খালেদা সালাহউদ্দিন

Barisalpedia থেকে

ড. খালেদা সালাহউদ্দিন অর্থনীতির অধ্যাপক ও একজন স্মরণীয় সাহিত্যিক। বর্তমান ভোলার চরফ্যাসন গ্রামে ১৯৩৫ সালের ১লা মার্চ তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা নাসির আহমেদ, মাতা জেবুন্নিসা বেগম।


শিক্ষা

খালেদা সালাহউদ্দিনের শিক্ষাজীবন শুরু হয় টাফন্যাল ব্যারেট এম-ই স্কুলে। পরীক্ষায় তিনি ১ম স্থান অধিকার করেন। এর পর বাবা সেখান থেকে তাকে নিয়ে আসেন বরিশাল সাইদুন্নেসা গার্লস হাই স্কুলে। মাধ্যমিক পরীক্ষায় তিনি অভূতপূর্ব সাফল্য লাভ করেন। খালেদা সালাহউদ্দিন তাঁর বাবার উৎসাহে চলে আসেন কলকাতা। তাঁকে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয় লেডি ব্রাবোর্ণ কলেজে। ম্যাট্রিকুলেশন এবং আই এ পরীক্ষায় তিনি মেধা তালিকায় ৩য় স্থান লাভ করেন। শিক্ষা লাভের জন্য তিনি ভর্তি হন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেধা বৃত্তি নিয়ে অর্থনীতিতে অনার্সসহ বিএ পাশ করেন। এর পর একই বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ ডিগ্রী লাভ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ পরিচালিত সোস্যাল সায়েন্স গবেষণা পদ্ধতির উচ্চতর কোর্সে তিনি প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান লাভ করেন এবং পুরস্কৃত হন। পরবর্তীকালে যুক্তরাস্ট্রের কলম্বিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পি এইচডি ডিগ্রী লাভ করেন।


কর্মজীবন

ড. খালেদা সালাহউদ্দিন কর্মজীবনে বিসিএস এডুকেশন ক্যাডারের সদস্য হিসেবে ইডেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অর্থনীতি বিষয়ে অধ্যাপনা করেছেন। পরে বাংলাদেশ সরকারের বস্ত্র মন্ত্রণালয়ে কর্মসংস্থান পরামর্শক হিসেবেও কিছুদিন কাজ করেছেন। এরই মধ্যে অব্যাহত রেখেছেন সাহিত্য চর্চা। ইংরেজী এবং বাংলায় তিনি দক্ষতার সাথে গল্প ও প্রবন্ধ রচনায় পারদর্শী ছিলেন। গল্প কবিতা প্রবন্ধ প্রতিটি শাখায় ছিল তাঁর সাবলীল বিচরণ। রম্য গল্প রচনায় তিনি উৎসাহ পেতেন এবং পাঠকমন তৃপ্ত হত তা পড়ে।


পারিবারিক ও ব্যক্তিগত জীবন

খালেদা সালাহউদ্দিনের এক ভাই ও তিন বোন। ভাই অধ্যক্ষ সাদ জগলুল (বর্তমানে পরলোকগত)। অন্য ৩ বোন হলেন মিসেস সাজেদা রেজা, ড. নাজিয়া আলম এবং ডা. রেহানা হোসেন। ডা. রেহানা হোসেন ঢাকাস্থ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের সিনিয়র পিডিয়াট্রিশয়ান। লে. কর্ণেল পদমর্যাদায় শিশু বিভাগের প্রধানের দায়িত্বে কাজ করেছেন। তাঁর স্বামী ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেন। তিনি দায়িত্বপূর্ণ পদে থেকেও লেখালেখির অভ্যেস ত্যাগ করতে পারেননি। বাংলাদেশের রক্তাক্ত অধ্যায়, জনগণের রাজকুমারী ডায়না ইত্যাদি গ্রন্থসহ অনেক বিদগ্ধ প্রবন্ধ এবং ভ্রমণ বিষয়ে লেখালেখিতে অবসরে ব্যস্ত থাকেন। পরিতৃপ্ত পারিবারিক জীবন যাপন করেছেন ড. খালেদা সালাহউদ্দিন। একমাত্র ছেলে টুটু ও একমাত্র কন্যা মলি। মলির আকস্মিক মৃত্যু তাঁকে বিচলিত করেছিল।


সাহিত্যিক জীবন

ড. খালেদা সালাহউদ্দিন দীর্ঘ ৪০ বছর যাবত বাংলাদেশ লেখিকা সংঘের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। সভনেত্রী ছিলেন প্রায় ২৫ বছর। তিনি এই দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করেছেন। নিরহঙ্কারী দীপ্ত প্রতিভার অধিকারী খালেদা সালাহউদ্দিন সংগঠনের প্রতিটি সদস্যের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলতেন। ড. খালেদা সালাহউদ্দিন ছিলেন নানা বিষয়ে সৃষ্টিশীল। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ মোটামুটি নিম্নরূপ: ১. The Rainbow (গল্প ১৯৬৬) ২. দুই বৃত্তে (গল্প ১৯৭০) ৩. যখন রুদ্ধশ্বাস (গল্প ১৯৮৬) ৪. হৃদয়ের বিচিত্রগতি (গল্প ১৯৮৮) ৫. নির্বাচিত গল্প (গল্প ১৯৯১) ৬. খালেদা সালাহউদ্দিনের রচনাবলী (গল্প ২০০০) ৭. চয়িত গল্পগুচ্ছ (গল্প ১৯৯৯) ৮. ফিরে আসে স্মৃতির পাখিরা (গল্প ২০০৫) ৯. নির্বাচিত রম্য গল্প (গল্প ২০০৩) ১০. প্রবন্ধ চতুষ্টয় (প্রবন্ধ ২০০৬) ১১. নদীরা সমুদ্রমুখী (কবিতা) ১২. মহিলা সাহিত্যিকদের রচনায় মুক্তিযুদ্ধ ও অন্যান্য প্রবন্ধ (প্রবন্ধ-গবেষণা ১৯৮৭) ১৩. আধুনিক সমাজ ও বাংলাদেশের নারী (প্রবন্ধ-গবেষণা ১৯৯০) ১৪.Women and Technology: Impact of technological changes in Agriculture on rural women in Bangladesh (প্রবন্ধ-গবেষণা ১৯৮৬) ১৫. Women in Urban informal sector: Employment pattern Activity life and Problems(প্রবন্ধ-গবেষণা ১৯৯২) ১৬. Energy and water crisis in Rural Bangladesh linkages with women’s work and time (প্রবন্ধ-গবেষণা ১৯৯৪৫) ১৭.Widows in rural Bangladesh (প্রবন্ধ-গবেষণা১৯৯৫) ১৮. Rural women in poverty: NGO Intervention for Alleviation (প্রবন্ধ-গবেষণা১৯৯৬) ১৯. Income generation of savings of rural women: Institutional Arrangement in Bangladesh (১৯৮৪)


পুরস্কার ও সম্মাননা

তিনি তাঁর অবদানের জন্যে বিভিন্ন সাহিত্য সংগঠন থেকে পুরস্কৃত হয়েছেন। তার প্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য পুরস্কার ও সম্মাননা: নুরুন্নেসা খাতুন বিদ্যাবিনোদিনী স্বর্ণপদক (১৯৭৮), ত্রিভূজ স্বর্ণপদক (১৯৯৩), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইকনমিকস রিচার্স ব্যুরো পুরস্কার, ঢাকা লেডিস ক্লাব সংবর্ধনা (১৯৮১), জাতীয় সাহিত্য সংসদ স্বর্ণপদক (১৯৯০), বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ সাহিত্য পদক ও সংবর্ধনা (১৯৯৮), আলপনা সাহিত্য পুরস্কার, শ্রেষ্ঠ নন্দিনী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৬), সোনালী রোদ সাহিত্য পুরস্কার (কোলকাতা ১৯৯৭), সাজিদুন্নেসা চৌধুরানী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৮), ড. আশরাফ সিদ্দিকী ফাউন্ডেশন পুরস্কার (২০০০), কমর মুস্তারী সাহিত্য পুরস্কার, সিলেট লেখিকা সংঘ পুরস্কার (২০০০) ইত্যাদি।


মৃত্যু

ড. খালেদা সালাউদ্দিন ২০১৪ এর ১৫ জানুয়ারি এ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছেন। কিন্তু রেখে গেছেন তাঁর সৃষ্টিসম্ভার। জাতি তাঁকে চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।



তথ্যসূত্র: বিডিনিউজ২৪,কম। ২৩ জানুয়ারি ২০১৪।