কালারাজা

Barisalpedia থেকে

বৃহত্তর বরিশালে দুইজন কালা রাজার নাম পাওয়া যায়। একজন চন্দ্রদ্বীপের রাজা জয়দেবের জামাতা বলভদ্র বসু। তিনি সত্যিকারের রাজা। অপরজন রাজা নন, তালুকদার। তিনি দক্ষিণ শাহবাজপুর পরগণায় দৌলতখার একজন খারিজা তালুকদার। তাঁর নাম কালা চাঁদ রায় (মূল নাম কালিকা প্রসাদ রায়)। তবে তিনি কালা রাজা নামে বিখ্যাত ছিলেন।


১ম কালা রাজা

চন্দ্রদ্বীপের রাজা জয়দেবের (পঞ্চদশ শতকের) কোন পুত্রসন্তান ছিল না। কমলা ও বিদ্যাসুন্দরী নামে তার দুই কন্যা ছিল। রাজা জয়দেব কমলা দেবীকে বর্তমান বাবুগঞ্জ থানার দেহেরগতি গ্রামের উষাপতির পুত্র বলভদ্র বসুর সাথে বিয়ে দেন। দেহেরগতির বসু পরিবার কৌলীন্য ও শিক্ষায় অগ্রগামী ছিলেন। বলভদ্র বসু বিদ্যোৎসাহী ছিলেন। তিনি বিভিন্ন শাস্ত্রে পন্ডিত ছিলেন। যুদ্ধবিদ্যায় তিনি বাকলা রাজ্যের মধ্যে অতুলনীয় ছিলেন। কথিত আছে বলভদ্র বসু দেখতে কালো ছিলেন। তাই প্রজারা তাকে কালা রাজা বলত। গলাচিপা থানার কালা রাজার বিল তার নামে হয়েছে বলে ঐতিহাসিকগণ মনে করেন।


২য় কালা রাজা কালাচাঁদের জমিদারি লাভ

কালাচাঁদের পিতামাতাকে ডাকাতরা মেরে ফেললে পিতৃমাতৃহীন অবস্থায় কালাচাঁদকে পালিয়ে বেড়াতে হয়। তখন বালক কালাচাাঁদ স্থানীয় এক নায়েবের রাখাল হিসেবে দিন যাপন করেন। কিছুদিনের মধ্যে একজন দক্ষ তীরন্দাজ হিসেবে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় কয়েকজন ইউরোপীয় বণিক দক্ষিণ শাহবাজপুরে লবণের ব্যবসা করত। আব্রাহিম ডেমেক্রিয়াসের দক্ষিণ শাহবাজপুরে লবণের কারখানা ছিল। তিনি লবণ চাষীদের ওপর অত্যাচার করতেন। বিদ্রোহীদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আব্রাহিম কালাচাঁদকে তার দেহরক্ষী নিযুক্ত করেন। বিদ্রোহীরা ১৮০০ খৃৃস্টাব্দে কারখানা আক্রমণ করে তার অত্যাচারী গ্রীক কর্মচারী পলীয়োলোককে বর্শা দিয়ে হত্যা করে। কালাচাঁদ ডেমেক্রিয়াসকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করে। সরকার সন্তুষ্ট হয়ে কালাচাঁদকে হাজীপুর ও সয়েদপুরে কয়েকটি হাওলা প্রদান করেন।


কালাচাঁদের কীর্তি

কালাচাঁদের প্রকৃত নাম কালিকা প্রসাদ রায়। কালাচাঁদ তার পুত্র শ্যামসুন্দর রায় ও রামগতি রায়ের নামে হাজীপুর, বেতুয়া, কালডগী, সালাপুরে তালুক শ্যামগতি ক্রয় করেন। তিনি প্রচুর ধন-সম্পদের অধিকারী হয়ে ছিলেন। প্রজাদের সম্পদ লুণ্ঠন করে তিনি দৌলত খাঁর হাজীপুরে এক বিরাট বাসভবন নির্মাণ করেন। তিনি বৃহৎ অট্টালিকা সুড়ঙ্গ ও মন্দির নির্মাণ করেন। তিনি ১৫ বিঘা জমির ওপর একটি দীঘি খনন করেন এবং দীঘির চারপাশে ৪টি ঘাটলা নির্মাণ করেন। কোম্পানি আমলে কালাচাঁদ দক্ষিণ শাহবাজপুর ও বরিশালে একজন দুর্ধর্ষ জমিদার হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। তিনি কালারাজা নামে পরিচিত ছিলেন। আজও তার নাম দক্ষিণবঙ্গে ছড়িয়ে আছে।


কালারাজা কালাচাঁদ রায়দের বংশ তালিকা:

সিংহ রায়ের পুত্র পর্বত রায়, তার পুত্র যশমন্ত রায়, তার পুত্র কালাচাঁদ রায় (কালিকা প্রসাদ রায়), তার দুই পুত্র শ্যামসুন্দর রায়	 ও রামগতি রায়। 



তথ্যসূত্র: ১। সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (১ম খন্ড)। ভাস্কর প্রকাশনী, ঢাকা। ২০১০