানা স্থাপনের প্রস্তাব করেন।
 
  
উইন্টল লিখেছেন যে চন্দ্রদ্বীপ রাজা জয়নারায়ণ ব্যতীত এ জেলায় কোন উচ্চপদস্থ ব্যক্তি নেই। নিম্নে কয়েকজন সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হলো। তারা ২৫ বা ৩০ জনের বেশি ঢাল-তলোয়ার সজ্জিত বরকন্দাজ নিয়ে যাতায়াত করতেন।
+
== জেলা হিসাবে আত্মপ্রকাশ ==
[[মিডিয়া:১. মির হোসেন উদ্দিন চৌধুরী জমিদার, নাজিরপুর।
+
২. মির আসাদ আলী চৌধুরী জমিদার, শায়েস্তাবাদ।
+
৩. শিব নারায়ণ রায়-রায়েরকাঠি         জমিদার, সেলিমাবাদ।
+
৪. রামদুলাল চক্রবর্তী-রহমতপুর         তালুকদার, চন্দ্রদ্বীপ
+
৫. বাওয়ানী প্রসাদ চক্রবর্তী-রহমতপুর তালুকদার, চন্দ্রদ্বীপ
+
৬. কির্তীচন্দ্র রায়-উজিরপুর তালুকদার, রতনদী কালিকাপুর।
+
৭. শিবচন্দ্র রায় ও কীর্তি চন্দ্র রায়-কলসকাঠি তালুকদার, আওরঙ্গপুর।
+
৮. খাজা মাহোমেদ দয়েম ও খাজা চাঁদ-তালুকদার,      সলকমিনাহ তালুক।
+
৯. বাওয়ানী প্রসাদ রায়         ব্যবসায়ী-সুতানরী।
+
]]
+
১৮০৪ খ্রিঃ উইন্টলের স্থলে গার্ডনার জজ-ম্যাজিষ্ট্রেট নিযুক্ত হন। তিনি ১৮০৪ খ্রিঃ একটি কাঁচা-পাকা জেলখানা নির্মাণ করেন। এ জেলখানার পাকা দেয়াল এবংয় খড়ের ছাউনি ছিল। তার সময় ১৮০৫ খ্রিঃ পুলিশ খাতে ৩৩৩৬০ টাকা খরচ হয়। ১৮০৫ খ্রিঃ অসওয়ালড ম্যাজিষ্ট্রেট হয়ে আসেন। ১৮০৬ খ্রিঃ বরিশাল জেলখানায় ৮০০ হতে ৯০০ বন্দী ছিল। তিনি লিখেছেন যে, ১৮০৬ খ্রিঃ জেলখানায় ৬০ থেকে ৮০ জন খাতক বন্দী ছিলেন। পূর্বে বন্দী খাতকের সংখ্যা অনেক বশি ছিল। জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট অসওয়ালডের সময় বাকেরগঞ্জ জেলার আয়তন বৃদ্ধি পায়। ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের ম্যাজিষ্ট্রেটের এক প্রতিবেদনে দেখা যায় বাকেরগঞ্জ জেলায় ১০টি থানা ছিল-
+
১. বারৈকরণ (বর্তমান ঝালকাঠি, নলছিটি)
+
২. আঙ্গারিয়া (বাকেরগঞ্জ)
+
৩. বাউফল
+
৪.
+
  
১৮০৬ ঢাকা জেলা হতে গৌরনদী ও বুড়ীরহাট থানা বাকেরগঞ্জ জেলাভুক্ত করা হয়। তখন গৌরনদী, কোটালীপাড়া এবং বুড়ীরহাট বাকেরগঞ্জ জেলাভুক্ত ছিল।
+
কোম্পানি ১৭৮১ খৃৃস্টাব্দে বাকেরগঞ্জে একটি সিভিল কোর্ট প্রতিষ্ঠা করে। তবে বাকেরগঞ্জের সে কোর্ট ১৭৮১ খৃৃস্টাব্দে নলছিটি থাকার বারৈকরণে প্রতিষ্ঠিত হয়। কারণ জেলা হিসেবে বাকেরগঞ্জের সদর দপ্তর হয় বর্তমান নলছিটির বারৈকরণ। কমন্স সভার ষষ্ঠ বিবরণে ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দের ৬ এপ্রিল মুদ্রিত রাজস্ব বিভাগের নির্দেশাবলীতে বাকেরগঞ্জে সিভিল কোর্ট প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে বিশদ বিবরণ আছে।
  
১৮০৭ খ্রিঃ মিঃ বেটি জজ-ম্যাজিষ্ট্রেটের দায়িত্ব গ্রহণ করে বরিশাল আগমন করেন। তিনি জেলখানার সংস্কার, পুল ও রাস্তা নির্মাণ করেন। তিনি একজন কঠোর কর্মচারী ছিলেন। ১৮১১ খ্রিঃ বাটার খালের পুলটি পুননির্মাণ করেন। মিঃ উইন্টল বাঁধ রোড নির্মাণকালে পুলটি নির্মাণ করেছিলেন। বেটি পুলটি নির্মাণ করে একটি মার্বেল পাথর স্থাপন করেন। পুলের সাথে পাথরটি এখনও আছে। পাথরে ইংরেজী, বাংলা ও ফরাসী ভাষায় লেখা আছে, ১৮১১ খ্রিস্টাব্দে পুল পুননির্মাণ করা হয়েছে। বেটির নামানুসারে বরিশাল নদী হতে শহরের মধ্যে প্রবাহিত খালটি বাটার খাল এবং পুলটিকে বোটার পুল বলা হয় থাকে। পূর্বে জমিদার ও তালুকদাররা তাদের কোষা নৌকা নদীতে না রেখে বাটার খালে রাখতেন। এ খালের পূর্ব গৌরব এখন নেই। বেটি নাজিরের পুল ও সরোডে একটি পুল নির্মাণ করেন। তিনি পানীয়জলের জন্য কয়েকটি পুকুর খনন করেন। বেটির শাসনামলে ১৮১২ খ্রিঃ কোটালীপাড়া ও মির্জাগঞ্জ থানা সৃষ্টি হয়। কোটালীপাড়া, টুঙ্গিপাড়া ও কালকিনী নিয়ে গঠিত কোটালীপাড়া বাকেরগঞ্জ জেলার অন্তর্ভূক্ত ছিল। দক্ষিণ অঞ্চলে সুন্দরবন কেটে বসত বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমান বেতাগী, পটুয়াখালী নিয়ে মির্জাগঞ্জ থানা গঠন করা হয়। ১৮১২ খ্রিঃ বাকেরগঞ্জ জেলায় ১৪টি থানা ছিল। ১৮১২ খ্রিস্টাব্দের ৮ ফেব্রুয়ারি বেটির এক পত্রে দেখা যায় ঐ বছর নলচিড়া থানা মেহেন্দিগঞ্জে স্থানান্তরিত করা হয়। বেটির সময় বরিশাল জেলখানায় এক বিদ্রোহ দেখা দেয়। ১৮১২ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে জেলখানায় কয়েদীরা বিদ্রোহ করে। ইংল্যান্ডের বোর্ড অব ডাইরেক্টর বিদ্রোহ দমনের জন্য প্রশংসা করে বেটিকে পত্র দিয়েছল।
+
১৭৮১ খৃৃস্টাব্দে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাকেরগঞ্জ নামের সরকারী স্বীকৃতি প্রদান করল। ১৭৮১ খৃৃস্টাব্দে মি. রাফটন (Roughton) বাকেরগঞ্জ সিভিল কোর্টের প্রথম জজ ছিলেন। বারৈকরণে তার দপ্তর ছিল। তবে জেলা হলেও বাকেরগঞ্জে তখন কালেক্টর নিয়োগ দেয়া হয়নি। রাজস্ব আদায়ের সুবিধার জন্য ১৭৮৬ খৃৃস্টাব্দে বাকেরগঞ্জে কমিশনার মি. লজকে একজন সহকারী কালেক্টর নিয়োগ করা হয়। বারৈকরণেই সহকারী কালেক্টরেরও দপ্তর ছিল।  
  
মিঃ ফরটেসকিউ ১৮১২-১৮১৪, মিঃ সেজ ১৮১৫-১৮১৬, এ ম্যাকেঞ্জি ১৮১৭, হ্যারিংটন ১৮১৮, লিঃ ওয়ারনার ১৮১৮ এবং চ্যাপম্যান ১৮১৯-১৮২০ খ্রিঃ বরিশালের জজ-ম্যাজিষ্ট্রেট ছিলেন। ম্যাজিষ্ট্রেটের প্রতিবেদনে ১৮১৭ ও ১৮১৮ খ্রিঃ কলেরা মহামারীর উল্লেখ দেখা যায়। তখন কলেরা রোগীদের চিকিৎসার কোন বন্দোবস্ত ছিল না। রোগীদের পাণি খাওয়ানো হতো না বরং পায়ের পাতা পুড়ে দেয়া হতো। ১৮১৯ খ্রিঃ ম্যাজিষ্ট্রেট চ্যাপম্যান খ্রিস্টানদের করবস্থান (সার্কিট হাউসের সামনে) ও পানীয়জলের জন্য নিজ নামে একটি পুকুর খনন করেন। তিনি হেষ্টিংসের স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য ২৬৮ টাকা চাঁদা প্রেরণ করেন। কারডিউ ১৮২১-২৩, জনস ১৮২৪-২৫, মরিসন ১৮২৬-১৮২৭ এবং গ্যারেট ১৮২৭-৩২ খ্রিঃ পর্যন্ত ম্যাজেিষ্ট্রট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মিঃ চ্যাপম্যান ১৮২০ খ্রিস্টাব্দের ১৬ এপ্রিল কলেরা ওষুধের জন্য পত্র লিখেছেন। তিনি জানিয়েছেন জেলার সর্বত্র কলেরা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। ১৮২২ খ্রিস্টাব্দেও কলেরা দেখা দেয়। ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দের আগষ্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে স্মরণকালের ভয়াবহ কলেরায় বাকেরগঞ্জে ২৫০০ জন লোক প্রাণ হারায়। ১৮২২ খ্রিস্টাব্দের ৬ জুন এক প্রলঙ্করী ঘূর্ণিঝড় বাকেরগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং ৪০ হাজার লোক নিহত হয়।
+
ভারতের গভর্নর জেনারেল স্যার জন শোর ১৭৯৭ খৃৃস্টাব্দে পূর্ণাঙ্গ জেলার ঘোষণা করেন। ১৭৯৭ খ্রিস্টাব্দের ৭ নম্বর রেগুলেশন দ্বারা সুন্দরবন কমিশনার পদ বিলুপ্ত করে বাকেরগঞ্জকে একটি জেলা করা হয়। ঢাকা-জালালপুরের দক্ষিণ ভাগ নিয়ে বাকেরগঞ্জ জেলা গঠন করা হয়। বাকেরগঞ্জ জেলায় ১৭৯৭ খ্রিস্টাব্দের ১০টি থানা ছিল: ১. বারৈকরণ, ২. আঙ্গারিয়া, ৩. বাউফল, ৪. খলিসাখালী, ৫. চান্দিয়া (ভোলা), ৬. বুখাইনগর, ৭. নলচিড়া, ৮. কেওয়ারী, ৯. কাউখালী এবং ১০. টেগরা। জেলার আয়তন ছিল ৪৩০০ বর্গমাইল।
  
১৮১৬ খ্রিঃ জেলার সীমানা পরিবর্তন হয়। ঢাকা থেকে দূরে অবস্থিত হওয়ায় মুলাদী ও হিজলা থানার উত্তরে অবস্থিত ইদিলপুর পরগণার একাংশ ১৮১৬ খ্রিঃ বাকেরগঞ্জ জেলাভুক্ত করা হয়। ১৮২০ খ্রিঃ বুখাইনগর থানার একাংশ নিয়ে বরিশাল কোতোয়ালি থানা গঠন করা এবং থানা দপ্তর বুখাইনগর থেকে বরিশালের স্থানান্তরিত হয়। তারপর থেকে মোগল আমলের ঐতিহ্যবাহী বুখাইনগর পূর্ব গৌরব হারিয়ে ফেলে। ১৮২৪ খ্রিঃ বারৈকরণ থানা বিভক্ত হয়ে নলছিটি ও ঝালকাঠি থানা গঠন করা হয়। বারৈকরণ হতে থানা ১৮২৪ খ্রিঃ নলছিটি বন্দরে স্থানান্তরিত হয়। উনিশ শতকের প্রথম ভাগে মেঘনার শাখা নদী ইলিশা ও তেঁতুলিয়া বৃহত্তর আকার ধান করে। কোতোয়ালি ও ভোলার মধ্যে ভয়ঙ্কর কালাবদর নদী পাড়ি দেয়ে নৌকা পথে যাতায়াত অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, বাকেরগঞ্জ হতে দক্ষিন শাহবাজপুর  ভোলা ও হাতিয়া নোয়াখালীর সাথে অন্তর্ভূক্ত করা হবে। ১৮২২ খ্রিস্টাব্দের ২২ এপ্রিল জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট দক্ষিন শাহবাজপুরকে নোয়াখালীর সাথে অন্তর্ভূক্ত করার সুপারিশ করেন এবং ঐ বছর ৩ জুলাই নোয়াখালীর জয়েন্ট ম্যাজিষ্ট্রেট এইচ পার্কার দক্ষিণ শাহবাজপুরের দায়িত্বে বুঝে নেন। তখন ভোলার দপ্তর ছিল চান্দিয়া। ১৮৬৯ খ্রিঃ পর্যন্ত ভোলা নোয়াখালীর অধীনে ছিল। ১৮৪৫ খ্রিঃ দক্ষিন শাহবাজপুরকে মহকুমা করা হয়। তখন ভোলা ও দৌলতখাঁ থানা ছিল মহকুমা সদর দপ্তর দৌলতখাঁয় অবস্থিত ছিল। ১৮২৯ খ্রিঃ মাদারীপুরের বুড়ীরহাট থানা ঘোষের হাটে স্থানান্তরিত হয়। ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দের ৫ মার্চ জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মিঃ গ্যারেটের সুপারিশে গৌরনদী থানা পালর্দী বন্দরে স্থাপিত হয়।
 
  
বাকেরগঞ্জের জজ-ম্যাজিষ্ট্রেটের মধ্যে মিঃ গ্যারেট জেলার উন্নয়নের জন্য বিশেষ অবদান রেখেছেন। তিনি বরিশালে ইংরেজ শিক্ষা প্রবর্তন করেন। তিনি ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দের ৩১ মার্চ বরিশালে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দের শেষের দিকে বরিশাল শহরে সরকারী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮২৭ খ্রিঃ ডাক্তার স্পেন্সার সরকারী হাসপাতালের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তখন বরিশালে কলেরার প্রাদুর্ভাব ঘটে। কলেরা রোগীদের আফিম দিয়ে চিকিৎসা করা হতো। গারেট শহরে পুকুর খনন রাস্তাত নির্মাণ করেন। সরকার তাকে শহর উন্নয়নের জন্য ১৫০০ টাকা বরাদ্দ করে এবং তিনি চাঁদা পেয়েছিলেন ৮২৫ টাকা। তার সময় শহরে পাকা রাস্তা ছিল ৮ মাইল। গৌরনদী থানা নদীতে ভেঙ্গে গেলে তিনি ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে ১৫ মার্চ থানা পালর্দী বন্দরে প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেন। গ্যারেট সতীদাহ প্রথা বন্ধের জন্য বিশেষ সচেষ্ট ছিলেন। তার সময় বরিশালের সতীদাহ প্রথা বন্ধ হয়ে যায়। ১৮৩১২ খ্রিস্টাব্দের ১ মার্চের এক পত্রে তিনি লিখেছেন, “আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ যে ভয়াবহ সতীদাহ প্রথা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আমি আনন্দের সাথে বলছি যে, এ অঞ্চলে এ প্রথা বন্ধ করতে কোন অসুবিধা হয়নি। সকল ম্যাজিষ্ট্রেটের জন্য এ এক মানসিক শান্তি।”১৩ তিনি ধার্মিক ছিলেন কিন্তু মানবতাবাদী ছিলেন না। ১৮২৭ খ্রিঃ সরকারের সচিবের নিকট লিকিত এক পত্রে তিনি এ জেলার জনগণকে মামলাবাজ বলেছেন। কিন্তু তার এ মন্তব্য ভিত্তিহীন। ইংরেজদের আগমনের পূর্বে বাকলার জনগণ মামলাবাজ ছিল না। কোম্পানি সৃষ্ট ভূমি ব্যবস্থা এবং তাদের শোষণ এ জেলার মুষ্টিমেয় লোককে মামলায় জড়িত করেছে। এ জন্য ইংরেজ শাসনই দায়ী। জনগণ নয়। গ্যারেট একজন ব্যাপ্টিষ্ট ধর্ম প্রচারক ছিলেন। তিনি নমঃশূদ্রদের মধ্যে ধর্ম প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন। এ নিয়ে কলিকাতা কাউন্সিল প্রশ্ন তোলে। তাই গ্যারেট ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দের ৬ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করে ব্যাপ্টিষ্ট গির্জায় যোগ দেন। মিঃ বেভারিজ তাকে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলেছেন, মিঃ গ্যারেট একজন কর্মনিষ্ঠ এবঙ জনদরদী কর্মচারী ছিলেন এবং শহরের উন্নতি ও প্রথম ইংরেজী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সাহায্যের জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন।”
+
== বাকেরগঞ্জের ইংরেজ কালেক্টরগণ জেলা-ম্যাজিস্ট্রেটগণ ==
  
১৮১৭ খ্রিস্টাব্দের হান্টার সহকারী কালেক্টর ফ্রেজারের নিকট হতে বাকেরগঞ্জের প্রথম পৃথক জেলা কালেক্টর হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তার মাসিক বেতন ছিল ১৫০০ টাকা। হান্টার ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দের ৬ নভেম্বর বার্লোর নিকট দায়িত্ব প্রদান করে চলে যান। বার্লোর পর লারা ১৮২০ খ্রিস্টাব্দের ৫ এপ্রিল কালেক্টরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। হান্টার পুনরায় ১৮২০ খ্রিস্টাব্দের ৩০ অক্টোবর জেলার কালেক্টর নিযুক্ত হন এবং ১৮২১ খ্রিস্টাব্দের ২২ জানুয়ারি কালেক্টর ম্যাক্সওয়েলের নিকট দায়িত্ব অর্পণ করে চলে যান। মিঃ হান্টার এ জেলায় ভূমি বন্দোবস্ত দিয়ে আবাদ বৃদ্ধি করেন। চর ও সুন্দরবন ভ্রমণ করে তিনি আবাদের উৎসাহ দেন। তিনি রামনা-বামনা, ফুলঝুরি ও চর কুকরি-মুকরি পরিদর্শন করেন। ১৮২২ খ্রিঃ কারডিউ এবং ১৮২২ হতে ১৮২৪ পর্যন্ত ফিলিপস জেলার কালেক্টর ছিলেন। ফিলিপসের নিকট হতে জন ফ্রেন্স ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দের ৩১ জানুয়ারি কালেক্টরের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। মোগল আমলে সুবাদার ও ফৌজদারের মতো বাকেরগঞ্জের কালেক্টররা এ জেলা থেকে রাজস্বের নামে কৃষকদের নকিট থেকে মুদ্রা সংগ্রহ করে কলিকাতায় পাঠাতেন। জন ফ্রেন্স ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দের ১ মার্চ একটি ট্রেজারি চালানে ৬৪টি বাক্সে তিন লক্ষ চুরাশি হাজার টাকা কলিকাতায় পাঠান। ফোর্ট উইলিয়ামের অস্থায়ী সাব-ট্রেজারার আর হান্টারের নিকট ট্রেজারি চালানে সুবেদার মঞ্জু খান একজন জমাদার, ৪ জন হাবিলদার, ৪ জন নায়েক ও কলিকাতা নেটিভ মিলিশিয়ার ৬৪ জন সিপাহীর পাহারায় পোদ্দার ভগবতী চরণ দে ও অমূল্য কিশোরের মাধ্যমে ৮টি নৌকায় ৬৪টি বাক্সে-প্রতিবাক্সে তিনটি ব্যাগ এবং প্রতিব্যাগে দু’হাজার টাকা পাঠানো হয়। এ সময় জেলার রাজস্ব আায় ছিল ১৩,৭৫০০০ টাকা এবং প্রশাসনিক সর্বমোট ব্যয় হতো ৩,০০,০০০ টাকা। প্রায় ১১ লক্ষ টাকা কলিকাতা হয়ে বিলেতে চালান হতো। এভাবে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাকেরগঞ্জকে শোষণ করত। ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দের ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত জন ফ্রেন্স বাকেরগঞ্জে ছিলেন। তারপর তিনি ২৪ পরগণার কালেক্টর নিযুক্ত হন। সে যুগে ইংরেজ কর্মচারীরা বরিশাল পছন্দ করতেন না। কিন্তু যারা আসত তারা অনেকে দেশীয় ব্যবসায়ীর সাথে হাত মিলিয়ে বেনামে ব্যবসা করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করে লন্ডনে সম্পদ গড়ে তুলত। ফ্রেন্সের পর টি পি মর্টন অস্থায়ী কালেক্টর হন। ১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দের ২ নভেম্বর ডে. জে. হার্ভে কালেক্টর নিযুক্ত হন। তার সময় কালেক্টরেটের সংস্থাপন বিভাগ নিম্নরূপ ছিল :
 
  
পদ ও নাম মাসিক বেতন
+
'''কালেক্টরগণ'''
হেড রাইটার-আর এইচ উইলিয়াম ৭০ টাকা
+
াসেকেন্ড রাইটার-ইবি নিলাস         ৪০ টাকা
+
সেরেস্তাদার-শ্যামাচরণ মিত্র ৭০ টাকা
+
মীর মুন্সী-রামকান্ত সেন ৫০ টাকা
+
নায়েব মুন্সী-কুমুদ চন্দ্র চক্রবর্তী ১৪ টাকা
+
ট্রেজারার-গোলক চন্দ্র চক্রবর্তী ৪০ টাকা
+
সেকেন্ড ট্রেজারার-রামচন্দ্র ভদ্র ৯ টাকা
+
রেকর্ড কীপার-বিশ্বনাথ সিকদার ৩০ টাকা।
+
  
এ ছাড়া চিল ট্রেজারি মোহরার, হেড আবগারী, হেজ মুহুরী, সুদ নেওয়াজী, খাস মোহরার, ৪ জন মুন্সী মোহরার, ৫ জন তৌজিনবিস, ২ জন তৌজি নেওয়াজ, ২ জন সুদ নেওয়াজ-প্রত্যেকের বেতন মাসিক ৭ টাকা, ৫ জন কেরানি, ২৫ জন বরকন্দাজ, ১০ জন ফরাস মাসিক বেতন ৪ টাকা। সর্বমোট ৫৬ জন কর্মচারী ছিল। এদের মাসিক খরচ চিল ৮৬৭৩ টাকা। ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের ৩০ মে হার্ভে উপরোক্ত খতিয়ান দেন। কর্মচারীদের ৩৫ জনের মাসিক বেতন ছিল মাবে ৪ টাকা। তখন দ্রব্যমূল্য কম ছিল। ধান ৮ মণ টাকায়, মরিচের মণ ৮ আনা, গুড়ের মণ ১২ আনা, কৈ মাছ বড় ২০টি ২ আনা। ছুটির দিনে কর্মচারীরা বাড়ি চলে যেত। শহরে স্থায়ী অধিবাসী কম ছিল। শহর ও গ্রামের মধ্যে পার্থক্য প্রায় ছিল না। তখন শহর গ্রামকে শোষণ করতে পারত না। আর উইলিয়াম ১৮৩৩-৩৪, ষ্টেইফোর্ড ১৮৩৫ এবং আর ইঞ্চ ১৮৩৬-১৮৪৩ খ্রিঃ পর্যন্ত কালেক্টরটের দায়িত্ব পালন করেন। রবার্ট ইঞ্চ প্রায় ৭ বছর বাকেরগঞ্জে ছিলেন। কালেক্টররা পূর্ব-দক্ষিণ লবণ চৌকির তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন। তাদের অন্যতম কাজ চিল লবণ ক্রয়-বিক্রয় তদরাক এবং শুল্ক আদায়। তৎকালে বরিশালের লবণ চাষীরা কোম্পানির আদেশ ছাড়া লবণ উৎপাদন ও বিক্রি করতে পারত না। ১৮৪৩ খ্রিঃ মাসটন, ১৮৪৪-৪৫ খ্রিঃ আর ষ্টিয়ার্ট, ১৮৪৫-৫৪ খ্রিঃ জে.ই. রিড, ১৮৪৬ খ্রিঃ হ্যাম্পটন, ১৮৫৬ খ্রিঃ ফ্লেচার এবং ১৮৫৪ খ্রিঃ মেকিলন বাকেরগঞ্জ জেলার কালেক্টর ছিলেন। ঈশ্বর গুপ্তের ১৮৫৬ খ্রিঃ লিখিত পত্রে দেখা যায় বরিশালের লবণ চৌকিতে একজন তত্ত্বাবধায়ক ও ৪ জন দারোগা ছিল। নলছিটি, বাকেরগঞ্জ, গৌরনদী, চরখালি, কাউখালী, পাটুয়া, ধুলিয়া ও বুখাইনগর- মোট ৮টি চৌকি ছিল। কাউখালী ও দাসপাড়ায় মোট ৪টি আবগারী অফিস ছিল। বরিশালে সরকারী আয় ছিল ৪৩,৩৭৫১৮ টাকা। নিমক মহলের বার্ষিক আঅয় ছিল ২৩৩৯০/১২ পাই এবং ব্যয় হতো ১৮,৯৫১/৫ পয়সা।১৪ আবগারী আয় ছিল ৫০,৮৮৯।।/২ মিঃ ষ্টার্ট ১৮৩১-৩২ ষ্টেইন, ফোর্ড ১৮৩৩-৩৫, ষ্টার্টি ১৮৪২-৪৫ ও হ্যারিম্যান ১৮৪৫-১৮৪৮ খ্রিঃ পর্যন্ত বাকেরগঞ্জের জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট ছিলেন। ১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দের ১৯ মার্চ বাকেরগঞ্জের জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মাদারীপুর মহকুমা প্রতিষ্ঠার জন্য সুপারিশ করেন এবং ১৮৫৪ খ্রিঃ মাদারীপুর মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হয়।১৫ গৌরনদী, গোষেরহাট, মাদারীপুর ও কোটালীপাড়া নিয়ে মাদারীপুর মহকুমা গঠিত হয়। বাকেরগঞ্জের জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আলেকজান্ডার ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২৪ এপ্রিল পিরোজপুর মহকুমা স্থাপনের ্রস্তাব দেন। সিপাহী বিদ্রোহের জন্য পিরোজপুর মহকুমা ঘোষণা বিলম্বিত হয়। ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দের ১৮ অক্টোবর পিরোজপুর মহকুমা উদ্বোধন করা হয়। কচা নদীতে ডাকাতি বন্ধের জন্য কোম্পানি নতুন মহকুমা গঠনে উদ্যোগ নেয়।১৬ প্রকৃতপক্ষে ১৮৫৪ খ্রিঃ সিংখালীর ব্রিদাহ পিরোজপুর মহকুমা প্রতিস্ঠা ত্বরান্বিত করে।
 
 
১৮৪৫ খ্রিঃ বাকেরগঞ্জের কালেক্টর ষ্ট্রাটের সময় বরিশাল ট্রেজারিতে ৪০ হাজার টাকা ঘাটতি দেখা দেয়। ট্রেজারারের ৭ বছর জেলা এবং ষ্ট্রাটের পদাবনতি হয়েছিল। স্ট্রাট দেশীয় এক হিন্দু মহিলাকে বিয়ে করেন এবং বাসাতে পূজা হতো। ১৮৪৫ খ্রিঃ মিঃ শ খন্ডকালীন জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট ছিলেন। মিঃ শ বরিশালে কয়েকটি রাস্তা মেরামত করেন। বরিশাল শহরে শ রোড তার দ্বারা নির্মিত হয়। তিনি বরিশাল চার্চ নির্মাণ করেন। ম্যাজিষ্ট্রেট হ্যারিসনের সময় ১৮৪৭ খ্রিঃ বরিশাল সরকারী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়। মাদরীপুরে ডানলপের নীলকুঠি ছিল। দুদু মিয়ার ফরাজী বাহিনী কুঠির গোমস্তা কাঞ্জিলালকে ধরে নিয়ে যায় এবং তাকে গলাচিপার নৌডুবি চরে হত্যা করে। বাকেরগঞ্জের হাজার হাজার লোক ফরাজী আন্দোলনে যোগ দেয় এবং তারা দুদু মিয়ার নেতৃত্বে ইংরেজ সরকার ও অত্যাচারী জমিদারদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
 
 
গ্যারিসনের পর ১৮৪৯ খ্রিঃ বি এইচ কুপার ম্যাজিষ্ট্রেট হয়ে আসেন। ১৮৫২ খ্রিঃ হলেকেট তার স্থলাভিষিক্ত হন। ১৮৫৩-৫৪ খ্রিঃ বিউফোর্ড, ১৮৫৫ হতে ১৮৫৯ পর্যন্ত আলেকজান্ডার বাকেরগঞ্জের জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় জেলা জজ ও জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট পদ পৃথক ছিল। জেলা জজ ও জেলা ম্যাাজিষ্ট্রেটের পদ ১৮৩০ খ্রিঃ পৃথক রা হয়। প্রাপ্ত নথিতে দেখা যায় ১৮৫০-৫২ খ্রিঃ মিঃ মানি ১৮৫৩-৫৫ খ্রিঃ ষ্টিয়ার এবং ১৮৫৬-৫৮ খ্রিঃ এফ বি কেম্প বাকেরগঞ্জের জেলা জজ ছিলেন। ১৮৫৩ খ্রিঃ ম্যাজিষ্ট্রেট বিউফোর্ড জমিদার নীলকান্তকে বন্দী করে তাকে দিয়ে তার বাসার সামনে রাস্তা নির্মাণ করান। এ রাস্তার নাম ছিল নীলকান্ত রোড। জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আলেকজান্ডারের সময় ভা-ারিয়া থানার সিংখালী গ্রামের গগন ও মোহন মিয়া ইংরেজ শাসন ও স্থানীয় জমিদারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের অধীনে কয়েকজন ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর ছিলেন। ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেটের মধ্যে বাবু দীনবন্ধু মল্লিকের নাম স্মরণীয়। তিনি একজন জনপ্রিয় কর্মচারী ছিলেন এবং অতিরিক্ত কাজের জন্য মাত্র ৩৪ বছর বয়সে তিনি মারা যান। বরিশালের দীনবন্ধু রোড আজও তার স্মৃতির বহন করে।
 
 
বাকেরগঞ্জ জেলায় সদর মুন্সেফ, সদর আমিন ব্যতীত ৫টি মুন্সেফী চৌকি ছিল। ১৮৫৬ খ্রিঃ ৫টি চৌকিতে যারা মুন্সেফ ছিলেন তরারা হলেন- ১. মৌলভী মফিজুদ্দিন আহম্মদ, মেহেন্দীগঞ্জ চৌকি, ২. বাবু মধুসূদন ঘোষ, কাউখালী চৌকি, ৩. বাবু ব্রজমোহন দত্ত, বাউফল চৌকি, ৪. বাবু বিশ্বেশ্বর সেন, মাদারীপুর চৌকি, ৫. বাবু গৌরহরি বসু, কোটেরহাট চৌকি। ১৮৫৬ খ্রিঃ এ জেলায় ১৩টি থানা ও ৯টি ফাঁড়ি ছিল।১৭  থানা-বরিশাল কোতোয়ালি, মির্জাগঞ্জ, মেহেন্দিগঞ্জ, খলিসাখালী, বাউফল, আঙ্গারিয়া, নলছিটি, কচুয়া, কেওয়ারী, টেগরাপুর, বুড়িরহাট, গৌরনদী ও কোটালীপাড়া। প্রত্যেক থানায় ১০ থেকে ২০ জন বরকন্দাজ এবং ৪৫০ হতে ২৫০ জন চৌকিদার ছিল। গংগাপুর, বোখাইনগর, শ্রীরামপুর, রাজাপুর, ঝালকাঠি, রাজৈর, আগরপুর, কাউখালী ও ভাগীরথপুরে ফাঁড়ি ছির। প্রত্যেক ফাঁড়িতে ২ হতে ৪ জন বরকন্দাজ ৪০ বা ৫০ জন চৌকিদার ছিল। বাগেরহাটের কচুয়া, মাদরীপুরের বুড়িরহাট ও গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া তখন বাকেরগঞ্জ জেলাধীন ছিল। ভোলা ছিল নোয়াখালী জেলার অধীনে। জেলখানায় ১ জন জমাদার, ২ জন দফাদার, কামজারী বরকন্দাজ এবং ১৪৫ জন পেয়াদা পাহারা ছিল। ১৮৫৭ খ্রিঃ সিপাহী বিদ্রোহের সময় বরিশালের কোন যুদ্ধ হয়নি। ফরাজীরা ইংরেজবিরোধী ছিল। কিন্তু তাদের নেতা দুদু মিয়াকে ইংরেজ সরকার ১৮৫৭ খ্রিঃ বন্দী করে রাখে। এ কারণে ফরায়েজীরা সিপাহী যুদ্ধে অংশ নিতে পারেনি। ঢাকা থেকে সিপাহীরা বরিশাল আক্রমণ করবে-এ ভয়ে বরিশালের ইংরেজরা ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির লোন অফিসে আশ্রয় নিয়েছিল। যুদ্ধের পরে সরকার অনেক জমিদারের সিপাহীদের সাথে যোগাযোগ ছিল-এ অভিযোগে হয়রানি করে।
 
 
কোম্পানি আমলে বাকেরগঞ্জের কালেক্টরগণ:১৮
 
মিঃ কেলসন ১৭৬৯-৭১ ঢাকার সুপারভাইজার
 
রিচার্ড বারওয়েল ১৭৭২-৮০ ঢাকার চীফ
 
হল্যান্ড ১৭৮০-৮৫ ঢাকার চীফ
 
মিঃ ডে ১৭৮৫-৮৬ ঢাকার চীফ     
 
মিঃ ডে ১৭৮৬-৮৯ ঢাকা জেলার কালেক্টর
 
 
ডগলাস ১৭৯০-৯৩
 
ডগলাস ১৭৯০-৯৩
 
টমসন ১৭৯৩-৯৫
 
টমসন ১৭৯৩-৯৫
৭৯ নং লাইন: ৩৬ নং লাইন:
 
কারডিউ ১৮২২
 
কারডিউ ১৮২২
 
ফিলিপস ১৮২২-২৪
 
ফিলিপস ১৮২২-২৪
জন ফ্রেন্স ১৮২৪-৩২
+
জন ফ্রেন্স ১৮২৪-৩২
 
জে জে হার্ভে ১৮৩২-৩৩
 
জে জে হার্ভে ১৮৩২-৩৩
 
রবার্ট উইলিয়ম ১৮৩৩-৩৪
 
রবার্ট উইলিয়ম ১৮৩৩-৩৪
ষ্টেইফোর্ড ১৮৩৫
+
ষ্টেইনফোর্ড ১৮৩৫
আর ইঞ্চ ১৮৩৬-৩৭
+
আর ইঞ্চ ১৮৩৬-৩৭
 
জন ব্রুস ১৮৩৮
 
জন ব্রুস ১৮৩৮
 
রবার্ট ইঞ্চ ১৮৩৯-৪০
 
রবার্ট ইঞ্চ ১৮৩৯-৪০
আর আর ষ্টিয়ার্ট ১৮৩৯-৪০
+
আর আর স্ট্রাট ১৮৩৯-৪০
 
রবার্ট ইঞ্চ ১৮৪০-৪৩
 
রবার্ট ইঞ্চ ১৮৪০-৪৩
এইচ আর ষ্টিয়ার্ট ১৮৪৪-৪৫
+
এইচ আর স্ট্রাট ১৮৪৪-৪৫
 
এ মানি ১৮৪৫-৪৬
 
এ মানি ১৮৪৫-৪৬
 
হেনরি আর থারটন ১৮৪৭
 
হেনরি আর থারটন ১৮৪৭
জেই রিড ১৮৪৭-৫৪
+
জে. ই. রিড ১৮৪৭-৫৪
 
আর হ্যাম্পটন ১৮৫৫
 
আর হ্যাম্পটন ১৮৫৫
 
উইলিয়াম ফ্রেচার ১৮৫৬
 
উইলিয়াম ফ্রেচার ১৮৫৬
 
সি ডব্লিউ মেকিলপ ১৮৫৭
 
সি ডব্লিউ মেকিলপ ১৮৫৭
  
কোম্পানি আমলে বাকেরগঞ্জের জজ-ম্যাজিষ্ট্রেটগণ
+
'''জেলা-ম্যাজিস্ট্রেটগণ'''
 
মিডলটন ১৭৯৭-১৮০০
 
মিডলটন ১৭৯৭-১৮০০
 
ষ্পিডিং ১৮০০
 
ষ্পিডিং ১৮০০
১২৬ নং লাইন: ৮৩ নং লাইন:
 
এফ বি কেমপ ১৮৫৬-৫৮
 
এফ বি কেমপ ১৮৫৬-৫৮
  
ঢাকা, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, ত্রিপুরা (কুমিল্লা), নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও বাকেরগঞ্জ নিয়ে ঢাকা বিভাগ গঠিত ছিল। পরে চট্টগ্রাম বিভাগ সৃষ্টি হয়। বিভাগের দায়িত্বে ছিল কমিশনার। তিনি জেলাসমূহের রাজস্ব ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করতেন।
 
  
  
== তথ্য নির্দেশ ==
+
== বিভিন্ন কালেক্টর ও জেলা-ম্যাজিস্ট্রেটগণের সময়ে বাকেরগঞ্জের উন্নয়ন ==
 +
 
 +
 
 +
'''জন উইন্টল (John Wintle)'''- ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের শেষ ভাগে স্পীডিংয়ের স্থলে জন উইন্টল বাকেরগঞ্জের জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট নিযুক্ত হন। তিনি ১৮০১ খ্রিস্টাব্দের ২৪ ফেব্রুয়ারি জজকোর্ট উদ্বোধন করেন। ১৮০১ খ্রিস্টাব্দেই উইন্টল প্রথম জেলা জজের কাজ করতে শুরু করেন। ১৮০২ খ্রিস্টাব্দের ৭ জানুয়ারি উইন্টল রাজস্ব বোর্ডের নিকট জেলার প্রশাসন ও সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে এক প্রতিবেদন পাঠিয়েছিলেন। তার বিবরণে দেখা যায় ১৭৯৭ খৃৃস্টাব্দে এপ্রিল মাসের পূর্বে সিভিল কোর্টগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বাকেরগঞ্জ সিভিল কোর্ট ১৭৮১ খৃৃস্টাব্দে শুরু হয়েছিল। কিন্তু এ কোর্টের ক্ষমতা সীমিত ছিল। কর্নওয়ালিশের শাসন সংস্কার ও নতুন জেলার কাঠামো অনুযায়ী সিভিল কোর্টের কাজ ১৭৯৭ খ্রিস্টাব্দেই শুরু হয়। বাকেরগঞ্জ নদীতে চর পড়ে যাওয়ায় নদীপথে যাতায়াত জটিল হয়ে পড়ে। তাই উইন্টলের ব্যবস্থাপনায় বাকেরগঞ্জ জেলা সদর দপ্তর ১৮০১ খৃৃস্টাব্দে বরিশালের স্থানান্তরিত করা হয়। ১৮০১ খ্রিস্টাব্দের মে মাস হতে ডিসেম্বরের মধ্যে উইন্টল বাকেরগঞ্জ হতে সদর দপ্তর বরিশালে স্থানান্তরিত করেন।  উইন্টল বরিশাল শহরে জেলখানা, দেওয়ানী ও ফৌজদারী ভবন, বান্দ রোড, চকবাজার রোডে কয়েকটি পুল নির্মাণ ও পুকুর খনন করেন।
 +
 
 +
তিনি ১৮০২ খ্রিস্টাব্দের ৭ জানুয়ারি বোর্ডের নিকট বরিশাল সম্পর্কে এক বিস্তারিত বিবরণ দাখিল করেন। উইন্টল তার বিবরণে বরিশালের জনগণের চরিত্র সম্পর্কে বল্গাহীন মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, এ জেলার নারী-পুরুষ রাগী, সামান্য কারণে খুন করতে পারে এবং চুরি-ডাকাতি তাদের পেশা। জনগণ ইংরেজ শাসনামলে শান্তিতে আছে এবং তারা হিন্দু বা মোগল যুদের তুলনায় অধিক স্বাধীনতা ভোগ করে। ষ্ট্যাম্প ফী প্রবর্তনের ফলে মামলাল সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। ষ্ট্যাম্পের মূল্য খুব বেশি ছিল। ২ টাকা দাবি মামলার জন্য একজন অভিযোগকারীকে ষ্ট্যাম্প ফীসহ ৭ টাকা ৬ পয়সা খরচ করতে হতো। ওকালতনামার মূল্য ছিল ৪ পয়সা। উকিলেরা মামুলিভাবে মামলা পরিচালনা করত এবং তাদের মধ্যে কোন প্রতিভাশালী উকিল ছিল না। অপরাধ দমনের জন্য তিনি বিদ্যমান ১০টির সাথে আরো তিন বা চারটি থানা স্থাপনের প্রস্তাব করেন।
 +
 
 +
উইন্টল লিখেছেন যে চন্দ্রদ্বীপ রাজা জয়নারায়ণ ব্যতীত এ জেলায় কোন উচ্চপদস্থ ব্যক্তি নেই। নি¤েœ কয়েকজন সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হলো। তারা ২৫ বা ৩০ জনের বেশি ঢাল-তলোয়ার সজ্জিত বরকন্দাজ নিয়ে যাতায়াত করতেন।
 +
১. মির হোসেন উদ্দিন চৌধুরী জমিদার, নাজিরপুর।
 +
২. মির আসাদ আলী চৌধুরী জমিদার, শায়েস্তাবাদ।
 +
৩. শিব নারায়ণ রায়- রায়েরকাঠি জমিদার, সেলিমাবাদ।
 +
৪. রামদুলাল চক্রবর্তী- রহমতপুর তালুকদার, চন্দ্রদ্বীপ
 +
৫. বাওয়ানী প্রসাদ চক্রবর্তী- রহমতপুর তালুকদার, চন্দ্রদ্বীপ
 +
৬. কীর্তিচন্দ্র রায়- উজিরপুর তালুকদার, রতনদী কালিকাপুর।
 +
৭. শিবচন্দ্র রায় ও কীর্তি চন্দ্র রায়- কলসকাঠি তালুকদার, আওরঙ্গপুর।
 +
৮. খাজা মোহাম্মদ দায়েম ও খাজা চাঁদ তালুকদার, সলকমিনাহ তালুক।
 +
৯. বাওয়ানী প্রসাদ রায় ব্যবসায়ী-সুতানরী।
 +
 
 +
 
 +
'''গার্ডনার (Gardner)''' - ১৮০৪ খৃৃস্টাব্দে উইন্টলের স্থলে গার্ডনার জজ-ম্যাজিষ্ট্রেট বা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত হন। তিনি ১৮০৪ খৃৃস্টাব্দে একটি কাঁচা-পাকা জেলখানা নির্মাণ করেন। এ জেলখানার পাকা দেয়াল এবং খড়ের ছাউনি ছিল। তার সময় ১৮০৫ খৃৃস্টাব্দে পুলিশ খাতে ৩৩৩৬০ টাকা খরচ হয়।
 +
 
 +
'''অসওয়ালড (Oswald)'''-  ১৮০৫ খৃৃস্টাব্দে অসওয়ালড বাকেরগঞ্জের জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট হয়ে আসেন। জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট অসওয়ালডের সময় বাকেরগঞ্জ জেলার আয়তন বৃদ্ধি পায়। তার সময়ে ১৮০৬ সালে বিদ্যমান ১০টির সাথে ঢাকা জেলা হতে গৌরনদী ও বুড়ীরহাট থানা বাকেরগঞ্জ জেলাভুক্ত করা হয়। তখন পর্যন্ত গৌরনদী, কোটালীপাড়া এবং বুড়ীরহাট বাকেরগঞ্জ জেলাভুক্ত ছিল।
 +
 
 +
'''বেটি (Battye)'''- ১৮০৭ খৃৃস্টাব্দে মি. বেটি জজ-ম্যাজিষ্ট্রেটের দায়িত্ব গ্রহণ করে বরিশাল আগমন করেন। তিনি জেলখানার সংস্কার, পুল ও রাস্তা নির্মাণ করেন। তিনি একজন কঠোর কর্মচারী ছিলেন। ১৮১১ খৃৃস্টাব্দে বাটার খালের পুলটি পুননির্মাণ করেন। মি. উইন্টল বান্দ রোড নির্মাণকালে পুলটি নির্মাণ করেছিলেন। বেটি পুলটি নির্মাণ করে একটি মার্বেল পাথর স্থাপন করেন। পুলের সাথে পাথরটি এখনও আছে। পাথরে ইংরেজী, বাংলা ও ফরাসী ভাষায় লেখা আছে, ১৮১১ খ্রিস্টাব্দে পুল পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে। বেটির নামানুসারে বরিশাল নদী হতে শহরের মধ্যে প্রবাহিত খালটি বাটার খাল এবং পুলটিকে বেটার পুল বলা হয় থাকে। পূর্বে জমিদার ও তালুকদাররা তাদের কোষা নৌকা নদীতে না রেখে বাটার খালে রাখতেন। এ খালের পূর্ব গৌরব এখন নেই। বেটি নাজিরের পুল ও শরোডে একটি পুল নির্মাণ করেন। তিনি পানীয়জলের জন্য কয়েকটি পুকুর খনন করেন। বেটির শাসনামলে ১৮১২ খৃৃস্টাব্দে কোটালীপাড়া ও মির্জাগঞ্জ থানা সৃষ্টি হয়। কোটালীপাড়া, টুঙ্গিপাড়া ও কালকিনী নিয়ে গঠিত কোটালীপাড়া বাকেরগঞ্জ জেলার অন্তর্ভূক্ত ছিল। দক্ষিণ অঞ্চলে সুন্দরবন কেটে বসত বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমান বেতাগী, পটুয়াখালী নিয়ে মির্জাগঞ্জ থানা গঠন করা হয়। ১৮১২ খৃৃস্টাব্দে বাকেরগঞ্জ জেলায় ১৪টি থানা ছিল। ১৮১২ খ্রিস্টাব্দের ৮ ফেব্রুয়ারি বেটির এক পত্রে দেখা যায় ঐ বছর নলচিড়া থানা মেহেন্দিগঞ্জে স্থানান্তরিত করা হয়। বেটির সময় বরিশাল জেলখানায় এক বিদ্রোহ দেখা দেয়। ১৮১২ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে জেলখানায় কয়েদীরা বিদ্রোহ করে। ইংল্যান্ডের বোর্ড অব ডাইরেক্টর বিদ্রোহ দমনের জন্য প্রশংসা করে বেটিকে পত্র দিয়েছল।
 +
 
 +
'''চ্যাপম্যান'''- ১৮১৯ খৃৃস্টাব্দে ম্যাজিষ্ট্রেট চ্যাপম্যান খ্রিস্টানদের কবরস্থান (সার্কিট হাউসের সামনে) ও পানীয়জলের জন্য নিজ নামে একটি পুকুর খনন করেন। তিনি হেষ্টিংসের স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য ২৬৮ টাকা চাঁদা প্রেরণ করেন। মিঃ চ্যাপম্যান ১৮২০ খ্রিস্টাব্দের ১৬ এপ্রিল কলেরা ওষুধের জন্য পত্র লিখেছেন। তিনি জানিয়েছেন জেলার সর্বত্র কলেরা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। ১৮২২ খ্রিস্টাব্দেও কলেরা দেখা দেয়।
 +
 
 +
'''মি. গ্যারেট'''- মি. গ্যারেট ১৮২৭-৩০ পর্যন্ত বাকেরগঞ্জের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। বাকেরগঞ্জের জজ-ম্যাজিষ্ট্রেটের মধ্যে মি. গ্যারেট জেলার উন্নয়নের জন্য বিশেষ অবদান রেখেছেন। তিনি বরিশালে ইংরেজ শিক্ষা প্রবর্তন করেন। তিনি ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দের ৩১ মার্চ বরিশালে তিনি একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। গ্যারেট শহরে পুকুর খনন ও রাস্তা নির্মাণ করেন। সরকার তাকে শহর উন্নয়নের জন্য ১৫০০ টাকা বরাদ্দ করেছিলেন এবং তিনি চাঁদা পেয়েছিলেন ৮২৫ টাকা। তার সময় শহরে পাকা রাস্তা ছিল ৮ মাইল। গৌরনদী থানা নদীতে ভেঙ্গে গেলে তিনি ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে ১৫ মার্চ থানা পালর্দী বন্দরে প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেন। গ্যারেট সতীদাহ প্রথা বন্ধের জন্য বিশেষ সচেষ্ট ছিলেন। তার সময় বরিশালের সতীদাহ প্রথা বন্ধ হয়ে যায়। ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দের ১ মার্চের এক পত্রে তিনি লিখেছেন, “আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ যে ভয়াবহ সতীদাহ প্রথা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আমি আনন্দের সাথে বলছি যে, এ অঞ্চলে এ প্রথা বন্ধ করতে কোন অসুবিধা হয়নি। সকল ম্যাজিষ্ট্রেটের জন্য এ এক মানসিক শান্তি।” তিনি ধার্মিক ছিলেন কিন্তু মানবতাবাদী ছিলেন না। ১৮২৭ খৃৃস্টাব্দে সরকারের সচিবের নিকট লিখিত এক পত্রে তিনি এ জেলার জনগণকে মামলাবাজ বলেছেন। কিন্তু তার এ মন্তব্য ভিত্তিহীন। ইংরেজদের আগমনের পূর্বে বাকলার জনগণ মামলাবাজ ছিল না। কোম্পানি সৃষ্ট ভূমিব্যবস্থা এবং তাদের শোষণ এ জেলার মুষ্টিমেয় লোককে মামলায় জড়িত করেছে। এ জন্য ইংরেজ শাসনই দায়ী। জনগণ নয়। গ্যারেট একজন ব্যাপ্টিষ্ট ধর্ম প্রচারক ছিলেন। তিনি নমঃশূদ্রদের মধ্যে ধর্ম প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন। এ নিয়ে কলিকাতা কাউন্সিল প্রশ্ন তোলে। তাই গ্যারেট ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দের ৬ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করে ব্যাপ্টিষ্ট গির্জায় যোগ দেন। মি. বেভারিজ তাকে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলেছেন, মিঃ গ্যারেট একজন কর্মনিষ্ঠ এবং জনদরদী কর্মচারী ছিলেন এবং শহরের উন্নতি ও প্রথম ইংরেজী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সাহায্যের জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন।”
 +
 
 +
'''হান্টার-'''  ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে হান্টার বাকেরগঞ্জের সহকারী কালেক্টর ফ্রেজারের নিকট হতে বাকেরগঞ্জের প্রথম পৃথক জেলা কালেক্টর হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তার মাসিক বেতন ছিল ১৫০০ টাকা। হান্টার ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দের ৬ নভেম্বর বার্লোর নিকট দায়িত্ব প্রদান করে চলে যান। হান্টার পুনরায় ১৮২০ খ্রিস্টাব্দের ৩০ অক্টোবর জেলার কালেক্টর নিযুক্ত হন এবং ১৮২১ খ্রিস্টাব্দের ২২ জানুয়ারি কালেক্টর ম্যাক্সওয়েলের নিকট দায়িত্ব অর্পণ করে চলে যান। মিঃ হান্টার এ জেলায় ভূমি বন্দোবস্ত দিয়ে আবাদ বৃদ্ধি করেন। চর ও সুন্দরবন ভ্রমণ করে তিনি আবাদের উৎসাহ দেন। তিনি রামনা-বামনা, ফুলঝুরি ও চর কুকরি-মুকরি পরিদর্শন করেন।
 +
 
 +
'''জন ফ্রেন্স'''- জন ফ্রেন্স ১৮২৪ থেকে ১৮৩২ পর্যন্ত বরিশালের কালেক্টর ছিলেন। তিনি ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দের ১ মার্চ একটি ট্রেজারি চালানে ৬৪টি বাক্সে তিন লক্ষ চুরাশি হাজার টাকা কলিকাতায় পাঠান। ফোর্ট উইলিয়ামের অস্থায়ী সাব-ট্রেজারার আর হান্টারের নিকট ট্রেজারি চালানে সুবেদার মঞ্জু খান একজন জমাদার, ৪ জন হাবিলদার, ৪ জন নায়েক ও কলিকাতা নেটিভ মিলিশিয়ার ৬৪ জন সিপাহীর পাহারায় পোদ্দার ভগবতী চরণ দে ও অমূল্য কিশোরের মাধ্যমে ৮টি নৌকায় ৬৪টি বাক্সে- প্রতিবাক্সে তিনটি ব্যাগ এবং প্রতিব্যাগে দু’হাজার টাকা পাঠানো হয়। এ সময় জেলার রাজস্ব আায় ছিল ১৩,৭৫০০০ টাকা এবং প্রশাসনিক সর্বমোট ব্যয় হতো ৩,০০,০০০ টাকা। প্রায় ১১ লক্ষ টাকা কলিকাতা হয়ে বিলেতে চালান হতো। এভাবে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাকেরগঞ্জকে শোষণ করত। ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দের ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত জন ফ্রেন্স বাকেরগঞ্জে ছিলেন। তারপর তিনি ২৪ পরগণার কালেক্টর নিযুক্ত হন।
 +
 
 +
'''ষ্ট্রাট-''' কালেক্টর ষ্ট্রাট দুই মেয়াদে ১৮৩৯-৪০ ও ১৮৪৪-৪৫ সময়কাল বরিশালের কালেক্টর ছিলেন। ১৮৪৫ খৃৃস্টাব্দে বাকেরগঞ্জের কালেক্টর ষ্ট্রাটের সময় বরিশাল ট্রেজারিতে ৪০ হাজার টাকা ঘাটতি দেখা দেয়। ট্রেজারারের ৭ বছর জেল এবং ষ্ট্রাটের পদাবনতি হয়েছিল। স্ট্রাট দেশীয় এক হিন্দু মহিলাকে বিয়ে করেন এবং তাঁর বাসাতে পূজা হতো।
 +
মি. শ’- ১৮৪৫ খৃৃস্টাব্দে মি. শ’ খন্ডকালীন জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট ছিলেন। মিঃ শ’ বরিশালে কয়েকটি রাস্তা মেরামত করেন। বরিশাল শহরে শ’ রোড তার দ্বারা নির্মিত হয়। এই ইতিহাস অবলোপন করে বর্তমানে উক্ত রাস্তাটিকে দুঃখজনকভাবে স্বরোড বলা হয়, অথচ বলা উচিত শ’ রোড। মি. শ’ স্বল্প সময়ের দায়িত্বে বরিশালে একটি চার্চও নির্মাণ করেন।
 +
 
 +
 
 +
== জেলার সীমানা পরিবর্তন ও বিভিন্ন থানা গঠন- ==
 +
 
 +
বাকেরগঞ্জ জেলায় ১৭৯৭ খ্রিস্টাব্দের ১০টি থানা ছিল: ১. বারৈকরণ, ২. আঙ্গারিয়া, ৩. বাউফল, ৪. খলিসাখালী, ৫. চান্দিয়া, ৬. বুখাইনগর, ৭. নলচিড়া, ৮. কেওয়ারী, ৯. কাউখালী এবং ১০. টেগরা। জেলার আয়তন ছিল ৪৩০০ বর্গমাইল। ১৮০৬ সালে বিদ্যমান ১০টির সাথে ঢাকা জেলা হতে গৌরনদী ও বুড়ীরহাট থানা বাকেরগঞ্জ জেলাভুক্ত করা হয়। তখন পর্যন্ত গৌরনদী, কোটালীপাড়া এবং বুড়ীরহাট বাকেরগঞ্জ জেলাভুক্ত ছিল না। বেটির শাসনামলে ১৮১২ খৃৃস্টাব্দে কোটালীপাড়া ও মির্জাগঞ্জ থানা সৃষ্টি হয়। কোটালীপাড়া, টুঙ্গিপাড়া ও কালকিনী নিয়ে গঠিত কোটালীপাড়া বাকেরগঞ্জ জেলার অন্তর্ভূক্ত ছিল। দক্ষিণ অঞ্চলে সুন্দরবন কেটে বসত বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমান বেতাগী, পটুয়াখালী নিয়ে মির্জাগঞ্জ থানা গঠন করা হয়। ১৮১২ খৃৃস্টাব্দে বাকেরগঞ্জ জেলায় ১৪টি থানা ছিল। ১৮১২ খ্রিস্টাব্দের ৮ ফেব্রুয়ারি বেটির এক পত্রে দেখা যায় ঐ বছর নলচিড়া থানা মেহেন্দিগঞ্জে স্থানান্তরিত করা হয়।
 +
 
 +
১৮১৬ খৃৃস্টাব্দে জেলার সীমানা আবার পরিবর্তন হয়। ঢাকা থেকে দূরে অবস্থিত হওয়ায় মুলাদী ও হিজলা থানার উত্তরে অবস্থিত ইদিলপুর পরগণার একাংশ ১৮১৬ খৃৃস্টাব্দে বাকেরগঞ্জ জেলাভুক্ত করা হয়। ১৮২০ খৃৃস্টাব্দে বুখাইনগর থানার একাংশ নিয়ে বরিশাল কোতোয়ালি থানা গঠন করা হয় এবং থানা দপ্তর বুখাইনগর থেকে বরিশালের স্থানান্তরিত হয়। তারপর থেকে মোগল আমলের ঐতিহ্যবাহী বুখাইনগর পূর্ব গৌরব হারিয়ে ফেলে। ১৮২৪ খৃৃস্টাব্দে বারৈকরণ থানা বিভক্ত হয়ে নলছিটি ও ঝালকাঠি থানা গঠন করা হয়। বারৈকরণ হতে থানা ১৮২৪ খৃৃস্টাব্দে নলছিটি বন্দরে স্থানান্তরিত হয়।
 +
 
 +
১৮২২ খ্রিস্টাব্দের ২২ এপ্রিল জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট দক্ষিণ শাহবাজপুরকে বাকেরগঞ্জ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নোয়াখালীর সাথে অন্তর্ভূক্ত করার সুপারিশ করেন কারণ কালাবদর নদীর কারণে ভোলার সাথে বাকেরগঞ্জের প্রশাসনিক সম্পর্ক কঠিন হয়ে পড়েছিল। ঐ বছর ৩ জুলাই নোয়াখালীর জয়েন্ট ম্যাজিষ্ট্রেট এইচ পার্কার দক্ষিণ শাহবাজপুরের দায়িত্বে বুঝে নেন। তখন ভোলার দপ্তর ছিল চান্দিয়া। ১৮৬৯ খৃৃস্টাব্দে পর্যন্ত ভোলা নোয়াখালীর অধীনে ছিল। ১৮৬৯ সালে ভোলাকে আবার বাকেরগঞ্জের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৮৪৫ খৃৃস্টাব্দে দক্ষিণ শাহবাজপুরকে মহকুমা করা হয়। তখন ভোলা ও দৌলতখাঁ থানা ছিল মহকুমা সদর দপ্তর দৌলতখাঁয় অবস্থিত ছিল। ১৮২৯ খৃৃস্টাব্দে মাদারীপুরের বুড়ীরহাট থানা ঘোষের হাটে স্থানান্তরিত হয়। ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দের ৫ মার্চ জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মি. গ্যারেটের সুপারিশে গৌরনদী থানা পালর্দী বন্দরে স্থাপিত হয়।
 +
 
 +
১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দের ১৯ মার্চ বাকেরগঞ্জের জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মাদারীপুর মহকুমা প্রতিষ্ঠার জন্য সুপারিশ করেন এবং ১৮৫৪ খৃৃস্টাব্দে মাদারীপুর মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হয়।১৫ গৌরনদী, গোষেরহাট, মাদারীপুর ও কোটালীপাড়া নিয়ে মাদারীপুর মহকুমা গঠিত হয়। বাকেরগঞ্জের জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আলেকজান্ডার ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২৪ এপ্রিল পিরোজপুর মহকুমা স্থাপনের প্রস্তাব দেন। সিপাহী বিদ্রোহের জন্য পিরোজপুর মহকুমা ঘোষণা বিলম্বিত হয়। ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দের ১৮ অক্টোবর পিরোজপুর মহকুমা উদ্বোধন করা হয়। কচা নদীতে ডাকাতি বন্ধের জন্য কোম্পানি নতুন মহকুমা গঠনে উদ্যোগ নেয়। প্রকৃতপক্ষে ১৮৫৪ খৃৃস্টাব্দে সিংখালীর বিদ্রোহ পিরোজপুর মহকুমা প্রতিষ্ঠা ত্বরান্বিত করে।
 +
 
 +
 
 +
== মুন্সেফি চৌকি ও প্রশাসনিক ইউনিট ==
 +
 
 +
বাকেরগঞ্জ জেলায় বৃটিশ আমলে সদর মুন্সেফ, সদর আমিন ব্যতীত ৫টি মুন্সেফী চৌকি ছিল। ১৮৫৬ খৃৃস্টাব্দে ৫টি চৌকিতে যারা মুন্সেফ ছিলেন তারা হলেন- ১. মৌলভী মফিজুদ্দিন আহম্মদ, মেহেন্দীগঞ্জ চৌকি, ২. বাবু মধুসূদন ঘোষ, কাউখালী চৌকি, ৩. বাবু ব্রজমোহন দত্ত, বাউফল চৌকি, ৪. বাবু বিশ্বেশ্বর সেন, মাদারীপুর চৌকি, ৫. বাবু গৌরহরি বসু, কোটেরহাট চৌকি। ১৮৫৬ খৃৃস্টাব্দে এ জেলায় ১৩টি থানা ও ৯টি ফাঁড়ি ছিল।১৭  থানা-বরিশাল কোতোয়ালি, মির্জাগঞ্জ, মেহেন্দিগঞ্জ, খলিসাখালী, বাউফল, আঙ্গারিয়া, নলছিটি, কচুয়া, কেওয়ারী, টেগরাপুর, বুড়িরহাট, গৌরনদী ও কোটালীপাড়া। প্রত্যেক থানায় ১০ থেকে ২০ জন বরকন্দাজ এবং ৪৫০ হতে ২৫০ জন চৌকিদার ছিল। গংগাপুর, বোখাইনগর, শ্রীরামপুর, রাজাপুর, ঝালকাঠি, রাজৈর, আগরপুর, কাউখালী ও ভাগীরথপুরে ফাঁড়ি ছিল। প্রত্যেক ফাঁড়িতে ২ হতে ৪ জন বরকন্দাজ ৪০ বা ৫০ জন চৌকিদার ছিল। বাগেরহাটের কচুয়া, মাদরীপুরের বুড়িরহাট ও গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া তখন বাকেরগঞ্জ জেলাধীন ছিল। ভোলা ছিল নোয়াখালী জেলার অধীনে। জেলখানায় ১ জন জমাদার, ২ জন দফাদার, কামজারী বরকন্দাজ এবং ১৪৫ জন পেয়াদা পাহারা ছিল।
 +
 
 +
 
 +
== ইংরেজ আমলে বরিশাল কালেক্টরেটের বিভিন্ন পদ ও তার বেতন ==
 +
 
 +
১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দের ২ নভেম্বর জে. জে. হার্ভে কালেক্টর নিযুক্ত হন। তার সময় কালেক্টরেটের সংস্থাপন বিভাগ ও পদসমূহের বেতন নি¤œরূপ ছিল। 
 +
 
 +
 
 +
হেড রাইটার- আর এইচ উইলিয়াম মাসিক বেতন ৭০ টাকা,
 +
সেকেন্ড রাইটার-ইবি নিলাস মাসিক বেতন ৪০ টাকা,
 +
সেরেস্তাদার-শ্যামাচরণ মিত্র মাসিক বেতন ৭০ টাকা,
 +
মীর মুন্সী-রামকান্ত সেন মাসিক বেতন ৫০ টাকা,
 +
নায়েব মুন্সী-কুমুদ চন্দ্র চক্রবর্তী মাসিক বেতন ১৪ টাকা,
 +
ট্রেজারার-গোলক চন্দ্র চক্রবর্তী মাসিক বেতন ৪০ টাকা,
 +
সেকেন্ড ট্রেজারার-রামচন্দ্র ভদ্র মাসিক বেতন ৯ টাকা,
 +
রেকর্ড কীপার-বিশ্বনাথ সিকদার মাসিক বেতন ৩০ টাকা।
 +
 
 +
এ ছাড়া ছিল ট্রেজারি মোহরার, হেড আবগারী, হেজ মুহুরী, সুদ নেওয়াজী, খাস মোহরার, ৪ জন মুন্সী মোহরার, ৫ জন তৌজিনবিস, ২ জন তৌজি নেওয়াজ, ২ জন সুদ নেওয়াজ- প্রত্যেকের বেতন মাসিক ৭ টাকা, ৫ জন কেরানি, ২৫ জন বরকন্দাজ, ১০ জন ফরাস মাসিক বেতন ৪ টাকা। সর্বমোট ৫৬ জন কর্মচারী ছিল। এদের মাসিক খরচ চিল ৮৬৭৩ টাকা। ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের ৩০ মে হার্ভে উপরোক্ত খতিয়ান দেন। কর্মচারীদের ৩৫ জনের মাসিক বেতন ছিল মাসে ৪ টাকা।
 +
 
 +
----
 +
 
 +
তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০।

০৬:৩৪, ৪ নভেম্বর ২০১৭ তারিখের সংস্করণ

বাকেরগঞ্জ (বৃটিশ আমল): বাকেরগঞ্জ বর্তমানে বরিশাল জেলার একটি থানার নাম। তবে পূর্ববর্তীতে ১৭৪০ সালে এটি সরকার বাকলার অন্তর্গত বুজুর্গ উমেদপুর পরগণার কেন্দ্র ও একটি বিখ্যাত বন্দর ছিল। পরবর্তীতে ১৭৯৭ সালে এই নামে বৃটিশ সরকার এতদঞ্চলে একটি জেলা গঠন করেন এবং বাকেরগঞ্জ বন্দরটি জেলার সদর দপ্তরে পরিণত হয়। ১৮০১ সালে বাকেরগঞ্জের সাথে যোগাযোগের নদী নাব্যতা হারালে বরিশাল (বা গিরদে বন্দর) শহরে বাকেরগঞ্জ জেলার সদরদপ্তর স্থাপিত হয়। সদর দপ্তর বরিশাল হলেও জেলার নাম বাকেরগঞ্জই থেকে যায়।


নামকরণ

১৭৪০ খ্রিস্টাব্দে আলীবর্দী খাঁ আগাবাকেরকে চট্টগ্রামের ফৌজদার ও সরকার বাকলার অন্তর্গত বুজুর্গ উমেদপুর পরগণার জমিদারী প্রদান করেন। এই জমিদারির সদর দপ্তর হিসেবে আগা বাকেরের নামানুসারে বাকেরগঞ্জ বন্দরের পত্তন হয়। পলাশী যুদ্ধের পর বাকেরগঞ্জের স্বাধীনচেতা জনগণ ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। কয়েকজন ইংরেজ বিদ্রোহীদের হাতে প্রাণ হারায়। বিদ্রোহীদের দমন করার জন্য ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাকেরগঞ্জকে নিয়ে একটি স্বতন্ত্র জেলা গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয়।


জেলা হিসাবে আত্মপ্রকাশ

কোম্পানি ১৭৮১ খৃৃস্টাব্দে বাকেরগঞ্জে একটি সিভিল কোর্ট প্রতিষ্ঠা করে। তবে বাকেরগঞ্জের সে কোর্ট ১৭৮১ খৃৃস্টাব্দে নলছিটি থাকার বারৈকরণে প্রতিষ্ঠিত হয়। কারণ জেলা হিসেবে বাকেরগঞ্জের সদর দপ্তর হয় বর্তমান নলছিটির বারৈকরণ। কমন্স সভার ষষ্ঠ বিবরণে ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দের ৬ এপ্রিল মুদ্রিত রাজস্ব বিভাগের নির্দেশাবলীতে বাকেরগঞ্জে সিভিল কোর্ট প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে বিশদ বিবরণ আছে।

১৭৮১ খৃৃস্টাব্দে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাকেরগঞ্জ নামের সরকারী স্বীকৃতি প্রদান করল। ১৭৮১ খৃৃস্টাব্দে মি. রাফটন (Roughton) বাকেরগঞ্জ সিভিল কোর্টের প্রথম জজ ছিলেন। বারৈকরণে তার দপ্তর ছিল। তবে জেলা হলেও বাকেরগঞ্জে তখন কালেক্টর নিয়োগ দেয়া হয়নি। রাজস্ব আদায়ের সুবিধার জন্য ১৭৮৬ খৃৃস্টাব্দে বাকেরগঞ্জে কমিশনার মি. লজকে একজন সহকারী কালেক্টর নিয়োগ করা হয়। বারৈকরণেই সহকারী কালেক্টরেরও দপ্তর ছিল।

ভারতের গভর্নর জেনারেল স্যার জন শোর ১৭৯৭ খৃৃস্টাব্দে পূর্ণাঙ্গ জেলার ঘোষণা করেন। ১৭৯৭ খ্রিস্টাব্দের ৭ নম্বর রেগুলেশন দ্বারা সুন্দরবন কমিশনার পদ বিলুপ্ত করে বাকেরগঞ্জকে একটি জেলা করা হয়। ঢাকা-জালালপুরের দক্ষিণ ভাগ নিয়ে বাকেরগঞ্জ জেলা গঠন করা হয়। বাকেরগঞ্জ জেলায় ১৭৯৭ খ্রিস্টাব্দের ১০টি থানা ছিল: ১. বারৈকরণ, ২. আঙ্গারিয়া, ৩. বাউফল, ৪. খলিসাখালী, ৫. চান্দিয়া (ভোলা), ৬. বুখাইনগর, ৭. নলচিড়া, ৮. কেওয়ারী, ৯. কাউখালী এবং ১০. টেগরা। জেলার আয়তন ছিল ৪৩০০ বর্গমাইল।


বাকেরগঞ্জের ইংরেজ কালেক্টরগণ ও জেলা-ম্যাজিস্ট্রেটগণ

কালেক্টরগণ

ডগলাস ১৭৯০-৯৩ টমসন ১৭৯৩-৯৫ আমর্ষ্টং ১৭৯৬-৯৮ মেসি ১৮৯৮-১৮০২ জে বেটি ১৮০২-১৮০৫ ফরটেসকিউ ১৮০৬ বার্ড ১৮০৭ বেটি ১৮০৭-১২ হান্টার ১৮১৭-১৯ বাকেরগঞ্জে প্রথম পৃথক কালেক্টর বার্লো ১৮১৯-২০ লারা ১৮২০ হান্টার ১৮২০ ম্যাক্সওয়েল ১৮২১ কারডিউ ১৮২২ ফিলিপস ১৮২২-২৪ জন ফ্রেন্স ১৮২৪-৩২ জে জে হার্ভে ১৮৩২-৩৩ রবার্ট উইলিয়ম ১৮৩৩-৩৪ ষ্টেইনফোর্ড ১৮৩৫ আর ইঞ্চ ১৮৩৬-৩৭ জন ব্রুস ১৮৩৮ রবার্ট ইঞ্চ ১৮৩৯-৪০ আর আর স্ট্রাট ১৮৩৯-৪০ রবার্ট ইঞ্চ ১৮৪০-৪৩ এইচ আর স্ট্রাট ১৮৪৪-৪৫ এ মানি ১৮৪৫-৪৬ হেনরি আর থারটন ১৮৪৭ জে. ই. রিড ১৮৪৭-৫৪ আর হ্যাম্পটন ১৮৫৫ উইলিয়াম ফ্রেচার ১৮৫৬ সি ডব্লিউ মেকিলপ ১৮৫৭

জেলা-ম্যাজিস্ট্রেটগণ মিডলটন ১৭৯৭-১৮০০ ষ্পিডিং ১৮০০ উইন্টল ১৮০০-১৮০৩ গার্ডনার ১৮০৪-১৮০৫ অসওয়ালড ১৮০৫-১৮০৬ বেটি ১৮০৭-১২ ফরটেসকিউ ১৮১৩-১৪ সেজ ১৮১৫-১৬ হ্যারিংটন ১৮১৮ লি ওয়ারনার ১৮১৮ চ্যাপম্যান ১৮১৯-২০ কারডিউ ১৮২১-২৩ জে শ ১৮২৪-২৫ মরিসন ১৮২৫-২৭ গ্যারেট ১৮২৭-৩০ ম্যাজিষ্ট্রেট ষ্টার্ট ১৮৩১-৩২ ষ্টেইনফোর্ড ১৮৩৩-৩৫ ষ্ট্রাট ১৮৪২-৪৫ হ্যারিসন ১৮৪৫-৪৮ বি এইচ কুপার ১৮৪৯-৫১ এইচ সি হলকেট ১৮৫২ এস এস কিউ ফোর্ড ১৮৫৩-৫৪ আলেকজান্ডার ১৮৫৫-৫৯

জেলা জজ ডব্লিউ আই মানি ১৮৫০-৫২ ষ্ট্রিয়ার ১৮৫৩-৫৫ এফ বি কেমপ ১৮৫৬-৫৮


বিভিন্ন কালেক্টর ও জেলা-ম্যাজিস্ট্রেটগণের সময়ে বাকেরগঞ্জের উন্নয়ন

জন উইন্টল (John Wintle)- ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের শেষ ভাগে স্পীডিংয়ের স্থলে জন উইন্টল বাকেরগঞ্জের জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট নিযুক্ত হন। তিনি ১৮০১ খ্রিস্টাব্দের ২৪ ফেব্রুয়ারি জজকোর্ট উদ্বোধন করেন। ১৮০১ খ্রিস্টাব্দেই উইন্টল প্রথম জেলা জজের কাজ করতে শুরু করেন। ১৮০২ খ্রিস্টাব্দের ৭ জানুয়ারি উইন্টল রাজস্ব বোর্ডের নিকট জেলার প্রশাসন ও সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে এক প্রতিবেদন পাঠিয়েছিলেন। তার বিবরণে দেখা যায় ১৭৯৭ খৃৃস্টাব্দে এপ্রিল মাসের পূর্বে সিভিল কোর্টগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বাকেরগঞ্জ সিভিল কোর্ট ১৭৮১ খৃৃস্টাব্দে শুরু হয়েছিল। কিন্তু এ কোর্টের ক্ষমতা সীমিত ছিল। কর্নওয়ালিশের শাসন সংস্কার ও নতুন জেলার কাঠামো অনুযায়ী সিভিল কোর্টের কাজ ১৭৯৭ খ্রিস্টাব্দেই শুরু হয়। বাকেরগঞ্জ নদীতে চর পড়ে যাওয়ায় নদীপথে যাতায়াত জটিল হয়ে পড়ে। তাই উইন্টলের ব্যবস্থাপনায় বাকেরগঞ্জ জেলা সদর দপ্তর ১৮০১ খৃৃস্টাব্দে বরিশালের স্থানান্তরিত করা হয়। ১৮০১ খ্রিস্টাব্দের মে মাস হতে ডিসেম্বরের মধ্যে উইন্টল বাকেরগঞ্জ হতে সদর দপ্তর বরিশালে স্থানান্তরিত করেন। উইন্টল বরিশাল শহরে জেলখানা, দেওয়ানী ও ফৌজদারী ভবন, বান্দ রোড, চকবাজার রোডে কয়েকটি পুল নির্মাণ ও পুকুর খনন করেন।

তিনি ১৮০২ খ্রিস্টাব্দের ৭ জানুয়ারি বোর্ডের নিকট বরিশাল সম্পর্কে এক বিস্তারিত বিবরণ দাখিল করেন। উইন্টল তার বিবরণে বরিশালের জনগণের চরিত্র সম্পর্কে বল্গাহীন মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, এ জেলার নারী-পুরুষ রাগী, সামান্য কারণে খুন করতে পারে এবং চুরি-ডাকাতি তাদের পেশা। জনগণ ইংরেজ শাসনামলে শান্তিতে আছে এবং তারা হিন্দু বা মোগল যুদের তুলনায় অধিক স্বাধীনতা ভোগ করে। ষ্ট্যাম্প ফী প্রবর্তনের ফলে মামলাল সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। ষ্ট্যাম্পের মূল্য খুব বেশি ছিল। ২ টাকা দাবি মামলার জন্য একজন অভিযোগকারীকে ষ্ট্যাম্প ফীসহ ৭ টাকা ৬ পয়সা খরচ করতে হতো। ওকালতনামার মূল্য ছিল ৪ পয়সা। উকিলেরা মামুলিভাবে মামলা পরিচালনা করত এবং তাদের মধ্যে কোন প্রতিভাশালী উকিল ছিল না। অপরাধ দমনের জন্য তিনি বিদ্যমান ১০টির সাথে আরো তিন বা চারটি থানা স্থাপনের প্রস্তাব করেন।

উইন্টল লিখেছেন যে চন্দ্রদ্বীপ রাজা জয়নারায়ণ ব্যতীত এ জেলায় কোন উচ্চপদস্থ ব্যক্তি নেই। নি¤েœ কয়েকজন সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হলো। তারা ২৫ বা ৩০ জনের বেশি ঢাল-তলোয়ার সজ্জিত বরকন্দাজ নিয়ে যাতায়াত করতেন। ১. মির হোসেন উদ্দিন চৌধুরী জমিদার, নাজিরপুর। ২. মির আসাদ আলী চৌধুরী জমিদার, শায়েস্তাবাদ। ৩. শিব নারায়ণ রায়- রায়েরকাঠি জমিদার, সেলিমাবাদ। ৪. রামদুলাল চক্রবর্তী- রহমতপুর তালুকদার, চন্দ্রদ্বীপ ৫. বাওয়ানী প্রসাদ চক্রবর্তী- রহমতপুর তালুকদার, চন্দ্রদ্বীপ ৬. কীর্তিচন্দ্র রায়- উজিরপুর তালুকদার, রতনদী কালিকাপুর। ৭. শিবচন্দ্র রায় ও কীর্তি চন্দ্র রায়- কলসকাঠি তালুকদার, আওরঙ্গপুর। ৮. খাজা মোহাম্মদ দায়েম ও খাজা চাঁদ তালুকদার, সলকমিনাহ তালুক। ৯. বাওয়ানী প্রসাদ রায় ব্যবসায়ী-সুতানরী।


গার্ডনার (Gardner) - ১৮০৪ খৃৃস্টাব্দে উইন্টলের স্থলে গার্ডনার জজ-ম্যাজিষ্ট্রেট বা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত হন। তিনি ১৮০৪ খৃৃস্টাব্দে একটি কাঁচা-পাকা জেলখানা নির্মাণ করেন। এ জেলখানার পাকা দেয়াল এবং খড়ের ছাউনি ছিল। তার সময় ১৮০৫ খৃৃস্টাব্দে পুলিশ খাতে ৩৩৩৬০ টাকা খরচ হয়।

অসওয়ালড (Oswald)- ১৮০৫ খৃৃস্টাব্দে অসওয়ালড বাকেরগঞ্জের জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট হয়ে আসেন। জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট অসওয়ালডের সময় বাকেরগঞ্জ জেলার আয়তন বৃদ্ধি পায়। তার সময়ে ১৮০৬ সালে বিদ্যমান ১০টির সাথে ঢাকা জেলা হতে গৌরনদী ও বুড়ীরহাট থানা বাকেরগঞ্জ জেলাভুক্ত করা হয়। তখন পর্যন্ত গৌরনদী, কোটালীপাড়া এবং বুড়ীরহাট বাকেরগঞ্জ জেলাভুক্ত ছিল।

বেটি (Battye)- ১৮০৭ খৃৃস্টাব্দে মি. বেটি জজ-ম্যাজিষ্ট্রেটের দায়িত্ব গ্রহণ করে বরিশাল আগমন করেন। তিনি জেলখানার সংস্কার, পুল ও রাস্তা নির্মাণ করেন। তিনি একজন কঠোর কর্মচারী ছিলেন। ১৮১১ খৃৃস্টাব্দে বাটার খালের পুলটি পুননির্মাণ করেন। মি. উইন্টল বান্দ রোড নির্মাণকালে পুলটি নির্মাণ করেছিলেন। বেটি পুলটি নির্মাণ করে একটি মার্বেল পাথর স্থাপন করেন। পুলের সাথে পাথরটি এখনও আছে। পাথরে ইংরেজী, বাংলা ও ফরাসী ভাষায় লেখা আছে, ১৮১১ খ্রিস্টাব্দে পুল পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে। বেটির নামানুসারে বরিশাল নদী হতে শহরের মধ্যে প্রবাহিত খালটি বাটার খাল এবং পুলটিকে বেটার পুল বলা হয় থাকে। পূর্বে জমিদার ও তালুকদাররা তাদের কোষা নৌকা নদীতে না রেখে বাটার খালে রাখতেন। এ খালের পূর্ব গৌরব এখন নেই। বেটি নাজিরের পুল ও শরোডে একটি পুল নির্মাণ করেন। তিনি পানীয়জলের জন্য কয়েকটি পুকুর খনন করেন। বেটির শাসনামলে ১৮১২ খৃৃস্টাব্দে কোটালীপাড়া ও মির্জাগঞ্জ থানা সৃষ্টি হয়। কোটালীপাড়া, টুঙ্গিপাড়া ও কালকিনী নিয়ে গঠিত কোটালীপাড়া বাকেরগঞ্জ জেলার অন্তর্ভূক্ত ছিল। দক্ষিণ অঞ্চলে সুন্দরবন কেটে বসত বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমান বেতাগী, পটুয়াখালী নিয়ে মির্জাগঞ্জ থানা গঠন করা হয়। ১৮১২ খৃৃস্টাব্দে বাকেরগঞ্জ জেলায় ১৪টি থানা ছিল। ১৮১২ খ্রিস্টাব্দের ৮ ফেব্রুয়ারি বেটির এক পত্রে দেখা যায় ঐ বছর নলচিড়া থানা মেহেন্দিগঞ্জে স্থানান্তরিত করা হয়। বেটির সময় বরিশাল জেলখানায় এক বিদ্রোহ দেখা দেয়। ১৮১২ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে জেলখানায় কয়েদীরা বিদ্রোহ করে। ইংল্যান্ডের বোর্ড অব ডাইরেক্টর বিদ্রোহ দমনের জন্য প্রশংসা করে বেটিকে পত্র দিয়েছল।

চ্যাপম্যান- ১৮১৯ খৃৃস্টাব্দে ম্যাজিষ্ট্রেট চ্যাপম্যান খ্রিস্টানদের কবরস্থান (সার্কিট হাউসের সামনে) ও পানীয়জলের জন্য নিজ নামে একটি পুকুর খনন করেন। তিনি হেষ্টিংসের স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য ২৬৮ টাকা চাঁদা প্রেরণ করেন। মিঃ চ্যাপম্যান ১৮২০ খ্রিস্টাব্দের ১৬ এপ্রিল কলেরা ওষুধের জন্য পত্র লিখেছেন। তিনি জানিয়েছেন জেলার সর্বত্র কলেরা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। ১৮২২ খ্রিস্টাব্দেও কলেরা দেখা দেয়।

মি. গ্যারেট- মি. গ্যারেট ১৮২৭-৩০ পর্যন্ত বাকেরগঞ্জের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। বাকেরগঞ্জের জজ-ম্যাজিষ্ট্রেটের মধ্যে মি. গ্যারেট জেলার উন্নয়নের জন্য বিশেষ অবদান রেখেছেন। তিনি বরিশালে ইংরেজ শিক্ষা প্রবর্তন করেন। তিনি ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দের ৩১ মার্চ বরিশালে তিনি একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। গ্যারেট শহরে পুকুর খনন ও রাস্তা নির্মাণ করেন। সরকার তাকে শহর উন্নয়নের জন্য ১৫০০ টাকা বরাদ্দ করেছিলেন এবং তিনি চাঁদা পেয়েছিলেন ৮২৫ টাকা। তার সময় শহরে পাকা রাস্তা ছিল ৮ মাইল। গৌরনদী থানা নদীতে ভেঙ্গে গেলে তিনি ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে ১৫ মার্চ থানা পালর্দী বন্দরে প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেন। গ্যারেট সতীদাহ প্রথা বন্ধের জন্য বিশেষ সচেষ্ট ছিলেন। তার সময় বরিশালের সতীদাহ প্রথা বন্ধ হয়ে যায়। ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দের ১ মার্চের এক পত্রে তিনি লিখেছেন, “আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ যে ভয়াবহ সতীদাহ প্রথা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আমি আনন্দের সাথে বলছি যে, এ অঞ্চলে এ প্রথা বন্ধ করতে কোন অসুবিধা হয়নি। সকল ম্যাজিষ্ট্রেটের জন্য এ এক মানসিক শান্তি।” তিনি ধার্মিক ছিলেন কিন্তু মানবতাবাদী ছিলেন না। ১৮২৭ খৃৃস্টাব্দে সরকারের সচিবের নিকট লিখিত এক পত্রে তিনি এ জেলার জনগণকে মামলাবাজ বলেছেন। কিন্তু তার এ মন্তব্য ভিত্তিহীন। ইংরেজদের আগমনের পূর্বে বাকলার জনগণ মামলাবাজ ছিল না। কোম্পানি সৃষ্ট ভূমিব্যবস্থা এবং তাদের শোষণ এ জেলার মুষ্টিমেয় লোককে মামলায় জড়িত করেছে। এ জন্য ইংরেজ শাসনই দায়ী। জনগণ নয়। গ্যারেট একজন ব্যাপ্টিষ্ট ধর্ম প্রচারক ছিলেন। তিনি নমঃশূদ্রদের মধ্যে ধর্ম প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন। এ নিয়ে কলিকাতা কাউন্সিল প্রশ্ন তোলে। তাই গ্যারেট ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দের ৬ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করে ব্যাপ্টিষ্ট গির্জায় যোগ দেন। মি. বেভারিজ তাকে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলেছেন, মিঃ গ্যারেট একজন কর্মনিষ্ঠ এবং জনদরদী কর্মচারী ছিলেন এবং শহরের উন্নতি ও প্রথম ইংরেজী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সাহায্যের জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন।”

হান্টার- ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে হান্টার বাকেরগঞ্জের সহকারী কালেক্টর ফ্রেজারের নিকট হতে বাকেরগঞ্জের প্রথম পৃথক জেলা কালেক্টর হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তার মাসিক বেতন ছিল ১৫০০ টাকা। হান্টার ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দের ৬ নভেম্বর বার্লোর নিকট দায়িত্ব প্রদান করে চলে যান। হান্টার পুনরায় ১৮২০ খ্রিস্টাব্দের ৩০ অক্টোবর জেলার কালেক্টর নিযুক্ত হন এবং ১৮২১ খ্রিস্টাব্দের ২২ জানুয়ারি কালেক্টর ম্যাক্সওয়েলের নিকট দায়িত্ব অর্পণ করে চলে যান। মিঃ হান্টার এ জেলায় ভূমি বন্দোবস্ত দিয়ে আবাদ বৃদ্ধি করেন। চর ও সুন্দরবন ভ্রমণ করে তিনি আবাদের উৎসাহ দেন। তিনি রামনা-বামনা, ফুলঝুরি ও চর কুকরি-মুকরি পরিদর্শন করেন।

জন ফ্রেন্স- জন ফ্রেন্স ১৮২৪ থেকে ১৮৩২ পর্যন্ত বরিশালের কালেক্টর ছিলেন। তিনি ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দের ১ মার্চ একটি ট্রেজারি চালানে ৬৪টি বাক্সে তিন লক্ষ চুরাশি হাজার টাকা কলিকাতায় পাঠান। ফোর্ট উইলিয়ামের অস্থায়ী সাব-ট্রেজারার আর হান্টারের নিকট ট্রেজারি চালানে সুবেদার মঞ্জু খান একজন জমাদার, ৪ জন হাবিলদার, ৪ জন নায়েক ও কলিকাতা নেটিভ মিলিশিয়ার ৬৪ জন সিপাহীর পাহারায় পোদ্দার ভগবতী চরণ দে ও অমূল্য কিশোরের মাধ্যমে ৮টি নৌকায় ৬৪টি বাক্সে- প্রতিবাক্সে তিনটি ব্যাগ এবং প্রতিব্যাগে দু’হাজার টাকা পাঠানো হয়। এ সময় জেলার রাজস্ব আায় ছিল ১৩,৭৫০০০ টাকা এবং প্রশাসনিক সর্বমোট ব্যয় হতো ৩,০০,০০০ টাকা। প্রায় ১১ লক্ষ টাকা কলিকাতা হয়ে বিলেতে চালান হতো। এভাবে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাকেরগঞ্জকে শোষণ করত। ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দের ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত জন ফ্রেন্স বাকেরগঞ্জে ছিলেন। তারপর তিনি ২৪ পরগণার কালেক্টর নিযুক্ত হন।

ষ্ট্রাট- কালেক্টর ষ্ট্রাট দুই মেয়াদে ১৮৩৯-৪০ ও ১৮৪৪-৪৫ সময়কাল বরিশালের কালেক্টর ছিলেন। ১৮৪৫ খৃৃস্টাব্দে বাকেরগঞ্জের কালেক্টর ষ্ট্রাটের সময় বরিশাল ট্রেজারিতে ৪০ হাজার টাকা ঘাটতি দেখা দেয়। ট্রেজারারের ৭ বছর জেল এবং ষ্ট্রাটের পদাবনতি হয়েছিল। স্ট্রাট দেশীয় এক হিন্দু মহিলাকে বিয়ে করেন এবং তাঁর বাসাতে পূজা হতো। মি. শ’- ১৮৪৫ খৃৃস্টাব্দে মি. শ’ খন্ডকালীন জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট ছিলেন। মিঃ শ’ বরিশালে কয়েকটি রাস্তা মেরামত করেন। বরিশাল শহরে শ’ রোড তার দ্বারা নির্মিত হয়। এই ইতিহাস অবলোপন করে বর্তমানে উক্ত রাস্তাটিকে দুঃখজনকভাবে স্বরোড বলা হয়, অথচ বলা উচিত শ’ রোড। মি. শ’ স্বল্প সময়ের দায়িত্বে বরিশালে একটি চার্চও নির্মাণ করেন।


জেলার সীমানা পরিবর্তন ও বিভিন্ন থানা গঠন-

বাকেরগঞ্জ জেলায় ১৭৯৭ খ্রিস্টাব্দের ১০টি থানা ছিল: ১. বারৈকরণ, ২. আঙ্গারিয়া, ৩. বাউফল, ৪. খলিসাখালী, ৫. চান্দিয়া, ৬. বুখাইনগর, ৭. নলচিড়া, ৮. কেওয়ারী, ৯. কাউখালী এবং ১০. টেগরা। জেলার আয়তন ছিল ৪৩০০ বর্গমাইল। ১৮০৬ সালে বিদ্যমান ১০টির সাথে ঢাকা জেলা হতে গৌরনদী ও বুড়ীরহাট থানা বাকেরগঞ্জ জেলাভুক্ত করা হয়। তখন পর্যন্ত গৌরনদী, কোটালীপাড়া এবং বুড়ীরহাট বাকেরগঞ্জ জেলাভুক্ত ছিল না। বেটির শাসনামলে ১৮১২ খৃৃস্টাব্দে কোটালীপাড়া ও মির্জাগঞ্জ থানা সৃষ্টি হয়। কোটালীপাড়া, টুঙ্গিপাড়া ও কালকিনী নিয়ে গঠিত কোটালীপাড়া বাকেরগঞ্জ জেলার অন্তর্ভূক্ত ছিল। দক্ষিণ অঞ্চলে সুন্দরবন কেটে বসত বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমান বেতাগী, পটুয়াখালী নিয়ে মির্জাগঞ্জ থানা গঠন করা হয়। ১৮১২ খৃৃস্টাব্দে বাকেরগঞ্জ জেলায় ১৪টি থানা ছিল। ১৮১২ খ্রিস্টাব্দের ৮ ফেব্রুয়ারি বেটির এক পত্রে দেখা যায় ঐ বছর নলচিড়া থানা মেহেন্দিগঞ্জে স্থানান্তরিত করা হয়।

১৮১৬ খৃৃস্টাব্দে জেলার সীমানা আবার পরিবর্তন হয়। ঢাকা থেকে দূরে অবস্থিত হওয়ায় মুলাদী ও হিজলা থানার উত্তরে অবস্থিত ইদিলপুর পরগণার একাংশ ১৮১৬ খৃৃস্টাব্দে বাকেরগঞ্জ জেলাভুক্ত করা হয়। ১৮২০ খৃৃস্টাব্দে বুখাইনগর থানার একাংশ নিয়ে বরিশাল কোতোয়ালি থানা গঠন করা হয় এবং থানা দপ্তর বুখাইনগর থেকে বরিশালের স্থানান্তরিত হয়। তারপর থেকে মোগল আমলের ঐতিহ্যবাহী বুখাইনগর পূর্ব গৌরব হারিয়ে ফেলে। ১৮২৪ খৃৃস্টাব্দে বারৈকরণ থানা বিভক্ত হয়ে নলছিটি ও ঝালকাঠি থানা গঠন করা হয়। বারৈকরণ হতে থানা ১৮২৪ খৃৃস্টাব্দে নলছিটি বন্দরে স্থানান্তরিত হয়।

১৮২২ খ্রিস্টাব্দের ২২ এপ্রিল জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট দক্ষিণ শাহবাজপুরকে বাকেরগঞ্জ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নোয়াখালীর সাথে অন্তর্ভূক্ত করার সুপারিশ করেন কারণ কালাবদর নদীর কারণে ভোলার সাথে বাকেরগঞ্জের প্রশাসনিক সম্পর্ক কঠিন হয়ে পড়েছিল। ঐ বছর ৩ জুলাই নোয়াখালীর জয়েন্ট ম্যাজিষ্ট্রেট এইচ পার্কার দক্ষিণ শাহবাজপুরের দায়িত্বে বুঝে নেন। তখন ভোলার দপ্তর ছিল চান্দিয়া। ১৮৬৯ খৃৃস্টাব্দে পর্যন্ত ভোলা নোয়াখালীর অধীনে ছিল। ১৮৬৯ সালে ভোলাকে আবার বাকেরগঞ্জের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৮৪৫ খৃৃস্টাব্দে দক্ষিণ শাহবাজপুরকে মহকুমা করা হয়। তখন ভোলা ও দৌলতখাঁ থানা ছিল মহকুমা সদর দপ্তর দৌলতখাঁয় অবস্থিত ছিল। ১৮২৯ খৃৃস্টাব্দে মাদারীপুরের বুড়ীরহাট থানা ঘোষের হাটে স্থানান্তরিত হয়। ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দের ৫ মার্চ জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মি. গ্যারেটের সুপারিশে গৌরনদী থানা পালর্দী বন্দরে স্থাপিত হয়।

১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দের ১৯ মার্চ বাকেরগঞ্জের জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মাদারীপুর মহকুমা প্রতিষ্ঠার জন্য সুপারিশ করেন এবং ১৮৫৪ খৃৃস্টাব্দে মাদারীপুর মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হয়।১৫ গৌরনদী, গোষেরহাট, মাদারীপুর ও কোটালীপাড়া নিয়ে মাদারীপুর মহকুমা গঠিত হয়। বাকেরগঞ্জের জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আলেকজান্ডার ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২৪ এপ্রিল পিরোজপুর মহকুমা স্থাপনের প্রস্তাব দেন। সিপাহী বিদ্রোহের জন্য পিরোজপুর মহকুমা ঘোষণা বিলম্বিত হয়। ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দের ১৮ অক্টোবর পিরোজপুর মহকুমা উদ্বোধন করা হয়। কচা নদীতে ডাকাতি বন্ধের জন্য কোম্পানি নতুন মহকুমা গঠনে উদ্যোগ নেয়। প্রকৃতপক্ষে ১৮৫৪ খৃৃস্টাব্দে সিংখালীর বিদ্রোহ পিরোজপুর মহকুমা প্রতিষ্ঠা ত্বরান্বিত করে।


মুন্সেফি চৌকি ও প্রশাসনিক ইউনিট

বাকেরগঞ্জ জেলায় বৃটিশ আমলে সদর মুন্সেফ, সদর আমিন ব্যতীত ৫টি মুন্সেফী চৌকি ছিল। ১৮৫৬ খৃৃস্টাব্দে ৫টি চৌকিতে যারা মুন্সেফ ছিলেন তারা হলেন- ১. মৌলভী মফিজুদ্দিন আহম্মদ, মেহেন্দীগঞ্জ চৌকি, ২. বাবু মধুসূদন ঘোষ, কাউখালী চৌকি, ৩. বাবু ব্রজমোহন দত্ত, বাউফল চৌকি, ৪. বাবু বিশ্বেশ্বর সেন, মাদারীপুর চৌকি, ৫. বাবু গৌরহরি বসু, কোটেরহাট চৌকি। ১৮৫৬ খৃৃস্টাব্দে এ জেলায় ১৩টি থানা ও ৯টি ফাঁড়ি ছিল।১৭ থানা-বরিশাল কোতোয়ালি, মির্জাগঞ্জ, মেহেন্দিগঞ্জ, খলিসাখালী, বাউফল, আঙ্গারিয়া, নলছিটি, কচুয়া, কেওয়ারী, টেগরাপুর, বুড়িরহাট, গৌরনদী ও কোটালীপাড়া। প্রত্যেক থানায় ১০ থেকে ২০ জন বরকন্দাজ এবং ৪৫০ হতে ২৫০ জন চৌকিদার ছিল। গংগাপুর, বোখাইনগর, শ্রীরামপুর, রাজাপুর, ঝালকাঠি, রাজৈর, আগরপুর, কাউখালী ও ভাগীরথপুরে ফাঁড়ি ছিল। প্রত্যেক ফাঁড়িতে ২ হতে ৪ জন বরকন্দাজ ৪০ বা ৫০ জন চৌকিদার ছিল। বাগেরহাটের কচুয়া, মাদরীপুরের বুড়িরহাট ও গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া তখন বাকেরগঞ্জ জেলাধীন ছিল। ভোলা ছিল নোয়াখালী জেলার অধীনে। জেলখানায় ১ জন জমাদার, ২ জন দফাদার, কামজারী বরকন্দাজ এবং ১৪৫ জন পেয়াদা পাহারা ছিল।


ইংরেজ আমলে বরিশাল কালেক্টরেটের বিভিন্ন পদ ও তার বেতন

১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দের ২ নভেম্বর জে. জে. হার্ভে কালেক্টর নিযুক্ত হন। তার সময় কালেক্টরেটের সংস্থাপন বিভাগ ও পদসমূহের বেতন নি¤œরূপ ছিল।


হেড রাইটার- আর এইচ উইলিয়াম মাসিক বেতন ৭০ টাকা, সেকেন্ড রাইটার-ইবি নিলাস মাসিক বেতন ৪০ টাকা, সেরেস্তাদার-শ্যামাচরণ মিত্র মাসিক বেতন ৭০ টাকা, মীর মুন্সী-রামকান্ত সেন মাসিক বেতন ৫০ টাকা, নায়েব মুন্সী-কুমুদ চন্দ্র চক্রবর্তী মাসিক বেতন ১৪ টাকা, ট্রেজারার-গোলক চন্দ্র চক্রবর্তী মাসিক বেতন ৪০ টাকা, সেকেন্ড ট্রেজারার-রামচন্দ্র ভদ্র মাসিক বেতন ৯ টাকা, রেকর্ড কীপার-বিশ্বনাথ সিকদার মাসিক বেতন ৩০ টাকা।

এ ছাড়া ছিল ট্রেজারি মোহরার, হেড আবগারী, হেজ মুহুরী, সুদ নেওয়াজী, খাস মোহরার, ৪ জন মুন্সী মোহরার, ৫ জন তৌজিনবিস, ২ জন তৌজি নেওয়াজ, ২ জন সুদ নেওয়াজ- প্রত্যেকের বেতন মাসিক ৭ টাকা, ৫ জন কেরানি, ২৫ জন বরকন্দাজ, ১০ জন ফরাস মাসিক বেতন ৪ টাকা। সর্বমোট ৫৬ জন কর্মচারী ছিল। এদের মাসিক খরচ চিল ৮৬৭৩ টাকা। ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের ৩০ মে হার্ভে উপরোক্ত খতিয়ান দেন। কর্মচারীদের ৩৫ জনের মাসিক বেতন ছিল মাসে ৪ টাকা।


তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০।