বরিশালের ব্রাহ্ম সমাজ

Barisalpedia থেকে
Spadmin (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৫:২৬, ৪ মে ২০২০ পর্যন্ত সংস্করণে ("বাকেরগঞ্জ জেলায় নবজাগরণের বা রেনেসাঁসের অগ্রদূত ব্রাহ..." দিয়ে পাতা তৈরি)

(পরিবর্তন) ←পুর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ→ (পরিবর্তন)

বাকেরগঞ্জ জেলায় নবজাগরণের বা রেনেসাঁসের অগ্রদূত ব্রাহ্ম সমাজ। রাজা রামমোহন রায়ের জীবিতকালে বরিশালে ব্রাহ্ম ধর্ম বিস্তার লাভ করেনি। ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে ঢাকার নর্মাল স্কুলের পাঠ শেষ করে ৫ জন ছাত্র: নন্দ কুমার সেন, হরিশ চন্দ্র মজুমদার, গোপী লাল রায়, বৈদ্যনাথ রায় ও ললিত মোহন সেন কার্যোপলক্ষে বরিশালে আগমন করেন। তারা ঢাকা ব্রাহ্ম সমাজের দীক্ষা নিয়েছিলেন এবং তারাই প্রথম বরিশালে ব্রাহ্ম ধর্ম প্রচার করেন।


ব্রাহ্ম উপাসনার প্রবর্তন

বরিশালের প্রথম যুগের ব্রাহ্মদের মধ্যে নবদ্বীপ নিবাসী রামতনু লাহিড়ী প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি ১৮৬০ খৃৃস্টাব্দে বরিশাল জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত হয়ে আসেন। লাখুটিয়ার জমিদার রাজচন্দ্র রায়ের পুত্র রাখাল চন্দ্র রায় চৌধুরী জেলা স্কুলের ছাত্র ছিলেন। রাখাল বাবু তার শিক্ষক রামতনু লাহিড়ীর দ্বারা ব্রাহ্ম সমাজের আদর্শে প্রভাবান্বিত হয়েছিলেন। নর্মাল স্কুলের ৪ জন ছাত্র রাখাল চন্দ্রের সদর রোডের বাসা বিরাম-এ ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জুন রবিবার ব্রাহ্ম উপাসনা প্রবর্তন করেন।


ব্রাহ্ম মন্দির প্রতিষ্ঠা ও ব্রাহ্ম সমাজের ওপর নির্যাতন

রাখাল বাবুর দ্বিতীয় ভ্রাতা বিহারী লাল রায় খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেন। পিতা রাজচন্দ্র পুত্রদের ধর্ম ত্যাগের কথা শুনে বিক্ষুব্ধ হলেন এবং বাসায় ব্রাহ্ম প্রার্থনা বন্ধ করে দিয়ে পুত্রদের প্রায়শ্চিত্ত করতে বাধ্য করেন। এমনকি তিনি কন্যাদের শিক্ষা বন্ধ করে দেন। ১৮৬৫ খৃৃস্টাব্দে বিক্রমপুরের দুর্গামোহন দাশ বরিশালে আগমন করেন এবং ব্রাহ্ম সমাজের প্রচার এগিয়ে নিয়ে যান। বিক্রমপুরের গিরীশ চন্দ্র মজুমদার, সর্বানন্দ দাশ ও ডাক্তার আনন্দচরণ খাস্তগীর দুর্গামোহনের সাথে যোগ দেন। বরিশালের ব্রাহ্ম সমাজের অগ্রগতির ইতিহাসে তারা বিশেষ অবদান রেখেছেন। ব্রাহ্ম সমাজের সভাপতি হলেন দুর্গামোহন দাশ, সম্পাদক সর্বানন্দ দাশ, প্রচারক গিরীশ চন্দ্র মজুমদার এবং কার্যকরী সমিতির সদস্য স্কুলের হেডমাষ্টার জগবন্ধু সাহা। ব্রাহ্ম সমাজের মন্দিরের জন্য চণ্ডীচরণ রায় চৌধুরী এক খণ্ড জমি দান করেন। ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দের ১ নভেম্বর আলেকান্দা নব আদর্শ স্কুলের নিকট মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯২৩ খৃৃস্টাব্দে সদর রোডের নিকট ব্রাহ্ম মন্দিরের ভবন নির্মাণ করা হয়। ১৮৬৫ খৃৃস্টাব্দে রাখাল বাবুর স্ত্রী সৌদামিনী, ভ্রাতা বিহারী লাল রায় ও প্যারীলাল রায় ব্রাহ্ম সমাজে যোগ দেন। এ সকল ঘটনা অবলম্বন করে ব্রাহ্ম আন্দোলনের নেতাদের ওপর নির্যাতন নেমে আসে। তাদেরকে সমাজচ্যুত এবং একঘরে করা হয়। এ সংগ্রামের দিনে বরিশালের ব্রাহ্ম মহিলারা কুসংস্কার দূরীকরণে অগ্রণী হয়েছিলেন। রাখাল বাবুর স্ত্রী সৌদামিনী দেবী, দুর্গামোহনের স্ত্রী ব্রহ্মময়ী দেবী, মনোরমা মজুমদার ও মুক্তাকেশী দেবী প্রকাশ্যভাবে স্ত্রী শিক্ষা ও স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেন। ১৮৭০ খৃৃস্টাব্দে দুর্গামোহন দাশ বরিশাল ছেড়ে কলকাতায় ওকালতি করতে যান। দুর্গামোহনের পর জেলা স্কুলের হেড মাষ্টার জগবন্ধু লাহা ব্রাহ্ম সমাজের পরিচালনার ভার নেন।


অশ্বিনী কুমার দত্তের সহায়তা

১৮৮২ খৃৃস্টাব্দে অশ্বিনী কুমার দত্ত ব্রাহ্ম সমাজের সভ্য হন এবং ছাত্র সমাজের উন্নতির জন্য অনেক বক্তৃতা দেন। ১৮৮৮ খৃৃস্টাব্দে ব্রাহ্ম সমাজের মাঘোৎসবের সময় ইংরেজীতে বক্তৃতা দেন। যুব সমাজ অশ্বিনী কুমারের সত্য প্রেম পবিত্রতার আদর্শ গ্রহণ করে। ব্রাহ্ম সমাজের উদ্যোগে সেবক দল গঠন করা হয়। ধর্ম ও নীতি শিক্ষার জন্য ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে ছাত্র সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৮৮৫ খৃৃস্টাব্দে তা ছাত্রদের সেবাব্রতী প্রতিষ্ঠান নামে পরিণত হয়।


তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০।