গৌরীনাথ তর্কবাগীশ
উজিরপুরের পণ্ডিতবরেণ্য মহাত্মা গৌরীনাথ তর্কবাগীশ একসময় সারা ভারতে খ্যাতিমান ছিলেন। রোহিনীকুমার তাঁর সম্পর্কে লিখেছেন- ‘যতদিন সংস্কৃতচর্চা থাকিবে ততদিন গৌরীনাথের নাম শিক্ষার্থী ছাত্রদিগের নিকট অমর অক্ষরে লেখা থাকিবে। ‘গৌরীনাথীকূট’ই তাঁহাকে পণ্ডিতসমাজে অমর করিয়া রাখিয়াছে। তাঁহার কূট তর্কের সর্বাংশ সুন্দর মীমাংসা অদ্যাপি হয় নাই। তিনি একজন ভগবদ্ভক্ত পুরুষ ছিলেন, কিন্তু বাকলার দুরদৃষ্টবশত অপরিণত বয়সে তাঁহার মৃত্যু হয়।
গৌরীনাথ অল্প বয়সেই নবদ্বীপে অধ্যয়ন করিতে গমন করেন, এবং তথায় নানাশাস্ত্রে সুপণ্ডিত অথচ বাকচাতুর্যবিহীন এক নিরীহ পণ্ডিতের নিকট পাঠাভ্যাস আরম্ভ করেন। গৌরীনাথের প্রতিভাবলে তাঁহার অধ্যাপকের নাম অল্পকাল মধ্যেই চর্তুদিকে ব্যাপ্ত হইয়া পড়িল। একদিন কতিপয় পণ্ডিত ঈর্ষাপরবশ হইয়া কোন এক সভায় গৌরীনাথের অধ্যাপকের সঙ্গে একটি কূট-তর্কের বিচার আরম্ভ করিলেন। গৌরীনাথ তখন সেস্থানে উপস্থিত ছিলেন না। তিনি প্রবেশ করিতে না পারেন এইজন্য দ্বারদেশে প্রহরী রাখা হইল। গৌরীনাথ তাহা অবগত হইয়া দৈবাৎ সেই স্থানে উপস্থিত হইলেন। তাঁহার চেহারা অত্যন্ত কুৎসিত ছিল, তাই প্রহরীগণ তাঁহাকে চিনিতে পারিল না। গৌরীনাথ সগর্বে সেই স্থানে উপস্থিত হইয়া বিচার্য বিষয় লইয়া পÐিতগণের সহিত তর্ক আরম্ভ করিলেন, এবং স্বল্পকাল মধ্যেই ঈর্ষাপরায়ণ পণ্ডিতবর্গকে পরাস্ত করিয়া রাজসভায় তাঁহাদিগকে যথেষ্ট ভর্ৎসনা করিলেন। রাজসভায় এইরূপ অপদস্থ হইয়া পণ্ডিতগণ গৌরীনাথকে অভিশাপ প্রদান করিলেন। সমবেত পণ্ডিতবর্গের অভিশাপ সাংঘাতিক পীড়ারূপে গৌরীনাথকে আসিয়া আক্রমণ করিল। তিনি গৃহে আসিয়াই শয়ন করিলেন আর শয্যা হইতে উঠিলেন না। গুরুর প্রতিপত্তি রক্ষার জন্য ভক্ত গৌরীনাথ অচিরে প্রাণত্যাগ করিলেন।
তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০।