পিরোজপুরে মুক্তিযুদ্ধ
মুক্তিযুদ্ধে তৎকালীন পিরোজপুর মহকুমা ছিল সুন্দরবন সাব-সেক্টরের অন্তর্গত। মার্চ মাসেই পিরোজপুর সরকারি স্কুল মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং শুরু হয়। মুক্তিযোদ্ধারা এমএনএ এনায়েত হোসেন খানকে গার্ড অব অনার জানায়। তিনি ছিলেন বেসামরিক প্রধান।
পরিচ্ছেদসমূহ
যুদ্ধের প্রস্তুতি
তৎকালীন এ মহকুমার মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের মধ্যে ছিলেন: ডাঃ ক্ষিতিশ মন্ডল, আবদুল হাই, আ স ম সিদ্দিক, শফিজউদ্দিন আহমেদ, হেমায়েত উদ্দিন আহমেদ, ওমর ফারুক, শহীদুল আলম নীরু, আবুল কালাম মহিউদ্দিন, লুৎফুল কবির দুলাল, ওবায়দুল কবীর বাদল, নূর দিদা খালেদ রবি, ফজলুল হক ফজলু, ন্যাপ নেতা আলী হায়দর খান, নিরোদ নাগ প্রমুখ। ছাত্রইউনিয়নের ফজলু গ্রুপ ও বাদল রবি গ্রুপ পৃথক দুটো ট্রেনিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন। আগরতালা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী সুবেদার তাজুল ইসলাম ট্রেনিং প্রদানে নেতৃত্ব দেন। মহকুমা প্রশাসন মুক্তি ফৌজের সহযোগিতা করে। বিশেষ করে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট মিজানুর রহমান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেয়ায় বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। সকল থানা, গঞ্জ ও অনেক গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করা হয়। পিরোজপুর শহর ১ হাজার ৪শ’ মুক্তিযোদ্ধার দখলে। রায়েরকাঠি জমিদার বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা ঘাঁটি স্থাপন করা হয়। সকল থানার পুলিশের অস্ত্র মুক্তিযোদ্ধারা দখল করে নেয়। সংগ্রাম পরিষদের সিদ্ধান্ত ছিল পিরোজপুর ট্রেজারির অর্থ সুন্দনবনে স্থানান্তর করা হবে। কিন্তু ভাসানী ন্যাপের ফজলু গ্রুপের হঠকারিতার ফলে পিরোজপুর ট্রেজারি লুট হয়ে যায়। ২৬ এপ্রিল বরিশাল পতনের পর মুক্তিযোদ্দারা বিছিন্ন হয়ে পড়ে। ৫ মে পাকসেনারা পিরোজপুর দখল করে নেয়। পাকিস্তানী দালালেরা ছাত্র ইউনিয়ন নেতা ফজলুল হক খোকনকে ধরিয়ে দেয়। পাকসেনারা ফজলুল হক খোকন, বিধান চন্দ্র, সেলিম প্রমুখখে গুলি করে হত্যা করে। ছাত্রলীগ নেতা ওমর ফারুককে বরিশালে গ্রেফতার করে হত্যা করা হয়। পাকসেনারা ফারুকের মাথায় বাংলাদেশের পতাকার স্ট্যান্ড বসিয়ে পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলতে বলে। কিন্তু ফারুক জয় বাংলা ধ্বনি দিতে দিতে মৃত্যুবরণ করেন। বরিশাল পতনের পর লে. জিয়াউদ্দীন সহযোদ্ধাদের নিয়ে সুন্দরবনে চলে যান। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে রাজনৈতিক কর্মী, ছাত্র, ইপিআর, পুলিশ ও আনছার সুন্দরবনে আশ্রয় নেন। শরণখোলার শামসুদ্দীন, মোরেলগঞ্জের মধু, আসাদ, মঠবাড়িয়ার শহিদুল আলম বাদল, আলতাফ, মজিবুল হক মজনু, সুবেদার গাফফার, খলিলুর রহমান, নৌবাহিনীর নাসিরউদ্দীন, করপোরাল কবীর, বরকত প্রমুখদের নিয়ে মুক্তিবাহিনী গঠন করেন। সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থানে তার ক্যাম্প ছিল। প্রধান ক্যাম্প ছিল সুন্দরবনের বগীতে। জিয়াউদ্দীন মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা থানা আক্রমণ করে অস্ত্র নিয়ে নেন। সুন্দরবন মুক্তিবাহিনীর দখলে থাকায় হাজার হাজার শরণার্থী ও ছাত্রযুবকদের ভারতে যেতে সুবিধা হয়। শত শত মুক্তিযোদ্ধা ভারতে ট্রেনিং ও অস্ত্র নিয়ে সুন্দরবন পথে পটুয়াখালী ও বরিশালের বিভিন্ন স্থানে যেত। পাকবাহিনী সুন্দরবন দখন করার জন্য নৌ ও বিমান হামলা চালায়। মুক্তিবাহিনীর সাথে সংঘর্ষে কয়েকটি গানবোট ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং পাক সেনারা ফিরে যেতে বাধ্য হয়। পাকবাহিনী কোনদিন সুন্দরবনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে সাহস পায়নি। লে. জিয়াউদ্দিন পিরোজপুর হতে টুঙ্গিপাড়ায় গমন করেন। টুঙ্গিপাড়া থেকে তিনি সুন্দরবনে চলে যান। এ সময় বাগেরহাটের শামসুল আলম তালুকদার, কবীর আহমদ মধুর নেতৃত্বে মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলায় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে অবস্থান করছেন। তারা লে. জিয়াউদ্দিনকে পেয়ে তাঁকে কমান্ডার হিসেবে গ্রহণ করেন। জিয়াউদ্দিন মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে সুন্দরবন গমন করেন। ইতোমধ্যে পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা, বরিশাল ও বাগেরহাট মহকুমা থেকে কয়েক হাজার মুক্তিযোদ্ধা সুন্দরবনে একত্রিত হয়। জিয়াউদ্দিনের নেতৃত্বে সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প প্রতিষ্ঠিত হয়। ট্রেনিং ও অস্ত্র সংগ্রহ চলতে থাকে। জুলাই মাসে লে. জিয়াউদ্দিন ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে ভারতে অবস্থিত নবম সেক্টর হেড কোয়ার্টারে উপস্থিত হন। তিনি নবম সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিল ও জেনারেল এমএজি ওসমানীর সাথে দেখা করেন। হিরন পয়েন্ট ও মংলা পোর্টে জাহাজ আক্রমণ করার জন্য জিয়াউদ্দিন নৌ কামান্ডো চাইলেন। তাকে ৩৪ জন নৌ কমান্ডো দেয়া হয়। অস্ত্র ও ২০০ লিস্পেট মাইন নিয়ে তিনি জুলাই মাসের ২২ তারিখে সুন্দরবন যাত্রা করেন। ক্যাপ্টেন জিয়াউদ্দীনের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা, রায়ন্দা ও মাঠবাড়িয়া থানা আক্রমণ করে। তার নির্দেশ সহঅধিনায়ক শামসুল আলম, লে. আলতাফ, মজিবুল হক মজনু, শহিদুল আলম, ১৫ অক্টোবর তুষখালী আক্রমণ করে খাদ্য গুদাম হতে ২২০০ মণ খাদ্য নিয়ে আসে। ক্যাপ্টেন জিয়াউদ্দীন ১০ ডিসেম্বর পাকবাহিনীর রায়েন্দা ক্যাম্প আক্রমণ করেন এবং তিন দিন ধরে যুদ্ধ চলে। এ যুদ্ধে মোরেলগঞ্চের আসাদ, পাথরঘাটার আলাউদ্দীন এবং বরিশাল শহরের কলেজ রোডের টিপু শহীদ হন। শহীদ জোবায়ের আহম্মদ টিপু বিএম স্কুলের ১০ম শ্রেণীর ছাত্র। তার পিতা আবদুর রশীদ সওদাগর। আলাউদ্দীন (আলো) পাথরঘাটা থানার কাকচিরা গ্রামে জন্ম। তারা পিতা আওয়ামী লীগের বিশিষ্ট কর্মী আবদুল করিম। জিয়াউদ্দীনের বাহিনী ভান্ডারিয়া, মঠবাড়িয়া ও পিরোজপুর থানা দখল করে। চতুর্দিকে শুরু হয় মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ।
বেনু লাল দাশগুপ্তের আক্রমণ
গাভা স্কুলের হেড মাস্টার বেনু লাল দাশগুপ্ত জুন মাসে একটি দল গঠন করেন। ঝলকাঠির নবগ্রামে কে এম এ মহিউদ্দীন মানিক কয়েকটি অস্ত্র নিয়ে তার সাথে যোগ দেন। ১ নভেম্বর বেনু দাসগুপ্ত, আবদুল হাই, মানিক ক্যাপ্টেন শাহজাহানের নেতৃত্বে বানারিপাড়া থানা দখল করেন। এ সংঘর্ষে রাজাপুরের হারুন-আর-রশীদ শহীদ হন। হারুন একজন পুলিশ কর্মচারী ছিলেন। গেরিলা হাবিবের নেতৃত্বে গুলিশাখালী হাইস্কুল মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের কন্ট্রোল রুম ছিল মঠবাড়িয়া পোস্ট অফিসে। মঠবাড়িয়া পাকবাহিনীর দখলে চলে যাওয়ার পর সওগাতুল আলম সগীর সুন্দরবন হয়ে ২৪ পরগনায় চলে যান। তিনি বশিরহাট মহকুমার হাসনাবাদ থানায় ৯ম সেক্টরের অধীনে আমলানী ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করে শত শত যুবককে সামরিক ট্রেনিং দিয়ে মঠবাড়িয়াসহ বরিশালের বিভিন্ন থানায় প্রেরণ করেন।
মোরেলগঞ্জ যুদ্ধ
কমান্ডার কবির আহমেদ মোরেলগঞ্জ থানা আক্রমণ করে দখল করতে ব্যর্থ হন। ভারত থেকে ফিরে এসে মধু মোরেলগঞ্জ থানা আক্রমণ করার জন্য লে. জিয়াউদ্দিনকে অনুরোধ জানান। সাব-সেক্টর কমান্ডার জিয়াউদ্দিন মোরেলগঞ্জ থানা আক্রমেণের প্রস্তুতি নেন। মুক্তিযোদ্ধাদের দু’দলে বিভক্ত করে কমান্ডার মধু আক্রমণ করবেন থানা এবং রাজাকারদের ঘাঁটি। হাবিলদার আবদুল হাই আক্রমণ করেন মোরেলগঞ্জ হাইস্কুল ও কুঠিবাড়ির রাজাকারদে ক্যাম্প। জিয়াউদ্দিনের দায়িত্ব ছিল মোরেলগঞ্জ কলেজ ও দীঘির পাড়ে। স্কুল মাস্টার মুকুল গ্রেনেড নিক্ষেপ করতে যেয়ে নিজেই গুরুতর আহত হন। ইতিমধ্যে পাঞ্জাবীদের দুটো গানবোট মোরেলগঞ্জের দিকে আসে। লে. জিয়া এলএমজি দিয়ে গানবোটের ওপর গুলিবর্ষণ করেন। ভীত হয়ে গানবোট ফিরে যায়। জিয়াউদ্দিন, আমীর, হেলাল সুশান্ত প্রমুখকে নিয়ে গ্রেনেড ছুড়ে রাজাকারদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করে। শতাধিক রাজাকার অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়। ৩০ জন রাজকারকে আদালতের রায়ে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। বেয়নেট চার্জ করে তাদের হত্যা করা হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের দুজন বুলেটবিদ্ধ হন। পা ভাঙ্গা মুকুল ও গুলিবিদ্ধ সোহরাবকে চিকিৎসার জন্য ভারতে পাঠান হয়। পথে পাঞ্জাবীরা নৌকা আক্রমণ করে এবং মুকুল ও সোহরাবকে গুলি করে হত্যা করে। মোরেলগঞ্জ থানা আপারেশনে সাফল্য শতকরা ৮০ ভাগ। সুবেদার লতিফ তার গ্রুপ নিয়ে ভান্ডারিয়া থানা দখল করে। কাউখালী থানা দখলে নেতৃত্ব দেন হাবিলদার হাবিবুর রহমান। ভান্ডারিয়া-কাউখালী থানা দখল করে কয়েকশ’ অস্ত্র পাওয়া যায়। থানা দখলের পর পাকবাহিনী ও রাজাকাররা ভান্ডারিয়া ও কাউখালী বন্দর পুড়িয়ে দেয়। সুন্দরবন বাহিনীর হাতে ৩টি থানা দখলের পর পাকবাহিনীর মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। আগস্ট মাসে সুন্দরবনে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ হাজার। পটুয়াখালীতে পাকবাহিনীর কমান্ডার ছিলেন মেজর নাদের পারভেজ এবং বরিশালে কমান্ডার ছিলেন কর্নেল আতিক মালিক। রাজাকার নিয়ে দুজেলায় পাকবাহিনীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৭ জাহার। রাজাকার নেতাদের মধ্যে ছিলেন পারেরহাটের আশরাফ চেয়ারম্যান, পিরোজপুরের সুলতান মাহমুদ, বাগেরহাটের রজব আলী প্রমুখ। সুন্দরবন সাব-সেক্টর ৩৪ জন নেভাল কমান্ডো দেয়া হয়। কমান্ডোদের নির্দেশ দেয়া হয় যে বাংলাদেশ বেতার থেকে একটি নির্দিষ্ট গান বাজলে ৭২ ঘন্টার মধ্যে মংলা ও হিরন পয়েন্টে হামলা চালতে হবে। নেভাল কমান্ডোরা ১৩টি পাকিস্তানী জাহাজ ধ্বংশ করে দেন। রণকৌশলের দিক দিয়ে ১৩টি জাহাজ ধ্বংস পাকিস্তানের নৌশক্তিকে শূন্যতা প্রমাণ করে দেয়। শরণখোলার ফরেস্ট অফিসের মাত্র ৩ মাইল ভেতরে সাব-সেক্টর হেড কোয়ার্টার। এ অঞ্চলে ১শ’র বেশি মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প ছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের রিক্রুট ও ট্রেনিং চলে। মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা ১০ হজার। একদিনে সাড়ে তিন হাজার মুক্তিযোদ্ধা রিক্রুট করা হয়। ভোলা নদীর উত্তর পাড়ে জনবসতি এবং দক্ষিণ পাড়ে গভীর সুন্দরবন-বগী, তাফালবাড়ী, মাছুয়া, তুষখালী, চরদুয়ানী, সুপতি প্রভৃতি। বলেশ্বর নদীর দু’পারে ছোট বন্দর। পিরোজপুরে পাকবাহিনীর কমান্ডার ছিল ক্যাপ্টেন এজাজ। সে জাতিতে পাঠান। মুক্তিযুদ্ধ তীব্র হলে সে শান্ত হতে থাকে। পিরোজপুর আক্রমণের জন্য তখন দু হাজার মুক্তিযোদ্ধা প্রস্তুত। সেপ্টেম্বর মাসের মাঝে মঠবাড়িয়া থানা আক্রমণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। ৫শ’ মুক্তিযোদ্ধা অভিযান চালাচ্ছেন। তারা নদী অতিক্রম করছেন। হঠাৎ গানবোট মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ করে। সুবেদার গাফফার, শামসুল আলম ও ক্যাপ্টেন জিয়া গানবোট আক্রমণ করে পর্যুদস্ত করে।
সুন্দরবন সাব-সেক্টরের কমান্ডার ও কর্মকর্তাগণ
সুন্দরবন সাব-সেক্টরের প্রধান ক্যাম্প ছিল তেঁতুলবাড়িয়া। ক্যাম্প তেঁতুলবাড়িয়ার কর্মর্তাগণ: ১. ক্যাপটেন জিয়াউদ্দিন আহমেদ, সাবসেক্টর কমান্ডার; ২. শামসুল আলম তালুকদার, সেকেন্ড ইন কমান্ড; ৩. খান কবীর আহমদ মধু, সুন্দরবন পশ্চিম-এর ক্যাম্প কমান্ডার; ৪. খালিদ হোসেন, সহক্যাম্প কমান্ডার; ৫. আবদুল হাই খোকন, অ্যাডজুট্যান্ট; ৬. লিয়াকত আলী খান, ছাত্রদের ক্যাম্প; ৭. পরিতোষ কুমার পাল, সিকিউরিটি ইনচার্জ; ৮. নুরুল ইসলাম হাওলাদার, ক্যাশ; ৯. আলতাফ হোসেন, ক্যাম্প কমান্ডার সুন্দরবন পূর্ব; ১০. শেখ আবদুল সামাদ, অপারেশন কমান্ডার; ১১. নুরুল ইসলাম, বগী ক্যাম্প ইনচার্জ; ১২. নুর মোহাম্মদ হাওলাদার, কমান্ডার বঙ্গবন্ধু কোম্পানি; ১৩. হাবিবুর রহমান, কমান্ডার হিরো কোম্পানি; ১৪. শহিদুল ইসলাম বাদল, অপারেশন কমান্ডার; ১৫. সুবেদার আজিজ ভান্ডারিয়া, অপারেশন কমান্ডার; ১৬. হাবিলদার আলাউদ্দিন, আপারেশন ইনচার্জ শরণখোলা; ১৭. মজিবুর হক মজনু, শরণখোলা; ১৮. সুবেদার সোহরাব, অপারেশন কমান্ডার; ১৯. সুবেদার রুস্তম আলী, আপারেশন রাজাপুর; ২০. আবুল কালাম মহিউদ্দন, চিফ সিকিউরিটি অফিসার; ২১. সুবেদার আবদুল আজিজ, অপারেশন কমান্ডার। সুন্দরবন বাহিনীতে মোট ১৮০ জন কমান্ডার ছিলেন। সুন্দবন সাব-সেক্টরের কমান্ডারগণ হলেন: ১. ক্যাপ্টেন জিয়াউদ্দিন, সাব-সেক্টর কমান্ডার; ২. শামসুল আলম তালুকদার, মোরেলগঞ্জ, সহঅধিনায়ক; ৩. কবির আহমদ মধু, কমান্ডার, মোরেলগঞ্জ, রামপাল; ৪. শহীদুল আলম বাদল, মঠবাড়িয়া; ৫. মুহাম্মদ আলতাফ, মঠবাড়িয়া; ৬. মজিবুল হক মজনু, শরণখোলা; ৭. শামসুদ্দিন আজাদ, সচিব, সাব-সেক্টর; ৮. হাবলদার হাবিবুর রহমান, কাউখালী; ৯. তাজুল ইসরাম, বাগেরহাট; ১০.হাবিলাদার আলাউদ্দিন আলো, কাকচিড়া, পাথরঘাটা; ১১. হাবিলদার শামসুল হক; ১২. মোহাম্মদ আজিজ, মোরলগঞ্জ, ছাত্রনেতা; ১৩. আবুল কালাম মহিউদ্দিন, ১৪. এমএ আউয়াল ডা. জাহাঙ্গীর, ১৫. মোহাম্মদ আফজাল, ১৬. হেমায়েত উদ্দিন বাদশা, ১৭. নুরুল ইসলাম, ১৮. আসাদ, ১৯. হেলাল, ২০. মোহাম্মদ জোবায়ের টিপু, ২১. কামালউদ্দিন, ২২. এডভোকেট শামসুল হক, ২৩. হাবিবুর রহমান সিকদার, ২৪. হাবিলদার আবদুল হাই পনা, ২৫. সুবেদার আবদুল লতিফ, ২৬. সুবেদার গাফফার, ২৭. সুবেদার ফুলু, ২৮. খন্দকার শহীদ, ২৯. বাবু পরিতোষ, ও ৩০. হাবিলদার ফজলুল হক। পিরোজপুরে সংঘটিত উল্লেখযোগ্য যুদ্ধসমূহ নিম্নরুপ।
তুষখালী খাদ্য গুদাম দখল
সুন্দরবনে মুক্তিযোদ্ধাদের খাদ্যের অভাব ছিল। মঠবাড়িয়া থানার তুষখালী সরকারি খাদ্য গুদামে ৬ হজার মণ খাদ্য মজুদ আছে। ক্যাপ্টেন জিয়াউদ্দিন ও সহযোদ্ধারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে, তুষখালী খাদ্য গুদাম আক্রমণ করে মজুদ খাদ্য নিয়ে আসতে হবে। গুদামের পাহারায় ছিল রাজাকার বাহিনী। মুক্তিযোদ্ধারা তুষখালী ও মঠবাড়িয়া আক্রমণের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন। জিয়াউদ্দিন, শামসুল আলম তালুকদার, শহিদুল আলম বাদল, আসাদ, হেলাল, আলী, আলতাফ প্রমখ সিনিয়র কমান্ডার এ আক্রমণের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন। কমান্ডারদের অনুরোধে ক্যাপ্টেন জিয়া আক্রমণের নেতৃত্ব থেকে বিরত থাকেন। সহঅধিনায়ক শামসুল আলম তালুকদারের নেতৃত্বে আক্রমণ পরিচালনা করা হয়। শহীদুল আলম বাদল, আলতাফ, সুবেদার গাফফার প্রমুখকে মঠবাড়িয়া থানা আক্রমণের দায়িত্ব দেয়া হয়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল থানার পুলিশ নিষ্ক্রিয় করে রাখা। ফলে তুষখালীতে থানার পুলিশ যেতে পারেনি। তুষখালীতে সশস্ত্র রাজাকার ছিল ৩শ’, মুক্তিযোদ্ধা ছিল ৮শ’। চারদিক দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা রাত ৩টায় আক্রমণ করে প্রচন্ড গুলিবর্ষণের পর ফায়ার বন্ধ করে শামসুল আলম ও আসাদ মেগাফোনে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দেন। সাথে সাথে রাজাকার বাহিনী অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে। ভোরে কয়েক মিনিটের মধ্যে তুষখালী দখলে আসে। গ্রামবাসীরা জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাগত জানায়। গুদামের খাদ্য তারা নিজেরা ট্রলার ও নৌকায় তুলে দেয়। শহীদুল আলম বাদল মঠবাড়িয়া ও তুষখালীর মাঝে অবস্থান করছিলেন। তার সাথে রাজাকারদের যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর একজন সদস্য শহীদ হন। তুষখালী দখল নবম সেক্টরের একটি গুরুত্বপূর্ণ যদ্ধ। পাকবাহিনী চেষ্টা করে তুষখালী আসতে পারেনি। মুক্তিযোদ্ধরা তাদের প্রতিহত করেন। সুন্দরবন কার্যালয়ে সবা-সেক্টর কমান্ডার জিয়াউদ্দিন সদলবলে বগী ক্যাম্পে উৎকণ্ঠায় ছিলেন। এদিন পটুয়াখালী ছাত্রলীগ নেতা সর্বার আবদুর রশীদ তার দু’বোন আনোয়ারা ও মনোয়ারাকে নিয়ে শরণখোলায় যোগ দেন। আনোয়ারা-মনেযায়ারা ছাত্রী ছিলেন। তারা অস্ত্রপ্রশিক্ষণ গ্রহণ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। নবজাতক সন্তানসহ শামসুল আলম তালুকদারের স্ত্রী শরণখোলা ক্যাম্প চলে আসেন।
জলে স্থলে আকাশে পাকবাহিনীর সুন্দরবন আক্রমণ
তুষখালী যুদ্ধের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে পাকবাহিনী মেজর নাদের পারভেজের নেতৃত্বে সুন্দরবন আক্রমণ করে। পাঞ্চাবী মেজর নাদের পাভেজ পটুয়াখালী, বরগুনা, আটঘর, কুড়িয়ানা গণহত্যার জল্লাদ। তিনি বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালীর পাকবাহিনী, রাজাকার, আলবদর নিয়ে ৪০টি লঞ্চে সুন্দরবর আক্রমণ করেন। ক্যাপ্টেন জিয়াউদ্দিনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর আক্রমণ প্রতহত করতে প্রস্তুতি গ্রহণ করে। নাদের পারভেজ পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমীতে লে. জিয়াউদ্দিনের ইনস্ট্রাক্টর ছিলেন। সুন্দরবনের যুদ্ধ ছিল গুরু-শিষ্যের। পাক নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী ও স্থল বাহিনী একত্রিত হয়ে বড় মাছুয়া, চরদোয়ানি, সুপতি, তাফালবাড়ি, বগী, শরণখোলা, জিউধরা প্রভৃতি মুক্তিযোদ্ধার ক্যাম্প আক্রমণ করে। মুক্তিযুদ্ধকালে সরকার লে. জিয়াউদ্দিনকে ক্যাপ্টেন হিসেবে পদোন্নতি দেয়। গানবোট দিয়ে পাকবাহিনী বগী ফরেস্ট অফিস ও মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প আক্রমণ করে। মুক্তিবাহিনী একটু দূরে জঙ্গলে ওঁৎ পেতে আছে। গানবোট থেকে পাকসেনারা বগীতে আবতরণ করে। ঠিক সে মুহূর্তে হাবিলাদর আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে এলএমজি দিয়ে পাকসেনা ও গানবোট আক্রমণ করে পাকসেনাদের ধ্বংস করে দেয়া হয়। বলেশ্বর ও ভোলা নদীতে পাকবাহিনী, ও তাফালবাড়িতে একদল পাকসেনা খাসি ও গরু লুটে ব্যস্ত। এ সুযোগে মুক্তিযোদ্ধা টিপু সুলতান পাকসেনাদের আক্রমণ করে ৫ জনকে হত্যা করেন। পাকবাহিনী শরণখোলা, বগী, তাফালবাড়ী প্রভৃতি আক্রমণ করে ব্যর্থ হলো। সুন্দরবনে বিভিন্ন ক্যাম্পে বিমান হামলা চালায়। কিন্তু মূল ঘাঁটি ও ক্যাম্পে বোমা ফেলতে পারেনি। ১২ দিন যুদ্ধের পর পাকবাহিনী বলেশ্বর ও ভোলা নদী থেকে পালিয়ে যায়। সুন্দরবনে অবিরাম বাংলাদেশের পতাকা উড়ছে। এ সময় বাওয়ালী ও জেলেরা দুটো পতাকা সাথে রাখত। দেশের ভেতরে পাকিস্তানী পতাকা এবং সুন্দরবনের এল বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে চলত। পাকবাহিনী ৮ হাজার মুক্তিবাহিনীর তেমন ক্ষতি করতে পারেনি। ১৬ আগস্ট নৌ কমান্ডো বাহিনী মংল পোর্ট আক্রমণ করে ১৩টি পাকিস্তানী জাহাজ ধ্বংস করে দেয়। এ ছিল রণাঙ্গনের সবচেয়ে বড় বিজয়।
কেউন্দিয়ার যুদ্ধ, কাউখালী
কাউখালী থানার কেউন্দিয়া নিবাসী হাবিবুর রহমান স্বাধীনতা সংগ্রামে অপূর্ব সাহসের পরিচয় দিয়েছেন। ১৯৫৮ সালে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে তিনি আর্মি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। বরিশাল পতনের পর তিনি একটি রাইফেল নিয়ে দল গঠন করেন। স্বাধীনতার পর তিনি ১০০০ অস্ত্র জমা দেন। কেউন্দিয়ার হাবিবুর রহমান, পনা ও সুলতান কাজী একটি দল গঠন করেন। কেউন্দিয়া স্কুলে মুক্তিবাহিনীর ট্রেনিং হতো। কেউন্দিয়া গ্রামের অনেক বীর সন্তান মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়। হাবিবুর রহমান ৯ আগস্ট কাউখালী থানা আক্রমণ করে অস্ত্র নিয়ে নেয়। তারা ক্যাপ্টেন শাহজাহান ওমরের সাথে বানারিপাড়া থানা আক্রমণ করে। কাউখালী কেউন্দিয়ায় মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প থাকায় ঝালকাঠি হতে ৮০ জন এবং কাউখালী হতে ১০০ জন পাকসেনা ২২ সেপ্টেম্বর কেউন্দিয়া গ্রাম আক্রমণ করে। তখন পনার ক্যাম্প জুলুহারে এবং কুতুবকাঠিতে ছিল। পূর্বে তারা ক্যাম্প স্থানান্তরিত করে। পাকবাহিনীর আক্রমণের সংবাদ শুনে আবদুল হাই পনা ১৮ জন এবং হাবিবুর রহমান ৪২ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে ২২ সেপ্টেম্বর বেলা ২:৩০ মিনিটে পাকবাহিনীকে গেরিলা পদ্ধতিতে আক্রমণ করে। চার দিকে খাল, ধানক্ষেত এবং মাঠ ভর্তি পানি। পাকসেনারা মুক্তিবাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করতে সম্পূর্ণ ভাবে ব্যর্থ হয়। এ যুদ্ধে ১৭ জন পাকসেনাসহ ৩০ জন নিহত হয়। তিনজন বেলুচ সেনা ধরা পড়ে এবং তাদের মুজিবনগরে পাঠিয়ে দেয় হয়। তারা বাংলাদেশ বেতার হতে বক্তব্য পেশ করে। বাকি সৈন্যরা কোন রকমে পালিয়ে কাউখালী যায়। হানাদার বাহিনীর নিকট হতে মুক্তিযোদ্ধরা ৩টি এলএমজি, ৬টি এসএমজি, দু’ইঞ্চি মর্টার ও এনার্গা দখল করে। কেউন্দিয়ার যুদ্ধে যারা অংশগ্রহণ করেছিলেন তারা হলেন হাবিবুর রহমান, আবদুল হাই পনা, কাজী সুলতান মাহমুদ, আলী হোসেন, আশ্রাব আলী, মোবারেক, ছত্তার মোল্লা, মতিয়ুর রহমান, হিরন, শাহ আলম, খাদেম হোসেন, হারুন-অর-রশীদ, আলমগীর হোসেন প্রমুখ। হাবিবুর রহমানের দলের সাথে আয়রন জয়কুল গ্রামে পাক বাহিনীদের সাথে সংঘর্ষ হয়। এখানে মাজেদ হোসেন হাওলাদার শহীদ হন। ৯ ডিসেম্বর হাবিবুর ও তার দল কাউখালী থানা মুক্ত করে। উচ্চারিত হলো হাজারো কণ্ঠে ‘জয় বাঙলা- তোমার নেতা আমার নেতা- শেখ মুজিব, শেখ মুজিব’।
স্বরূপকাঠি-নাজিরপুর যুদ্ধ
স্বরূপকাঠি ও নাজিরপুরের কমান্ডার ছিলেন জাহাঙ্গীর বাহাদুর। সোহাগ দলে তার জন্ম। পিতা নূর মোহাম্মদ। ঢাকা নটর ডেম কলেজ হতে বিএ পাস করেন। তার পড় ভাই আলমগীর বাহাদুরকে নিয়ে মুক্তি যোদ্ধাদের ট্রেনিং শুরু করেন। আলমগীর ১২ মে ধরা পড়ে এবং পিরোজপুরে পাকবাহিনী তাকে হত্যা করে। তার ছোট ভাই জহিরুল ইসলাম ২৭ মার্চ ঢাকায় নিহত হন। তাই ভ্রাতৃহত্যার প্রতিশোধ ও স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে জাহাঙ্গীর মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি একাধারে সাহিত্যিকও ছিলেন। তার এবং এনামুল হকের সম্পাদনায় নাজিপুর থানার মনোহরপুর হতে ‘আমার বাংলা’ পত্রিকা প্রকাশিত হয়। ১ আগস্ট প্রথম সংখ্যা বের হয় এবং ২১ সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল। মুক্ত অঞ্চলে ‘আমার বাংলাদেশ’ পত্রিকা ছিল প্রথম সারির। ডা. মুজাহার উদ্দীন এমপিএ এর শাহ প্রিন্টিং হতে পত্রিকা প্রকাশিত হয়। যুদ্ধকালে প্রেস নাজিরপুর নিয়ে আসা হয়। ১৪ আগস্ট জাহাঙ্গীর বাহাদুর ইন্দেরহাট দখল করে মাইকে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বাজিয়ে শোনান। পুনরায় ১৭ অক্টোবর কমান্ডার জাহাঙ্গীর ইন্দেরহাট আক্রমণ এবং ১৭ জন পা সেনাকে খতম করে। জাহাঙ্গীর বাহাদুর স্বরূপকাঠি ও নাজিরপুর থানা আক্রমণ করে অস্ত্র দখল করেন। তার রা নৈতিক পরামর্শদাতা ছিলেন আওয়ামী লীগের ফজলুল হক, এ বি এম সিদ্দিক প্রমুখ। স্বাধীনতার পর একদল কুচক্রী ১৯৭২ সালের ২৭ মার্চ বীর যোদ্ধা জাহাঙ্গীর বাহাদুরকে হত্যা করে। তার মৃত্যু খবর শুনে স্ত্রী মারা যায়। তার এক ভাই আবদুল খালেককেও তারা হত্যা করে। এক পরিবারে ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা হারিয়ে আজ তারা অসহায়।
শর্ষিনার যুদ্ধ
শর্ষিনার পীর শাহ আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ পাকিস্তানের পক্ষ সমর্থন করেন। আর মাদ্রাসারয় পাকসেনা, রাজকার ও বদর বাহিনী ছিল। মাদ্রাসার ছাত্রদের নিয়ে বদর বাহিনী গঠন হয়। পাক বাহিনীর শক্ত ঘাঁটি শর্ষিনা হতে তারা গ্রামে আক্রমণ চালাতো। ২৫ নভেম্বর মতি কাজীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা শর্ষিনার পীর সাহেবের বাড়ি ও মাদ্রাসা আক্রমণ করে। দুদিন ধরে যুদ্ধ চলে। এ যুদ্ধে কাজী মতিয়ুর রহমান (মতি কাজী) জাফর, হারুন-অর-রশীদ, মন্টু শহীদ হন। আত্মীয়-স্বজনের অনুরোধ সত্ত্বেও পীর সাহেব শহীদদের লাশ ফেরত দেয়নি। কাজী মতিয়ুর রহমান চাখার কলেজের ছাত্র। তিনি বাকপুরের কাজী মোশারেফ হোসেনর পুত্র।
পিরোজপুর মুক্ত-৭ ডিসেম্বর
শরণখোলা-মঠবাড়িয়া পতনের পর পাকবাহিনী সুন্দরবন হয়ে পালাবার চেষ্টা করে। মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধের মুখে তার হুলারহাট হয়ে বরিশল চলে যায়। কমান্ডার আবেদ আীি মুক্তিযোদ্ধাদের চুপ থাকতে চলেন। ৭ ডিসেম্বর এডভোকেট শামসুল হক পিরোজপুর থেকে সুন্দরবন এসে সংবাদ দেন যে, পাকবাহিনী গত রাতে পিরোজপুর থেকে পালিয়ে গেছে। ওদিকে ক্যাপ্টেন ওমর ভান্ডারিয়া হয়ে পিরোজপুর অবস্থান করছেন। ক্যাপ্টেন জিয়াউদ্দিন পারেরহাট হয়ে পিরোজপুর যাচ্ছেন। রাত ১০টায় জিয়াউদ্দিন তার বাবা-মায়ের সাথে দেখা করেন। তাদের ঘর পাকবাহিনী পুড়ে ফেলেছে। পিরোজপুর থানায় ক্যাপ্টেন ওমরের সাথে জিয়াউদ্দিনের সাক্ষাৎ হয়। তাদের প্রধান ঘাঁটি হলো পিরোজপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। পিরোজপুর মহকুমরা বাংলাদেশ সরকারের অধীনে চলে আসে। চারদিকে জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান। পরের দিন সকালে টাউন হল ময়দানে বিরাট জনসভায় ক্যাপ্টেন ওমর ও জিয়াউদ্দিন ভাষণ দেন। ক্যাপ্টেন ওমর বরিশাল চলে যান। পরে আইনজীবী সমিতি জিয়াউদ্দিনের বাবার সভাপতিত্বে তাকে সম্বর্ধনা দেয়।
তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (দ্বিতীয় খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১৫
২। মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম মনজুর। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে দক্ষিণাঞ্চল। গতিধারা, ঢাকা। ২০১৬